মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -০১

#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#এক
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

আকাশের আজ মন খারাপ, মেঘভর করেছে আকাশের গায়ে। হয়তো একটু পরই সব অভিমান ভেঙে বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। মেঘেদের সাথে সূর্যের লুকোচুরি খেলা চলছে। না রোদ না বৃষ্টি খুব সুন্দর একটা পরিবেশ আজ। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। চট্টগ্রাম শহরটা ঢাকা শহর থেকে কম উন্নত হলেও বসবাসের জন্য ঢাকার চেয়ে অনেক উপযুক্ত। সুন্দর পরিবেশ চট্টগ্রামে।

আজ চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ভর্তি চলছে। প্রয়াস দাড়িয়ে আছে কলেজের সামনে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল করল একটা মেয়ে রিক্সা থেকে তড়িঘড়ি করে নামছে। মেয়েটা দেখতে দুধে আলতা গায়ের রঙ, কোমর সমান লম্বা চুল,মায়াবী চেহেরা। পরনে নীল রঙের একটা কুর্তি আর জিন্স প্যান্ট। ছোট করে ঘোমটা দিয়ে বুকের উপর ওড়না ফেলা। যে কেউ তাকে দেখে অপরুপ সুন্দরী বলবে।
তবে চেহেরায় কেমন শান্ত ভাব আছে। যাকে বলে স্নিগ্ধ ভাব। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মেয়েটা ভিতরে ঢুকতে যাবে তখন কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠে,
“এই রোদ এই শোন?”

রোদ নামটা যেন প্রয়াসের কানে বৃষ্টির মত ঝংকার দিয়ে উঠে। না চাইতে ও পেছনে ফিরে তাকাল, দেখল দুটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে, নীলল জামা পরা মেয়েটার দিকে প্রয়াসের চোখ আটকে গেল। সে দেখলো মেয়েটা খুব সুন্দর করে হাসছে। ভুবন ভোলানো হাসি। রিহানের ডাকে সামনে তাকায় প্রয়াস। রিহান, সকাল,শিশির,সাবা,রাহা,শশী, এরা সবাই প্রয়াসের বন্ধু। প্রয়াস আবার আড্ডায় মন দেয়।

এদিকে রোদ আর তার বান্ধবী সুচী মিলে ভর্তি ফর্ম জমা দিতে গেল। কলেজে সব কাজ শেষ করে বের হবে রোদ, এমন সময় জোরে বৃষ্টি নামল।
সুচী তার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে চলে যাওয়ায় রোদ একা হয়ে পড়েছে। কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। হাতে ছাতা না থাকায় বৃষ্টির ফোটা এসে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে রোদকে। হালকা ভিজে যাওয়ায় অন্য পুরুষেরা কীভাবে যেন তাকাচ্ছে, কেমন অস্বস্তি হচ্ছে তার।

এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে,
” এই ছাতাটা নিন,ভিজে যাচ্ছেন আপনি। রোদ অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা খুব হ্যান্ডসাম ছেলে দাড়িয়ে আছে, লম্বায় ৬ফিট হবে। গায়ের রঙ হলুদ ফর্সা, ঘন কালো চুল,দীর্ঘ পল্লবযুক্ত আঁখি। দেখতে দারুণ ছেলেটা।

রোদ অচেনা লোকটাকে ভালো করে দেখে ভ্রু কুচকে জবাব দিল, “আমি কেন আপনার ছাতা নেব?
আমি আপনাকে চিনিনা। অপরিচিত কারো কাছ থেকে আমি কিছু নেই না?”

প্রয়াস বলল, “নিবেন কারণ আপনার এখন ছাতাটা খুবই প্রয়োজন। অন্তত আপনার সম্মান রক্ষার্থে। প্রথমমত আপনি ভিজে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত ওই-যে দেখেন কতগুলো চোখ আপনার দিকে কীভাবে চেয়ে আছে। আর কেন চেয়ে আছে আশাকরি সেটা সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবেনা।”

রোদ ওড়নাটা একটু ঠিক করে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। প্রয়াস বুঝতে পেরে বলল, ” এই নিন
ছাতা??”

