মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ২০

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২০
#Saiyara_Hossain_Kayanat

—”শুভ্র ভাই আমি ব্যথা পাচ্ছি চুল ছাড়ুন। এমন করছেন কেন।?”

রাগ নিয়েই কথাটা বললাম। শুভ্র ভাই সব সময়ের মতো এবারও আমার রাগ পাত্তা না দিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললেন-

—”বিদেশি বিড়াল অথচ খামচি দিবে না চুল পেচিয়ে ধরবে না তা কি করে হয় অনন্য!!”

ওনার কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম তাই আমি আর কিছু বললাম না। আমার চুল থেকে ওনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। আমাকে এমন নাড়াচাড়া করতে দেখে শুভ্র ভাই এবার আগের থেকে দ্বিগুণ রেগে উঠে বললেন-

—”তোর সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হই অনন্য। তোর এতো সাহস কি করে হলো আমার পারমিশন না নিয়ে আমাকে কিছু না বলেই এখানে চলে আসলি। তিন তিন বার ফোন দিলাম তবু্ও রিসিভ করলি না। আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস কি করে হয় তোর?”

ওনার এমন ধমকে আমার আত্মা কেঁপে উঠল। এই লোকটা এমন হুটহাট করে রেগে উঠে কেন! অসহ্যকর….. উফফফ এখানে না আসলেই ভালো হতো। আমি এখনো চুল ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে ওনার এমন রাগ দেখে ভয় পেলেও তা প্রকাশ করলাম না। নিজেকে সামলিয়ে শক্ত গলায় বললাম-

—”শুভ্র ভাই শেষ বারের মতো বলছি চুল ছাড়ুন না হলে আমি…”

আমার কথা শেষ করার আগেই শুভ্র ভাই আগের মতোই রাগী ভাব নিয়ে বললেন-

—”না হলে কি করবি শুনি?? আমিও দেখতে চাই তুই কি করতে পারিস।”

আমি কিছু একটা ভেবে ওনাকে আবার বললাম-

—”আপনি আমার চুল ছাড়বেন না তাই তো!!”

—”না ছাড়বো না দেখি তুই কিভাবে ছাড়াস।”

শুভ্র ভাইয়ের এমন ভাব নিয়ে কথা বলা দেখে আমার শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে। উনি ওনার ডান হাত দিয়ে আমার চুল খামচে ধরে আছে। আমি তার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে রাগের মাথায় নিজের মুখটা ঘুরিয়ে জোরে এক কামড় বসিয়ে দিলাম ওনার ডান হাতে। শুভ্র ভাই মৃদু আর্তনাদ করে সাথে সাথেই আমার চুল ছেড়ে দিলেন আর একটু পিছিয়ে গিয়ে হাত ঘষতে ঘষতে আমার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। ওনাকে দেখেই মনে হচ্ছে বেশ অবাক হয়েছে উনি এমন আশা করেনি। ওনার এমন ফেইস দেখে আমি ভিতর ভিতর হেসে কুটিকুটি হচ্ছি। আচমকাই শুভ্র ভাই ধমক দিয়ে বললেন-

—”এই বেয়াদব চুল বাধ… চুল খুলে রাতবেরাতে ঘুরে বেড়াস বলেই হয়তো কোন রাক্ষস শাকচুন্ননি তোর উপর ভর করেছে !! তা না হলে কোনো নরমাল মানুষ এভাবে কুকুরের মতো কামড় দেয় না-কি। চুল বাধ তাড়াতাড়ি না হলে সব চুল কেটে একদম ছোট করে দিবো।”

ওনার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেছে এতো বড় লোক কি না ভূতের কথা বলছে আজব!! আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম-

—”আমার চুল আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে আপনার কি?”

আমার কথা হয়তো ওনার পছন্দ হয়নি তাই রেগে জ্বলজ্বল করে উঠলেন। হুংকার দিয়ে বললেন-

—”খুব বেশিই সাহস হয়ে গেছে তোর অনন্য। মুখে মুখে তর্ক করছিস আমার সাথে এর শাস্তি তুই বাসায় গেলেই পাবি এখন শুধু অপেক্ষা কর।”

আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা কিরে বললাম-

—”মানে কি শাস্তি?”

