মোনালিসা পর্ব ৫৩

মোনালিসা
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৫৩
_____________
প্রিয়মের মুখ থেকে বের হওয়া স্যরি শব্দ’টা মোনার কানে বিষক্ত কাঁটার মত বিঁধছে। অতিরিক্ত ক্রোধে মোনার চোখে পানি ছাপিয়ে উঠছে।নাক’টা নিয়মানুসারে কাঁপছে। প্রিয়ম অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বলল,
– “মোনা আর কখনো মিথ্যা বলবো না।প্লীজ তুমি ডিভোর্সের কথা মুখে এনো না।”
– “আপনার বলা সত্যি কথা গুলোও তো আমার কাছে মিথ্যা মনে হবে। সেখানে সারা জীবন একসাথে কি করে থাকব?”
প্রিয়ম যেন অধৈর্য হয়ে গেল। বিরক্ত ভরা গলায় বলল,
– “সামান্য একটা বিষয়’কে টেনে টুনে এত বড় করো না মোনা।”
মোনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করে অন্য দিকে ফিরে রইল।মোনার চোখে মুখের অবস্থা সঙ্গিন। প্রচণ্ড ক্ষোভ উপচে পড়ছে।না চাইতেই এক বিভ্রমে জড়িয়ে গেছে। চেয়েছিল নিতান্তই স্বাভাবিক কিংবা শান্তিপূর্ণ একটা জীবন।প্রতি মুহূর্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু মোনা যা চায় সব সময় যেন তার বিপরীতই হয়। মোনা প্রিয়মের দিকে না তাকিয়েই উদাস গলায় বলল,
– “শুরু থেকেই আপনার কর্মকাণ্ডে আপনাকে আমার ভালো লাগত না। আস্তে আস্তে আপনি নাকি আমার জন্য বদলে গেলেন।আপনার সব বিশ্রী অতীত আমি মেনে নিয়েছি কারণ আপনি এই কালচারেই বেড়ে উঠেছেন। আপনায় বিশ্বাস করতে আমার বড্ড কষ্ট হত। আপনার প্রতি সব সময় সন্দেহ কাজ করত। ধীরে ধীরে আপনায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস করলাম, ভালোবাসলাম। আপনি আবার আমার সাথে মিথ্যা বলা শুরু করলেন। অবিশ্বাস তো বড্ড খারাপ জিনিস। একবার কারো মনে অবিশ্বাসের বীজ গজালে তা ক্রমন্বয়ে বাড়তেই থাকে।”
মোনার গলা ধরে আসছে। আরো অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু বিষাদে গলা ধরে আসছে। মোনা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো প্রিয়মের দিকে। প্রিয়মের মুখের অভিব্যক্তি দেখে কিছুই বুঝা গেল না।প্রিয়ম অনুশোচনাপূর্ণ কণ্ঠে বলে,
– “ভুল হয়েছে আমার।”
নিজের ভুল সব সময় নির্বিবাদে মেনে নিবে প্রিয়ম।প্রিয়ম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মোনার দিকে। দুই জনের মাঝে যতটুকু দূরত্ব ছিলো সবটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে প্রিয়ম গিয়ে মোনার শরীর ঘেঁষে বসে। কয়েক মুহূর্ত পর মোনা’কে জড়িয়ে ধরে। মোনা কোন প্রতিক্রিয়া না করে জড়সড় হয়ে বসে থাকে। মোনার এমন নিস্তেজ ভাব দেখে প্রিয়ম মোনা’কে ছেড়ে মোনার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “কি হয়েছে মোনা পাখি?স্যরি।”
সম্পর্ক ছিন্ন করা আসলেই খুব কঠিন কাজ।হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করা’টা খুব বেশি কঠিন কাজ। জ্যাকের বলা কথা’টা কানে বাজছে, “সম্পর্ক আগলে রাখতে হয়,সুযোগ দিতে হয়।”
মোনার মায়ের বলা একটা কথা মোনার আজ ভীষণ মনে পড়ছে, “মানুষ’কে উপদেশ দেওয়া কিংবা উচিত-অনুচিত এসব বুঝানো সহজ কাজ কিন্তু নিজের জায়গায় থেকে সঠিক কাজ কেউই করতে পারে না।”
আবার সেই ক্ষমার বেড়াজালে আটকে গেল মোনা। কিন্তু মনের মাঝের অবিশ্বাসের পাল্লা’টা আগের মতই। মোনা প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “আচ্ছা প্রিয়ম, মানুষ সজ্ঞানে যেটা করে সেটা কি ভুল?”
