মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ৬+৭

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat

শুভ্র ভাই আমার অনেকটা কাছে এসে বললেন-

—”ভয় পাস না অনন্য এখন আর তোর গায়ে হাত তুলবো না। এক ভুল আমি বার বার করি না। ওই একটা থাপ্পড় দেওয়ার জন্য আমাকে কম শাস্তি পেতে হয়নি।”

শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি স্বস্তি পেলাম। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম ওনার চোখ মুখে অনুতপ্তের ছাপ কোনো রাগ নেই এখন কিন্তু কেন!! ছোট বেলার সেই ছোট্ট একটা ঘটনার জন্য??

“আমার বয়স তখন দশ এগারো বছর হবে হয়তো শুভ্র ভাইয়ের কথার অমান্য হওয়ার ফলে আমার গালে কোষে এক থাপ্পড় দিয়ে লাল করে ফেলেছিল। আর সেই দিন আংকেল শুভ্র ভাইকে প্রচুর বকা দিয়েছিলেন। এর কিছু দিন পরেই তারা আমাদের পাশের ফ্ল্যাট থেকে চলে গিয়েছিলেন তাদের অন্য বাসায়। তার এক মাস পরেই শুবেছিলাম শুভ্র ভাই নাকি বিদেশে চলে গেছেন পড়াশোনার জন্য। আমি তো ওনার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।”

আমার ভাবনার মাঝেই খেয়াল করলাম শুভ্র ভাই আমার চুলে কিছু একটা লাগাচ্ছে। আমি সরে আসতে চাইলেই এক ধমক দিয়ে আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। উফফ এই লোকটা আমাকে এতো ধমকায়া কেন!!
একটু পর উনি আমার সামনে এসে এক নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন।

—”এখন সব ঠিক আছে কি না আয়ানায় দেখ। অনেক কষ্ট করে এতো গুলো দোকান খুজে এই বেলীফুলের গাজরাটা পেয়েছি। কোথাও পাওয়াই যাচ্ছিলো না।”

আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম এখন সাজটা পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে এই বেলীফুলের গাজরারই কমতি ছিল।শুভ্র ভাই এতো কষ্ট করলেন এই সামান্য ফুল আনার জন্য!! আচ্ছা উনি আমার মনের কথা সব সময় বুঝে যান কিভাবে!! যাইহোক ভাবনা বাদ দিয়ে খুশি হয়ে শুভ্র ভাইকে বললাম-

—” অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভ্র ভাই এতোক্ষন ধরে কিছু একটা কমতি মনে হচ্ছিলো এখন আমার সাজ একদম কমপ্লিট হয়ে গেছে।”

—”আচ্ছা আমি এখন যাই আমাকে আবার রেডি হতে হবে এখনো অনেক কাজ আছে আমার। তুই কিছুক্ষণ পর ছাদে চলে যাস অনুষ্ঠানে। আর হ্যাঁ এমন কোনো কাজ করিস না যাতে আমার রাগ উঠে যায়। খুবই কষ্টে এই দশ বছরের নিজের রাগ কন্ট্রোলে এনেছি আমি শুধু তোর জন্য।”

এই কথা বলেই শুভ্র ভাই দরজা খুলে চলে গেলেন আমার রুম থেকে। একটু পর আবার এসে আমার হাতে একটা সাদা গোলাপ আর একটা চিরকুট দিয়ে আমার মুখের সামনে এসে পরা চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললেন-

—”দেখে শুনে সাবধানে চলাফেরা করিস শাড়ির সাথে আবার পেচিয়ে পরে যাস না।”

শুভ্র ভাই আবার দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলেন। আমি সাদা গোলাপটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম হঠাৎ করে শুভ্র ভাইয়ের কি হয়ে গেল এমন অদ্ভুত রকমের কাজ করছে কেন??
হাতের চিরকুটটা খুলে দেখলাম-

” প্রিয় অনন্যময়ি

আমার শুভ্র রঙে তোমাকে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম তাই নিজে পছন্দ করেই তোমার জন্য এই শাড়িটা পুরো মার্কেট খুঁজে কিনেছি। আর এই শুভ্র রঙের গোলাপটাও যেন তোমার কাছেই মানাবে তাই দিয়ে দিলাম। সুন্দর করে মাথার এক পাশে লাগিয়ে নিও।

আজ তোমাকে আর ঘুমন্তপরি লাগছে না একদম অনন্যময়ি লাগছে যার সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। শাড়িতে যেন তোমার মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেছে।

ইতি
তোমার মুগ্ধ প্রেমিক”

শুভ্র ভাইয়ের চিঠি পরে আমার হৃদ স্পন্দন যেন থেমে গেলো। লজ্জা যেন আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে এই মুহূর্তে। আগে কখনো কেউ আমাকে চিঠি দেয় নি আর না কখনো এভাবে কেউ কথা বলেছে এরকম অনুভূতিও আগে কখনো হয়নি আমার। কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে!!

