মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ২১

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২১
#Saiyara_Hossain_Kayanat

—”সত্যি ভাই রুমের ভিতর কিছু একটা আছে। তুই একটু চেক করে দেখ প্লিজ ভাই আমার।”

ভাইয়া কিছুটা ভেবে আমার কাধে এক হাত দিয়ে বললো-

—”ঠিক আছে চল দেখি।”

ভাইয়া রুমে যাচ্ছে আর আমি ওর পিছন পিছন যাচ্ছি। রুমের দরজার কাছে গিয়েই ভাই থেমে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে মাথায় একটা চাটি মেরে বললো-

—”এটা দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে?? কতো কিউট!!”

আমি ভাইকে ধাক্কা দিয়ে বললাম-

—কিসের কথা বলছিস!! সামনে থেকে সর দেখি কি কিউট।”

সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার বিছানার উপর অনেক কিউট একটা ছোট্ট সাদা বিড়াল দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাইয়ের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”আমাদের বাসায় বিড়াল আসলো কিভাবে আর রুমে কেন??”

ভাইয়া বিরক্তির সাথে বললো-

—”আমি কিভাবে বলবো আমি তো এখনই দেখলাম।”

আমি আম্মুকে ডাক দিয়ে আনলাম। আম্মুকে জিজ্ঞেস করার পর বললো-

—”শুভ্র এই বিড়াল তোকে দিয়ে গেছে বলেছে তুই যেন যত্ন করে রাখিস।”

আম্মুর কথা শুনে অনেকটা অবাক হলাম তাহলে কি এটাই শুভ্র ভাইয়ের শাস্তি!!! আমাদের রিলেটিভ সবাই জানে আমি পশু পাখি এসব অনেক পছন্দ করি তবে সেটা দূর থেকে। কেন যেন আমি পশু পাখি এসবের সামনে যেতে বা ধরতে খুব ভয় পাই। যতই কিউট হোক না কেন কখনো ছুয়ে দেখি না আর যত্ন নেওয়া তো কল্পনায় ও ভেবে দেখিনি। আমি কিছুটা রেগে গিয়ে আম্মুকে বললাম-

—”আম্মু তুমি জানো না আমি এসব ধরতে ভয় পাই তাহলে যত্নের কথা আসলো কিভাবে? আমি পারব না এসব করতে।

আম্মু কিছুটা ভেবে বললো-

—”আচ্ছা এখন থাক পরে এসব নিয়ে ভাবা যাবে।”

এই কথা বলেই আম্মু রান্না ঘরে চলে গেলেন। আর ভাইয়া আমার বিছানায় বসে বিড়ালকে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিড়ালটা অল্পতেই ভাইয়ার সাথে মিশে গেছে। বিড়াল আমারও অনেক ভালো লাগে তবে কখনও হাত দিয়ে ছুয়ে আদর করার মতো সাহস করতে পারিনি। শুভ্র ভাইকে বিড়াল বলায় উনি ইচ্ছে করেই আমাকে এমন শাস্তি দিলেন!! কতটা অসভ্য এই লোক ভেবেই রাগ হচ্ছে অনেক। শুভ্র ভাইকে ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ করেনি। একটা মেসেজ দিয়ে বললেন উনি এখন বিজি পরে কথা বলবেন।

———————

বিকেলে সাইফ ভাইয়া আদনানকে নিয়ে এসেছে আমাদের বাসায় বেড়াতে। স্মরণ আর আবির ও নাকি এসে পরবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। সাইফ ভাইয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষন ছাদে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার পর। আমি, ভাইয়া আর সাইফ ভাই নিচে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসলাম। ভাইয়া আমার পাশেই ফোন টিপছে। আর তার পাশেই সাইফ ভাইয়া বসে আছে। হঠাৎ করে ডাইনিং রুমে দিকে আমার নজর পরলো সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমার চিৎকারে ভাইয়ার হাত থেকে ভয়ে ফোন পরে গেছে। আর সাইফ ভাইয়া ও বেশ ভয় পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন-

—”অনি কি হয়েছে এভাবে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলি কেন?”

