মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৪৮
জড় পদার্থের মত নিথর হয়ে বসে আছে মোনা।প্রিয়মের কি হলো হঠাৎ?মোনার বুকের ভিতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে,হৃদপিণ্ড’টা ধ্বক ধ্বক করছে শুধু।বার বার মোবাইল চেক করে মোনা, জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বাসার সামনে কালো রঙের কার’টা এসেছে কিনা। বারান্দায় যেয়ে নিচের দিকে তাকায়, কেউ দাঁড়িয়ে আছে কিনা নিঃশব্দে। চকিত হরিণীর মতো কান খাঁড়া করে থাকে কলিং বেলের শব্দ শোনার জন্য। প্রিয়মের ফোনে কল দিলে রিং হয় কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন’টা তুলছে না। বিচিত্র রকমের অভিশঙ্কা,ত্রাস, চিন্তায় মোনার মুখ’টা বিবর্ণ হয়ে গেছে। চোখের চাহনি ম্লান,বিষণ্ণ। কি হলো হঠাৎ প্রিয়মের?এই একটা প্রশ্ন মোনার মস্তিষ্কে স্প্রিংয়ের বলের মত লাফাচ্ছে। মোনার বিবশ মনে নানারকম রকম শঙ্কার সৃষ্টি হয়। প্রিয়ম ধোঁকা দিলো? হিসেব মিলছে না মোনার। বিভিন্ন যুক্তিক, অযৌক্তিক কিংবা অবন্তর চিন্তা ভাবনায় মোনা মগ্ন হয়ে থাকে।
সন্ধ্যার ম্লান আলো চারদিকে ব্যাপ্ত হচ্ছে।মোনার বার বার ইচ্ছে হচ্ছে লিলি বেগমের কাছে ফোন দিতে। কিন্তু সংকোচ বোধ মোনা’কে আড়ষ্ট করে রেখেছে। রাত বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে মোনার একাকিত্বতা,বিমর্ষতা,অপ্রসন্নতা। স্ফূর্তি-শূন্য চাহনি মোনার। যে চাহনি হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ায় প্রিয়ম’কে। শরীর ,মন দুটোই ঢিমে হয়ে পড়েছে।নিশান বার বার ডাকছে মোনা’কে। নিশানের কথা মোনার কান অবধি পৌঁছালেও জবাব দিতে ইচ্ছে হয় না। কিছুক্ষণ পর নিশান মোনার হাত ধরে টেনে খাবার টেবিলের কাছে নিয়ে যায়। মোনার এতক্ষণে যেন সম্বিত ফিরে।কেবল আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
– “খাবে?”
নিশান হ্যাঁ সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায়। মোনা নিশান’কে খাবার বেড়ে দিয়ে উন্মনা হয়ে চেয়ার বসে থাকে। রাতে শুধু এপাশ-ওপাশ করছে ঘুম হয় না। মোনা হঠাৎ যেন ধৈর্যচুত্য হয়ে যায়।রাত তখন গভীর।লিলি বেগম কি মনে করবে কিংবা কি মনে করবে না এত সব ভাবতে ইচ্ছে হলো না। লিলি বেগমের কাছে ফোন দিলো।টানা পনেরো বার ফোন দিলো। ফোন তুলছে না। লিলি বেগম ঘুমাচ্ছে?লিলি বেগমের ফোন তো কখনো সাইলেন্ট থাকে না। ফোন কেন তুলছে না? মোনা আরো সন্দিগ্ধ হয়ে যায়।দুই দিন যাবৎ এমন দুশ্চিন্তায়, আতঙ্ক,কান্না সব মিলিয়ে মোনা দুর্বল হয়ে পড়ে।চোখ গুলো’তে ভীষণ জ্বালা করছে, মাথা ভারি হয়ে আসছে। গলায় টনসিলের ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ঘুমের অভাবে চোখ দুটো ক্লান্তভাবাপন্ন হয়ে পড়ে। সকালের দিকে ঘুমে চোখ লেগে আসছে।এর ভিতর ফোনের রিং বেজে ওঠে।মোনার পাঁজর কাঁপিয়ে ধ্বক করে শব্দ হয়। প্রিয়ম ফোন দিয়েছে? তীব্র ব্যগ্র চোখে মোনা ফোন হাতে নেয়। মোনা আশাহত হয়ে একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে। লিলি বেগম ফোন দিয়েছে। মোনা ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে খিন্ন গলায় জিজ্ঞেস করে,
– “রাতে ফোন দিয়েছিলি?কোন সমস্যা হয়েছে নাকি? এতবার ফোন দিয়েছিস যে!”