প্রিয়ম প্রত্যুত্তর করল না।হয়ত প্রত্যুত্তর করার ভাষা খুঁজে পেল না। মোনা আর কথা বাড়ালো না। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর প্রিয়ম বলে,
– “মোনা ছুটি নিয়ে এসেছি।থাকব কয়েকদিন।”
মোনা মাথা ঝাঁকায় শুধু।কথা বলতে ভালো লাগছে না। কঠোর সিদ্ধান্ত গুলো প্রিয়মের কথায় বাষ্পে পরিণত হলো যেন।
হাড় কাঁপানো শীত।প্রিয়ম কালো রঙের একটা হুডি পরা,মোনা একটা চাদর পেঁচিয়ে বসে আছে বারান্দায়। বারান্দায় শীত’টা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। মোনা মুখ গোমড়া করে আছে।বিরাগপূর্ণ চেহেরা।সদ্য তৈরি করা কফির মগ থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে।প্রিয়ম বানিয়েছে কফি। কফির মগে এক চুমুক দিয়ে মোনার দিকে এগিয়ে দিলো। মোনা মগ’টা হাত দিয়ে সরিয়ে নিচু স্বরে বলল,
– “খাবো না।”
– “স্যরি মোনা। এভাবে গোমড়া মুখে থেকো না।”
প্রিয়মের কথায় মোনার ভাবান্তর নেই।আগের মতই মুখাবয়ব।আকাশের সব কালো মেঘ এসে যেন মোনার মুখে জমেছে। প্রিয়ম মোনার কানের কাছে মুখ নিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে বলল,
– “মোনা পাখি,আমাদের টুইট বেবি হবে।চোখ দুটো গাঢ় নীল।প্রিন্সেসের মত অমন আদুরে টাইপ।একজন’কে আমি অফিসে নিয়ে যাবো,অন্যজন’কে তুমি ভার্সিটি’তে নিয়ে যাবে।”
মোনার বুকের ভিতর আবার ঢিপঢিপ করতে থাকে। আবার সেই অনুভূতি।প্রিয়মের মাদকময় কণ্ঠস্বর।প্রিয়মের প্রতি মোনার সমস্ত বিমুখতা যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
রাত বাড়ছে সেই সাথে কমছে কোলাহল। নিস্তব্ধতা গাঢ় হচ্ছে ক্রমশ। প্রিয়ম উষ্ণ ছোঁয়া বিঁধছে মোনার শরীরে। মোনার শরীরের শিরায় উপশিরায় শিহরণ জাগছে। প্রিয়মের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে মোনা। রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনূভুত হচ্ছে সুখ। সুখের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায় দু’জন।
____________________________________________________________
প্রিয়ম এসেছে পাঁচ দিন হলো। এর ভিতর দুইদিন বাসায় থেকেছে। প্রিয়মের সাথে সব ঠিক হয়ে গেলেও মনের ভিতরে থাকা ঘুনে পোকা’টা রয়ে গেছে। পরেরদিন সকালে প্রিয়মের চলে যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেনি।সকাল সকাল জ্যাকের কর্মচারী বার্থডে কার্ড নিয়ে হাজির।প্রিন্সেসের বার্থডে। প্রিয়ম আর মোনা’কে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। জ্যাক যেদিন জানতে পেরেছে মোনার বিয়ের ব্যাপারে সেদিন থেকে নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়েছে। হুট-হাট মোনার বাসায় আসেনা কিংবা সময়-অসময় ফোন দেয় না। মোনা’কে আড্ডা দেওয়ার জন্য ডাকে না।জ্যাক হয়ত ভেবেছে এতে মোনার দাম্পত্য জীবনে সমস্যা হতে পারে। জ্যাকের এই পরিবর্তন গুলো মোনার চোখে পড়লেও মোনা কখনো কিছু বলেনি।
