#মেঘমালা
#পর্বঃ১০
#Sohana_Akther
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মালা শাড়ি পরছিল যখনি শাড়ির আঁচল তুলে নিয়ে কাধে দিতে যাবে তখনই মেঘ রুমে উপস্থিত হলো । মেঘকে হঠাৎ দেখে চমকে যাওয়ার ফলে তার শাড়ির আঁচল মাটিতে পরে গেল । আঁচল হাতে তুলে সামনে এগোতেই শাড়ির কুচিতে পা লেগে পরে যেতে নিলে মেঘ দ্রুত এসে তাকে ধরে ফেললো ।
এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মালার কার্যক্রম দেখছিল মেঘ , মালাকে এই অবস্থায় দেখে চোখ সরাতে পারলো না কিন্তু যখনই দেখলো মালার পা শাড়িতে বেদে পরে যাচ্ছিল তখন দ্রুত এসে তাকে ধরে ফেললো । মালা নিচের ঝুকে আছে আর মেঘ তার উপরে । একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ ও মালা হঠাৎ মেঘের নজর মালার গলার একটু নিচে বুকের উপর লালচে তিলটায় পরলো । কেমন নেশাকাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘ তিলটার দিকে । সেই প্রথম থেকেই মালার বুকের উপর এই লালচে তিলটা মেঘকে অনেক আকর্ষিত করে । যখনই দেখে তখন মনে হয় নতুন করে দেখছে ।
হঠাৎ মালা নড়েচড়ে উঠলে মেঘ তাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দেয় । দাড়ানোর সাথে সাথে মালার কোনো রকম থার তার শাড়ির আঁচল গায়ে বেড়িয়ে দিল । মেঘের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন লজ্জা লাগছে তার। মালার এমন লজ্জামাখামুখ দেখে হেসে ফেললো মেঘ । মেঘের হাসির শব্দ শুনে মালা তার দিকে তাকালো ।
—— কি ব্যাপার এভাবে হাসছেন কেনো?
—— তোমাকে দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে” বলে হো হো করে হাসতে লাগলো ।
—– এখনো একা একা পাগলের মতো হেসে যাচ্ছেন । কি কারণে হাসছেন আমায় ও একটু বলেন ।
—— তুমি এভাবে লজ্জায় জরোসরো হয়ে আছো যেনো আমি কোনো বাহিরের লোক । নিজের স্বামীর থেকে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে হুহ , এর থেকেও তো অনেক কিছু বেশী দেখেছি আমি।
—— ধ্যাত চুপ করেন আপনি কখন থেকে কি শুরু করেছেন ।
মালাকে অবাক করে দিয়ে মেঘ হঠাৎ বলে উঠলো,
— আজ আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিব মালা এইদিকে আসো ।
মেঘের কথা শুনে যেনো মালা আকাশ থেকে পরলো । কিছুটা সচেতন হয়ে আমতা আমতা করে মালা বলে উঠলো,
— না না মেঘ, আমি নিজেই শাড়ি পরতে পারবো আপনার কষ্ট করতে হবে না । আপনি বরং ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন আপনার লেইট হয়ে যেতে পারে ।
— আমার লেইট হবে না মালা সেই নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না । এখন যা বলছি তা চুপচাপ শুনো নাহলে আজ রাতে তোমার খবর আছে বলে দিলাম । আমার কথা না শুনলে অনেক বড় মাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে মেডাম আজ রাতে যে আপনার সাথে কি হবে ইসস ।
কথাটি বলে মেঘ মালাকে চোখ টিপ মেরে মুচকি হাসতে লাগলো । মেঘের কথা শুনে মালা লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেল, সে আড়চোখে মেঘকে দেখার চেষ্টা করতেই মেঘ আরেকবার চোখ মেরে দিল । এবার তো মালার লজ্জায় যায় যায় অবস্থা। মালা দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
—- কি অসভ্যের মত কথা বলছে মেঘ কি হয়েছে আজ তার । আমি যে লজ্জা পাচ্ছি তার এমন কথার সে কি বুঝে না ।
মালা নিজের অজান্তে বিড়বিড় করে কথা বলতে যেয়ে একটু জোরেই কথা বলে ফেলেছে যার ফলে কথাটা মেঘের কান অব্দি চলে গেল । মালা তো এক মনে কথা বলেই যাচ্ছে । মালার কথা শুনে মেঘ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এসে মালার কাধে হালকা ফু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
—– অসভ্যতামি কি আজ তুমি নতুন করে তার সংজ্ঞা জানতে পারবে আমার জানপাখি ” বলেই মালার কামড় দিয়ে দিল ।
মেঘের ফু দেয়ার সাথে সাথেই মালা যেনো একদম বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেল । মেঘের ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো যেনো তার কাছে মাদকের মত লাগছে । আর কামড় দেয়ার সাথে সাথেই মালা মেঘকে জরিয়ে ধরলো । তার হৃৎস্পন্দন অনেক তীব্র গতিতে ছুটে চলছে , বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে মালা । মালার এই অবস্থা দেখে মেঘ মৃদু হাসলো । মালাকে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে তার কানে কানে বললো ,
—– কি মেডাম আমি নাকি অসভ্যের মত কথা বলছিলাম এখন কে কাকে এভাবে জরিয়ে ধরেছে বলুন । হাতের সবগুলা নখ তো বোধ হয় একদম আমার পিঠে ঢুকিয়ে দিলে আহহ কি জ্বালা পোড়া করছে ।
মেঘের কথা শুনে মালা তার থেকে ছুটে আসার চেষ্টা করতেই মেঘ তাকে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরলো । এত শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে যে মালার দম আটকে আসছিল । কি এক শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থা!
