মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ৮+৯

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৮
#Saiyara_Hossain_Kayanat

বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে দিকে যাবো তখনই শুভ্র ভাই আমার সামনে এসে বললেন-

—”এতো মানুষের ভিড়ে একা একা কোথায় যাচ্ছিস? আমার সাথে চল আমার সাথে সাথেই থাকবি।”

আমি চুপচাপ শুভ্র ভাইয়ের সাথে ভিতরে গেলাম। শুভ্র ভাই আমাকে প্রমি আর আম্মুর কাছে রেখে চলে গেলেন।
কিছুক্ষন ধরে খেয়াল করছি একটা ছেলে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। খুব অস্বস্তি লাগছে এতো মানুষের সামনে কিছু বলতেও পারবো না। আর আম্মুকেই বা কিভাবে বলি এই কথা। হঠাৎ করেই শুভ্র ভাই এসে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

—”আন্টি আমি অনন্য কে নিয়ে যাচ্ছি শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি চিন্তা করো না অনন্য আমার কাছেই থাকবে।”

—”আচ্ছা বাবা নিয়ে যা। আর অনু তোকে বিরক্ত করলে আমাকে বলবি।”

ওদের কথা শুনে আমি থ হয়ে আছি। শুভ্র ভাই বললেন আর আমার মাও রাজি হয়ে গেলেন। আমি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললাম-

—”মা আমি কি ছোট বাচ্চা না-কি যে ওনাকে বিরক্ত করবো!!! আর শুভ্র ভাই তো আমাকে সব সময় ধমকায় ওনাকে কিছু বলো না কেন???”

আমার কথায় আম্মু একদম রেগে উঠলেন। আমাকে ধমক দিয়ে বললেন-

—”এক থাপ্পড় দিব শুভ্রর নামে বাজে কথা বললে। এই শুভ্র তুই ওকে নিয়ে যা তো আমার সামনে থেকে।”

আম্মুর কথা শুনে আমি একদম আকাশ থেকে পরলাম। শুভ্র ভাইয়ের জন্য আম্মু আমাকে এভাবে বকা দিলেন আল্লাহ!!! আজ মনে হচ্ছে ভাইয়া সত্যি কথাই বলে আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে।
শুভ্র ভাই আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার হাত ধরে বাগানের দিকে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে আসলেন। আমিকে চুপ করে থাকতে দেখে শুভ্র ভাইয়াই কথা বলা শুরু করলেন-

—” কিরে চেহারা এভাবে বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন??”

আমি কিছুটা রেগেই বলে উঠলাম-

—”তো কি করবো?? হাসবো নাকি!! আপনার জন্য আম্মু আমাকে বকা দিলো। আপনার জন্য কিসের এতো মায়া যে আমাকেই বকা দিলো?? মাত্র কিছুদিনই তো হলো আপনি এসেছেন।

—”কিসের এতো মায়া সেটা না হয় পরেই জানতে পারবি। আর হ্যাঁ আমি বিদেশে ছিলাম তো কি হয়েছে আমি সব সময় আংকেল, আন্টি আর শাকিলের সাথে কথা বলতাম আর তোর সাথে কথা না বললেও তোর ব্যাপারে সব কিছুই আমার জানা।
যাইহোক তোর ওখানে থাকতে অস্বস্তি লাগছিল তাহলে কেন দাঁড়িয়ে ছিলি ওখানে চলে আসলেই পারতি।”

—”আম্মু কি আমাকে একা কোথাও যেতে দিতো না-কি!”

অনেকক্ষন চুপচাপ বসে থাকার পর শুভ্র ভাই আমার অনেকটা কাছে এসে ঝুঁকে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন-

—”আজ যেন একদম মেঘপরির মতো লাগছে তোমাকে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে সদ্য একটুকরো মেঘ নেমে এসেছে । নিজেকে মেঘপরির মতো সাজিয়েছিস ভালো কথা আবার আমার সামনে ভিজা চুলে এসেছো। তুমি কি আমাকে মারার চেষ্টা করছো নাকি মেঘপরি????”

ওনার কথার ধরন শুনে আমি যেন জমে বরফ হয়ে গেছি। হার্টবিট যেন থেমে গেছে। কি বললেন এই সব শুভ্র ভাই!!! উনি তো আমাকে কখনো সরাসরি তুমি করে কথা বলেন না,,,চিঠিতে বলেছিলো কয়েকবার। উনি কি পাগল হয়ে গেছে নাকি আমাকে পাগল বানানোর জন্য এমন করছে??