– “প্রিন্সেসের বার্থ ডে এর পরে যান বোস্টনে।”
মোনার কথায় প্রিয়মও তেমন গুরুতর আপত্তি করল না।প্রিয়মের অফিসে জরুরি কাজ, তার জন্য ফোন দিচ্ছে আবার এদিকে যদি মোনার কথার বিপরীতে না বলে তাহলে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে খোঁটা দিতে মোনা ভুল করবে না।
দুপুরের দিকে মোনা আর নিশান’কে নিয়ে প্রিয়ম শপিং-এ গেল। প্রিন্সেসের জন্য মার্কেটের সবচেয়ে দামি ড্রেস’টা কিনলো।কালো একটা ড্রেস। এটা পরলে প্রিন্সেস’কে সদ্য পরিস্ফুটিত গোলাপের মত দেখাবে। দুপুরে রেস্তোরাঁয়’ই লাঞ্চ করে নিলো।প্রিয়ম মোনা আর নিশান’কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বলে,
– “তোমরা বাসায় যাও। আমার একটু কাজ আছে শীঘ্রই ফিরবো।”
মোনা লিফট বেয়ে উপরে উঠে দেখে লিলি বেগম মোনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মোনার জন্য অপেক্ষারত। মোনার বুকের ভিতর ধ্বক করে ওঠে। প্রিয়ম’কে কি দেখেছে লিলি বেগম?মোনা মুহূর্তে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।শঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “খালা কখন এসেছো?”
মোনা’কে দেখে লিলি বেগম যেন স্বস্তি পেলো। অপেক্ষার অবসান ঘটেছে তাঁর। লিলি বেগমের মুখের অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছে দেখেনি প্রিয়ম’কে। মোনা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দ্রুত প্রিয়ম’কে ম্যাসেজ করে বাসায় আসতে না করে দেয়। মোনার প্রশ্নের জবাবে লিলি বেগম বলে,
– “এই তো একটু আগে আসলাম।”
চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে বাসায় ঢুকল মোনা।মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। লিলি বেগম খাটে বসে ক্লান্ত স্বরে বলল,
– “এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো মোনা।”
মোনা হাতের ব্যাগ গুলো ড্রয়ারে রেখে পানি নিয়ে আসলো।লিলি বেগম পানি খেয়ে গ্লাস’টা বেড সাইডে রেখে জিজ্ঞেস করল,
– “কোথায় গিয়েছিলি? শপিং-এ?”
মোনা লিলি বেগমের পাশে বসে বলল,
– “হ্যাঁ খালা।”
লিলি বেগম নিজ থেকে প্রিয়মের বিয়ের প্রসঙ্গ তুলল।মোনার এসব শুনতে বিরক্ত লাগছে। তবুও শ্রোতার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে‌।লিলি বেগম আফসোস করে বলল,
– “প্রিয়ম অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে কতদিন হলো‌!বাসায় দুই দিন ছিলো এখন আর দেখা নাই। এত বেয়াড়া যদি হয় ছেলেপেলে!”
