মোহমায়া পর্ব ৬

#মোহ_মায়া
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



হেঁটে বড় রাস্তার কাছে আসতেই নিতুল ভাইয়া রিক্সা ডাকলো। তারপর বললো,উঠো। রিক্সায় উঠো।
আমার রিক্সায় উঠতে কেমন আড়ষ্টতা কাজ করছিলো।নিতুল ভাইয়া তখন আমার হাতটা টেনে ধরে রিক্সায় উঠিয়ে নিলেন। তারপর তিনিও আমার সাথে উঠে বসলেন।
রিক্সায় বসে তিনি আমার সাথে নোংরামো কিছু করছিলেন। কিন্তু তখন আমি মোহে অন্ধ ছিলাম।তার হাতের স্পর্শ, ঠোঁটের ছোঁয়া আমার কাছে মনে হয়েছিল এটাই তো স্বাভাবিক।এমনি তো হয়!
রিক্সা করে তিনি আমায় নিয়ে গেলেন জয়নুল আবেদীন পার্কে। বক্ষ্মপুত্রের তীরের কাছে গিয়ে কাঁশবনের কাছে আমায় নিয়ে দাঁড়ালেন। তখন নদী থেকে ছুটে আসছিলো শীতল বাতাস। সেই বাতাসে আমার চুল উড়ছিলো। আমার চুলগুলো আলতো ছুঁয়ে দিয়ে নিতুল ভাইয়া বললেন,এই যে তোমার চুল ছুঁয়ে দিচ্ছি আমি ঠিক ওভাবে তোমার মনটাকেও আমি ছুঁয়ে দিতে চাই!
আমার শরীর তখন কাঁপছিলো।আর আমি না চাইলেও লজ্জা শরম ভেঙে মুখ থেকে ছড়িয়ে পড়ছিলো একটি কথা।
আমি বলে ফেলেছিলাম, আপনি আমার সবটুকু মন ছুঁয়ে দিয়েছেন। সবটুকু মনে বিস্তার করছেন এখন শুধুই আপনি।আপনিই আমার মন!
নিতুল ভাইয়া তখন আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন,আবেগ দিয়ে সব সময় ভালোবাসা হয় না।এটা তোমার মুখের কথা। আসলে তুমি আমায় মোটেও ভালো বাসো না!
আমি তখন প্রায় কেঁদে ফেললাম।নাক মুখ লাল করে স্বর্দি জমা গলায় বললাম, আপনি কীভাবে বিশ্বাস করবেন আপনাকে আমি ভালোবাসি?
নিতুল ভাইয়া বললেন,সেটা সময়ে আমি বুঝে নিবো। তোমার কর্মকান্ডেই আমি ধরে নিবো তুমি আমার আসল প্রেমিকা নাকি প্রতারক!
আমি জানি না আমার কী হয়েছিল তখন!কেন জানি মনে হয়েছিল এই নিতুল ভাইয়া ছাড়া আমার জীবন অন্ধ, অচল।আমি নিতুল ভাইয়ার জামার কলার চেপে ধরে তখন বলেছিলেন, আপনি আমার সাথে বেঈমানি করলে মরে যাবো আমি!
কিন্তু এই সম্পর্কটার যে কোন ভিত্তি নাই।নিতুল ভাইয়া যে ম্যারিড, এইসব কিছু তখন আমার ভুলেও মনে পড়েনি।নিতুল ভাইয়ার সাথে যে আমার সম্পর্কের কোন পরিণতি নাই তাও মনে পড়েনি!
আমার কেবল মনে হয়েছিল তখন যে করেই হোক এই মানুষটার সাথে আমার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। তাকে হ্যাপি রাখতে হবে।আমি তো তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি!’

বর্ষার কথাগুলো শুনছিলাম।আর মনে হয়েছিল তখন আমার মোহের কথাও। আমিও এক সময় সত্য মিথ্যা যাচাই না করে নিতুলকে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। তখন মনে হয়েছিল পৃথিবীতে শুধুমাত্র আমার একজন মানুষই আছে।সে আমার নিতুল।নিতুলকে ছাড়া আমি এক নিমিষও বেঁচে থাকতে পারবো না!
বাবা মাকে ভুলে গিয়ে ঘর ছেড়ে ছিলাম এই মোহ মায়ার কারণেই।যদি সেদিন বাস্তবতাটুকু বুঝতে পারতাম আমি।সত্য মিথ্যার প্রভেদ বুঝতে পারতাম তবে আমার এই দুর্দিন ঘটতো না!