—– আহহ্ মেঘ ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি তো আর অনেক লেইট ও তো হয়ে যাচ্ছে রেডি হতে হবে না ।
মালাকে ছেড়ে দিয়ে মেঘ বললো,
—– আচ্ছা ছেড়ে দিলাম কিন্তু শাড়ি আমিই পরিয়ে দিবো আর কোনো কথা নেই । তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো ।
মালাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মেঘ তাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে শুরু করলো । মালা লজ্জায় চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে আছে । শাড়ি পরাবার বাহানায় মেঘের হাত পিঠ , পেটে ছুঁয়ে দিচ্ছে । যতবার মেঘের হাত মালার শরীর স্পর্শ করছে ঠিক ততবারই মালা কেপে কেপে উঠছে । মালার এই অবস্থা দেখে মেঘ মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো । সে নিজ ইচ্ছে করেই এমন দুষ্টুমি করছে মালার সাথে । কুচি গুজার সময়ে কুচি নষ্ট হওয়ার বাহানায় কুচিগুলো বারবার ফেলে দিচ্ছে আর আবার গুজছে । গুজার সময় মেঘের হাত মালার পেটের অনেক গভীরে পৌঁছেযাচ্ছিল , মালা মেঘের মাথার চুলগুলো খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর বারবার কেপে কেপে উঠছে।
শাড়ির কুচি গুজেই মেঘ আচমকা মালার পেটে একটি চুমু দিল। চুমু দেয়ার সাথে সাথেই মালা মেঘের চুল নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে খামচে ধরলো । মেঘ একের পরে এক চুমু দিয়েই যাচ্ছে মালার পেটে । হঠাৎ মালা ঘুরে দাঁড়িয়ে পরলো । বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে । মেঘ দাঁড়িয়ে মালাকে তার দিকে ফিরিয়ে শাড়ির আঁচলটা অনেক সুন্দর করে আটকে দিল । মালা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে । মেঘ মালার মুখ উপরে করে এক মোহনীয় দৃষ্টিতে মালার দিয়ে চেয়ে আছে । আজ কেমন যেনো নেশা কাজ করছে মেঘের । আচমকা মালার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের আয়ত্বে নিয়ে নিল মেঘ । মালা প্রথমে মেঘের ঠোঁটের এই হঠাৎ আক্রমণ সামলে উঠতে পারি নি , পরে সে নিজেও মেঘের সাথে তাল মেলাতে লাগলো । মালার থেকে সারা পেয়ে মেঘ ঠোঁটের গতি আরো বাড়িয়ে দিল । উন্মাদের মত একে অপরের ঠোঁটের মধুরসুদা পান করছে তারা । কতক্ষণ এভাবে আছে তাদের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই । আচমকা মালা মেঘ ধাক্কা দিয়ে নিজ থেকে সরিয়ে দিল । মালার ধাক্কা খেয়ে মেঘ কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো তার থেকে । দুজনেই অনেক জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে , মেঘ মালার দিকে তাকাতেই সে মুচকি হেসে রুম থেকে চলে গেল । মালার এভাবে চলে যাওয়া দেখে মেঘ আপন মনে হাসতে লাগলো । অবশেষে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে ।
___________________________________
আজ আর্ট গ্যালারিতে মেঘের কোম্পানি থেকে পেন্টিং এক্সিবিশন আয়োজন করা হয়েছে । মেঘ ও মালা সেখানেই যাচ্ছে । বিয়ের পর এই প্রথম মেঘ মালাকে তার সাথে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে । সেখানে নানান লোকজনদের মধ্যে মালাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে । মালার আনন্দের সীমা নেই । মেঘের ফুফি দুদিন আগেই চলে গেছে, মালা অনেক কৃতজ্ঞ তার প্রতি । আজ তার ভাগ্যের এই খুশি গুলো মালা তার জন্যই পেয়েছে ।
