#মৃত_কাঠগোলাপ – ১৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ধ্রুব আয়েশীদের বাসা থেকে বের হলো প্রায় সন্ধ্যার দিকে। এতটা সময় ধ্রুব ও কামরুল বসার ঘরে বসে জমজমাট গল্প করছিলেন। কামরুল হাসানের মত গম্ভীরমুখো মানুষটা ক্ষণে ক্ষণে উচ্চস্বরে হেসে উঠছেন, ইতিমধ্যে কয়েক কাপ চা শেষ করা হয়েছে। সে কি আদিক্ষেতা এদের! আয়েশী নিজের ঘর থেকেও ধ্রুব ও বাবার এসব হাসি তামাশা শুনতে পারছে। কান জ্বালা করছে তার। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আগে মৃদুল বাবার সাথে এমন করে হাসি মজা করত। মৃদুল নেই। তার জায়গা এখন ধ্রুব নিয়েছে। আয়েশীর খারাপ লাগছে। মৃদুলের জায়গা সে কখনো কাউকে দেবে না। মৃদুল সবসময় তার জায়গায় বহাল থাকবে। আয়েশী কানে বালিশ চেপে ধরল। ধ্রুবর হাসিতে, কথাবার্তা মৃদুলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কি বিদঘুটে অনুভূতি হচ্ছে আয়েশীর!
ধ্রুব চলে গেলে আয়েশী যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।
ধ্রুব চলে যাবার দু ঘণ্টা পর, হঠাৎ করে আয়েশীদের বাসার কারেন্ট চলে যায়। আয়েশীদের বাসা ঢেকে যায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে। সবাই কিছুটা অবাক হয়। কামরুল হাসান জানালা দিয়ে পাশের বাসার দিকে তাকালেন। পাশের সকল বাসায় আলো জ্বলছে। শুধুমাত্র তাদের বাসায় কারেন্ট নেই। কামরুল হাসান ভ্রুরু কুচকে ভাবলেন। এমনটা হলো কেন? তাদের বাসার কারেন্ট এর তার কি নষ্ট হয়ে গেল? কামরুল হাসান দ্রুত ইলেকট্রিকের লোকদের ফোন দিলেন।
ইলেকট্রিক দোকানের ম্যানেজার কামরুল হাসানকে ‘আসছি আমরা ‘ বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
ফোন কেটে ম্যানাজার সামনে তাকালেন। স্বয়ং ধ্রুব তাদের সামনে টেবিলের উপর এক পা তুলে বসে আছে। হাতে একটা কিউব। ক্রমাগত সে কিউবটার রঙ এলেমেলো করছে, আবার ম্যাচ করছে। ইলেকট্রিকের ম্যানাজার ঘামছেন। তার প্রাণের শঙ্কা হচ্ছে। তিনি কপালে জমে থাকা ঘাম মুছে নিয়ে বললেন,
‘ আপনি যা চাইছেন, আমি সব করব। তবুও আমার ছেলেমেয়ের কিছু করবেন না। ওদের কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাব। দয়া করুন। ‘
ধ্রুব চমৎকার হাসল। গালে সুন্দর একটা গর্ত দেখা গেল। ধ্রুব থুতনি চুলকে বলল,
‘ এইতো লাইনে এসেছ। কখনো লাইন ছাড়া হবে না। লাইন ছাড়লেই সর্বনাশ। এবার যাও, আমার শ্বশুরমশাইয়ের বাড়ি গিয়ে তার অ্যাপায়ন করে আসো। ‘
ধ্রুব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। চলে যেতে গেলে পুনরায় ফিরে আসল। টেবিলের উপর দু হাত ভর দিয়ে রেখে ঝুঁকে এল ম্যানাজারের সামনে। এ লোক আবার ফিরে এসেছে কেন? ম্যানেজার ভয় পেয়ে মাথা পিছিয়ে নিল। ধ্রুব মুচকি হাসল। কাউকে নিজের কারণে ভয় পেতে দেখলে ধ্রুবর বড় ভালো লাগে। এমন করেই সে সবার উপর ত্রাস চালাবে। তার মন মস্তিষ্ক নিজের হাতের মুঠোয় এনে পুতুলের মত নাচাবে তাদের। তারা ভয় পাবে, ঝরঝর করে ঘাম ছুটবে, হাত জোড় করবে, জীবন ভিক্ষা চাইবে। ধ্রুব এসব দেখে শুধু মজা লুটবে। হা হা হা!
