মেরির প্রতিজ্ঞা পর্ব -০৪ ও শেষ

গল্পঃ মেরীর প্রতিজ্ঞা ( ৪র্থ বা শেষ পর্ব )

সুলতান মেরীর শরীরের নেশায় পুরোপুরি মাতাল হয়ে মেরীর ওপর উঠতেই মেরী বিদ্যুৎ গতিতে বালিশের নিচের তরবারী টেনে বের করে সুলতানের বুকে চালাবে এমন সময় খপ করে মেরীর হাতটা ধরে ফেললো সুলতান।

মেরী বুঝতে পারলো এ যাত্রায় আর রক্ষা নেই তার।

সুলতান মেরীর চোখে তাকিয়ে ভাবছে মেরীর যদি তাকে হত্যা করারই ইচ্ছে থাকে তাহলে ইব্রাহীমের হাত থেকে কেন রক্ষা করলো!

মেরী নিজেকে পোষাক আবৃত করে উঠে দাড়িয়ে বললো– অবাক হবার কিছু নেই সুলতান, তোমাকে যদি ইব্রাহীম হত্যা করে যেত তাহলে আমার বাবাকে ছুঁয়ে করা প্রতিজ্ঞার কি হতো বলো, তুমি আমার শিকার এবং তোমাকে হত্যা করেই আমি আমার বাবার হত্যার বদলা নেবো বলেই ইব্রাহীমের হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করেছি।

সুলতান হো-হো করে হেসে উঠে বললো– কিন্তু এই সুলতানকে ঘায়েল করা এতটাও সহজ নয় মেরী, এবার তো আমার হাতেই তোমার প্রানটা যাবে, তোমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম কেবল আর তুমি শুরুতেই বিশ্বাসের গলা টিপে হত্যা করলে মেরী!

মেরী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো– বিশ্বাস ঘাতক এবং একজন হত্যাকারীর বিশ্বাস অর্জন করার মোটেই কোনো ইচ্ছে নেই আমার সুলতান, যদি সুযোগ পাই তবে আমার হাতেই হবে তোমার মৃত্যু।

সুলতান মেরীর হাত ধরে টান দিয়ে মেরীকে বুকে টেনে এনে মেরীর ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো– মেরী কথায় আছে সৎ সঙ্গে সর্বনাশ এবং অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আমার চরিত্রের কারণে সর্বনাশ তো হয়েই আছে আমার ব্যক্তিত্বের, আশেপাশের সব রাজ্যে সুলতানের নাম শুনলে সবাই ভয়ে কেঁপে ওঠে। কিন্তু আজ তুমি আমাকে ইব্রাহীমের হাত থেকে বাঁচানোর পরে থেকে এটাই ভেবেছি সারাক্ষণ যে এবার তোমার সঙ্গ পেয়ে নিজেকে বদলাবো। কারণ একজন পুরুষকে একজন নারী চাইলে বদলাতে পারে, ভালো বানাতে পারে আবার খারাপ। কিন্তু সেটা আর হলো না, আর আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তোমার জন্য মৃত্যু অবধারিত।

মেরী বললো– মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করতে পেরেছি বলেই বাবার হত্যার বদলা নিতে এতদূর এলাম সুলতান, এসবে আমি ভয় পাইনা, মনে রেখো আমিও রাজকুমারী, কোনো এক রাজার রক্ত আমার শিরা-উপশিরায়ও প্রবাহমান।

তরবারীটা মেরীর সামনে রেখে সুলতান বললো– আমি ইচ্ছে করলে জোরজবরদস্তি তোমার দেহ ভোগ করতে পারতাম, কিন্তু অন্য সবার মতোই আমিও তোমার প্রশংসা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম, তোমার প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল মনে। স্বাভাবিক ভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তুমি আর তোমার বাবা কখনোই মানতে না, তাই যেভাবেই হোক তোমাকে নিজের তো করে নিয়েছিলাম। আমি খারাপ হলেও এটা ভেবেছিলাম যে অন্তত তোমার গর্ভে আমার সন্তান এলে সে আমার মতো খারাপ না হয়ে তোমার মতোই সাহসী, বুদ্ধিমান হবে। কারণ তোমার গর্ভে ধারণ করা সন্তান, আর তোমার মতো একজন আদর্শ মায়ের সন্তান কখনোই খারাপ হবেনা।

মেরী উঠে দাড়িয়ে বললো– তোমার মতো একজন জঘন্য মানুষের সন্তান আমার গর্ভে ধারণ করার আগে মৃত্যুই ভালো।

