মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -০২

#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#দুই
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

রোদ কলেজে আসলো, কিন্তু প্রথম দিনেই দেরি হয়ে গেল। স্যার কী ভাববে! তাদের ক্লাস হবে পূর্বভবনের ৪ তলায়। কিন্তু রোদ ভুল করে পশ্চিম ভবনে উঠে যাচ্ছে,তাও দৌড়াচ্ছে, হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। পা মচকে পড়ে তাই খুব ব্যাথা পায় সে। যার সাথে ধাক্কা খায় সে রোদকে বলে, “কী ব্যাপার পিচ্চি ঠিক মত হাঁটতে শিখনি! আর কলেজে পড়তে চলে আসছো?

প্রয়াস রোদের হাত ধরে উঠিয়ে দেয়। যদিও পায়ে ব্যথা হচ্ছে তাও রোদ প্রকাশ করছে না।
শুধু বলল, “আমি না আপনার ছাতা আনতে ভুলে গেছি, সরি।”

প্রয়াস বলে,” ইটস ওকে পিচ্চি, পরে দিলেও হবে।
তুমি যেতে পারবে? শুনো আমি তোমার থেকে অনেক বড় তাই আপনি করে বলতে পারছিনা। আমার ছোট বোন ও তোমার চেয়ে বড়, সে এই অনার্সে পড়ে। ”

“আরে না সমস্যা নেই আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন,চাইলে তুই ও বলতে পারেন।”

প্রয়াসের বন্ধু সকাল পেছন থেকে বলল, “আরে না খুকু ,তোমাকে তুমি করেই বলব আমরা।”

রোদ কোনোরকম এদের থেকে পালিয়ে বাঁচে। ক্লাস শেষ করে বান্ধবীর সাথে কলেজের পাশে নিউমার্কেটে যায় ফুচকা খেতে। দুই বান্ধবী আড্ডা দিচ্ছে আর ফুচকা খাচ্ছে। রোদ প্রয়াসের সাথে দেখা হওয়ার সব কথা বলছে বান্ধবীকে।

রোদ বিরক্তি মুখে বলল, “জানিস একজন বলেছে পিচ্চি আরেকজন বলে খুকু, এসব কী বলতো?
আমি এখন কলেজে পড়ি, আর আমাকে কি না বলে পিচ্চি! নেহাত বড় ভাই হবে কলেজের। না হয় দেখিয়ে দিতাম। কেন বাপু? আমার কী নাম নেই! এসব বলে কেন ডাকে?”

রোদ কথা বলতে বলতে সামনের আয়নায় দেখে, তার পেছনে প্রয়াস বসে আছে তা বন্ধুদের সাথে, তারা সবাই তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। ভয়ে রোদের মুখ এইটুকুনি হয়ে গেছে। সবাই যেভাবে তাকিয়ে আছে, নিশ্চয়ই সবাই শুনছে। মনে মনে জপ করল, “আল্লাহ বাঁচাও।”

রোদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছে।
কী করবে এবার এরা যদি এখন মাইর দেয়?
সে কোনোরকম খেয়ে উঠে চলে যাবে তখনই প্রয়াস বলল, ” আরে পিচ্চি যে এখানে কেনো?”

“এইতো এখানে ফুচকা খেতে এসেছি।”

সকাল বলল,” আরে খুকুমনি তুমি ফুচকা খাবে বড় ভাইয়া-আপুদের বলবানা? আমরা তোমাকে নিয়ে আসতাম। তুমি একা একা রাস্তা পার হতে পারবে না। আমরা তোমার হাত ধরে নিয়ে আসতাম।”

এইবার রোদ বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেছে কী বলে এই ছেলেগুলো আমি নাকি রাস্তা পার হতে পারব না।
প্রয়াস বলল, “এই পিচ্চি কি ভাবছো?”

“কই কিছুনাতো! আচ্ছা আমি আসি আমার বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে।”

“আচ্ছা যাও।”

সকাল বলল, ” সাবধান খুকুমনি রাস্তা পার করিয়ে দিতে হবে?”

রোদ দাতে দাত চেপে বলল, “না, ধন্যবাদ আপনাদের।”

রোদ যেতেই সাবা বলে, “কী শুরু করছিস সকাল?বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়ে যাবে। ওতো বুঝবেনা যে তোরা দুষ্টুমি করে বলছিস?”

শশী বলল, ” মেয়েটার মুখ দেখেছিস? প্রয়াস পিচ্চি বলছে, ঠিক আছে। কিন্তু তুই কী বললি, “খুকুমনি”।
রাগ হওয়া উচিত মেয়েটার। মেয়েটা নেহাত ভদ্র মনে হচ্ছে। এখনকার ইন্টারে পরা মেয়েরা খুব চালাক হয়।তারা সবাই হাসছে রোদের মুখটা মনে করে আহারে বেচারি!

প্রয়াস বলল, ” হয়েছে কী শুরু করলি তোরা?”

সাবা বলল, “বাই দ্যা রাস্তা প্রয়াস বাবু আপনি তো কোনো মেয়ের সাথে এমন করেন না, কী ব্যাপার ডালমে কুচ কালা হ্যায়?