ভাবনার রাজ্যে সুখের বিচরন করে অতঃপর ধ্রুব বললো,
‘ একটা কথা মাথায় রাখবেন ম্যানাজার সাহেব, চালাকি জিনিসটা এই ধ্রুবর পছন্দ না। আর যে জিনিসটা ধ্রুবর পছন্দ না, ধ্রুব তাকে আর দুনিয়ার আলো দেখতে দেয়না। বুঝেনই তো, ধ্রুব কতটা মারাত্মক। আশা করছি, তার মারাত্মকগিরি আপনি দেখতে চাইবেন না। কি, চাইবেন নাকি? ‘
ম্যানেজার ভয়ার্ত চোখে মাথা নেরে না বোধক জানাল। ধ্রুব হেসে চোখ সানগ্লাস লাগিয়ে চলে গেল ইলকেট্রিকের দোকান থেকে। ম্যানেজার হাফ ছাড়লেন। কপাল, গলার ঘাম মুছে নিয়ে বিড়বিড় করলেন, ‘ রক্ষা করো ভগবান, রক্ষা করো। ‘
______________________________
আয়েশীদের বাসার কারেন্ট চলে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, বাসার সমস্ত তার জ্বলে গেছে। ইলেকট্রিকের লোকেরা জানে, এই তার কে জ্বালিয়েছে। তবুও তারা কামরুল হাসানকে কিছুই বলেনি। মুখ খুললেই যে মৃত্যু! কামরুল হাসান নিজে অনেকটা না হলেও কিছুটা অবাক হয়েছেন হঠাৎ করে তার জ্বলে যাওয়ার কারণ তিনি ধরতে পারছে না। ইলেকট্রিকের লোকেদের তিনি জিজ্ঞেস করছেন তবে তারা কোনো যুক্তির উত্তর দিচ্ছে না। তাই তিনিও আর কথা বাড়ান নি।
ইলেকট্রিকের লোকেরা আয়েশীদের ঘরের সকল তার ঠিক করে দিল। সেইসাথে, সবার অগোচরে আয়েশীর ঘরে সেট করে গেল কিছু ইলকট্রিক যন্ত্র। আজ রাতেই সেই যন্ত্রগুলো তার কাজ দেখানো শুরু করে দেবে। অথচ আয়েশী জানতেও পারল না, আজ রাত থেকে আয়েশীর জীবন নরকে পরিণত হবে। আয়েশী হাসতে ভুলে যাবে, কান্নাকে আপন করে নেবে, যন্ত্রণা সহ্য করবে, হেরে যাবে। হায় আপসোস! মেয়েটার জীবন থেকে সুখ উবে যাবে!