——————

ছাদের এক পাশে প্রমির সাথে দাঁড়িয়ে আছি অনেক মানুষের ভিড় তারপর আবার শাড়ি পরে আছি একদমই বিরক্ত লাগছে। ঠিক মতো হাটতেও পারছি শাড়ির জন্য তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এই প্রমি মেয়েটার কাছে যেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা একদমই অসম্ভব একটা কাজ তাই তো একটু পরপরই এখানে ওখানে চলে যাচ্ছে।
আমাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাইফ ভাই আমার কাছে এসে পরলেন। আমাকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বললেন-

—”বাহ আজ তো আমার অনিকে একদম হলুদ পরি লাগছে দেখতে। পরি হয়ে উড়ে চলে যাস না আবার।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমরা দুজনই এক সাথে হেসে উঠলাম। হাসির মাঝে হঠাৎ করেই সামনে চোখ পরল। শুভ্র ভাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। উনি হলুদ আর শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরেছেন কিছু টা আমার শাড়ির সাথে মিল আছে। সব ছেলেরাই তো হলুদ আর সবুজ রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েরা হলুদ আর লাল রঙের শাড়ি পরেছে তাহলে শুভ্র ভাই আর আমারটাই কেন আলাদা???

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েরা শুভ্র ভাইকে একদম চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। খাওয়ারই কথা সাদা বিড়ালের উপর কে না ক্রাশ খায়!!!

———————

অর্ক ভাইকে হলুদ লাগানো শেষে আমি, শাকিল ভাইয়া আর আবির কথা বলছিলাম তার মাঝেই আমি বললাম-

—”ভাইয়া আমি একটু নিচে গেলাম।”

—”আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসিস না হলে আম্মু খুজবে তোকে।”

—”ঠিক আছে।”

শাড়ির কুচি কেমন যেন ঢিলা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখনই ছুটে যাবে। তাড়াতাড়ি রুমে যেয়ে ঠিক করতে হবে। শাড়ির কুচি ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছি তখনই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পিছনের দিকে পরে যেতে নিলেই শুভ্র ভাই কোথা থেকে এসে যেন আমাকে ধরে ফেললেন। আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিয়েই শক্ত গলায় বললেন-

—”অনন্য কে ইচ্ছে করা ধাক্কা দেওয়াটা কি তোমার ঠিক হয়েছে!! অনন্য খেয়াল করেনি বলে যে আমিও খেয়াল করিনি সেটা কিন্তু ভেবো না।”

সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার থেকে একটু বড় একটা ছেলে দারিয়ে আছে। কিন্তু শুভ্র ভাই কি বলছেন!! এই ছেলে আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিছেয়ে????

ছেলেটা ভয়ার্ত স্বরে বললো-

—”সরি ভাইয়া আর কখনো এমন ভুল করব মাফ করে দিন।”

এতো টুক বলেই একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো গেলো ছেলেটা। আর শুভ্র ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিচে নিয়ে যাচ্ছে।
#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat

শুভ্র ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিচে আমার রুমের কাছে নিয়ে এসে দাড় করিয়ে শাসনের সুরে বললেন-

—”তোকে বলেছিলাম সাবধানে চলাফেরা করতে। এতো বড় হয়েছিস এখনো নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না। আর শাড়িটাও তো সামলাতে পারিস না। তুই কি শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছিস নাকি অনন্য!!”

আমি চুপচাপ শুভ্র ভাইয়ের বকা শুনছি। এখন আমি কিছু বললেই রেগে যাবে তাই আমার চুপ থাকাই এই মুহূর্তে আমার জন্য ভালো। শুভ্র ভাই আমাকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন-

—”যা রুমে গিয়ে শাড়ি ঠিক কর। আমি রুমের বাহিরেই আছি।”

আমি রুমে গিয়ে শাড়ি ঠিক করে বাহিরে চলে আসলাম। শুভ্র ভাই এখনো বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বের হতে দেখে শুভ্র ভাই আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে থেকে হুট করেই হাটুর উপর ভর দিয়ে নিচে বসে আমার শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বললেন-

—”তুই কবে বড় হবি অনন্য!! একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারিস না।”

আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে অস্থির কন্ঠে বললাম-

—”কি করছেন কি শুভ্র ভাই উঠুন নিচ থেকে। মানুষ দেখালে কি ভাববে।”