প্রিয়ম বিয়ের ব্যাপার’টা শুনে মোনার মনের ভিতর নতুন করে চিন্তা ঢুকে গেল।এক বছর শেষ হলেই এক মহাপ্রলয়ের মুখোমুখি হতে হবে। ভাবতেই মোনা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যায়।
কথায় কথায় লিলি বেগম বলে,
– “প্রিয়ম এক বছর সময় নিয়েছে। সাত মাস হয়ে গেছে। বিয়ে’টা হলেই আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।”
লিলি বেগমের এসব কথা মোনার মনে অশান্তির সৃষ্টি করছে। কিভাবে এত সব সমস্যার সমাধান করবে? কিভাবে লিলি বেগমের সামনে দাঁড়াবে? ভাবতেই হতোদ্যম হয়ে যাচ্ছে।এসব কথা শুনতে ভালো লাগছে না। মোনা প্রসঙ্গ পাল্টায়।লিলি বেগম বেশ কয়েক ঘন্টা ছিলো।
__________________________________________________________
জ্যাকের বাসার উদ্দেশ্যে মোনা নিশান’কে নিয়ে বের হলো সন্ধ্যার দিকে। লিলি বেগমের কারণে প্রিয়মের আর বাসায় আসা হয়নি।রাস্তায়’ই অপেক্ষা করছে মোনার জন্য।
জ্যাকের বাসায় মেহমান তেমন নেই।দশ-পনেরো জন মানুষ। জ্যাকের বিজনেস পার্টনার, কাছের বন্ধুরা, বাসার কর্মচারী’রা।তেমন কোলাহল নেই। মোনা ভেবেছিল অনেক গেস্ট আসবে হয়ত। মোনা আর প্রিয়ম’কে দেখে জ্যাক হাসি মুখে এগিয়ে আসলো। জ্যাকের এক বিজনেস পার্টনারের ওয়াইফ এর কোলে প্রিন্সেস। মোনা’কে দেখে ঝাঁপিয়ে পরল মোনার কোলে। মোনা হেসে বলল,
– “হ্যাপি বার্থডে মাদার।”
হঠাৎ মোনার মাথায় একটা প্রশ্ন জাগলো। প্রিয়ম আর মোনা’কে একসাথে দেখে জ্যাকের কি কষ্ট হয়?জ্যাকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জ্যাক কত’টা কষ্ট পেয়েছিল? স্বাভাবিক নিয়মানুসারে মোনা আর প্রিয়ম’কে এক সাথে দেখার পর জ্যাকের কষ্ট হওয়ার কথা।মোনার এসব ভাবনা-চিন্তার সুতো ছিঁড়লো প্রিয়মের ডাকে।
পার্টি শেষ হতে হতে রাত অনেক হয়ে যায়।গেস্টরা সব চলে যাচ্ছে। প্রিয়ম আর নিশান মোনার পাশে বসে আছে।জ্যাক সব গেস্ট বিদায় দিয়ে ওঁদের কাছে আসে।সোফায় মুখোমুখি বসে বলল,
– “তাড়াতাড়ি শেষ করতে চেয়েছি,তাও দেরি হয়ে গেল। মোনালিসা আর প্রিয়ম আপনারা কিন্তু রাতে যেতে পারবেন না।”
প্রিয়ম বলল,
– “না,না জ্যাক অন্য আরেক দিন।”
শেষ পর্যন্ত জ্যাকের জোরাজুরি’তে থেকে যেতে হলো। নিশানও ঘুমিয়ে গেছে,প্রিন্সেসও ঘুমিয়ে গেছে।জ্যাক,প্রিয়ম আর মোনালিসা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে।মোনার ক্লান্ত লাগছে আড্ডায় মন নেই। প্রিয়ম এত কথা বলে পারে! মোনা তাকিয়ে আছে।প্রিয়মের কারণেই আড্ডা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এক পর্যায়ে জ্যাক বলল,
– “মোনালিসা দারুন একজন লাইফ পার্টনার নির্বাচন করেছেন!”
নিজের প্রশংসা শুনে প্রিয়ম যেন কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো।মোনা হেসে জ্যাক’কে ধন্যবাদ জানালো। আড্ডার এক পর্যায়ে মোনা আর বসে থাকতে পারছে না। ঘুমে চোখ লেগে আসছে।হাই তুলতে তুলতে বলে,
– “ঘুম পাচ্ছে। আপনারা আড্ডা দেন।আমি যাচ্ছি।”
জ্যাক বলল,
– “সবার’ই ঘুমানো উচিত।শুভ রাত্রি।”
সকালে উঠে জ্যাকের বাসায় নাস্তা সেরে বাসার দিকে রওয়ানা হলো। প্রিয়ম ব্যস্ত গলায় বলল,
– “মোনা আমার আজই যেতে হবে।”
মোনা উদ্বেগহীন হয়ে বলল,
– “অফিসে নাকি কোনো ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাবেন?”