লিলি বেগমের গলা অস্বাভাবিক শুনাচ্ছে। নাকি সদ্য ঘুম থেকে ওঠার ফলে এমন শুনাচ্ছে? মোনা কি উত্তর দিবে তা ভাবতে মিনিট তিনেক লাগল। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মোনার গলা বসে গেছে। কণ্ঠে নীরস ভাব।
– “কথা হয় না তোমার সাথে কয়দিন হলো তাই রাতে পড়া শেষ করে ফোন দিয়েছি।”
লিলি বেগম একটা ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলে ব্যস্ত গলায় বলল,
– “মোনা আমি হসপিটালে।প্রিয়ম অসুস্থ। পরে কথা বলছি।”
মোনার অন্তর্দশে যেন বিকট শব্দে বজ্র পড়ল। ঠোঁট গুলো ভূমিকম্পের মত কাঁপছে।এই মর্মান্তিক যন্ত্রনা খানিকের জন্য কাটিয়ে ওঠে মোনা ত্রাসিত হয়ে অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করল,
– “কি হয়েছে খালা?কোন হসপিটালে?’
প্রশ্ন’টা করার পর ওপাশ থেকে কোন উত্তর পাওয়া গেল না। মোনা কয়েক মুহূর্ত উত্তরের অপেক্ষায় থাকে। তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে লিলি বেগম ফোন কেটে দিয়েছে। মোনা অস্থির হয়ে ওঠে। আবার ডায়েল করে লিলি বেগমের নম্বরে। ফোন তুলছে না এখন আর। মোনার কপোল বেয়ে নয়নবারী টপটপ করে পড়ছে। বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। প্রিয়ম’কে হারানোর শঙ্কায় মোনা কেমন দিশেহারা হয়ে যায়। কয়েক মুহূর্ত পর চোখের পানি বন্ধ হয়ে যায়। বুকের ভিতর ভারি একটা কষ্ট যেন চাপা পড়েছে। বুকের ভিতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, কষ্টের মহাতরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে অথচ কাঁদতে পারছে না।
সারাদিন পর সন্ধ্যা বেলায় আবার ফোন ব্যাক করে লিলি বেগম। কাঙ্ক্ষিত ফোন পেয়ে মোনা একটু স্বস্তি পেল। লিলি বেগমের গলায় বিষণ্ণতা।নিস্তেজ কণ্ঠে বলল,
– “ফোন দিয়েছিলি?”
মোনার অধীর গলায় আশঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “খালা প্রিয়মের ভাইয়ের কি হয়েছে?কবে থেকে অসুস্থ?
– “ছোট বেলা থেকেই প্রিয়মের হার্টে প্রবলেম।এর আগেও কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। দুই-তিন ধরে অসুস্থ। অফিসে বসে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অফিস থেকে আমাদের ইনফর্ম করেছে।”
মোনা খুব কষ্ট করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস চাপিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “এখন সুস্থ? হসপিটালের লোকেশন’টা আমায় একটু ম্যাসেজ করে দেও।আমি অফিস থেকে বের হবো এখন, একবার না হয় হসপিটালে গিয়ে দেখে আসি।”
লিলি বেগমের কণ্ঠে দুশ্চিন্তা।পরিশ্রান্ত হয়ে গেছে যেন। বলে,
– “ডাক্তার বলল বেশ কয়েক দিন লাগবে। আচ্ছা দিচ্ছি।”
লিলি বেগমের কথা বলার তীব্র অনিচ্ছা বুঝতে পেরে মোনা ফোন’টা রেখে দিলো। হসপিটালে নিশ্চয়ই হাবিব সাহেব আছে। মোনার এত উদ্বিগ্নতা দেখে লিলি বেগম কি মনে করল তা নিয়ে মোনার ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু হাবিব সাহেবের মুখোমুখি হওয়া,এমন’টা দ্বিতীয় বার চায় নি মোনা।মোনার সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রিয়ম’কে দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হেরে গেল। মোনা চায় প্রিয়ম মুহূর্তেই সেরে উঠুক, সবকিছু যেভাবে চলতেছিল চলুক। মোনার বিবশ মনে প্রিয়ম কত’টা অস্তিত্ব বিস্তার করেছে তা মোনা এখন উপলব্ধি করতে পারছে।
______
মোনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। কি বিধ্বস্ত রূপ ধারণ করেছে চেহেরা! মনে হচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। মোনা দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে নাক-মুখে বেশি করে পানি ছিটায়। পাঁচ মিনিটেই রেডি হয়ে যায়। উতলা হয়ে বলে,
– “নিশান চল একটু হসপিটালে যাবো।”
নিশান মাথা নাড়িয়ে না বলে।মোনা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
– “যাবি না মানে? তোর একা ভয় করবে না?”