—”চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক এভাবে মাছের মতো ছটফট করছিস কেন। আর বাসার সবাই ছাদে, কেউ দেখার মাতো নেই এখানে। সব ঠিক হয়ে গেছে চল এবার।”

আমি আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ হাটা শুরু করলাম। মাঝে মাঝে শুভ্র ভাই খুবই অদ্ভুত কাজ করেন। শুভ্র ভাইও আমার সাথে সাথেই ছাদে চলে আসলেন।

———————

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। বড়রা ঘুময়ে পরেছে আর ছোটরা আড্ডা দিচ্ছে। রাত প্রায় বারোটা বাজাচ্ছে এই সময় ছাদের দোলনায় বসে বসে আকাশ দেখছি। আকাশ কিছুটা মেঘলা। পাশে কারও বসার টের পেতেই ফিরে তাকালাম। শাকিল ভাইয়া বসে আছে আমার পাশে। আমার মাথায় আস্তে একটা টোকা দিয়ে বললো-

—”কিরে পেত্নী এতো রাতে ছাদে বসে আছিস কেন?? ভয় করছে না তোর??

আমি আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললাম-

—” ঘুম আসছিলো না তাই ছাদে আসলাম। আজ কেন যেন ভয় পাচ্ছি না। ভালো লাগছে এই ঘুমন্ত পরিবেশটা…. একদম নিশ্চুপ একটা শহর।”

—”কি নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছিস পিচ্চি?”

—”জানিনা ভাইয়া এমনিতেই ভালো লাগছে না কিছু।”

—”আহনাফকে নিয়ে এখনো ভাবিস তুই?? আমি তো তোকে বার বার বুঝিয়েছি সেটা তোর ভালোবাসা ছিল না। ভালো লাগা আর আবেগের জন্য এতো কষ্ট কেন পাচ্ছিস তুই??”

—”ভালোবাসা নাকি ভালো লাগা ছিল সেটা আমি জানি না তবে খারাপ লাগছে ধোকা খেয়েছি তাই। ধোকা খাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারছি না ভাই।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু চুপ থেকে আবার বললাম-

—”ভাইয়া আমি কি খুব বেশিই বোকা??”

—”তুই বোকা না বোকা তো আহনাফ কারন ও তোর মতো একটা মেয়ে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে।”

—”আহনাফ কে দেখেছি ভাইয়া এখানে আসার সময়। ও ফিরে এসেছে হয়তো।”

—”আচ্ছা বাদ দে এসব তাড়াতাড়ি নিচে চল। তোর সাথে একা এতো রাতে ছাদে বসে থাকতে আমার ভয় করছে। কখন জানি আমার ঘাড়ে চড়ে ঘাড়টা মটকে দিস কে জানে। চল চল নিচে চল।”

কিছুক্ষণ ভাইয়ার ভয়ার্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে আমরা দুজন একসাথেই হেসে উঠলাম। হঠাৎ করেই শুভ্র ভাই বললেন –

—”দুই ভাইবোনের কথা শেষ হয়েছে নাকি সারারাত এখানেই কথা বলে পার করার ইচ্ছে আছে তোদের।”

শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি ছাদের দরজা দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে কথাটা বলছে। শুভ্র ভাই কখন আসলেন এখানে!!

শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে ভাইয়া বললো-

—”পাগল নাকি আপনি শুভ্র ভাই এই পেত্নীর সাথে সারা রাত এখানে কথা বলে পার করবো আমি!!! আমার ঘাড় মটকে খাবে এই পেত্নীটা।”

এই কথা বলেই ওরা দুজন উচ্চস্বরে গাঁ জ্বালানোর মতো হাসি দিলেন। আমি রেগে ভাইয়ার পিঠে এক থাপ্পড় দিয়ে চলে আসলাম নিচে। কিন্তু এখনো পিছন থেকে ওদের হাসি আমার কানে এসে বারি খাচ্ছে।

——————

সকালের ঘুম ভেঙেছে এগারো টায়। বরযাত্রী আর কিছুক্ষণ পরই বের হবে। সবাই রেডি হয়ে গেলেও আমি এখনো রেডি হইনি। তাড়াহুড়ো করে গোসল করে একটা হাল্কা নীল আর সাদা রঙের গাউন পরে নিলাম। দরজায় এসে আম্মু বার বার তাড়া দিচ্ছে আর বলছে-

—”অনু তাড়াতাড়ি কর সাবাই গাড়ি তে বসে আছে তোর জন্য। আজকের দিনেও তোর এমন আলসেমি করা লাগে।”

আম্মুর কথায় বিরক্ত হয়ে বললাম-

—”উফফ আম্মু তুমি বকবক না করে যাও তো এখন থেকে। আমাকে রেডি হতে দাও।”

