মেঘবদল পর্ব -০১

কবুল বলার পরেই ফারিয়া আর জারিফ দুজন দুজনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। এতদিন ধরে যে বিয়েটা ভাঙ্গার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছিল দুজন, শেষ পর্যন্ত পরিবারের লোকের ষড়যন্ত্রে সেটা সম্পন্ন হয়ে গেলো। আর ফারিয়ার ধারনা এটা সম্পূর্ণ জারিফের জন্যই সম্ভব হয়েছে। কারন সে তার পরিবারকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে যে সে ফারিয়াকে বিয়ে করতে চায় না। এদিকে জারিফেরও একই ধারনা যে ফারিয়া চাইলেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারতো। দুজনের মনে তীব্র রাগ আর অনুশোচনা থাকলেও দুই পরিবারের সদস্যরা কিন্তু ভীষণ খুশী। তাদের মুখে যেন হাসি ধরছেই না। বিয়ের পর্ব শেষ করে ফারিয়ার বাবা এক গাল হেসে বললেন
–আলহামদুলিল্লাহ! কতো কিছুর পরে অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেলো। এখন খাওয়া দাওয়ার পর্বটা সেরে নিলেই হয়। ছেলে মেয়ে দুটো সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে।

পরিবারের সবাই তার কথায় সম্মতি জানালো। বর বউকে খাওয়ানোর জন্য টেবিলে বসিয়ে দেয়া হল। সামনে হরেক রকমের খাবার সাজানো। বিরিয়ানির গন্ধে ফারিয়ার ক্ষুধা আরও বেড়ে গেলো। সে সাত পাঁচ না ভেবে প্লেটে বিরিয়ানি তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তার এরকম আচরনে জারিফ বেশ বিরক্ত হল। আচরনেও বেশ বিরক্ত ভাব তার। ফারিয়া বুঝতে পারল কিন্তু খুব একটা পাত্তা দিলো না। সে নিজের মতো খেয়েই যাচ্ছে। এদিকে রাগে জারিফের ক্ষুধা চলে গেছে। প্লেটে খাবার নিয়ে বসে আছে চুপচাপ। ফারিয়া একবার ফিরে তাকাল। কিন্তু জারিফের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে আর কিছু বলতে পারল না। নিজের খাবারে মনোযোগ দিলো। ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে তাদের। কারন এই বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই চলছে নাটকীয়তা। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হবে কিনা সেটা নিয়ে ছিল সংশয়। সেই কারনেই শুধু দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই বিয়েটা শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর শেষ মুহূর্তের এই প্রস্তুতিতে জারিফ আর ফারিয়া কেউই বিয়েটা আটকাতে পারে নি। খাওয়া শেষে জারিফের বাবা ফারিয়ার বাবাকে বলল
–ভাই সাহেব তাহলে এবার অনুমতি দিন। আমরা বিদায় নেই।

ফারিয়ার বাবা শব্দ করে হেসে ফেললেন। বললেন
–যাবেনই তো। ছেলে মেয়ে দুজনই এখন আপনাদের। আর বাড়িটাও বা কতো দূরে যে এখনই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মাত্র খেলেন। একটু রেস্ট নিয়ে তারপর যাবেন।

ফারিয়ার বাবার এমন কথা শুনে ফারিয়া তার দিকে অসহায়ের মতো তাকাল। তার মনে হল ইনি দুনিয়ার সব থেকে নিষ্ঠুর বাবা যে মেয়ের বিদায়ে এভাবে হাসছে। অথচ তার আদরের মেয়ের বিদায় হিসেবে এখন তার কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুধু তার বাবা কেন মা বোন সবাই কেমন আনন্দ উৎসবে মেতে আছে। সে যে এই বাড়ি থেকে একবারেই চলে যাচ্ছে সেটা নিয়ে কারো কোন কষ্ট নেই। বরং ভিষন আনন্দ হচ্ছে। জারিফ ফারিয়ার দিকে একটু ঝুকে মৃদু সরে বলল
–ভালো করে দেখো। তোমার পরিবারের লোকজন তোমাকে বিদায় দিতে কি উতলা হয়ে আছে। কতো খুশী তারা দেখতে পাচ্ছ? এবার বুঝতে পারছ তো তারা তোমাকে কতো ভালবাসে?