সময়টা তখন মধ্যরাত! আয়েশী জানালার দিকে মুখ বাড়িয়ে চেয়ে আছে। আয়েশীর ঘর সম্পূর্ন অন্ধকার। আজকাল আয়েশীর আলো ভালো লাগে না। আলো বিহীন ঘুটঘুটে অন্ধকারে সারাক্ষণ পড়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। অন্ধকারে নির্বিঘ্নে মৃদুলকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। কষ্ট হয়, বুক চিড়ে যায়, মস্তিষ্ক ফেঁটে যায়! তবুও সে মৃদুলকে নিয়ে ভাবে। মানুষ মাত্রই কল্পনায় সুখী! আয়েশী নাহয় মৃদুলকে নিয়ে কল্পনায় একটা সুন্দর সংসার সাজাল। তাদের টোনাটুনির সংসার! যে সংসারের চারপাশে শুধু সুখ আর সুখ! এক চিমটি দুঃখ নেই তাতে।
আজ জোছনা রাত! হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারা যায় জোছনার আলো। আয়েশী চোখে জল। এমন কত জোছনা মৃদুল ও আয়েশী মিলে উপভোগ করেছে। জোছনার আলো গায়ে মেখে প্রেমে মত্ত হয়েছে। অথচ, হায়! আজ যে সব স্বপ্ন হয়ে গেছে! এক দুঃস্বপ্ন!
আয়েশীর চোখ বেয়ে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়ালো। আয়েশী বিড়বিড় করে বলল, ‘ মৃ-দু-ল.! ‘
হঠাৎ এক ধমকা হাওয়া আয়েশীর গা বেয়ে চলে গেল। আয়েশী যেন শিউরে উঠল। বাতাস যেন আয়েশীর নাকে মুখে শীতলতা তৈরি করেছে। জানালার কপাট হেলছে। জানালার পর্দা আয়েশীর মুখের উপর আঁচড়ে পড়ল। আয়েশী গা কাটা দিয়ে উঠল যেন।
হঠাৎ কে যেন আয়েশীর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘ আয়েশী, আমি মৃদুল। তোর মৃদুল এসে গেছে। ‘
আয়েশী কেপে উঠল। কে বললো এ কথা? কে? আয়েশী পাগলের মত চারপাশ লক্ষ্য করল। না, কেউ নেই। তবে এ কথা কে বলল? আয়েশী স্পষ্ট শুনেছে, কন্ঠটা মৃদুলের ছিল। মৃদুল এসে গেছে? কোথায় মৃদুল?
‘ আয়েশী, আমি তোকে নিতে এসেছি। যাবি না আমার সাথে? ‘
আবার সেই গা হিম করা কণ্ঠ! আয়েশী পাগল হয়ে গেল। চিৎকার করে বলল,
‘ মৃদুল, কোথায় তুই? আমার সামনে আয়। দয়া করে আমার সামনে আয়। ”
সেই কণ্ঠ উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হা হা হা! পাগলের মত হাসছে। আবার পরক্ষণেই কেঁদে উঠল। আবার হাসছে। আবার কাদছে। সম্পূর্ণ ঘর যেন ভূতের ঘরের মতই গা ছমছমে লাগছে। আয়েশী ভয় পেল। মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। এত শব্দের ভিড়ে আয়েশী নিজেকেই হারিয়ে ফেলল। একসময় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেল আয়েশী। ঝাপসা চোখে ঘরময় মৃদুলকে খুঁজে চলল। অথচ কোথায় মৃদুল?
#মৃত_কাঠগোলাপ – ১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ঘরময় তীব্র নিকোটিনের গন্ধ! ধোঁয়ার গন্ধে পাকস্থলী যেন গুলিয়ে আসে। ওসমান নেহাৎ ভদ্র লোক হওয়ায় নিকোটিন ছুঁয়ে দেখে না। কিন্তু ধ্রুবর কারণে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নিকোটিনের ধোঁয়া গিলতে হয়। ধ্রুব ল্যাপটপের সামনে বসে আছে। ঠোঁটে বাঁকা হাস। চোখে উজ্জ্বলতা! গায়ে জড়িয়ে থাকা ফকফকা সাদা বাথরুব, যা হাঁটু অব্দি এসে থেমে গেছে। হাঁটুর নিচে দৃশ্যমান রোমশ ত্বক! ধ্রুব সোফায় হেলান দিয়ে বসল। দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে সোফার হাতলে রেখে তাকাল ওসমানের দিকে। ওসমান মাথা নত করে কিছু একটা ভাবছে। ধ্রুব বলল,
‘ কি ব্যাপার ওসমান? কিছু নিয়ে টেন্সড? ‘
ওসমান জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। কিছুটা জড়তা নিয়ে বলল,
‘ আসলে, তেমন কিছু না স্যার। ‘
‘ আরে, বলো বলো। আজ মনটা ভালো। যা চাইবে তাই পাবে। সময় থাকতে সুযোগটা লুফে নাও। ‘
ওসমান এবার খানিক সহজ হল। হাতের উপর হাত রেখে ঘষছে। ওসমান বলল,
‘ স্যার, সামনের সপ্তাহে পর আমার মেয়ের বিয়ে। তাই ছুটি….’
