মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -০৩

#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#তিন
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

কলেজ থেকে পিকনিকে সেন্টমার্টিন যাবে শুনেই রোদ খুব খুশী। কারণ তার খুব ইচ্ছে ছিল সেন্টমার্টিন যাওয়ার। কিন্তু তার বাবা তাকে একা কোথাও যেতে দেয় না তাই আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। কলেজ থেকে বন্ধুদের সাথে যাওয়ার আলাদা আনন্দ।

রোদ তার বান্ধবী সুচী ও সনি একসাথে বসে খুব প্লান করছে কী কী করবে। কিন্তু সুচী অন্য কারনে খুশী কারন তার বয়ফ্রেন্ড যাবে তার সাথে। একথা শুনে রোদের খুব মন খারাপ হলো সে বলল,

“ধুর তোরা তোদের প্রমিকদের এর সাথে থাকবি আর আমি একা একা কী করব? ইশ এমন যদি কোনো সিস্টেম থাকতো। শুধু মাত্র পিকনিকে যাওয়ার জন্য একটা প্রেম করা যেত। পিকনিক থেকে ফিরেই ব্রেকআপ। তাহলে কেমন হতো বলতো সনি?”

কথাটা শেষ করতেই রোদ পেছনে ফিরে দেখল প্রায়শ ও সকাল,দাড়িয়ে আছে তাদের ক্লাসে। একটুপর দেখল তাদের পেছনে স্যার এলেন।
রোদ একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মনে মনে ভাবল এরা শুনেনিতো তার কথা! ইশ যদি শুনে কী ভাববে তাকে! ধ্যাৎ মাঝে মাঝে কী এক একটা কাজ করে না সে।

স্যার যেহেতু তাদের পরে এসেছে তাই স্যার শুনবেন না। কিন্তু এনারা যদি শুনে! রোদ লজ্জায় মুখ লুকাল।

স্যার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন,
“প্রিয় ছাত্রছাত্রীবৃন্দ তোমাদের ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে যে, আমাদের কলেজ থেকে পিকনিকে সেন্টমার্টিন যাবে। তোমরা যারা যাবে তারা কালকের মাঝে টাকা জমা দিবে। পরিচয় করিয়ে দেই,এরা হচ্ছে তোমাদের বড় ভাই আমাদের কলেজের খুবই মেধাবী ছাত্র। সাইফ রহমান প্রয়াস। আর ও হচ্ছে সাফোয়ান আহমেদ সকাল। তাদের সব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কলেজ থেকে। তোমাদের যার যেই সমস্যা হবে তাদের বলবে। আগে থেকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। যাতে পরে কোনো অসুবিধে না হয়। সবাই নিজের মতো করে প্রস্তুতি নাও।”

রোদ কলেজ থেকে বেরুতে যাবে এমন সময় সকাল পেছন থেকে রোদকে দেখে বলল, “আরে খুকুমনি যে কেমন আছো?”

“ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”

সকাল কৌতূকের সাথে বলল, “আছি ভালো। কিন্তু আমাকে ভাইয়া বানাই দিলা ছোট বোন।”

” ভাইয়ারাইতো ছোট বোনকে খুকুমণি ডাকে। তাই তো আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকছি।” রোদ ঠোঁট টিপে হেসে বিদায় নিয়ে চলে গেল তার বান্ধবীদের সাথে।

শশী সকালের দিকে তাকিয়ে জোরে হাসতে লাগল বলল, “দেখলি কেমন নিজের জালে ফেসে গেলি।আর কাউকে খুকুমণি বলার আগে মনে রাখবি সব কয়টা মেয়েই ভাইয়া বানাই দিবে। তখন আর বউ পাবি না শালা।”

শশীর কথার সাথে সবাই হাসছে।

সকাল শশীর মাথায় গাট্টা মেরে বলল, “শালি বউ না ফেলে তোরে বিয়ে করুম বুঝলি?”

শশী তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, ই-য়া-য়া-ক তোরে বিয়ে করমু আমি! অসম্ভব! তোর মতো ছেচড়ারে আমি বিয়ে করে মরুম নাকি! প্রয়োজনে সারাজীবন কুমারী থাকমু।”

“হইছে থাক তোর মতো এটোম বোমকে আমি বিয়ে করমু না।”

প্রয়াস তাদের থামিয়ে বলল, “কত দায়িত্ব আমাদের ভুলে গেছিস। তোরা যেভাবে ঝগড়া করছিস। এভাবে কোনো কাজই হবে না। এবার দয়া করে চল কাজ শেষ করে নিই।

★★★

সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য সবাই চট্রগ্রাম থেকে টেকনাফে যাওয়ার বাসে উঠে। কারণ টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাবে তারা।
সবাই বাসে উঠে যাওয়ার পর গুনে দেখল একজন এখনো আসেনি হিসেব মতো। প্রয়াস সবার নাম ডাকার পর দেখল।
যে আসেনি তার নাম হচ্ছে রোদেলা বিনতে পারি।