জারিফের কথা শুনে ফারিয়ার চোখে পানি চলে এলো। এতক্ষন এটা নিয়েই সে কষ্ট পাচ্ছিলো। আর জারিফের এই কথা যেন আগুনে ঘি ঢালার উপক্রম হয়ে গেলো। ফারিয়ার এখন এটা ভেবেই আরও বেশী কষ্ট হচ্ছে যে পরিবারের কেউ তো তাকে ভালবাসেই না এদিকে যার সাথে বিয়ে হল সেও তাদের মতই। এমন অবস্থায় শান্তনা দিয়ে মন ভালো করার চাইতে এসব বলে আরও বেশী কষ্ট দিচ্ছে। ভাবতে ভাবতে সে কেদেই ফেললো।

————-
রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে একা বসে আছে ইভান। মাঝেমাঝে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। তার অস্থিরতা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল একটা। পুনরায় কফির কাপে চুমুক দেয়ার আগ মুহূর্তেই ঈশা ঠিক কোথা থেকে যেন ঝড়ের গতিতে এসে টেবিলের উপরে এক জোড়া সোনার চুরি বেশ শব্দ করে রাখল। ইভান চুরিগুলোর দিকে তাকাল। তার মায়ের হাতের চুরি। সব সময় বলতো এই চুরি ছেলের বউকে দিবে। ইভানের বুঝতে বাকি থাকলো না এগুলো ঈশার কাছে কিভাবে গেলো।
–লিসেন মিস্টার ইভান রহমান। তুমি নিজেকে কি ভাবো? তোমার মা আমার সাথে বিয়ে ঠিক করলো আর তুমিও রাজি হয়ে গেলে? শুধু তাই না আমাকে দেখা করতে রেস্টুরেন্টেও ডেকে পাঠালে? কি অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা তোমার।

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামল ঈশা। অতিরিক্ত উত্তেজনা আর রাগের কারনে হাপিয়ে উঠেছে সে। জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে আবার বলল
–আমি তোমাকে সহ্য করতে পারি না। তাই কোনভাবেই তোমার সাথে বিয়ের কথা ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব না। এটা নিজেও মাথায় ঢুকিয়ে নাও আর তোমার বাড়ির সবার মাথায় ঢুকিয়ে দাও ভালো করে। যাতে দ্বিতীয়বার আর এরকম কোন কথা না উঠে।

এতক্ষন ইভান খুব শান্ত ভাবে ঈশার কথা শুনছিল। অপেক্ষা করছিল তার কথা শেষ হওয়ার। কারন সে খুব ভালো করেই জানে ঈশা বাড়ি থেকে যা ভেবে এসেছে সেসব ঠিক সেভাবেই বলবে। একটা শব্দও বাদ যাবে না। আর তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত না সে কারো কথা শুনবে আর না সে কোন কথা বুঝবে। তাই ঈশা থেমে যেতেই ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–ঈশা! একটু শান্ত ভাবে বস। আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে। আমার কথা গুলো শুনলেই হয়তো তুই বুঝতে পারবি সবটা।আমাকে একটু সময় দে প্লিজ।

এমন কথা শুনে ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ইভান যে গত কয়েকদিনে তার কাছে একদম অসহ্য হয়ে উঠেছে সেটা স্পষ্ট করেই বলেছে ঈশা। কিন্তু সেটা জানার পরেও ইভান তাকে রেস্টুরেন্টে ডেকেছে দেখা করতে। আবার এখন শান্ত ভাবে বসে কথা বলতে বলছে। এটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। রাগের মাত্রাটা আরও বেড়ে যেতেই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো ঈশা। ইভানের সামনে থাকা কফির কাপটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো। বিদঘুটে শব্দে কাপটা ভেঙ্গে গেলো। মেঝেতে বিছিয়ে পড়ল সমস্ত কফি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো কাচের টুকরো। রেস্টুরেন্টে উপস্থিত সবার মনোযোগ বিঘ্নিত হল। দৃষ্টি গিয়ে ঠেকল দুজনের উপরে। ইভান এতক্ষন ঈশার ঝাঁঝালো কথা গুলো সহ্য করলেও এমন উগ্র ব্যবহার মেনে নিতে পারল না। হুট করেই রাগটা মাথায় উঠে গেলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ঈশার সামনে। দাতে দাত চেপে বলল
–এটা কি ধরনের ব্যবহার ঈশা?