রোদ ছাতাটা হাতে নিল। সে জানে এখন তার এটা সত্যিই খুব দরকার। ও-ই যে শকুনির চোখগুলো সেগুলো থেকে রেহাই পেতে এটা নেয়া জরুরী।
অনেকক্ষণ ছাতাটা খোলার চেষ্টা করেও পারছেনা।

প্রয়াস তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,” এই পিচ্চি আমাকে দিন,আমি খুলে দিচ্ছি। শুধু দেখতে না কাজে ও পিচ্চি।”

পিচ্চি বলায় রোদ খুব অবাক হলো সেটা মুখে না বললে ও চেহেরার অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে।
প্রয়াস একটা রিক্সা ডেকে দিল। রোদ রিকশায় উঠে গোমড়া মুখে চলে যায়।

পেছনে থেকে রিহান প্রয়াসের পিঠে চাপড় মেরে বলল, ” কুচ কুচ হোতা হ্যায় দোস্ত?”

প্রয়াস গম্ভীর হওয়ার ভান করে বলল, ” চুপ শালা তুই কী আমায় প্রথম কাউকে সাহায্য করতে দেখছিস নাকি যে এসব বলছিস?”

সকাল বলল, ” না বন্ধু আমরা জানি তুমি সমাজসেবক কিন্তু নারী সেবক সেটা জানতাম না!”

এ কথা শুনে সবাই একজোটে হেসে ওঠে।

প্রয়াস বলে, “নারী সেবাও সমাজ সেবার অংশ বন্ধু। আর এটা একটা পিচ্চি, একে নিয়ে কী আজেবাজে কথা শুরু করলি তোরা! আমি এখন মাস্টার্সে পড়ি, এই মেয়ে এখন হয়তো ইন্টারে ভর্তি হবে।”

“ও তাই! এর মধ্যে জানা হয়ে গেল কীসে পড়ে?”
শশী টিপ্পনী কাটল।

আবার সবাই হেসে ওঠে।
সাবা বলে, “এই তোরা আমাদের প্রয়াস বাবুর পেছনে লাগিস নাতো। তোরা দেখিসনা তিনি কোনো মেয়ের দিকে ফিরে তাকান না। সব মেয়ে উনার জন্য পাগল হলেও তিনি না! শুধু ওই একটু সমাজসেবা করে আর কি!”

আবার সবাই হেসে ওঠে।
প্রয়াস বলল, “আমাকে নিয়ে মজা করা শেষ হলে চলেন এখন যাওয়া যাক। দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ফিরতে হবে।”

“তা আপনি যে আপনার পিচ্চিকে ছাতা দিয়ে দিলেন কিভাবে যাবেন?” রিহান বাঁকাভাবে বলল।

প্রয়াস বলল, “এবার কী একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে না?”

শশী বলল, “মেয়েটার নাম কীরে?”

প্রয়াস মুখে বিরক্তি নিয়ে বলল, “জানিনা জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করিনি।”

রিহান বলে,”আরে বুঝলিনা, আবার যেন নাম জানার অজুহাতে কথা বলতে পারে তার জন্য জিজ্ঞেস করেনি প্রয়াস বা-আ-আ-বু।”

আবার সবাই হেসে ওঠে।

এবার প্রয়াস একটু রাগীস্বরে বলল, “তোরা এসব বন্ধ করবি?”

সবাই জানে প্রয়াসের রাগ সম্পর্কে তাই চুপ হয়ে গেল।
কলেজ থেকে বের হলো বাসার উদ্দেশ্যে।

তারা বন্ধুরা একসাথে থাকলে এমন ঠাট্টা তামাশা লেগেই থাকে। একজন অন্যজনের পেছনে লেগে থাকাই যেন কাজ।

★★★

রোদ বাসায় এসে শরীর মুছে। জামা পাল্টে নিল। মা এসে চুলের পানি মুছিয়ে দিচ্ছেন।
আর বকছেন,”কত করে বলি ছাতা নিয়ে বের হবি। কে শুনে কার কথা। এখন যদি জ্বর আসে তাহলে কী হবে?”