আমি ডাইনিং রুমে দিকে ইশারা দিয়ে দেখালাম আমাদের ছোট্ট কাজিন আদনান রাফি বয়স হবে হয়তো তিন বছরের কম। রাফি বিড়ালটার লেজ ধরে ঘুরাচ্ছে আবার জোরে চিপ দিয়ে জরিয়ে ধরছে। আর শেষে যা করলো তা দেখে আমরা তিন জনই জোরে চিৎকার দিলাম। ছিঃ ছিঃ রাফি বিড়ালটার লেজে কামড় দিল!! আল্লাহ আল্লাহ রাফির কাজ দেখে আমার তো প্রায় বমি করার মতো অবস্থা ছিঃ ছিঃ খাচ্চোর নাকি এই ছেলে। বিড়ালের সাথে কেউ এমন করে???

ভাইয়া তাড়াতাড়ি করে বিড়ালটা ওর কাছ থেকে নিয়ে আসলো। বিড়ালটা অনেক ভালো কাওকে খামচি দেয় না। ভাইয়া আমার পাশে সোফায় বসে বিড়ালকে আদর করছে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। একটু পর ভাইয়া বললো-

—”অনু একটু ধরে দেখ কত নরম। ভয় পাস না দেখ কিছু করে না রাফিকে ও খামচি দেয় নাই।”

—”না ভাই আমার ভয় করে তুই ধর।”

ভাইয়া অনেক জোরাজোরি করে একটা সময় জোর করেই আমার হাত ধরে বিড়ালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বিড়ালের শরীরটা কেমন যেন ধরার সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে সোফায় দাঁড়িয়ে পরলাম। ভাইয়া আর সাইফ ভাই আমার এমন অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে প্রায় মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম শুভ্র ভাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। ওনার হাসি দেখে আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে গলায় একটা চিপ দেই অসভ্য লোক কোথাকার। আমি চুপচাপ সোফায় বসে পরলাম শুভ্র ভাই এসে আমার পাশেই বসলেন। ধমকের সুরে বললেন-

—”বিড়ালটা তোকে দিয়েছি যত্ন করে রাখতে। আর তুই কি না এভাবে চেচামেচি করছিস!! এই বাচ্চা বিড়ালটা কি তোর মতো পেত্নীকে খেয়ে ফেলবে নাকি!!”

আমি রেগে জ্বলন্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললাম-

—”আমি এইসব পশু পাখি সামনে থেকে ধরতে ভয় পাই আপনি কি জানতেন না??? তবুও কেন এটার দায়িত্ব আমাকেই দিলেন।”

শুভ্র ভাই শান্ত গলায় বললেন-

—”কালের কথা ভুলে গেলি না-কি অনন্য? যাইহোক এ-সব কথা বাদ দে। সাইফ কেমন আছো? কখন আসলে?”

—”এইতো বেশ কিছুক্ষন হলো”

ওনারা কথা বলছে আর আমি শুভ্র ভাইয়ের পাশ থেকে উঠে ওনাদের ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালাম আম্মু আন্টির কাছেই গেছে তাই। দরজা খোলাই ছিলো ভিতরে গিয়েই আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম-

—”আন্টি কি করো আর আম্মু কোথায়?”

আমার কথায় আন্টি বেশ রেগে গিয়ে বললেন-

—”তোকে সেই ছোট থেকে বলে আসছি আমাকে মামনি ডাকবি আর তুই এক বার মামনি ডাকলে দশবার আন্টি ডাকিস।”

আমি মামনিকে জরিয়ে ধরে বললাম-

—”আরে মামনি আমি ভুলেই যাই বার বার। তুমি না হয় প্রতি বার মনে করিয়ে দিও।”

—”হয়েছে হয়েছে বুঝেছি আমি। আচ্ছা তুই যা তো শুভ্রর রুমে জামাকাপড় গুলো রেখে আয় আমি তোর আম্মুর কাছে যাচ্ছি রান্না ঘরে। ”