বর্ষা আবার বলতে শুরু করলো।সে বললো,’
নিতুল ভাইয়ার প্রতি উইকনেসটাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো! তিনি যখন তখন আমার সাথে আমার উইকনেসের সুযোগ নিয়ে নোংরামো করতেন।পড়াবার নাম করে নানান ছলে আমার সাথে অসভ্যতামি করতেন। একদিন তিনি হঠাৎ করে রাতে ফোন করে বললেন,বর্ষা দরজা খুলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম, দরজা খুললে কী হবে।
তিনি বললেন,খুলো না আগে।
আমি দরজা খুললাম আর অবাক হয়ে গেলাম।নিতুল ভাইয়া দরজার সামনে দাঁড়ানো। ভয়ে আমার শরীর কেঁপে উঠলো।নিতুল ভাইয়া টুপ করে আমার রুমে ঢুকে গেলেন। তারপর ভেতর থেকে আমায় টেনে নিয়ে দরজা লক করে দিলেন।
আমি ভয়ে তখন চুপসে গেছি একেবারে। কাঁপছি ঠকঠক করে।নিতুল ভাইয়া আমার সাথে তখন নোংরামো করতে চাইলেন।
আমি বাঁধা দিতে চাইলে তিনি বললেন,আমি কিন্তু শব্দ করবো। জোরে কথা বলে উঠবো। তখন দেখবে তোমার বাবা মা এসে তোমায় গলা টিপে মেরে ফেলবে!
নিতুল ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম।আর তার সব কথা মেনে নিলাম।সেদিনই
আমার সবচেয়ে বড় ভুলটা হয়েছিল।নিতুল ভাইয়া ভয় দেখিয়ে আমার নগ্ন ছবি তুলেছিলেন।ভিডিও করেছিলেন।
তারপর থেকে রোজদিন এই ছবি আর ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তিনি আমায় ইউজ করেছেন।এমনকি ভাবী, আমার এক বান্ধবী যে ছিল ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী তার সাথে রিলেশন করিয়ে দিতে বললেন তিনি।
আর সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম কত বড় ভুল করে ফেলেছি আমি। কিন্তু ততক্ষণে আমার সব পথ বন্ধ। নিজের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিতুল ভাইয়ার কথা মতো আমার বান্ধবী মিতুর কাছে নিতুল ভাইয়ার বিষয়ে খুব প্রশংসা করলাম।সে যে ম্যারিড তা না বলে বললাম আন মেরিড এবং কখনো সে কারোর প্রেমে পড়েনি। কিন্তু মিতুর ভাগ্য ভালো।সে বলেছিল তিনদিন পর জানাবে নিতুল ভাইয়ার সাথে সে রিলেশন করবে কি না!
কিন্তু এই তিনদিন পাড় হওয়ার আগেই মিতুর হুট করে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।সে বেঁচে গেল।আমি বাঁচতে পারিনি।আজও ধুঁকে ধুঁকে মরছি।নিতুল ভাইয়া যা বলছে তাই করছি।আমি ওর হাত থেকে বাঁচতে চাই ভাবী। কিন্তু বাঁচার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না!’

বর্ষার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে আমি একবারে জমে গেলাম।এতো নিকৃষ্টও হতে পারে একজন মানুষ?
ছিঃ! খুব ঘেন্না হচ্ছে ওর প্রতি আমার। ইচ্ছে করছে আজই ওকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলি!
কিন্তু সাহস করতে পারি না!নিতুল যা চতুর!সে আমার ফাঁদে পা দেয়ার আগেই হাজারবার তার ফাঁদে আমায় ফেলে দিয়ে গুলিয়ে ফেলবে আমায়! সেই ফাঁদ থেকে আর কোন ভাবেই আমি বেরিয়ে আসতে পারবো না! কোনদিন না!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here