ওসমানের কথা আটকে গেল ধ্রুবর তীক্ষ্ম শকুনি নজরে। ভ্রু দুটি ভাঁজ হয়ে যেন চোখের পাতায় নেমে এসেছে। ওসমানের আর কথা বাড়ানোর সাহস হল না। কথাগুলো গলাধঃকরণ করে নিশ্চুপ চিত্তে মাথা নত করে নিল। ধ্রুব কণ্ঠে তীক্ষ্ণতা ঢেলে ঘোষণা করল,
‘ মেয়ের বিয়ের জন্যে টাকাটাই হল মেইন। টাকা ছাড়া আজকাল ভিখারীও বিয়ে করতে চায়না। তুমি এত বছর ধরে আমার সাথে আছ। তাই তোমায় একটুখানি দয়া করাই যায়। সময়মত টাকা পৌঁছে যাবে তোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ‘
ওসমান ছলছল চোখে মাথা নত করে রইল। টাকাই কি দুনিয়ার সব? তার স্ত্রী কতদিন ধরে বলছে, তাদের একটু সময় দিতে। অন্তত মেয়ের বিয়েতে স্ত্রী, ছেলে মেয়ের সাথে থাকতে। টাকার অভাব সে কখনই করে নি। ধ্রুব তাকে মাসে অনেক টাকা দেয়। কিন্তু প্রিয়জনের সাথে কাটানো মুহূর্ত কি টাকা দিয়ে কেনা যায়? ওসমানের চোখ বেয়ে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়াল। ধ্রুব ওসমানের দিকে তাকাল না। বরং ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভাসমান আয়েশীর ঘুমন্ত চেহারা দেখে চোখে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। আর কিসের অপেক্ষা? এবার তার আদরের রক্তজবাকে নিজের কাছে বন্দী করার সময় হয়ে গেছে। অনেক তো হলো এই ছল চাতুরী। এবার নাহয় জড়তার সুতো ছিঁড়ে যাক, অনুভূতিগুলো আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসুক, সম্পর্ক দড়ি মজবুত হোক!
খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি থুতনিতে আঙ্গুল ঘষে কিছু একটা চিন্তা করল ধ্রুব। অতঃপর ফিক করে হেসে ফেলল। ধ্রুবর আচমকা হাসির শব্দে ওসমান অবাক হল। ধ্রুবর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল। ধ্রুব ল্যাপটপে দিকে চেয়ে বলল,
‘ আমার রক্তজবার ভাই কোথায় চাকরি করে, ওসমান? ‘
ওসমান শিউরে উঠল। আতঙ্কে বুক ভেসে গেল। এখন কি তবে আরেকটা ফুলের মত জীবন ঝরতে যাচ্ছে? ওসমান চুপ করে গেল। উত্তর না পেয়ে ধ্রুব বড় বিরক্ত হল। ভ্রুরু কুঁচকে এল। ধমকে বলল,
‘ চুপ কেন? উত্তর দাও? ‘
ওসমান কম্পিত কণ্ঠে বলে,
‘ একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। ‘
‘ তার বাবা তো রিটায়ার্ড, তাইনা? ‘
‘ আব.. হ-হ্যাঁ স্যার। ‘
‘ দ্যাটস গুড! ‘
ধ্রুব পুনরায় ল্যাপটপে চোখে রাখল। আয়েশীর স্কার্ট বটে হাঁটুর উপরে চলে এসেছে। টপসও কোমড় থেকে সরে গেছে। কাপড় উল্টেপাল্টে বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে। এই মুহূর্তে আয়েশীকে ভীষন আবেদনময়ী লাগছে। ধ্রুব ল্যাপটপের উপর দিয়ে আয়েশীর উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রাখল। সঙ্গেসঙ্গে তার সারা অঙ্গে কাঁপন ধরল। চোখ বুজে গেল। মেয়েটার শরীরে কি বিদ্যুৎ খেলে? কি ভয়ঙ্কর!