মামনি আমার হাতে শুভ্র ভাইয়ের শার্ট গুলো ধরিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন। আমি শুভ্র ভাইয়ের রুমে কখনো আসি নি। তবে অন্য বাসায়া যখন ছিলো তখন গেছিলাম কারন উনি তো বাসায় ছিল না তাই।

শুভ্র ভাই রুমটা অনেক বড় আর গুছানো। ছেলেদের রুম এমন গুছানো আমি কখনো দেখি নাই আর আমার ভাইয়ের রুমের কথা না হয় বাদই দিলাম।

রুমে এসে জামাকাপড় গুলো রেখে পুরো রুমটা একটু ঘুরে দেখতে লাগলাম। বারান্দার সামনে এসেই থমকে গেলাম। এখন বুঝলাম শুভ্র ভাই কোথায় থেকে হুটহাট করে সাদা গোলাপ নিয়ে আসে। ওনার বারান্দার একপাশে অনেক বড় একটা সাদা গোলাপ গাছ। বেশ ভালোই ফুল ফুটেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় শুভ্র ভাই কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন-

—”বাহহ আজ মুগ্ধতার আগমন ঘটেছে তার মুগ্ধ প্রেমিকের রুমে। তা কি নিয়ে এতো গভীর চিন্তা করছে আমার মুগ্ধতা!”

আচমকা শুভ্র ভাইয়ের ভাইয়ের এমন ফিসফিসিয়ে কথা শুনে পিছন ঘুরে তাকাতেই ওনার বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। ধাক্কা খেয়ে পিছনের দিকে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। আমার অনেকটা কাছে এসে ঝুঁকে আমার মুখোমুখি হয়ে দাড়ালেন। ওনাকে এতোটা কাছে দেখে আমার জান যায় যায় অবস্থা। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। উনি এক হাত দিয়ে আমার থুতনিতে ধরে মাথা উঁচু করে আমার চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বললেন-

—”আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার সামনে লজ্জায় মাথা নুয়ে ফেলতে না। যদি কখনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে তোমার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া গাল গুলো খেয়ে ফেলি তখন কিন্তু এই মুগ্ধ প্রেমিক দায়ী হবে না।”

এই কথা বলেই উনি আমার চোখে ফু দিলেন ওনার এমন কান্ডে আমি অজান্তেই নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনি আজ এমন করছেন কেন!! এতোটা কাছে তো কখনো আসেনি সব সময় কানে ফিসফিসিয়ে কথা বলতো আর আজ?? চোখে চোখ রেখে!! আমার হার্ট মনে হচ্ছে এখনই বেড়িয়ে আসবে লাফাতে লাফাতে।

আমি চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম উনি বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে ভাব নিয়ে বসে আছে। এই লোকটা এমন কেন সব সময় ভূতের মতো চলাফেরা করে। আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমাকে এভাবে দেখে উনি বললেন-

—”কিরে অনন্য এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে!! কিছু হয়েছে না-কি!! চেহারা লাল হয়ে আছে কেন?”

এখন এই লোকাটার সামনে থাকা আমার জন্য পসিবল না। আমি লজায় মাথা নিচু করে দ্রুত চলে যাব তখনই আবার পিছন থেকে হাত ধরে ফেললেন।

চলবে….

( ২০২০ সালের ৪র্থ রোজায় আমার জীবনে প্রথম এমন অদ্ভুত কান্ড দেখলাম। আমি আজও বুঝে উঠতে পারি নি রাফি কেমনে পারলো বেচারা বিড়ালটার সাথে এমন করতে ছিঃ ছিঃ। রোজা রেখে রাফির এমন কান্ড দেখেই বমি করতে ইচ্ছে করছিল তারপর আবার ভাইয়ের জন্য ভয়ে চিল্লাচিল্লি করে আমার জান যায় যায় অবস্থা। 🤦‍♀️🤦‍♀️

একটু ব্যস্ত আছি তাই ভালো করে গুছিয়ে লিখতে পারিনি দুঃখিত। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here