প্রিয়ম হতাশ হয়ে তাকালো মোনার দিকে।মোনা কথা বাড়ালো না।প্রিয়ম যাবার আগে মোনা’কে জড়িয়ে ধরল‌ শক্ত করে,চুমু খেলো। মোনা অনেকক্ষণ ধরে প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “সাবধানে যাবেন।”
– “আচ্ছা মোনা পাখি। মন খারাপ করো না। একটু হাসো।”
মোনা ম্লান হাসে।মোনার কাছ থেকে বিদায় নিতে নিতে অনেক সময় পেরিয়ে গেল। যত সময় প্রিয়ম দৃষ্টি সীমার ভিতরে ছিলো মোনা তাকিয়ে ছিলো।
_________________________________________________________
প্রিয়ম চলে যাওয়ার পর কয়েকদিন সবকিছু স্বাভাবিক’ই চলছিল। ইদানিং মোনার কেমন খটকা লাগছে। রাতে একটু কথা বলে ক্লান্ত হওয়ার অজুহাতে ফোন রেখে দেয়।প্রিয়ম গেছে প্রায় সাতাশ দিন হয়েছে একবারও ব‌্যারিংটনে আসেনি এর ভিতর। অফিস তো আগেও ছিলো,ক্লান্তি তো আগেও ছিলো। মোনা হিসেব মিলাতে পারছে না। সারাদিন ভার্সিটি,অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে। অফিস থেকে এসে আবার বই নিয়ে বসতে হয়। এতকিছুর পর মোনার কথা বলার এনার্জি থাকে অথচ প্রিয়মের নাকি ক্লান্ত লাগে। কেমন যেন অচেনা লাগে প্রিয়ম’কে। মোনা এসব ভাবনায় অনুভূতিশূন্য হয়ে পরে। সারাক্ষণ একটা যন্ত্রনা মোনায় দগ্ধ করে। হয়ত অফিসে কাজের প্রেসার বেড়েছে তাই ক্লান্ত থাকে!
প্রিয়মের সামনাসামনি বসে কথা বলা খুব দরকার।এক বছর হতে তো আর দুই মাস বাকি।প্রিয়ম এই ব্যাপারে কিছুই বলছে না। মোনা রাতে ফোন দিয়ে জোর গলায় বলল,
– “আপনি কাল আসবেন ব্যারিংটনে।কথা আছে আপনার সাথে।”
মোনার গলা গুরুগম্ভীর।প্রিয়ম ঠাণ্ডা মেজাজে বলল,
– “আমার তো ছুটি নেই।”
– “বোস্টন থেকে ব্যারিংটনে আসতে কতক্ষণ লাগে?অফিস শেষে রাতেই তো আসতে পারেন।”
মোনার তোপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত প্রিয়ম আসতে স্বীকার হয়।
– “পরশু আসবো।”
মোনার কিছু ভালো লাগছে না।হুট করে একজন মানুষ এত পরিবর্তন হয়ে যাবে! এসব নিয়ে ভাবলে মোনার মাথার ভিতর ঝিমঝিম করে ওঠে। সব কিছু অসহ্য লাগে।ঠিক আগের মত বিষণ্ণতা,যন্ত্রনা শুরু হয়। অদ্ভুত আচরণ করে প্রিয়ম। সবকিছু বুঝেও কেউ যদি না বোঝার ভান করে থাকে তাহলে তাঁকে কিভাবে বুঝায়?
মোনার শরীর খুব খারাপ লাগছে কয়েকদিন ধরে। সব কিছু’তে অনীহা জাগে। সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। শরীরে যেন এক ফোঁটা শক্তি নেই।
প্রিয়ম আসে দুইদিন পর। মোনার অবস্থা দেখে বলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে। মোনা চমকে যায়! এই ব্যাপার’টা কখনো মাথায়ই আসে নি। অন্য সব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা না বলে হসপিটালে যায়। প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজেটিভ আসে।প্রিয়ম যেন বজ্রাহত হয়।মোনা বুঝতে পারছে না ওঁর কি খুশি হওয়া উচিত?মোনার ভাবনা শেষ হতে না হতেই প্রিয়ম বলে,
– “মোনা বাচ্চা এবরশন করে ফেলো।”
(চলবে)
~ভুল ত্রুটি বুঝে নিয়েন। গল্প লিখে রিভিশন দেওয়া আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের কাজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here