সুলতান বললো– বৈবাহিক সুত্রে আমি তোমার স্বামী তাতে যতই জঘন্য মানুষ হই, তোমাকে একান্তে কাছে পাবার অধিকার আমার আছে, হ্যা আমি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি সেটাই চুড়ান্ত, বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য শাস্তি তুমি অবশ্যই পাবে মেরী, তবে যদি চাও এই রাতে স্বামী হিসেবে তোমার একান্ত কাছে যাবার সুযোগ চাচ্ছি, আর এটাই তোমার জীবনের শেষ রাত হবে। তুমি ভেবে বলো তুমি কি করবে!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেরী বললো– স্বামী হিসেবে আপনার অধিকার আমি আপনাকে আদায় করে নেবার অনুমতি দিচ্ছি, বা আপনার প্রাপ্য আপনাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু বাবার হত্যাকারী হিসেবে আপনি কোনদিনও আমার মনে স্থান পাবেন না।

সময় গড়ায়, রাত গভীর হয়। সুলতান মেরী পাশাপাশি একই শয্যায়। সুলতান মেরীকে টেনে বুকে নেয়। জীবনের প্রথম কোনো পুরুষের একান্ত আলিঙ্গনে মেরীও নিজেকে সঁপে দেয় সুলতানের বাহুতে।

পরদিন বন্দী করা হয় মেরীকে, সুলতান সিদ্ধান্ত নেয় যে বিকেলেই রাজ্যের লোকজন জড়ো করে সবার সামনে জ্বলন্ত আগুন নিক্ষেপ করে মেরীকে হত্যা করার প্ল্যান সুলতানের।

মুহুর্তের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে, দেশে দেশে লোকজন মেরীর জন্য আফসোস করতে লাগলো।

একটা সাদা কাপড় পরানো হলো মেরীকে, হাত পা শেলক দিয়ে বাঁধা।

সূর্য পশ্চিমে হেলেতেই হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হলো। কাঠ কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালানো হলো বড়ো করে। দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন।

মেরীর মনে একটাই আফসোস বাবার হত্যার বদলা নিতে পারলো না সে!

সময় সন্নিকটে।

সুলতানের নির্দেশে মেরীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আগুনের দিকে।

আগুনের কাছাকাছি এসে মেরীকে নিয়ে দাড়ালো সৈন্যরা সুলতানের হুকুমের অপেক্ষায়।

আগুন এমন ভাবে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুনের তাপে ঝলসে যাবার অবস্থা।

সুলতান ইশারায় মেরীকে আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিলো।

সৈন্যরা মেরীর হাত ও পা ধরে শূন্যে তুলে আগুনে ছুড়ে মারবে এমন সময় প্রবল বেগে এক দমকা হাওয়া এসে আগুন নিভিয়ে কাঠ কয়লা পর্যন্ত উড়িয়ে নিয়ে গেল।

সবাই ভীষণ অবাক, এটা কি হলো!

আসলে মেরী নিজেও ভুলে গিয়েছিল বৃদ্ধ জ্বীনের দেয়া বেলীফুলের কথা। ফুলটা দিয়ে বৃদ্ধ জ্বীন বলেছিল যখন সাহায্যের প্রয়োজন হবে ফুলে তাপ দিলেই জ্বীনরা বুঝতে পারবে।

মেরীকে যখন আগুনের কাছাকাছি আনা হয় তখন আগুনের তাপ লাগে ফুলে, আর জ্বীনরা বুঝতে পারে মেরীর সাহায্য প্রয়োজন। আগুন নেভানো দমকা হাওয়াটা তাদেরই কাজ।

এদিকে আশেপাশের রাজ্য থেকে হাজার হাজার সৈন্য ছুটে আসলো ঘোড়ায় চেপে, সুলতানের সৈন্যদের কচুকাটা করে তারা এগিয়ে আসছে দেখে সুলতান বুঝতে পারলো মেরীর কিছু হলে সুলতানের রাজ্য সহ সুলতানকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। এবং তা ছাড়াও সুলতানের আজ রক্ষা নেই।

মেরীর হাত পায়ের শেকল খুলে দেয়া হলো।

আশেপাশের রাজ্যের সৈন্যরা ঘিরে ফেলেছে চারিদিক থেকে।

সুলতান কোমরে রাখা তরবারি টেনে হাতে নিয়ে মেরীকে বললো– মেরী তুমি আমার স্ত্রী না হলে হয়তো তোমার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতাম, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। আর ইতিহাসকেও সাক্ষী হতে দেবনা যে সুলতানের মৃত্যু অন্য কারো হাতে হয়েছিল, তবে তোমার কাছে অনুরোধ তুমি হবে আমার রাজ্য এবং তোমার বাবার রাজ্য এই দুই রাজ্যের রানী।

কথা শেষে সুলতান নিজের বুকে নিজে তরবারী ঢুকিয়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

সমাপ্ত হলো এক ভয়ঙ্কর অত্যাচারী শাসকের অধ্যায়।

অবশেষে পূর্ণ হলো মেরীর প্রতিজ্ঞা। দুই রাজ্যের রানী হলো মেরী, বাবার আদর্শের মেরী দুই রাজ্য পরিচালনা করে আবার ফিরিয়ে আনলো শান্তি সুখের দিন।

সমাপ্ত।

হৃদয় চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here