আয়েশীর শরীরের স্পর্শে ধ্রুবর লোম শিহরণে যেন ঝলসে যায়। ধ্রুব চোখ বুজে মিনমিন করে বলে,
‘ দ্য টাইম হ্যাজ কাম, ফ্লাওয়ার ক্যান্ডি। বন্দি হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করো, রক্তজবা! আর মাত্র কয়েকদিন! যত পারো উড়ে নাও। পাখনা কাটার জন্য আমি আসছি। ‘
ওসমান শুধু চেয়ে থাকে এক মানুসিক বিকারগ্রস্থ ভয়ংকর এ লোকের পানে। ক্রমাগত ঢোক গেলে। ভয়ে ঘাম জমে। এই প্রথম কোনো মেয়ের জন্যে ওসমানের করুণা হচ্ছে। ধ্রুব একটা ভালো মেয়ের জীবন তার ভয়ানক থাবায় তছনছ করতে যাচ্ছে। মেয়েটার কি দুর্ভাগ্য! দুঃখে ওসমানের চোখে জল ভরে।
______________________________
‘ ওই আর সরি মিস্টার তুষার মাহবুব! কোম্পানির ইনফরমেশন লিক করার অপরাধে আপনাকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হল। ‘
বসের কথা শুনে তুষারের মাথায় যেন বজ্রপাত হল। চোখে অন্ধকার দেখল। তুষার উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘ ইম্পসিবল স্যার। আমি এ ধরনের কাজ করিনি। গত তিন বছর ধরে আমি এ কোম্পানিতে চাকরি করছি। এ কোম্পানিকে নিজের দায়িত্ত্ব বলে ভেবে এসেছি। আমি কেন এ কাজ করব? ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড স্যার। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। ‘
জিহাদ হোসেন গম্ভীর হয়ে কি বোর্ড হাত চালালেন। তুষারকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললেন,
‘ দুপুরের মধ্যেই রিজেগনেশন লেটার তোমার কাছে পৌঁছে যাবে। ইউ মে গো নাও। ‘
তুষারের মুখ তেতো হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত লেগে গেল ভয়ংকর রাগে। যে অপরাধটি সে করেনি সে অপরাধের সাজা কেন সে পাচ্ছে? তুষার আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু বস চোখ গরম করে তাকালেন তুষারের দিকে। তুষার দমে এল। চোখ দিয়ে আগুন ঝড়িয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেল বসের কক্ষ থেকে। তুষার চলে গেলে জিহাদ হোসেন হাফ ছাড়েন। তুষারের উপর মিথ্যা আরোপ লাগাতে তার কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু তিনি নিরুপায়। তার হাত যে পরিবারের মমতা দিয়ে বাঁধা।
‘ কাজ হয়ে গেছে ‘ জিহাদ হোসেন মোবাইলের কিবোর্ড চেপে নির্দিষ্ট নম্বরে মুঠো বার্তা পাঠিয়ে দিলেন। বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। ভীষন অসহ্য লাগছে তার। হার্টের রোগটা কি তবে পুনরায় বৃদ্ধি পেল?
#চলবে