মুখের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে ইভানের দিকে তাকাল ঈশা। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। ঈশার আচরন দেখে ইভানের মনে হচ্ছে সে দুনিয়ার সব থেকে জঘন্যতম অপরাধ করে ফেলেছে আর তার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড একদম সঠিক। এতো কিছুর পরেও ইভান পরিস্থিতি সামলাতে অত্যন্ত শান্ত ভাবে বলল
–এখানে এরকম আচরন শোভনীয় নয়।

ইভানের কথা শেষ হল না। তার আগেই ঈশা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল
–তুমি যেমন তোমার এমন ব্যাবহারই প্রাপ্য। এর থেকে ভালো ব্যাবহার আর আমার কাছ থেকে তুমি পাবে না।

কথাটা একটু জোরেই বলে ফেলেছিল সে। তার ঝাঁঝালো কথার তেজ রেস্টুরেন্টের কোনায় কোনায় পৌঁছে গেলো মুহূর্তেই। ইভান অপ্রস্তুত ভাবে চারিদিকে তাকাল। বেশ আগ্রহ নিয়ে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কোন মুভির শুটিং চলছে। ইভান বিরক্ত হল। কিন্তু রাগটাও আর আটকে রাখতে পারল না। বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলল
–ইডিয়েট! এটা তোর বাবার তৈরি রাজ মহল না। এখানে তুই যা ইচ্ছা তাই করতে পারিস না। তোর নুন্যতম ভদ্রতা শেখা এখনো বাকি।

ঈশা হাসল। তাচ্ছিল্য করে বলল
–কে ভদ্রতা শেখাবে শুনি? তুমি? তোমার মতো ছেলের কাছ থেকে আমাকে ভদ্রতা শিখতে হবে? সেই ভদ্রতা শেখার চেয়ে সারাজিবন অভদ্রের ট্যাগ নিয়ে চলফেরা করা অনেক ভালো।

ইভান এবার নিজেকে সামলাতে পারল না। রাগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে বুঝতে পারছে এভাবে চলতে থাকলে বড় কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে যে কোন সময়। তাই এখান থেকে চলে যাওয়াই তার জন্য ভালো হবে। ঈশার সাথে কোন কথা না বলেই ইভান কফির বিল দিতে চলে গেলো কাউন্টারে। কফির বিলের সাথে কাপ ভাঙ্গার জন্য ইভান কে এক্সট্রা কিছু টাকাও দিতে হবে। সে পকেট থেকে টাকা বের করতেই ঈশা পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলল
–কাপের দামটা আমি দেবো।

ইভান পাশ ফিরে তাকাল। ঈশাকে দেখে সে অত্যন্ত বিরক্ত হল। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে খুব ধিরে বলল
–কাপটা আমি ভেঙ্গেছি তাই আমিই সেটার দাম দিবো। তুমি কেন আমার কাজের ক্ষতিপুরন দিতে যাবে?

ইভান শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। তারপর একটু গলা তুলে বলল
–মামা ম্যডামের কাছ থেকে পুরো বিল নিয়ে নিও। উনি অনেক বড়লোকের মেয়ে। সব সময় ব্যাগে অনেক টাকা নিয়ে ঘোরে।

ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। ইভান আর সেখানে এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। ঈশা নির্বাক হয়ে ইভানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকলো। বিল দিয়ে খানিকবাদে সেও রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলো। কিন্তু বেরিয়ে এসেই দেখল ইভান বাইকে বসে আছে। ঈশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সামনে ঘুরে নিজের মতো হাটতে শুরু করলো। ইভান পিছন থেকে আওয়াজ দিয়ে বলল
–আশে পাশে এই সময় কোন রিকশা পাবি না। বাইকে ওঠ।

ঈশা কোন উত্তর দিলো না। আবারো সামনে হাটতে শুরু করলো। ইভান বেশ বিরক্ত হল। ঈশার কাছে গিয়ে হাত টেনে ধরে বলল
–মাঝপথে এরকম নাটক না করলেও পারিস। আর হ্যা তোর বাসায় আর আমার বাসায় সবাই জানে যে তুই আমার সাথে দেখা করতে এসেছিস। তাই তোর কোন বিপদ হলে সেটার দায়ভার আমার। আমি এরকম কোন দায়ভার নিতে রাজি না।

–আমি সবাইকে বলে দেবো। তোমাকে কোন দায় নিতে হবে না।

ইভানের কথার বেশ ঝাঁঝালো উত্তর দিলো ঈশা। ইভান রেগে দাতে দাত চেপে বলল
–আমি এক কথা বারবার বলি না ঈশা। সেটা তুই ভালো করে জানিস।

ইভানের রাগের তীব্রতা এবার ঈশা ভালো করেই বুঝতে পারল। তাই আর কথা বাড়াল না। বাইকে উঠে বসল। বাড়ির সামনে এসে ঈশা নেমে গেলো। এর মাঝে দুজনের কোন কথা হয় নি। ঈশা বাড়ির দরজার দিকে পা বাড়াতেই ইভান অতি আবেগি কণ্ঠে ডাকল
–ঈশা।

ঈশা থেমে গেলো। ইভানের মুখে নিজের নাম শুনে মনটা ভরে গেলো তার। ইভান হাতে ধরে থাকা ডাইরি টা ঈশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
–এটা তোর।