আম্মু চলে গেলে আমি তাড়াতাড়ি করে ভেজা চুল গুলো খুলে দিয়ে। হালকা লিপস্টিক আর কাজল লাগিয়ে কানের দুল পরতে পরতে বের হয়ে গেলাম।

বাহির এসে কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না সবাই কি আমাকে রেখেই চলে গেলো নাকি!! রাস্তায় যেতেই দেখলাম শুভ্র ভাই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। একটু সামনে এসে দাড়াতেই শুভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যেয়েও যেন থেমে গেলো। অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দু’বার ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম –

—”শুভ্র ভাইইইইই ওরা সবাই আমাকে একা রেখেই চলে গেলো না-কি ???”

শুভ্র ভাই অনেকটা বিরক্ত হয়ে বললেন-

—”আমাকে কি তোর চোখে পরছে না অনন্য??? তুই একা কি করে হলি?? আন্টি তোকে যেভাবে বকাবকি করছিল তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো খুব রেগে আছে তাই আমি আন্টি আর বাকি সবাইকে আগে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন তুই চল তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বস দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

আমি গাড়িতে বসতেই শুভ্র ভাই গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে দিলেন। কিছু পথ যেতে গাড়ি থামিয়ে দিলেন। শুভ্র ভাইকে সিট বেল্ট খুলেতে দেখে বললাম-

—”গাড়ি থামালেন কেন? আর আপনিই বা কোথায় যাচ্ছেন।”

—”আমি না আসার আগ পর্যন্ত গাড়িতে চুপচাপ বসে থাকবি। ভয় পাস না আবার আমি এসে পরব কিছুক্ষণের মধ্যেই।”

একটু থেমে আবার বললেন-

—”সাথে তো কিছু না নিয়েই বেরিয়ে পরলি ফোনও তো আনিস নি মনে হচ্ছে। এই নে আমার এই ফোনটা রাখ গেম খেলে সময় কাটা আমি আসছি।”

শুভ্র ভাই আমার হাতে ফোনটা দিয়ে লকটা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আর গাড়ি ও লক করে দিয়ে গেছেন যাওয়ার আগে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম উনি একটা মার্কেটের ভিতর ডুকলেন।
ফোনে প্যাটার্ন লক ‘A’ দেওয়া। লক খুলতেই স্কিনে আমাদের একটা ছোট্ট বেলার ছবি চোখে পড়লো ফোনের ওয়ালপেপারে। আমার বয়স হয়তো দুই বছর হবে আর শুভ্র ভাইয়ের সাত অথবা আট বছর হবে। ছবিতে আমি শুভ্র ভাইয়ের কোলে ঘুমিয়ে আছি আর শুভ্র ভাইয়া আমাকে এমন ভাবে ধরেছে যে মনে হচ্ছে আমি পরে যাবো তাই ভয় পাচ্ছে।

——————

কিছুক্ষণ পর শুভ্র ভাই আসলেন হাতে কয়েকটি শপিং ব্যাগ নিয়ে। শুভ্র ভাই ড্রাইভিং সিটে বসে ব্যাগ থেকে একটা তোয়ালে আর কিছু খাবার বের করে দিয়ে বললেন-

—”চুল গুলো ঠিক মতো মুছে নে ঝটপট। কেউ যেন ভেজা চুলে তোকে না দেখে। চুল মুছে তারপর এগুলা খেয়ে শেষ করবি তারাহুরো করে তো খাবারের কথা ভুলেই গেছিস সকালে তো নাস্তাও করিস নি।”

আমি চুপচাপ কিছু না বলে চুল মুছে একটা সেন্ড উইচ খেয়ে নিলাম। আসলেই আমার খুব খিদে পেয়েছিল।

—”কিরে খাবার শেষ করছিস না কেন বাকি গুলো কে খাবে??”

—”আমি আর খেতে পারবো না শুভ্র ভাই বাকি গুলা আপনি খান।”

শুভ্র ভাই আর কিছু না বলে অন্য শপিং ব্যাগ থেকে হাল্কা নীল আর সাদা রঙের কতো গুলো কাচের চুরি বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন-

—”এগুলো পরে নে তারাতাড়ি হাত খালি লাগছে।”

আমি অবাক চোখে চুরি গুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছি শুভ্র ভাই আমার প্রতি এতো কেয়ারিং হলো কি করে!!!! ওনাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র ভাই আমার হাত টেনে নিয়ে উনি নিজেই চুরি পরিয়ে দিতে দিতে ধমকের সুর বলছেন-

—”এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে আর তুই এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস। তোর এই ছোট্ট মাথায় এতো কিছুর চিন্তা রাখা লাগবে না অনন্য।”

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here