মেঘ ওয়াশরুম থেকেই একবারে ড্রেস পরে বের হয়ে এসে দেখে মালা সম্পূর্ণ রেডি হয়ে বসে আছে । মালা আজ রক্তজবা রঙের একটি হাফ সিল্কের শাড়ি পরেছে । যার আঁচল ও পাড়ে গোল্ডেনের মধ্যে লাল সুতার কাজ । চুলগুলো হাতখোপা করে রেখেছে । আর অল্প কিছু গহনা পরেছে , এতেই তাকে একদম নায়িকাদের মত লাগছে । মেঘকে দেখে মালা তাড়া দিতে লাগলো জলদি রেডি হতে । মেঘ এতক্ষণ দাঁড়িয়ে মালাকে জরিপ করে যাচ্ছিল । মেঘ আজ ব্ল্যাক কালারের কমপ্লিট সুট পরেছে । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো সুন্দর করে স্পাইক করে সেট করলো । হাত ঘড়ি পরে গায়ে পারফিউম দিয়ে টেবিল থেকে ওয়ালেট , রুমাল, গাড়ির চাবি নিয়ে মালার দিকে ফিরে বললো সে একদম রেডি ।
মালা একনাগাড়ে তার দিকে তাকিয়েই আছে । মেঘকে কালো কালের পোশাকে অনেক সুন্দর লাগে তার কাছে । আর তার পারফিউমটার গন্ধ মালার অনেক পছন্দের ।
‘—– কি মেডাম এখন এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন চলুন না হলে লেইট হয়ে যাবে ।
মেঘের কথা শুনে মালা মুচকি হেসে বললো ,
—— হুম চলুন । শুধু শুধু তাকিয়ে দেখার কি আছে ।
—— আচ্ছা কিছু নাই বুঝি তবেরেহহ……
মেঘ মালাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে তার কানের নিচে একটা কালো টিকা দিয়ে দিল ।
—– এবার কারো কুনজর লাগবে না আমার সুন্দরী বউয়ের উপর ।
—– এবার তো চলুন ।
—– হুম চলো , চলো ।
মালাকে নিয়ে মেঘ বারোটায় আর্ট গ্যালারিতে পৌঁছালো । শহরের নামি দামি সকল বিজনেস ম্যানরা এসেছে এখানে । অনেক মানুষে ভরপুর গ্যালারি । অনেক নিউজ রিপোর্টাররা ও এসেছে আজকে এক্সিবিশন কভার করতে । মালা প্রথম বারের মত এসব দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো । মালার অস্বস্তি মেঘের চোখ এড়ালো না।
—– ভয় পেয়েও না আমি আছি তো । এরা সবাই আজ এক্সিবিশন দেখতে এসেছে । আমাকে নানান বিজনেস ম্যান ও রিপোর্টারদের সাথে কথা বলতে হবে , তুমি আমার পাশেই থেকেও দূরে যেওনা । তাছাড়া এখানে তোমার পরিচিত কেউ নেই ।
—— ঠিক আছে আমি আপনার সাথে সাথেই থাকবো ।
——- এবার ভিতরে যাওয়া যাক ।
মেঘ গ্যালারির ভিতরে ঢূকতেই রিপোর্টাররা তাকে ঘিরে ধরলো । এক এক জন এক এক প্রশ্ন করছে মেঘের পেন্টিং নিয়ে । এবার মেঘ কি স্পেশাল করেছে তার ফ্যানদের জন্য । মেঘ সন্তর্পণে সকলের সব উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল । এর মাঝেই কয়েক জন মালাকে নিয়ে প্রশ্ন করে উঠলো । এই প্রথম মেঘ তার সাথে মালাকে কোনো প্রোগ্রামে নিয়ে এসেছে, এতদিন কেনো নিয়ে আসেনি এসব । মেঘ কোনো রাগ ছাড়াই অনেক সুন্দর করে এর উওর দিল ।
সব কথাবার্তা সেরে মেঘ মালাকে নিয়ে পেন্টিং যেখানে রাখা আছে সেখানে নিয়ে আসলো । সেখানে আরো নানান চিত্রকার তাদের চিত্র নিয়ে হাজির হয়েছে । মালা এই প্রথম এসব দেখে একদম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল । মালার মুখমণ্ডলে মুগ্ধতা দেখে মেঘের মনেও শান্তি লাগলো । আজ মনে হচ্ছে সে মালাকে সুখী রাখতে পেরেছে ।
চলবে . . .