ঈশা বড় বড় চোখে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে। ভেবেই পাচ্ছে না তার ডাইরি ইভানের কাছে কিভাবে গেলো। ইভান খুব শান্ত গলায় বলল
–আমি তোকে রেস্টুরেন্টে ডেকেছিলাম নিজেদের মতো কথা বলে বিষয়টা ঠিক করে নেয়ার জন্য। বিয়ে করার জন্য নয়। আমি তোকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাই নি ঈশা।

একটু থেমে তাচ্ছিল্য করে হেসে আবার বলল
–সত্যি কথা বলতে কি বিয়ে করে এরকম একটা পরাধীন জীবন যাপন করার মতো ছেলে আমি নই। তাই এই সম্পর্কের প্রতি আমারও কোন আগ্রহ নেই। তুই আমাকে বিয়ে করতে পারবি না সেটা আমি আমার মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছি। আর আমার বাড়ির বিষয়টাও আমি সামলে নিব। কিন্তু তুই নিজের ডাইরি সামলে রাখিস। যাতে আবারো এটা কেউ পড়তে না পারে। আর সেটা পড়েই দ্বিতীয়বার আমাদের সাথে কথা না বলেই আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

ঈশা হতবিহবল চোখে তাকিয়ে আছে। ইভান ডাইরিটা ঈশার হাতে ধরিয়ে দিয়েই চলে গেলো। ইভানের কথা বুঝতে ঈশার দেরি হল না। ঠিক কি কারনে দুই পরিবার মিলে তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা ইভানের কথাতে ভালো করেই বুঝতে পারছে। ইভানের কথা শুনে বেশ বুঝতে পারল যে সে নিজেও বিয়েটা করতে চায় না। কিন্তু ঈশার খুশী হওয়ার কথা থাকলেও কেন জানি বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখের কোন বেয়ে গড়ে পড়ল পানি।

———–
একটা নামীদামী রেস্টুরেন্টে হবু বরের সাথে দেখা করতে এসেছে মৃন্ময়ী। বাইরে ভীষণ জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। সচ্ছ কাছের দেয়ালে বাধা পেয়ে গড়িয়ে আবার নিচে পড়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ফোটা গুলো। আর সে মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। এই বৃষ্টির গড়িয়ে পড়ার মতো তুচ্ছ ব্যাপারটাই আজ কেন জানি খুব মনে ধরছে তার। বৃষ্টি তার তেমন পছন্দ না। প্যাচপ্যাচে কাঁদা তার একদম ভালো লাগে না। আর বৃষ্টির দিনে অদ্ভুত ভাবে কোন কারন ছাড়াই তার মন খারাপ হয়ে যায়। আজও একই অবস্থা। অবশ্য আজ মন খারাপ হওয়ার যথেষ্ট কারন রয়েছে তার কাছে। অনেক বেছে বেছে বাবা মা শেষ পর্যন্ত তার বিয়ের কথা ফাইনাল করতে চলেছে। তার আগে ফর্মালিটির জন্য ছেলে মেয়ের দেখা করার বিষয়টাও পরিবারের ইচ্ছাতেই ঠিক করা হয়েছে। আর তাতেই তারা দুজনেই সায় দিয়েছে। মৃন্ময়ীর ধারনা এরেঞ্জ ম্যারেজ মানেই একটা বাধা ধরা সম্পর্ক। যেখানে বাধ্য হয়ে দুজন মানুষ একটা জীবন কাটিয়ে দেয়ার মতো প্রতিজ্ঞা করা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ভালবাসাটাও ঠিক ঠাক হয়ে উঠে না।

কিন্তু তার এমন একজন মানুষ চাই যার সান্নিধ্যে এসে সে ভালবাসাকে নতুন রুপে চিনবে। এই জোর করে জড়িয়ে যাওয়ার সম্পর্কের ধারনা বদলে যাবে। বাধ্য হয়ে নয় ভালবেসে দুজন দুজনের পাশে থেকে কাটিয়ে দিবে একটা জীবন। তৈরি হবে কিছু বিশেষ মুহূর্ত যা ভালবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে।

মৃন্ময়ী হতাশ শ্বাস ছাড়ল। যে মানুষের সাথে দেখা করতে এসেছে শুনেছে সে নাকি অত্যন্ত বাস্তববাদী। তাঁর কাছে অনুভূতির খুব একটা দাম নেই। তাই হয়তো তাঁর জীবনেও এমন কেউ আসতে চলেছে যার সাথে ভালবাসাটা ঠিক ঠাক হয়ে উঠবে না।

চলবে…

#মেঘবদল
লেখক-এ রহমান
সুচনা পর্ব

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here