প্রয়াস বলে, “কুচ নেহি বন্ধু।”

সাবা বলে,”কুচতো হ্যায় বন্ধু। সকাইল্লা না হয় এমন বদমাইশ তুইতো এমন না প্রয়াস ?

“এই সাবানি,চুপ থাক তুই আবার আমারে সকাইল্লা কইলি?”

“ওহ মাই গড, বের হয়ে গেল ওনার কইলি খাইলি হুতলি!”

সাবার বলার ঢঙ দেখে সবাই হাসা শুরু করে।

সকাল, সাবা,দুজনই টম এন্ড জেরি। সারাক্ষণ ঝগড়া করে। এটা সবার জানা তাই প্রয়াস তাদের থামিয়ে দেয়। “এই দুজন চুপচাপ খাওয়া শেষ কর।”

রোদের মেজাজ বিগড়ে গেছে। এতদিন না হয় পিচ্চি আর খুকু ছিল। এখন খুকুর সাথে আবার মনি যোগ করছে। খুকুমনি! সনি তুই বল কী শুরু করছে কী এরা? আমাকে দেখতে কি পিচ্ছি লাগে? প্লিজ বল?”

সনি হাসছে রোদের কর্মকাণ্ড দেখে।

“এই ফাজিল মেয়ে হাসিস কেন? আমাকে দেখে কি জোকার মনে হয়?”

সনি অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বলল, “তুই এত রাগ কেন করছিস দোস্ত?”

সুচী বলল, “ওনারা আমাদের বড়। আর এত হ্যান্ডসাম ছেলে যদি পেত্নি ও ডাকতো আমাকে আমার জীবন ধন্য হয়ে যেত। সেই জায়গায় পিচ্চি বলছে এটাতো অনেক। তুই যাই বলিস দোস্ত কী সুন্দর ছেলেটা, আবার কী সুন্দর করে কথা বলে এতো জোস লাগে মাইরি।”

“ছি! তুই আবার শুরু করলি তোর এসব বাজে কথা।
আর তুই এতো লুচু কেন সুচী? প্রেম করিস, আবার অন্য ছেলে সম্পর্কে যেভাবে বলিস লজ্জা করেনা?”

সুচী বলে,” তুই এমন রসকসহীন কেন রোদ? আসলে ওই ভাইয়ারা তোকে পিচ্চি বলে ভালো করছে। তুই পিচ্চিইতো। কিচ্ছু বুঝিস না।”

এবার রোদ খুব রাগী চোখে তাকায়, সুচীর দিকে।
সুচী সনি দুজনেই চুপ করে যায়। তারা জানে রোদের অনেক রাগ। এখন সে যা কিছু করতে পারে।

তাই হঠাৎ বলল, “আসলে দোস্ত আমি এতোক্ষণ দুষ্টুমি করছিলাম। ওই ভাইয়ারা আসলে খুব খারাপ খুব বাজে। ”

রোদ বলে, “এই চুপ থাক একদম এসব ঢং করবিনা। তোর আমাকে বাচ্চা মনে হয় আমি এসব বুঝিনা।”

পেছন থেকে সাবা বলে, “আরে বাচ্চাটা এখানে কি করো?”

রোদ আর সুচী, সনি পেছন থেকে দেখে পেছনে প্রয়াস, শশী, রিহান,সাবা,সকাল দাঁড়িয়ে আছে।

মুখে মেকি হাসি টেনে রোদ বলল, “আমরা বাসায় যাব তাই রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি।”

হঠাৎ একটা রিকশা পেয়ে গেল।
রোদ বলল, ” মামা পশ্চিম মাদার বাড়ি যাবেন?”

হ্যাঁ সুচক উত্তর পেয়ে, দেরি না করে রিকশা উঠে যায় রোদ।

সনি বলল, “ভাড়া কত জিগ্যেস কর?”

“ভাড়া আমি দিব তুই আয়। কত সেটা পরে জেনে নেব।”

হালকা হেসে রোদ সবাইকে বলে, “আচ্ছা আসি আপু ভাইয়ারা।”
সকাল হাত নেড়ে বলল, ” টাটা খুকুমনি।”

রোদ একপেশে হেসে বলল, “আসছি।”

প্রয়াস এখন একটা কথা ও বলেনি। শুধু রোদের রাগ দেখার চেষ্টা করল, বুঝার চেষ্টা করল।

রিকশা ছেড়ে দিতেই বন্ধুদের দলের সবাই একযোগে হেসে উঠে।
প্রয়াস বলল, ” শুধু শুধু মেয়েটার পেছনে কেন লাগছিস? চল বাসায় যাবো।”

★★★

রোদ বাসায় এসে তার মা মিনু বেগমকে বলল,
“আম্মু এক কাপ কড়া লিকারের চা দাও, মাথা ব্যাথা করছে।”

রোদ রুমে ঢুকেছে দেখে মেঘলা বলল,
“কিরে আপুনি আজ ও তোরে কী পিচ্চি বলছে নাকি?”

