মোহমায়া পর্ব ৫

#মোহ_মায়া
#৫ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



আমি ইচ্ছে করলেই বর্ষার পরিবারের মানুষদের কাছে সবকিছু বলে দিতে পারতাম! কিন্তু বলিনি।বলিনি এই জন্য যে আমার মনে হয়েছিল বর্ষাও বোধহয় কোন একটা ফাঁদে আটকে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক ফাঁদ হলো ভালোবাসার ফাঁদ। এই ফাঁদে কেউ আটকে গেলে তার নিজেকে বাঁচানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। এই ফাঁদে আমি যেমন করে আটকে গেছি বর্ষাও তেমন করেই আটকে গেছে হয়তো।আর ওর বয়স কম।তেরো থেকে ষোলো বছর‌ বয়সী মেয়েগুলো বেশি আবেগপ্রবণ হয়।এরা বাস্তবতা বুঝে না।মনে কিছু একটা আটকে গেলে তা নিয়েই ভাবতে থাকে সর্বক্ষণ।

আমি শুধু সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।নিতুল যখন ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখন আমি বর্ষার সাথে যেভাবেই হোক যোগাযোগ করবো।ঘরে ডায়েরিতে ওর নম্বর লিখা আছে।আমি ওকে ফোন করবো আবার। আমাদের বাসার সামনে মোড়ে আমার পরিচিত এক টেইলার্স আছে।খুব ভদ্র একটা ছেলে। আমাকে ভাবী ডাকে।ওর ওখানেই আমাদের সব কাপড় চোপড় তৈরি করি।
ওর কাছ থেকে ফোনটা ধার নিয়ে আসবো!

কিন্তু নিতুল আজ বাসা থেকে নড়ছেই না।যেন সে আর কখনো বাসা থেকে বের হয়ে যাবে না।
এমনিতেই আমার মন ভালো না। কাঁদতে কাঁদতে মাথা ব্যথা করছে এখন।মাথা ধরা নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি।নোরা আমার পাশে চুপচাপ শুয়ে থেকে খেলছে। এমন ভর সন্ধ্যায় নিতুল এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো।আমি খানিক সড়ে যেতে চাইলেও ওর জন্য পারলাম না।আমায় জাপটে ধরে বললো,’আজ আমি তোমার কাছে থাকবো এবং এখন!’
আমি এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিতে চাইলেও পারলাম না।তার দেহের আকড় থেকে মুক্তি পাওয়া যে নারী শক্তির কাছে দুষ্কর!
নিতুল তার ইচ্ছে মতো আমায় ভোগ করছে।আমি ওর কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাইছি কিন্তু পারছি না। আমার মেয়েটা কাঁদছে।ভয় পাচ্ছে হয়তো। নয়তোবা সে ভাবছে তার চরিত্রহীন পিতার নিষ্ঠুরতার কথা!

নিতুল বাসা থেকে বের হয়ে গেল রাত্রি নামলে। নিজেকে তখন আমার কী যে হালকা মনে হলো।তড়িৎ নোরাকে নিয়ে উড়না দিয়ে ভালো করে শরীরটা ঢেকে চলে গেলাম সামনে মোড়ের কাছে। তারপর টেইলার্স ছেলেটির কাছে আমার প্রয়োজনের কথা বলতেই সে বললো,’নিন।ফোন নিয়ে যান। যতোক্ষণ ইচ্ছে রাখেন ভাবী।’
ওর মোবাইল নিয়ে বাসায় এসেই বর্ষাকে ফোন করলাম।বর্ষা প্রথম বার ডায়েল করতেই রিসিভ করলো।
এবং রিসিভ করে সে কাঁদতে লাগলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম,’কাঁদছো কেন বর্ষা?’
বর্ষা কান্নার জন্য কথা বলতে পারলো না।
আমি তাকে খানিক সময় কাঁদতে দিলাম। তারপর সে খানিক স্থির হয়ে ভেজা গলায় বললো,’ভাবী,আমি অনেক বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি! এই অপরাধের কোন ক্ষমা নাই! কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি ওর চাল ধরতে পারিনি! আটকে গিয়েছি ওর পাতানো জালে!’
তারপর আবার কাঁদতে লাগলো বর্ষা।
আমি এবার একেবারেই পরিষ্কার হলাম যে আমার ধারণাই ঠিক।নিতুল ওকেও আটকে ফেলেছে জালে!

বর্ষা বললো,’ভাবী, আমি অতকিছু বুঝতে পারিনি।আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন থেকেই নিতুল ভাইয়া আমার সাথে প্রেমের গল্প বলতো। আমার দিকে কেমন করে তাকাতো!উনার তাকানোটা আমি বুঝতাম না। কিন্তু আমার ভেতর তখন কেমন যেন লাগতো। কেন জানি মনে হতো তার কথাগুলো শুনতে আমার খুব ভালো লাগে!তার তাকানোটা আমার বুকের ভেতর বিদ্যুৎ খেলে যায়!’

আমি শুধু চুপ করে ওর কথাগুলো শুনছিলাম।
বর্ষা খানিক সময় থেমে গিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।সে এবার বললো,’সেদিন ছিল ভেলেন্টাইন্স ডে।নিতুল ভাইয়া আমার সাথে স্কুলে দেখা করতে গেলো হঠাৎ।যখন আমার বান্ধবীরা তাদের বয়ফ্রেন্ডদের কাছে যাচ্ছিলো তখন আমার নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিল।মন কেমন নিয়ে যখন আমি স্কুলের গেট পেরুলাম ঠিক তখন দেখতে পেলাম নিতুল ভাইয়াকে।তার হাতে টকটকে লাল গোলাপ।আমি তাকে দেখে হেসে ফেললাম আর ভাবলাম কার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি?
কিন্তু নিতুল ভাইয়া আমায় সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে আমার কাছেই এলেন। তারপর বললেন চলো!
আমি অবাক হয়ে বললাম,কোথায় যাবো?
নিতুল ভাইয়া বললেন,তোমায় নিয়ে আজ নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো।
ভাবী আমি অতটিছু তখন ভাবিনি। একবারও আমার মনে পড়েনি আমি ভুল করছি না ঠিক করছি। কিংবা তার সাথে কোথাও যাওয়া আমার আদৌ উচিৎ কি না!

আমি তবুও দাঁড়িয়ে ছিলাম। অন্য সব মেয়েরা যেমন তার প্রেমিকের সাথে অভিমান করে দাঁড়িয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে,ও আমার হাতটা ধরে অভিমান ভাঙিয়ে দিক! আমারও তখন তেমন মনে হয়েছিল!
আর নিতুল ভাইয়া তখন ঠিক সেই কাজটাই করেছিল।সে আমার ডান হাতটা খপ করে ধরে বললো,চলো এবার।
আমি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে উঠে তার সাথে হাঁটতে লাগলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here