রোদের পুরো নাম প্রয়াস জানেনা । সে শুধুমাত্র রোদ নামেই চিনে রোদেলাকে। নামটা বলার পর সুচী বলল,
” ভাইয়া রোদ আসবে, বাসা থেকে বেরুতে দেরি হয়ে গেছে। আমাকে কল দিয়েছে প্রায় চলে এসেছে। প্লিজ ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।”

প্রয়াস বুঝতে পারে রোদেলাই হচ্ছে রোদ।
সে সনিকে বলল, ” কল দাও তাকে। ৫মিনিটের বেশি দেরি হলে আমাদের পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে।
এরই মধ্যেই রোদ বাসে উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে।
বুঝাই যাচ্ছে দৌঁড়ে আসছে সে। সুচী, তার প্রেমিক রাহাত, সনি তাদের বন্ধু রহিমের সাথে বসেছে। এদিকে সবাই বসে গেছে যার যার সিটে। রোদের সিট পড়ল প্রয়াসের সাথে। অথচ প্রয়াস জানেইনা। টিকেটের সব দায়িত্ব ছিল সকালের উপর। এবার তার বুঝতে দেরি হলো না। সকাল ইচ্ছে করে রোদকে তার পাশের সিটে দিয়েছে। কিন্তু এখন সকালকে কিছু বলতে ও পারছেনা। এখানে জুনিয়ররা আছে। ঠিক করে নিল পরে দেখে নিবে সকালকে।

রোদ আগেই নিজের সিটে গিয়ে বসেছে। প্রয়াস সবাইকে সব বুঝিয়ে বলে রোদের পাশের সিটে গিয়ে বসল। রোদ কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছিল। হঠাৎ প্রয়াস তার পাশে বসছে দেখে চমকে গেল। প্রয়াস স্মিত হেসে বলল, “এটা আমার সিট।”

রোদ বলল, ” আপনি আপনার বন্ধুদের ছেড়ে এখানে?”

“আসলে সিটতো স্যাররা কেটেছে তাই আমি জানিনা।”
প্রয়াস মিথ্যা বলল যেন রোদ কিছু মনে না করে।

রোদ বলল, “ও আচ্ছা।”

“তোমার সমস্যা হলে বলো। আমি ব্যাবস্থা করে নিচ্ছি।”

“না! না কী বলেন আপনার সিটে আপনি বসবেন আমার কিসের সমস্যা।”

কথাটা বলেই রোদ কানের মাঝে ইয়ারফোন গুজে দিল। প্রয়াস কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।

জানালার পাশে বসায় রোদের সামনে কাটা চুলগুলো খুব জালাচ্ছে রোদকে , রোদ চোখ বন্ধ করে বারবার কানের পাশে গুজে দিচ্ছে কিন্তু বাতাসে বারবার সামনে চলে আসছে। এতক্ষণ প্রয়াস চুপচাপ রোদের চুলের খেলা দেখছিল। জানে না কেন হঠাৎ এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে তার মাঝে। একটা অষ্টাদশী মেয়ে পরনে লং কুর্তি আর জিন্স। দুইবাহুতে আবদ্ধ বুকের উপর সুন্দর করে ওড়নায় আবৃত। এলো চুলের খেলা। সবটা দেখতে ভালোই লাগছে প্রয়াসের।

কিছুক্ষণ আগে সকালের উপর রাগ হচ্ছিল কেন সে তার সিট রোদের পাশে দিল। কিন্তু এখন সেই রাগ কেমন করে যেন উদাও হয়ে গেল। অদ্ভুতভাবে তার পরিবর্তে জায়গা করে নিল এক নাম না জানা অনুভূতি। যা তার কাছে কেমন যেন নতুন ঠেকল! কেমন এলোমেলো! অগোছালো! শুধু অনুভব করছে কিছু একটা, কিন্তু সেটা কী তা তার কাছে অস্পষ্ট রয়ে গেল। পাশাপাশি বসায় রোদের চুলের মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে লাগছে। এতো সুন্দর ঘ্রান হয় মেয়েদের চুলের প্রয়াস জানত না। কই আগে কখনো এমনতো হয়নি! প্রতিদিন শশী সাবার সাথে উঠে বসে কই তাদের বেলায় এমন তো হয়নি। তবে আজ কেন ঘোর ঘোর লাগছে তার। এটা কিসের ইংগিত! কিসের অনুভূতি!

কেন এতো ভালো লাগছে এলো চুলের অবাধ্যতা! কেন এতো উম্নাদ লাগছে সেই চুলের ঘ্রাণে! কী আছে এই এলো চুলে! নেশা নাকি মায়া!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here