“মা আমি অল্প একটু ভিজেছি, ছাতা মাথায় দিয়েই এসেছি দেখেছো তো তুমি।”

“হুম কী ভালো ছেলেটা! সে যদি না ছাতা দিতো তাহলে তুই ভিজে জ্বর বাধাতি।”

রোদ এসেই মাকে সব ঘটনা খুলে বলেছিল। সেই অগুন্তকের কথা যে তাকে ছাতাটা দিয়েছে।

“হয়েছে মা খেতে দাও না?”

খাওয়া শেষ করে রোদ ঘুমাতে গেলে তার ছোট বোন মেঘলা বলল, “কীরে আপু তোরে নাকি কে ছাতা দিল। কী ব্যাপার কলেজে না যেতেই ছেলেদের সাথে শুরু হয়ে গেলো?”

রোদ মেঘলার কান ধরে বলল, “হয়েছে আপনাকে পাকনামি করতে হবে না। আর আমি কলেজে এসব কখনো করব না। তাছাড়া যিনি ছাতা দিয়েছেন উনি যথেষ্ট ভালো মানুষ বলে মনে হলো। কলেজের সিনিয়র হবেন হয়তো। ”

“ওরেব্বাস! এই একদিনে ভালো মানুষ ও হয়ে গেল!
বাহ! ভালোতো।”

মেঘলার কথা শুনে রোদের মুখ বিরক্তিতে কাদা-কাদা হয়ে গেল।

“এই তুই চুপ করবি? উনি কলেজের বড় ভাই তাই হয়তো সাহায্য করেছে। তুই অকারণে বকবক করে নিজের শ্রম ও সময় দুটোই ব্যয় করছিস। ঘুমাতে দেতো আমাকে। নিজের কথা শেষ করে উত্তরের অপেক্ষা না করে রোদ শুয়ে পড়ে।

রোদ শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল এত ভাল মানুষও হয়!যে কি-না নিজে বৃষ্টিতে ভিজে গেছে একটা মেয়ের সম্মান বাঁচাতে। এখনকার দুনিয়াতে এত সময় কোথায় যে, একে অন্যকে সাহায্য করবে। আর এটা শুধু সাহায্য না একটা মেয়ের সম্মান রক্ষা করা। যেভাবে কিছু খারাপ মানসিকতার পুরুষ তার দিকে তাকিয়ে ছিল। ভাগ্যিস উনি বললেন নাহলে-তো বুঝতেই পারতাম না। উনিও তো পারতেন তাদের সাথে মিলে তার শরীরের দিকে কুনজর দিতে। কিন্তু দেননি! এতেই বোঝা যায় লোকটা আসলেই ভালো।

মেঘলার কথায় ধ্যান ভাঙে রোদের।

” আপু তোর ভালো মানুষের নাম কিরে?”

রোদ ধমকের সুরে বলল,” চুপ থাক তুই।”

মেঘলা মিটমিট করে হাসে। রোদের একবছরের ছোট সে। দুই বোন বন্ধুর মতো। ভালোবাসায় ভরা দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্কে সারাক্ষণ খুঁনসুটি লেগেই থাকে। যতই ঝগড়া করুক দুই বোন দুজনকে ছেড়ে থাকতেই পারে না।

রোদ পাশ ফেরে মনে মনে ভাবে, আসলেই নামটা জানলাম না কেন! উনার ছাতাটা কীভাবে ফেরত দেব আমি? ধুর আমি এমন বোকা কেন?”
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুম চলে আসলো রোদের সে বুঝতেই পারল না।

বিঃদ্রঃ গল্পটা রি-পোস্ট করতেছি। যারা আগে পড়েছেন দয়া করে স্পয়লার দেবেন না। এটা অনেক এডিট হয়ে আসবে আগের পাঠকরাও চাইলে পড়তে পারেন। গল্পে কী হবে। কার সাথে কার সম্পর্ক হবে এসব বিষয়ে কেউ আগে থেকে বলে দেবেন না। আমার অনুরোধ রইল।
ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সমালোচনা গ্রহণ যোগ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here