এই কথা বলে উনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন-

—”বসে আছিস কেন ভিতরে চল সবাই হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

শুভ্র ভাইয়ের ধমক শুনে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। এ কেমন মানুষ আল্লাহ!!! এক সেকেন্ডের মধ্যে কিভাবে ওনার কথা বলার ধরন পালটে যায়???? শুভ্র ভাই তো দেখি গিরগিটির থেকেও দ্রুত রঙ পালটায়।
আমি কিছু বলার মতো ভাষাই খুজে পাচ্ছি না তাই চুপ করেই চলে গেলাম ভিতরে।

———————

আসার সময় একপ্রকার বাধ্য হয়েই শুভ্র ভাইয়ের গাড়িতে বসতে হলো। অন্য একটা গাড়িতেও আমার জন্য জায়গায় নেই। শুভ্র ভাইয়ের এমন অদ্ভুত আচরণের কারণে ওনার সাথে এক গাড়িতে আসতে চাইনি কিন্তু আমার মা-জননী একপর্যায়ে আমাকে ধমকে শুভ্র ভাইয়ের গাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।

আমি চুপ করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। শুভ্র ভাইয়ের সামনে থাকলে কেন জানি আমার মুখ দিয়ে কথা-ই বের হয় না। শুভ্র ভাই বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আমি বুঝতে পারছি। কিছু সময় যাওয়ার পর শুভ্র ভাই বললেন-

—”অনন্য… তোকে আমি আগেও বলেছি আর এখনো বলছি তোর এই ছোট্ট মাথায় এতো কিছুর চিন্তা রাখতে হবে না।”

শুভ্র ভাইয়ের কথা মুখ গোমড়া করে বললাম-

—”দেখুন শুভ্র ভাই সব সময় এতো ছোট ছোট করবেন না। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি।”

—”তোর কাজকর্ম দেখে তো মনে হয় না তুই বড় হয়েছিস। আমার তো মনে হচ্ছে আমি তোকে যেমনটা দেখে গিয়েছিলাম এখানও তেমনই আছিস।”

একটু থেমে কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে আবার বললেন-

—”তোকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি রে অনন্য…”

আমি কিছুটা উৎসুকভাবেই জিজ্ঞেস করলাম-

—”কেন?? আমাকে নিয়ে আপনি আবার কিসের চিন্তা করেন???”

শুভ্র ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-

—”তোর যে অবস্থা দেখছি মনে হয় না কেউ তোকে বিয়ে করবে। শেষমেশ আমার…. না মানে আমাদের ঘাড় বসেই তোকে সারাজীবন থাকতে হবে।”

শুভ্র ভাইয়ের কথায় রেগেমেগে বলে বললাম-

—”আপনি জানেন কলেজে কতো ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে অনেকে তো আবার চিঠিও দেয় রাস্তা দিয়ে আসার সময়।”

হঠাৎ গাড়ি খুব জোরে ব্রেক করায় ভয় পেয়ে গেলাম। শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই রাগী গলায় বললেন-

—”বাসায় এসে পরেছি গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে যা অনন্যা।”

শুভ্র ভাইয়ের কথায় একটু অবাক হলাম৷ আজ প্রথম শুভ্র ভাই আমাকে অনন্যা বলে ডাকলেন। ওনার এমন রাগী কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে চুপ করে নেমে বাসায় চলে আসলাম।

———————

বৌভাতের দিন ভালো মতোই কেটে গেল। শুভ্র ভাই আমাকে তেমন বকাবকি না করলেও কেমন যেন রহস্যময় হাসি দেন আমাকে দেখলেই। ওনার এই শান্ত রূপটা দেখে যেন আমি আরও বেশি পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ঝড়ের আগের শান্ত পরিবেশ এটা। আমার মনে কু ডাকছে কিছু একটা তো শুভ্র ভাই চিন্তা করছে সেটা আমি নিশ্চিত।

সকালে আমরা সবাই আমাদের বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য বাহিরে দাঁড়িয়ে বিদায় নিচ্ছি সবার কাছ থেকে।
সাইফ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন-
—”ভালো থাকিস অনি নিজের খেয়াল রাখিস আর আমরা সবাই কিছু দিন পরেই যাবো তোদের বাসায়া বেড়াতে।”

সাইফ ভাই, অর্ক ভাই, আবির আর স্মরণ ওদের সাথে কথা বলে গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখি আজকেও আমার জন্য গাড়িতে জায়গা নেই। শুভ্র ভাইয়ের আব্বু আম্মু আর আমার আব্বু আম্মু, ভাইয়া এক গাড়িতে বসেছে কিন্তু কেন?? ওনাদের বাড়ি তো অন্য রাস্তায় তাহলে এক গাড়িতে উঠেছে কেন??
ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো-

—”আমাদের গাড়িতে তোর বসার জায়াগা হবে না অনু। তুই থাক আমরা গেলাম।”

একথা বলেই ভাইয়া গাড়ি ড্রাইভ করে চলে গেলো আমাকে রেখেই। আমাকে একা রেখে ওরা সবাই কি করে চলে গেল?? আমি এখন যাবো কিভাবে?
#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৯
#Saiyara_Hossain_Kayanat

আমি পিছন ফিরে সাইফ ভাইয়ার কাছে গিয়ে মন খারাপ করে বললাম-

—”ভাইয়া ওরা সবাই তো আমাকে একা রেখেই চলে গেলো গাড়ি নিয়ে। এখন আমি যাবো কিভাবে!!”