—”সেটা না হয় সময় হলেই বুঝবি।”

আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবছি কি শাস্তি হতে পারে। হঠাৎই শুভ্র ভাই আমার একদম সামনে এসে ঝুঁকে কানের কাছে ওনার মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন-

—”তুমি এখনও বাচ্চাই রয়ে গেলে অনন্যময়ি। রেগেমেগে যে আমাকে কামড়ে দিলে এটার মানে কি জানো! লাভবাইট….. ভালোবাসার চিহ্ন দিয়ে দিলে তুমি আমাকে। ইসস এখন যদি মানুষ এই কামড়ের চিহ্ন দেখে তাহলে কি ভাববে বুঝতে পারছো তুমি!! আমাকে কতোটা লজ্জায় পরতে হবে। আর আমি যদি যদি বলে দেই এটা তুমি করেছো তখন কি করবে অনন্যময়ি??”

শেষে কথাটা বলে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে উনি একটু দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালেন। ওনার এইসব কথা শুনে আমি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছি। নির্লজ্জের মতো কি সব বললেন উনি! দিন দিন লাগামহীন ভাবে কথা বলা বেড়েই যাচ্ছে ওনার আর আমিও বোকার মতো কিছু না ভেবেই এমন একটা কাজ করে ফেললাম ছিঃ ছিঃ। ওনার এসব কথা শুনে আমি লজ্জায় ওনার দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারছি না। নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে থাকলাম।

হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম উনি আমার চুল ধরে কিছু একটা করছে। আমি সরে আসতে চাইলেই এক রামধমক দিয়ে বললেন-

—”চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক আমাকে চুল বাধতে দে। কখন যে তোর ঘাড়ে চড়া এই ভূত পেত্নী গুলো আমাকে কামড়ে খেয়ে ফেলে তার কোনো বিশ্বাস নেই। শাকিল ওইদিন ঠিকই বলেছিল তোর মতো পেত্নীর সাথে রাতে একা থাকা খুবই ভয়ংকর। এখন হাত কামড়ে দিয়েছিস কিছুক্ষন পর যে আমাকেই আস্ত গিলে ফেলবি না তার কি গ্যারেন্টি!!”

শুভ্র ভাই কথা বলতে বলতেই কোনো রকম পেচিয়ে আমার চুল গুলো খোপা করে দিলেন। খোপা ছূটে যায় যায় অবস্থা দেখে মনে মনে মুচকি হাসলাম। কিন্তু পরক্ষণেই রাগী কন্ঠে বললাম-

—”দেখুন শুভ্র ভাই বার বার আমাকে পেত্নী বলবেন না।”

আমার কথার কোনো ভাবান্তর হলো কি না জানি না তবে উনি আবার আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন-

—”হ্যাঁ দেখছি তো… তোমাকে দেখে দেখেই তো মুগ্ধ হচ্ছি আমি। এত বছর আমার ভাবনায় তোমার মুগ্ধতায় মুগ্ধ হয়েছি আর এখন প্রতি মুহূর্তে তোমাকে দেখে মুগ্ধ হচ্ছে তোমার এই মুগ্ধ প্রেমিক। আর তোমাকে এভাবে লজ্জায় লাল হয়ে নুয়ে পরতে দেখে আমার বুকে প্রচন্ড জ্বালা করে মুগ্ধতা।”

এই লোকটা নির্ঘাত আমাকে লজ্জায় ফেলে মারতে চায়। ওনার এমন কাছে এসে ফিসফিসিয়ে কথা বলা দেখে আমার জান পাখি উড়াল দিয়ে যায় যায় অবস্থা হয়ে যায় সব সময়। এভাবে কথা বলার কি আছে সব সময় অসহ্যকর। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা….. নিজেকে কোনো মতে সামলিয়ে দু’হাতে ওনার বুকে ধাক্কা দিয়ে দূর সরিয়ে দিলাম। আর সাথে সাথেই বড় করে কয়েকবার শ্বাস নিলাম। উনি আমার এমন অবস্থা দেখে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষন বাদে হাসি থামিয়ে শুভ্র ভাই বললেন-

—”শোন অনন্য নেক্সট টাইম যেন আমার সামনে তোকে এমন লজ্জায় লাল হতে না দেখি। তোর এমন লজ্জা পাওয়া চেহারা দেখলে আমার একদমই সহ্য হয় না। বুকে প্রচুর ব্যথা করে।”

শুভ্র ভাইয়ের কথার কোনো মানে বুঝতে না পেরে বোকার মতো তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। অদ্ভুত লোক উনি নিজেই তো আমাকে লজ্জায় ফেলে আবার নিজেই আমাকে লজ্জা পেতে না করে অসভ্য লোক। আমার লজ্জা পাওয়ার সাথে তার বুক ব্যথার কি জোড়া!! আমি জানার আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—” আমার লজ্জার সাথে আপনার বুক ব্যথার কি কানেকশন শুভ্র ভাই?”