নিশান আবারো মাথা নাড়িয়ে না বলে। নিশানের এমন আচরণে মোনা অবাক না হয়ে পারে না। মোনা কথা না বাড়িয়ে দরজা বাইরে থেকে লক করে বের হয়ে যায়। বাসার কাছে কোন ট্যাক্সি দেখছে না। অথচ অন্য সব সময়ে ট্যাক্সির অভাব থাকে না। মোনা কয়েক মিনিট হাঁটে।এর ভিতর একটা গাড়ি এসে মোনার পাশে থামে। মোনা আনমনা হয়ে ছিলো। হঠাৎ গাড়ির শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠল। গাড়ি ভিতর থেকে জ্যাক উঁকি দিয়ে বলল,
– “আরে মোনালিসা! এভাবে হাঁটছেন কেন?আর যাচ্ছেন কোথায় আপনি?”
মোনা জ্যাকের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। ঠোঁটে ফিকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
– “হসপিটালে যাচ্ছি। আমার কাজিন অসুস্থ।”
– “ওকে গাড়িতে উঠুন। পৌঁছে দিই আপনাকে।”
মোনা গাড়িতে উঠে।জ্যাক একটার পর একটা কথা জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে।মোনা মাঝে মাঝে উত্তর দিচ্ছে, মাঝে মাঝে দিচ্ছে না। হসপিটালের সামনে গাড়ি থামানোর পর জ্যাকও নামলো গাড়ি থেকে। মোনা জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়।জ্যাক বলে,
– “আপনার কাজিন’কে দেখে আসি একটু।”
মোনা চাচ্ছে না জ্যাক মোনার সাথে যাক।লিলি বেগম জ্যাক আর মোনার সম্পর্ক’টা সরু চোখে দেখে। তাছাড়া হাবিব সাহেব রয়েছে। কিন্তু জ্যাক’কে না করতে পারলো না। গ্রীষ্মের খরতাপে তৃষ্ণার্ত পথিকের মত মোনার চোখ দুটো’তে প্রিয়ম’কে দেখার পিপাস। জ্যাকের পিছু পিছু গেল মোনা।
প্রিয়মের কেবিনের সামনে গিয়ে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল। মোনার তৃষ্ণার্ত চোখ দুটি সর্বপ্রথম দেখে প্রিয়ম শুয়ে আছে,পাশে বিভা বসে আছে। লিলি বেগমও আছে, হাবিব সাহেব নেই। সহ্য হচ্ছে না বিভা’কে কিছুতেই। মোনার সাথে জ্যাক’কে দেখে লিলি বেগমের টনক নড়লো। বিভাও সরু চোখে তাকাচ্ছে। প্রিয়মের চুল গুলো উস্কখুস্ক হয়ে আছে, অবসাদগ্রস্ত চেহেরা। প্রিয়মের এমন অবস্থা মোনা’কে তীব্র যন্ত্রনা দিচ্ছে। মোনার চোখ ভিজে ওঠে। এখানে কান্না কিছুতেই উচিত হবে না।কান্না চাপানোর যুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে যায় মোনা।
– “ডাক্তার কি বলেছে খালা? সুস্থ হতে কতদিন লাগবে?”
লিলি বেগম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “জানি না রে।”
লিলি বেগমের এই দীর্ঘ নিঃশ্বাস মোনার কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিলো।জ্যাক নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে আছে।মোনা প্রিয়মের পাশে বসল।প্রিয়মের পাশে বসতেই প্রিয়ম মোনার হাত চেপে ধরল। মোনা ভেবেছে প্রিয়ম ঘুমোচ্ছে। মোনা চমকে গেল। হাত ছাড়িয়ে প্রিয়মের পাশে থেকে উঠে দাঁড়ালো। মোনা চায় না লিলি বেগম বা বিভা কারো সন্দেহ বাড়ুক।প্রিয়ম পাশে বসতে ইচ্ছে করছে, অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে মোনার। প্রিয়মের হাত ধরে ভরসা দিতে ইচ্ছে করছে। কান্না আর আটকে রাখতে পারছে না মোনা, ভিতরে রুদ্ধ করে রাখা কান্নায় মোনার ঠোঁট কাঁপছে। এই কান্না কাউকে দেখানো যাবে না। মোনা নিরুপায় হয়ে অন্যদিকে ফিরে বলল,
– “খালা আমি যাচ্ছি।নিশান একা বাসায়।”
মোনা দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল।রুম থেকে বের হওয়ার পর পরই আটকে রাখা যন্ত্রনা গুলো চোখপূর্ণ করে পানি হয়ে ঝড়ছে। এই কান্না জ্যাকের থেকে আড়াল করতে মোনা আগে আগে হাঁটছে।জ্যাক মোনা’কে বাসায় পৌঁছে দেয়।মোনা বাসায় ঢুকেই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো। অসহ্য লাগছে সব,সব কিছু যন্ত্রনা আর বিষাদময়। কি অদ্ভুত!জীবনে একটু সুখ ধরা দিলেই তার স্থায়ীত্ব কাল এত কম যে চোখের পলকেই সুখ হারিয়ে যায়। মোনা বালিশে মুখ গুঁজে তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করছে।প্রিয়মের পাশে বিভা বসা! মোনার শোক’টা আর গাঢ় করে তুলেছে।