সাইফ ভাইয়া আমার কাধের উপর হাত রেখে বললেন-

—”চিন্তা করিস না অনি আমি আছি তো আমি তোকে দিয়ে আসবো। আর মন খারাপ করে থাকিস না…..তুই তো জানিস আমি তোর মন খারাপ দেখতে পারি না।”

সব কাজিনদের সাথে আমার সম্পর্ক মারামারি আর ঝগড়াঝাটির সম্পর্ক হলেও এই মানুষটা আমার প্রতি কখন বিরক্ত হয় না। আমি যা যা বলি সব কিছুই মেনে নেয় আর না হয় উনি ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে আমাকে শান্ত করে দেয়। এইজন্যই আমার সব কাজিনদের মধ্যে এই সাইফ ভাইয়াকেই বেশি ভালোবাসি। একদম নিজের ভাইয়ের মতো।

ভাইয়ার কথা শুনে খুশি হয়ে ভাইয়ার গাল ধরে টান দিয়ে বললাম-

—”এই না হলো আমার সাইফ ভাই….. এত্তো গুলা ভালোবাসা ভাইয়া। চল চল এখনই আমাকে দিয়ে আসো।”

সাইফ ভাইয়া আমার হাত ধরে বললেন-

—”এক মাত্র তুই-ই আমার গাল গুলা টেনে টেনে ছিরে ফেলবি একদিন। আর তুই ভিতরে আয় আমার তো আগে রেডি হতে হবে তারপর না হয় তোকে দিয়ে আসবো।”

পাশ থেকে অর্ক ভাই বললে উঠলো-

—”সব আদর ভালোবাসা শুধু তোমাদের দুইজনেরই আর আমরা তো রাস্তার মানুষ। ”

অর্ক ভাইয়ের কথা শুনে আমি আর সাইফ ভাই এক সাথে হাসতে হাসতে বললাম-

—”একদম সত্যি কথা।”

আমাদের হাসাহাসির মাঝেই হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে জোরে ব্রেক করলো। আমরা সবাই কিছুটা উৎসুক দৃষ্টিতে গাড়ি দিকে তাকিয়ে আছি। একটু পরেই শুভ্র ভাই দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এসে আমার হাত ধরে বললেন-

—”তাড়াতাড়ি চল অনন্য দেরি হয়ে গেছে ওই গাড়ি হয়তো অনেক দূর চলে গেছে। আর অর্ক তোরা সবাই কিন্তু আমাদের বাসায় যাস বেড়াতে। আজ আসি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

একথা বলেই আমার ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন তারপর উনিও বসে ড্রাইভিং শুরু করে দিলেন। আর আমি কিছুই বলার সময় পেলাম না। শুধু ভাবতে লাগলাম শুভ্র ভাইও যাবে আমাদের সাথে!! আর এই জন্যই বাকি সবাই আমাকে এখানে একা রেখেই চলে গেছে!!

নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে শুভ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম-

—”আচ্ছা শুভ্র ভাই আপনারা আমাদের সাথে কেন যাচ্ছেন আপনাদের বাসা তো অন্য দিকে??”

—”সেটা না হয় পরেই জানতে পারবি। এখন এসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।”

শুভ্র ভাই ড্রাইভিং করতে করতেই কথাটা বললেন। ভাবতে হবে না বললেই কি হয় নাকি আমার মাথা তো এখন হাজার খানেক প্রশ্ন ঘুরছে। এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।

শুভ্র ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমি চোখ মেলে তাকাতেই শুভ্র ভাই বললো-

—”সারা রাস্তাই তো ঘুমিয়ে ছিলি এবার ওঠে পর বাসায় এসে পরেছি।”

আমি ঘুম ঘুম চোখ গাড়ি থেকে নেমে আস্তে আস্তে করে হেটে বাসার ভিতরে চলে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখলাম আমাদের ফ্ল্যাটের দরজায় তালা লাগানো। শুভ্র ভাই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন-

—”দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে না গিয়ে??”

—”তালা লাগানো দেখতে পাচ্ছেন না আপনি??”

