মোহমায়া পর্ব ৩

#মোহ_মায়া
#৩য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক



নিতুল বাসায় ফিরলো শেষ রাতের দিকে।আমি তখনও বিছানার চাদর খামচে ধরে কাঁদছিলাম আর জানলার ফাঁক গলে ভেসে আসা জোছনায় দেখছিলাম রাজ কন্যার মতো সুন্দর আমার মেয়ের মুখখানি। তখন ফিসফিস করে ঘুমন্ত নোরার কানে বলছিলাম,’মারে,তোর জন্য শুধু আমি কিছুই করতে পারবো না।তুই ই আমার পথে বাঁধার পাহাড়। কেন যে তোর জন্ম হলো!’
তারপর নোরার কপালে একটা চুমু খেলাম। সন্তানের কপালে চুমু খাওয়ার যে স্বর্গীয় অনুভুতি তা সন্তানহীন কোন মানুষ কী করে বুঝবে?
নোরাকে চুমু খেয়ে আমি শব্দ করেই কেঁদে উঠলাম।
নিতুল তখন খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে বললো,’কী গো এখনো মায়া কান্না কাঁদছো তুমি? এখনও ব্যাপারটা ভুলতে পারোনি না?’
আমি ওর সাথে কথা বললাম না।আপন মনে কাঁদতেই থাকলাম।
নিতুল আমার হাতটা ধরতে চাইলো।
আমি ঝট করে হাতখানা সড়িয়ে নিয়ে বললাম,’খবরদার!হাত ছুঁওয়ার চেষ্টা করবা না!’
নিতুল ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ছুঁলে কী করবে? ‘
আমি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললাম,’হাতটা কেঁটে ফেলবো।’
এবার নিতুল হা হা করে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,’এই শোনো, হাত তো কেটেই ফেলবে তার আগে এই হাত দিয়ে তোমায় একটু আদর করে দেই বাবু! জীবনে তো আর হাত দিয়ে তোমায় আদর করতে পারবো না কখনো।’
কথাটা বলেই নিতুল আমার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেললো। আমি ওর হাত থেকে ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।নিতুল টেনে টেনে আমার শাড়িটা খুলে ফেললো। তারপর আমার নগ্ন শরীরের কয়েকটা স্থির চিত্র তুললো ওর ফোনের ক্যামেরা দিয়ে।আমি শত চেষ্টা করেও তাকে ফেরাতে পারিনি! তার শক্তি কিংবা চতুরতার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারিনি!
ছবি তুলে সে এবার বললো,’বাবু,শাড়িটা এবার সুন্দর করে পরে ফেলো। তোমার সাথে এই অসভ্য কাজটা করা আমার একদম ঠিক হয়নি।আমি সরি!’
এই কথা বলেও সে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।
আমি কিছুই আর করতে না পেরে অসহায়ের মতো হাউমাউ করে কাঁদছি।নিতুল এবার আমার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,’বাবু,দেখো তোমার জন্য কী সুন্দর একটা গিফট এনেছি।দেখলেই তোমার কান্না থেমে যাবে।’
রাগে আমি তাকাতে না চাইলেও কী মনে করে যেন তাকালাম।
নিতুল তখন তার ফোনের স্টোরেজ থেকে বের করে যা দেখালো তা দেখে আমার মাথা একেবারে ঘুরে উঠলো। বর্ষার সাথে নিতুল নোংরামি করছে। সেই চলমান ভিডিও আমার চোখের সামনে তুলে ধরলো।আমি আর এটা দেখে সহ্য করতে পারলাম না। সঙ্গে সঙ্গে নিতুলের গাল খসে একটা চড় বসিয়ে দিলাম আর ওর মুখে একদলা থুথু ছিটিয়ে দিয়ে বললাম,’তুই এতো নীচ কুকুর!’
নিতুল তার গালে হাত চেপে ধরে বললো,’কাজটা ভালো হয়নি।এর চড়া শোধ তোমায় দিতে হবে নিশু!’
আমি অতি কষ্টেও ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললাম,’আর কী শোধ দিতে হবে? আমার থেকে আর কী চাস তুই?আর কীভাবে অপমান করতে চাস?আর কীভাবে অত্যাচার করতে চাস আমার উপর?’
নিতুল খাটের উপর থেকে উঠতে উঠতে বললো,’সবে তো শুরু।আরো অনেক কিছুই করার বাকী আছে রে! ‘
আমি ওর দিকে অবহেলার চোখে তাকিয়ে বললাম,’তুই আর কিছুই করতে পারবি না কুকুর।’
নিতুল হা হা করে হেসে উঠে বললো,’এই দেখ, ভালো করে তাকিয়ে দেখ।’
নিতুল তার ফোনের গ্যালারি থেকে একটা একটা করে ছবি বের করে দেখাতে লাগলো। সবগুলো আমার ছবি। আমার নগ্ন দেহের ছবি। ছবিগুলোর দিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না আমি।চোখ থেকে টপটপ করে জল নামছে গাল বেয়ে।গলা ছিঁড়ে কান্না আসছে প্রচন্ড।
আমি কান্নামাখা গলায় বললাম,’নিতুল, তুমি এমন করতে পারলে আমার সাথে?আমি না তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলাম? সবচেয়ে আপন মানুষ ছিলাম?
নিতুল, তুমি কী করে ভুলে গেলে শুধুমাত্র তোমার জন্যই বাবা মা ভাই বোন আর কুটি কুটি টাকার প্রপার্টি ফেলে রেখে তোমার সাথেই ঘর বেঁধেছিলাম আমি!আমি তো তোমার কাছে দামী শাড়ি,গাড়ি বাড়ি কিংবা গহনা চাইনি। শুধু এতো টুকু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। তোমাকে আমার করে চেয়েছিলাম।কী করে তুমি আমার সবটুকু বিশ্বাস এভাবে অবলীলায় নষ্ট করে দিলে?’
কথাগুলো বলতে বলতে আমার কান্নায় মুখ ভরে এলো। কিন্তু আমি কষ্টে কান্নাকে চেপে রেখে স্বাভাবিক গলায় বললাম,’নিতুল,’আমি তোমার সাথে আর থাকবো না।চলে যাবো।আজ এক্ষুনি চলে যাবো!’
নিতুল এ কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে বললো,’চলে যাও। এক্ষুনি চলে যাও। কিন্তু সমস্যা হলো কী জানো তুমি চলে গিয়ে আরো বিপদে পড়বে। অন্ধকার ব্যাতীত তোমার আর কোন পথ নেই!আলোর দিকে এগিয়ে গেলে মানুষ তোমায় দেখিয়ে বলবে,’এই যে দেখো এই মেয়েটাইতো না যার ছবিগুলো ভাইরাল হয়েছে?
হা হা হা।
হা হা হা।’
নিতুল বিকট হাসিতে ফেটে পড়লো।
ওর হাসি এসে আমার কানের পর্দা কাঁপিয়ে তুলছে। চোখের জ্যুতি বিকীর্ণ করে দিচ্ছে। গলার স্বর স্তব্ধ করে দিচ্ছে।মনে হচ্ছে এই এক্ষুনি আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। তারপর। তারপর আমার চোখের সব আলো নিভে যাবে। গলার স্বর স্তব্ধ হয়ে যাবে।আর ভেতরে কাঁপতে থাকা আত্মা নামক পাখিটা উড়ে যাবে গত হওয়া আরো কিছু আত্মাদের কাছে!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here