________
সতেরো দিন হসপিটালে থাকে প্রিয়ম।এই সতেরো দিন যেন সতেরো যুগ। এই সতেরো দিনে মোনা অনেকবার গিয়েছি,হাবিব সাহেবের সামনেও পড়েছে কয়েকবার। মোনার সারাদিন যেতে ইচ্ছে করত, কিন্তু এই ইচ্ছা’টার হাত-পায়ে শিকল লাগানো। যখন’ই গিয়েছে প্রিয়মের পাশে বিভা’কে বসা দেখেছে। প্রিয়মের সাথে দুই মিনিট কথাও বলতে পারে নি। অসহ্য রকমের মানসিক যন্ত্রনায় মোনা নিথর হয়ে গেছে।প্রিয়মের অসুস্থ মুখ’টা বার বার মোনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মোনা অসহায় হয়ে পড়ে।
প্রিয়ম’কে আজ হসপিটাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। বেড রেস্টে থাকতে হবে বেশ কয়েক দিন। হসপিটালে না হয় গিয়েছে প্রিয়ম’কে দেখতে কিন্তু বাসায় কিভাবে যাবে?লিলি বেগম কত অনুরোধ করত মোনা’কে, লিলি বেগমের সমস্ত অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছে মোনা। প্রিয়মের অসুস্থতায় সে বাসায় গেলে লিলি বেগম কি ভাববে? সব কিছু মোনার জন্য জটিল হয়ে আছে। সব রাস্তা যেন বিষক্ত কাঁটা যুক্ত। দীর্ঘ কয়েক দিনে শরীরের প্রতি অযত্ন, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম,নির্ঘুম রাত সব কিছু মিলিয়ে মোনা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। আর টনসিলে তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। মোনার ভয় হচ্ছে টনসিল ইনফেকশন হলো না তো আবার? এক মগ গরম পানি’তে লবন নিয়ে মোনা বারান্দায় গিয়ে গড়গড়া করছে। এর ভিতর মোনার ফোনের রিং বাজে।প্রিয়ম ফোন দিয়েছে। মোনা অনিমেষ দৃষ্টিতে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। দীর্ঘ বিশ দিন পর! মোনার চমকানোর পালা শেষ হতেই দেখে ফোনের রিং বাজা শেষ। মোনা ডায়েল করল প্রিয়মের নম্বরে,মনে তীব্র উত্তেজনা। কেঁদেই ফেলবে এক্ষুনি। প্রিয়ম বলল,
– “মোনা বাসায় আসবে একবার?দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তোমায়।”
মোনা কেঁদেই ফেলে।সাত-পাঁচ না ভেবে বলল,
– “আসবো আমি।”
কে কি মনে করবে,কি ভাববে সে সব নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই এখন মোনার।মোনা যেন পাখির মত উড়ে চলে গেল লিলি বেগমের বাসায়। লিলি বেগম তীব্র বিস্মিত হলো, হাবিব সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে আছে। কারো দিকে খেয়াল না করে মোনা ছুটে প্রিয়মের রুমে চলে গেল। প্রিয়মের রুমে বসে বসে এরিক ল্যাপটপ ঘাটছে। মোনা’কে দেখে প্রিয়মের চোখ-মুখের নিদারূন প্রসন্নতা। প্রিয়ম এরিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এই এরিক যা তো।”
এরিক চলে গেল। এরিক নিরুৎসুক মানুষ। কোন বিষয়ে কৌতূহল নেই,ভাবাভাবিও নেই।মোনা প্রিয়মের পাশে গিয়ে বসল। মোনার শ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। চোখ দুটো পানিতে ছাপিয়ে ওঠছে। প্রিয়ম মোনার দিকে এক নেশাপূর্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো। আবেগঘন কণ্ঠে বলল,
– “বউ একটু জড়িয়ে ধরবে না?”
মোনা জড়িয়ে ধরে প্রিয়ম’কে।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সতেরো যুগের কাঙ্ক্ষিত মূহুর্ত যেন। মোনার গলায় বেদনায় ছলছল। কান্না ভেজা কণ্ঠে মোনা বলল,
– “এই তুমি পুরোপুরি সুস্থ হবে কবে?”
(চলবে)
~