—”পিছনে তাকিয়ে দেখ একবার। ”

আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাইদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। আমি ভিতরে যেতেই অবাক হয়ে গেলাম। সবাই এখানেই বসে আছে৷ আর ফ্ল্যাটের সব কিছু একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তার মানে কি শুভ্র ভাইরা আবার এখানে সিফট করেছে নাকি!! আর এই জন্যই কি শুভ্র ভাই রহস্যময় হাসি দিতেন আমাকে দেখে????

এই ক’দিনে শুভ্র ভাইয়ের ধমকে আর ওনার অদ্ভুত রকমেরই সব কাজকর্মে আমার অবস্থা নাজেরহাল। এখন মনে হচ্ছে প্রতি দিনই ওনার ধমক খেয়ে হজম করতে হবে। আমার সুখের দিন শেষ ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছে।

———————

দিন গুলো ভালোই যাচ্ছিলো এই এক সপ্তাহে শুভ্র ভাইয়ের সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি আর দেখা ও হয়নি হয়তো ব্যস্ত আছেন। সব ভালো কাটলেও আহনাফ আমার পিছু ছাড়েনি। ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে প্রতিদিন দেখি আহনাফ দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু ভাইয়া সাথে থাকায় আমার কাছে আসতে পারে না। আহনাফকে ইগ্নোর করার জন্যই ভাইয়াকে বলছি আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে যেতে আবার এসে নিয়ে যেতে। তবে আজ ভাইয়া নেই ওর একটা কাজ থাকায় আমি একাই আজ যাচ্ছি ভার্সিটিতে। যাওয়ার পথে আহনাফের সামনে পরতে হয়নি। কিন্তু আসার সময় আহনাফ আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমার হাত ধরে এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বললেন-

—”অনন্যা প্লিজ আজ আমাকে ইগ্নোর করো না। প্লিজ আমাকে একবার সব কিছু বুঝিয়ে বলতে দাও। একবার আমার কথা গুলো শোন প্লিজ অনন্যা। আমার বন্ধুদের কথায় তোমাকে প্রপোজ করেছি এটা সত্যি আমি মানছি। কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবেসি এটা মিথ্যা না। প্রথম প্রথম আমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তেমন একটা সিরিয়াস না থাকলেও। ওই দুইমাস তোমার সাথে কাটানোর পর আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর এই জন্যই ডেয়ার কমপ্লিট হওয়ার পরেও আমি তোমার সাথে ব্রেকআপ করিনি। ভেবেছিলাম তোমাকে সব সত্যি বলে মাফ চেয়ে নিবো আর আমাদের সম্পর্ক আবার নতুনভাবে সব শুরু করবো। কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ তাই আমি কিছু বলার আগেই তুমি সব জেনে গেলে। আর আমাকে ইগ্নোর করা শুরু করলে আমাকে একটা বারও কিছু বলার সুযোগ দাও নি। তারপর হঠাৎ করেই একদিন বাবা অসুস্থ হয়ে পরে তাই আমার পরিবারের সবাই আব্বুর চিকিৎসার জন্য এখান থেকে চলে গিয়েছিলাম তোমাকে বলেও যেতে পারিনি। আর ওখানে যাওয়ার এক বছরের মাথায় আব্বু মারা যায়।”

এতো টুক বলে একটু থেমে আবার বলা শুরু করলেন-

—”আব্বু মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার আর ব্যবসা সব সামলিয়ে কিছুদিন আগে এখানে আসলাম। আর তখনই তোমার সাথে দেখা হলো কিন্তু তুমি দুইবছর পর আমাকে দেখেও আগের মতোই ইগ্নোর করে চলে গেলে। আমি তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে ও খুঁজেছি তারপর তোমার ফ্রেন্ডদের থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তুমি তোমার কাজিনের বিয়েতে গেছো। এই দু’বছরে আমি অনেক বার তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। তুমি যোগাযোগের সব রাস্তা আমার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলে। আমি মানছি আমি ভুল করেছি।”

আহনাফের কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। এই মুহূর্তে আমার কি বলা উচিত বা করা উচিত আমি কিছুই বুঝতে পারছি। জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছি আমি এই মুহূর্তে।
এখন মনে হচ্ছে আসলেই আমার একবার আহনাফের কথা শোনা উচিত ছিল। এই মুহূর্তে আহনাফের জন্য অনেক খারাপ লাগছে। এই দু’বছরে কতো কিছুই না সহ্য করেছে।

আমি কিছু বলবো তার আগেই কোথা থেকে যেন শুভ্র ভাই ঝড়েরবেগে এসে আমার হাত টান দিয়ে আহনাফের হাত থেকে ছুটিয়ে নিলো। আচমকা এমন কিছু হওয়াতে আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কি থেকে কি হয়ে গেল!!!শুভ্র ভাই এখানে কিভাবে আসলেন!!

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here