মোহমায়া পর্ব ৭

#মোহ_মায়া
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



টেইলার্স ছেলেটা ভীষণ বোকা!
নিতুল পরদিন সকাল বেলা ওর দোকানে গিয়েছিল তার শার্টের ছিঁড়ে যাওয়া একটি বোতাম লাগাতে।আর তখন টেইলার্স ছেলেটা বললো,ভাই,ভাবী আসছিলো কালকে।
নিতুল হয়তোবা জানতে চাইলো তখন কেন আসছিলো?
আর ছেলেটি বোকার মতো সরল মনে বলে দিলো, কী একটা দরকারে আমার ফোন নিতে আসছিলো।
নিতুল তৎক্ষণাৎ শার্ট ওখানে খুলে রেখেই খালি গায়ে এসে গেল বাসায়।আর এসেই কোন কথা না বলেই আমার চুল টেনে ধরে ফেলে দিলো ফ্লোরের উপর। আমার কোলে তখন নোরা ছিল।নোরা সঙ্গে সঙ্গে আমার কোল থেকে পড়ে গিয়ে কান ফাটানো চিৎকার করে কান্না শুরু করলো।
কিন্তু পাষাণ পিতা তার মেয়ের এই চিৎকার একটুও কানে তুললো না।মেয়ের দিকে এক পলক তাকালোও না পর্যন্ত।সে আমার চুলের মুঠো ধরে বারান্দার দিকে আমায় টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। এভাবে আমায় টেনে নিয়ে যাওয়ার কারণে হাত,পা আর পিঠের ছাল উঠে যেতে লাগলো। তবুও আমার কী হচ্ছে সেদিকে খেয়াল না করে নোরাকে দেখছি আমি।আর চিৎকার করে বলছি,’আমার সাথে এমন করছো কেন তুমি?নোরার কাছে যেতে দাও আমায়! মেয়েটার মাথাটা বোধহয় ফেটে গেছে!’
আমি অনুনয় করে বলছি। কাঁদছি। কিন্তু কাজ হলো না।নিতুল এতো পাষাণ! নিজের রক্তের মেয়েটার প্রতিও একটুকু মায়া নাই তার!