রোদের এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর মেঘলা আরও খেপাচ্ছে।

“এই শোন তুই চুপ করে পড় তো আমাকে জ্বালাতে আসিস না মেঘা।”

“এই তোরে আমি কইছি না আমারে তুই মেঘা কইবিনা। আমার নাম মেঘলা তুই মেঘা কেন ডাকিস?”

“আমার ভালো লাগে তাই।”

“এতো রেগে কেন আছিস আপুনি আজ কী পিচ্চি বলে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছে নাকি?” কথাটা বলেই মেঘলা চোখ টিপ মারল।

“ওই মেঘুর বাচ্চা তুই চুপ থাক। আর একবার ফাজলামি করবি তো আমি তোরে লবণ মরিচ দিয়ে মাখাইয়া খেয়ে পেলব।”

“আবার তুই আমাকে মে-ঘু বলা শুরু করলি আপুনি?
তোকে কতবার বলছি তুই এসব বলে আমাকে ডাকবিনা।”

” এই দাড়া তোকে আমি কখন মে- ঘু বললাম, আমার তো মনে পড়ছেনা।

“এই মাত্র তুই বললি মেঘুর বাচ্চা এর মাঝে মে-ঘু আছে না?”

মেঘলা কিছু বলার আগেই রোদ বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দেয়।

রোদ জানে এই মেয়ের কথা শেষ হবে না।
____________
প্রয়াস তার বন্ধুদের সাথে হাঁটছে গন্তব্য আগ্রাবাদ নিজের বাসা।

সকাল বলে, “আচ্ছা দোস্ত কলেজ থেকে নাকি বনভোজনে যাবে?”

প্রয়াস বলে, “হুম শুনলাম কাল স্যার আমকে ডেকে দায়িত্ব নিতে বললেন, আর বলছেন সব কিছু যেন আমরা করি কারণ আমরা কলেজের বড় ভাই।”

দেখতে দেখতে এই কলেজে কত বছর হয়ে গেল। নিজের বাড়ির মত ভালবেসে ফেলেছি।

শশী বলে, “হুম রে দোস্ত। খুব মিস করব এইদিনগুলো।”

সাবা বলে, “এবার কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের।”
প্রয়াস বলে, “সেন্টমার্টিন।”

“এই কথা শুনে শশী বলে ওহ! মামা এতোদিনে
এট লাস্ট সেন্টমার্টিন যেতে পারব। খুব খুশী লাগছে মামা।”

প্রয়াস বলে, “সকাল হাতে সময় কম আমাদের যেহেতু দায়িত্ব তাই সব খুব ভালো ভাবেই করতে হবে। আর ইন্টারের ছেলে মেয়েরা অনেক ছোট এদের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে।”

সাবা বলে, “আরে মামা তুমিতো জানো না এই এখনকার ইন্টারের ছেলে মেয়ে চুটিয়ে প্রেম করছে। আর কেউ কেউ বাচ্চাকাচ্চার নাম ঠিক করে নাতি নাত্নির নাম পর্যন্ত ঠিক করে ফেলেছে। সবাই কী তোমার মত নাকি মামা এতবছরেও একটা প্রেম তো করলা না। আবার মেয়েদের কাছে ঘেষতে দাও না।”

প্রায়াস বলে, “এই তুই চুপ করবি? সময় হলে ঠিকই করব। দেখবি আমি একদিন চুটিয়ে প্রেম করব। তোরা দেখবি আর লুচির মত ফুলবি।”

সকাল বলে, “আরে সাবা তুই যে কি বলিস আমাদের প্রয়াস এখনো ছোট পিচ্ছি ওই যে সেই খুকুমনির মত পিচ্চি। এখনো সে মিনারেল দুধ খায়। তার কি বয়স হয়েছে প্রেম করার, সেতো বড় হয়ে প্রেম করবে তাই না প্রয়াস বাবু?”

সবাই হেসে দেয়।

“এই চুপ কর শালা শুধু সুযোগ খুঁজিস আমাকে লেকফুল করার। শালা হারামি।”

শশী বলে, “দোস্ত পিচ্চিটা কিন্তু কিউট আছে, চাইলে প্রেম করতে পারিস। ইন্টারের মেয়েরা কিন্তু প্রেমিকা হিসেবে এক্কেবারে ঝাক্কাস।”

“শশী তুই ও শুরু করলি?”

সকাল বলে, “আরে ওই শশী তুই কেন আমার পিচ্চি দোস্তরে এসব বলিস, ওর তো এখনো এসবের বয়স হয়নি।”

আবার সবাই জোরে হাসছে।

প্রয়াসের বন্ধুরা এমনই খুব দুষ্টমি করে সবাই। যে যা খুশী করে। দুষ্টুমি করে কেউ কিছু মনে করেনা।
এমনকি সাবা শশী যে মেয়ে এটা তারা কেউ মনেই করেনা। সাবা শশী ও না, কারন তারা সবাই, সবাইকে খুব ভালবাসে। এই যুগে এত ভালো বন্ধুত্ব পাওয়া খুব ভার!

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here