মোহমায়া পর্ব ২

#মোহ_মায়া
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক


নিতুল আমার হাত ধরে সেদিন বলেছিল,’নিশু, তুমি জানো তোমায় আমি কতোটা ভালোবাসি?’
আমি লজ্জামাখা গলায় বললাম,’কতোটা?’
নিতুল বললো,’সারা পৃথিবীর মানুষের সব ভালোবাসা এক করলে যতোটা হবে ঠিক ততোটা।’
ওর কথা শুনে আমি চোখ ভিজিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম।ওর বুকে মাথা গুঁজে ওর রুমকূপ ভিজিয়ে দিতে দিতে বলেছিলাম,’আমি ভুল করিনি নিতুল। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার আমি পেয়ে গেছি।’
এই সেই নিতুল।যাকে এর আগেও একবার সন্দেহ হয়েছিল আমার।বাবু যখন আমার পেটে তখন একদিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম আমি আমার শাশুড়িকে নিয়ে। ওখান থেকে ফেরার পর দেখি ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দরজায় নক করতেই নিতুল দরজা খুললো না। দরজা খুললো সে খানিক পর। দরজা খোলার পর তাকে দেখা গেল খুব এলোমেলো।গালে লিপস্টিকের দাগ।ঘাড়ের নিচে একটা খামছির দাগ। সেই দাগে জমে আছে রক্ত।
দেখেই আমার কেমন সন্দেহ হলো। সঙ্গে সঙ্গে আমি ভেতরে গিয়ে খুঁজতে লাগলাম কেউ আছে কি না ‌। কিন্তু কাউকে না পেয়ে আশাহত হয়ে যখন আমার রুমের দিকে পা বাড়ালাম ঠিক তখন আলমারিতে কেমন একটা শব্দ হলো।তড়িৎ গিয়ে দেখি নিতুল পেছনের দরজাটা বন্ধ করে দিচ্ছে। আমি ওকে সন্দেহ মাখা গলায় বললাম,’এখানে কী করছিলে তুমি?’
‘না মানে দরজাটা খোলা ছিল তাই লাগিয়ে দিলাম।’
আমি তখন দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলতে চাইতেই নিতুল বললো,’দরজাটা খুলো না।’
আমি বললাম,’কেন?’
‘এমনিই।’
‘না আমি খুলবো। তুমি কাকে বের করে দিয়েছো এখান দিয়ে?’
‘মিজান এসেছিল। ওকে বের করে দিয়েছি।’
‘মিজান কী ঠোঁটে লিপস্টিক মাখে?’
‘কী সব আবোল তাবোল বকছো?’
নিতুলের একটা হাত ধরে ওকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললাম,’ওই যে দেখো লিপস্টিক।এটা কীভাবে এলো এখানে?’
নিতুল তখন হা হা করে হেসে উঠে বললো,’সব মিজানের কাজ। ওই শালা যা শয়তান। তোমার লিপস্টিক নিয়ে জোর করে আমার গালে মাখিয়ে দিয়েছে।’
আমি জানি ঘরে আমার কোন লাল লিপস্টিক নেই।আর মিজান নয় অন্য কোন মেয়ে এসেছিল এখানে।তাই সেদিন আর কথা বাড়ালাম না। কারণ এই কথাটা বাইড়ে ছড়িয়ে গেলে আমারই লজ্জা হবে। মানুষ আমার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলবে,ওই যে ওর স্বামী ঘরে অন্য মেয়ে এনে মেলামেশা করে!
সেদিন রাতে শুধু নিতুলের মা অর্থাৎ আমার শাশুড়ির কাছে বলেছিলাম। বলেছিলাম,’মা, আপনার ছেলের অন্য একটা মেয়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক আছে।’
আমার শাশুড়ি শুনে চমকে উঠে বললেন,’এই কথা কে বলছে তোমারে?মিছামিছি মানুষের কান কথা শুইনা তুমি আমার ছেলেরে সন্দেহ করতে পারো না!’
আমি বললাম,’মা,আমি ওর গালে লিপস্টিক দেখেছি!’
লিবিষ্টিক দেখলেই কী পরমান হয় যে আমার ছেলে অন্য মেয়ের লগে কু কাজ করছে? এইসব কথা তোমার কাছে কে লাগাইছে শুনি?
বেক্কল মাইয়া! মানুষের কাছে ভালা লাগতাছে না তোমার এমুন সুখের সংসার দেইখা।তারা চাইতাছে না তুমি ভালা থাকো!’
শাশুড়িকে সেদিন কোন ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারলাম না যে তার ছেলে অপরাধী। কিন্তু আমি সেদিন থেকে স্বতর্কই ছিলাম।
ওই মেয়েটা কে ছিল আমি জানতে পারিনি। তবে বর্ষাকে আমার খুব ভালো মনে হয়েছিল।শান্ত সৌম্য একটা মেয়ে।ক্লাস টেনে পড়ে।নিতুলকে ভাইয়া বলে ডাকে। ধর্মের প্রতিও গভীর মনোযোগ আছে তার। এমনকি আজকেও আমাদের বাসায় এসে আসরের নামাজ পড়ে তারপর পড়তে বসেছে। এমন একটা মেয়ে যে এমন কান্ড করবে তা কী কোনদিন ভাবতে পারতাম আমি!

বাবুকে ঘুম পাড়িয়েছি।রাত অনেক হয়েছে।নিতুল এখনও ফিরছে না। আমার শাশুড়িও বাড়িতে নেই।তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে।
একা একা এই বাড়িটাতে থাকতে আমার কেমন ভয় করছে।মনে হচ্ছে ভয়ে এবার আমি মরে যাবো! কোনদিন এভাবে একা থাকিনি!
নিতুলকে ফোন করতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না।ওর মতো পাপীর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই আমার ‌।আমি এবার ফোন দিলাম আমার শাশুড়িকে। আমার শাশুড়ি ফোন ধরলেন তিনবার ফোন দেয়ার পর। তিনি রিসিভ করে বললেন,’এতো রাইতে ফোন দিলা যে বউ?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,’আপনার ছেলে এখনও বাসায় ফিরেনি মা!’
‘সে কী বাচ্চা নাকি যে তারে নিয়া তোমার ভয় করতে হইবো? বন্ধুদের সাথে বোধহয় আড্ডা দিতাছে।ঘুম পাইলেই আসবোনে বাসায়।’
আমার শাশুড়ি সেই শুরু থেকেই এমন কাটা কাটা কথা বলেন আমার সাথে।আজও ভেবেছিলাম আমার শাশুড়ির কাছে বলবো নিতুলের করা নোংরা কাজটার কথা। কিন্তু বলার আগেই তিনি যা ব্যাবহার করলেন তারপর আর সাহস থাকে না তার কাছে তার পুত্রের এসব দুষ্কর্মের কথা বলার!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here