নিতুল আমার গলা চেপে ধরলো এবার। তারপর বললো,’মেরে ফেলি তোকে?মেরে ফেলি?’
আমি তখনও জানিনা নিতুল আমার সাথে এমন করছে কেন!
আমি এবার কাঁদতে কাঁদতে বললাম,’তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন?আমি কী অপরাধ করেছি?কী করেছি আমি বলো?’
নিতুল তখন তার দাঁত কটমট করতে করতে বললো,’নাগর ধরছস তুই মাগী! বারো ভাতারী কোনখানের!’
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালাম।
নিতুল তখন বললো,’চোউখ বড়ো করছস কেনো? আমার উপর রাগ উঠছে?আমারে গিইলা ফেলবি রাগে?গিল তাইলে গিল আমারে!’
কথাগুলো বলে নিতুল আমার দিকে তার মুখ নিয়ে এলো।
আমি ভয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে খানিক দূরে সড়ে যেতে লাগলাম।
নিতুল তখন আমার শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে ফেললো। তারপর বললো,’নড়বি তো মরবি।এখান থেকে সড়লে শাড়ি খুইলা রাইখা যাইতে হবে!’
আমি আর একটুও নড়লাম না।আমি জানি নড়লে নিতুল যে অসভ্য তার কথা সে ফলাবেই!
আমি ঠাঁয় পড়ে থেকেই কাঁদতে লাগলাম।
নিতুল তখন আমার কাছে এসে বসে আমার মাথাটা উপরের দিকে তুলে নিয়ে আমার চোখের কাছে তার মুখটা নিয়ে গিয়ে বললো,’কিরে কাঁদছিস কেন এখন? কষ্ট হচ্ছে না খুব? আহারে বেচারি! আচ্ছা ওই ছেলেটার কাছ থেকে ফোন আনতে গিয়েছিলি কেন রে তুই?’
নিতুলের মুখ থেকে এ কথাটা শুনে আমার বুক কেঁপে উঠলো।কী সর্বনাশ! তাহলে নিতুলের কাছে বোকা ছেলেটি সবকিছু বলে দিয়েছে!
নিতুল আমায় চুপ হয়ে থাকতে দেখে বললো,’কিরে,চুপ করে আছিস কেন?বল,কেন ওর মোবাইল ফোন এনেছিলি? কার কাছে ফোন করেছিস?তোর বাবার কাছে?’
আমি কেঁদে কেঁদে বললাম,’না না বাবার সাথে কোনদিন আমি কথা বলিনি। বাবার কোন নম্বর নেই পর্যন্ত আমার কাছে!’
‘তাহলে?তাহলে বর্ষার কাছে ফোন করেছিস?আমি জানতাম তুই ওখানেই ফোন করবি।গত পড়শুও তো করেছিলি!কী বলেছিস ওর কাছে বল!’
আমি বললাম,’নোরার কাছে আমায় যেতে দাও আগে। তারপর বলবো কী বলেছি।’
নোরা তখনও চিৎকার করে কাঁদছে।নিতুল এবার আমায় যেতে দিলো।নোরার কাছে গিয়ে দেখি ফ্লোরে পড়ে ওর মাথা ফোলে উঁচু হয়ে গেছে।হাতের এক জায়গায় ছাল উঠে গেছে। মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে চুপিচুপি বললাম,’আগে ভেবেছিলাম তোর জন্য সবকিছু সহ্য করবো।তোর জন্য ওর ঘর করবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোর জন্যই আমি ওকে ছেড়ে দিবো। তোকে নিয়ে আমি নিরাপদ কোথাও চলে যাবো। এমন নরপশুর কাছে তোকে নিয়ে আমি আর একদন্ডও থাকবো না!’
নোরাকে শক্ত করে ধরে কাঁদছি আর ওর কপালে চুমু খাচ্ছি।নোরা তবুও কান্না থামাচ্ছে না।
নিতুল এবার আমার কাছে আবার এলো। এসে বললো,’বল কী বলেছিস ওর কাছে তুই?’
আমি এবার ঝাঁজালো গলায় বললাম,’বলেছি তোকে আমি খুন করবো।বিষ খাইয়ে মারবো তোকে।’
নিতুল হা হা করে হেসে উঠলো। তারপর বললো,’তুই বড্ড বেড়ে গেছিস রে হারামজাদি!আমায় তুই এখনও ভালো করে চিনিস না। তোকে আমি নাচাবো এখন থেকে।’
বলে সে আমার কোল থেকে নোরাকে কেড়ে নিয়ে গিয়ে বললো,’মেয়েকে যদি এখন শেষ করে দেই তখন সহ্য করতে পারবি রে তুই?এই পারবি?’
নিতুল শেষ কথাটা বললো ধমক দিয়ে।
আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। পৃথিবীতে কী এমন নিঠুর পিতাও আছে যে নিজের সন্তানকে খুন করে ফেলার কথা বলে তার স্ত্রীকে ভয় দেখায়!
আমি ভয় পাচ্ছি।সত্যি ভয় পাচ্ছি।ভয় পাচ্ছি এ কারণে যে নিতুল এতোটাই খারাপ যে তার পক্ষে নিজের মেয়েটাকে খুন করে ফেলা কঠিন কিছুই না।
আমি ওর কাছে এসে ওর পায়ে পড়ে গিয়ে বললাম,’না।না না না। আমার মেয়েকে কিছু করবে না তুমি।আল্লার দোহাই।ওর কিছু করবে না!’
নিতুল এবার বললো,’নাও। আমার ফোন নাও।আর বর্ষাকে ফোন করে বলো,সে যেন তার ঘরের দরজা খোলা রাখে কারণ তুমি তার সাথে দেখা করতে যাবে আজ রাতে!’
আমি বললাম,’আমি কেন তার সাথে অতরাতে দেখা করতে যাবো?’
নিতুল হা হা করে হেসে উঠে বললো,’বোকা মেয়ে। কিচ্ছু বুঝে না! তুমি তো শুধু মুখে বলবে আর তা বিশ্বাস করে দরজা খোলা রাখবে বর্ষা। কিন্তু দেখা করতে যাবো আমি।ওর সাথে আসল দেখাটা আজ করে আসবো আমি!’
কথাটা বলে নিতুল হাসতে লাগলো।
ভয়ংকর হাসি।যে হাসি দেখলে মনে কাঁপন ধরে।শরীরের সবকটি রুমকূপ সজারুর কাঁটার মতো দাঁড়িয়ে যায়।মনে হয় আমার সামনে কোন অশূর হাসছে। এই অশূর সবকিছু ধ্বংস করে ফেলবে।একে যেভাবেই হোক বধ করতে হবে। কিন্তু বধ করার উপায়ই তো খুঁজে পাচ্ছি না আমি!

#চলবে

(অনেক চাপ পড়ে গিয়েছে নিজের উপর। ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকলেও অ্যাসাইনম্যান্ট করে জমা দিতে হচ্ছে। এইসব কিছু করে গল্প লিখায় মন থাকে না। তবুও জোর করে এই পর্ব লিখলাম!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here