—”তোর এতো কিছু বুঝতে হবে না। যা ভিতরে যা কাল সময় মতো শাস্তি পেয়ে যাবি।”

আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না। শুভ্র ভাই পকেট থেকে একটা শুভ্র রঙের গোলাপ আর একটা চিরকুট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভিতরে যেতে ইশারা করলেন। আমি চুপচাপ ভিতরে চলে আসলাম চিরকুট খুলে দেখলাম সুন্দর করে লাল কালিতে লেখা –

“আমার সকল মুগ্ধতায় তুমি অনন্যময়ি।”

লেখাটি পড়ে মনে মনে মুচকি হাসলাম। রুমে এসে মিমশিকে শাস্তির কথা বলার পর মিমশি আমাকে বললো-

—”আরে দোস্ত চিললল….. ভাইয়া হয়তো তোকে ভয় দেখানোর জন্য এমন বলেছে।”

ওর কথায় আমি কিছুটা রেগে গিয়ে জ্বলন্ত চোখে মিমশির দিকে তাকিয়ে বললাম-

—”হারামি তুই যতবারই আমাকে চিল করতে বলিস আমি ততবারই বাঁশ খাই। তুই চুপ থাক ঘুমা এখন।”

———————

নিজের বাড়িতে এভাবে আতংকিত হয়ে থাকতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। শুভ্র ভাইয়ের শাস্তির কথা ভাবতে ভাবতে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে এখন নিজের বাসায়ও শান্তি পাচ্ছি না। শাস্তির ভয়ে প্রতিটা পদক্ষেপ আতংকের সাথে ফেলছি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আম্মুর কাছে বিচার দিবে কিন্তু না আম্মুকে তো স্বাভাবিকই দেখলাম। ভয়ে ভয়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। বুক ভরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো নরম জাতীয় কিছু একটা আমার পায়ের পাশ দিয়ে ঘেঁষে দৌড়ে চলে গেলো। দেখার সুযোগ পাইনি ভয়ে আঁতকে উঠে দরজা খুলে ভাইয়ায়ায়ায়া বলে এক চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। চিৎকার করেই বলতে লাগলাম-

—”ভাইয়া তাড়াতাড়ি আয় আমার রুমে হয়তো সাপ ডুকেছে।”

ভাইয়া আসার আগেই ভিতর থেকে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ পেলাম। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। ভাইয়া দৌড়ে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো-

—”কিরে এমন ষাড়ের মতো গলা ফাটিয়ে চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?”

ভাইয়ার কথা শুনে রেগে গিয়ে বললাম-

—”সয়তান আমি ষাড় হলে তুই গরু। বেশি কথা না বলে যা ভিতরে গিয়ে দেখ কি যেন আছে।”

ভাইয়া আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বলল-

—”রুমের ভিতরে তো অনেক কিছুই আছে এই গুলো আবার নতুন করে দেখার কি আছে ফাজিল।”

আমি রাগে ওর পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম-

—”আমার পায়ে কিছু একটা লেগেছে সাপ হবে হয়তো তুই গিয়ে দেখ।”

ভাইয়া আমার দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে বললো-

—”ফ্ল্যাটের ভিতর সাপ আছে??? তুই কি আমাকে তোর মতো গাধা মনে করিস না-কি!!!”

আসলেই তো এখানে সাপ আসবে কিভাবে?? আচ্ছা এর মধ্যে শুভ্র ভাইয়ের হাত নেই তো আবার!!

চলবে….

(বিঃদ্রঃ আগামীকাল গল্প দিব না তাই আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। সময় ছিল না তাই রিচেক করা হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা রইলো সবার জন্য।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here