যেখানে পথচলা শুরু পর্ব -০৪

#যেখানে_পথচলা_শুরু |০৪|
সাদিয়া মেহরুজ

অরোন প্যারিসে নেই। ছুটিতে বাংলাদেশে গিয়েছে আজ প্রায় আট দিন হলো। চৌদ্দ দিনের মাথায় প্যারিসে ফিরে আসবে। এমনটাই বলছিল তানহা সকাল সকাল ফোন করে। তীরু তানহার কথায় বিশেষ গুরুত্ব দেখায়নি। কথা শুনে হাই তুলে ফোন রেখে দিয়েছে। সে বর্তমানে স্থির হয়ে বসে। ঘুম ঘুম ফোলা চোখে তাকিয়ে আছে সামনে। বিগত দিনের নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো স্লাইড শো আকারে চোখের সামনে ভাসছে তার। একটু বেশিই কি সিনেমাটিক হয়ে গেল না সব ব্যাপার গুলো? হ্যা আসতে পারে জীবনে অদ্ভুত মূর্হত তাই বলে এতোটা কি? তীরুর তা জানা নেই! সে আফসোস ও করেনা, দুঃখও পায়না৷ বিয়ে তো একটা করতেই হতো তার। নয়ত তানহা যে শান্তি পেতো না। তীরু কি মায়ের খুব বাদ্ধগত সন্তান? না! সকল কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে? না! তীরু বড্ড অবাদ্ধ মেয়ে। মায়ের কোনো কথা সে আজ পর্যন্ত মেনেছি কি না জানা নেই। কিন্তু শেষে এসে বিয়েতেই কেন যে বাদ্ধ গত হয়ে গেল তা তার জানা নেই। হয়ত স্রষ্টা এটাই চান। তীরুর কপালে বোধহয় ‘ অরোন ‘ নামের সেই অদেখা পুরুষটিই ছিল।

– ” টীরু আর ইউ ওকে? ”

চোখ বন্ধ করল তীরু। ফেলল লম্বা দীর্ঘশ্বাস। আহ্! তার এতো সুন্দর নামটা এই ভীনদেশী মানুষ গুলো ঠিক মতো কেন উচ্চারণ করতে পারে না? কেন?

তীরু উঠে দাঁড়াল। হতাশ চোখে পরখ করল তার সম্মুখে অবস্থানরত মেয়েটাকে। মেয়েটার নাম ইলি। তার রুমমেট। একইসাথে থাকে ওরা। ইলি বাদেও আরো দু’জন রয়েছে অবশ্য। কিন্তু তাদের সাথে তীরুর বিশেষ সখ্যতা নেই। বাকি মেয়ে দু’টো তাকে ছোট নজরে দেখে। প্রথম কারণ সে থার্ড কান্ট্রি হতে আসা এবং দ্বিতীয় কারণটা যে কি তা স্পষ্টত নয় এখন অব্দি। তবে এতটুকু বুঝেছে তার বাকি দু’জন রুমমেট এশিয়া মহাদেশকে খুব তুচ্ছ চোখ দেখে।

তীরু তার লম্বা চুলগুলো হাত খোপা করে নিতে নিতে ইলিকে প্রতিত্তোর করল,

-” ইয়াহ্! আ’ম ফাইন। হোয়াই ইউ আর আস্কিং মি দিস? ”

ইলি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল না। ও আস্তেধীরে হেঁটে এসে বসল বিছানায়। তীরুর হাত টেনে ধরে তাকেও বসিয়ে দিল পাশে। অতঃপর ধীর গলায় শুধাল,

-” তুমি কি তোমার হ্যাজবেন্ড কে মিস করছো টীরু?”

ইলির প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেলো তীরু! মেয়েটি হুট করে হ্যাজবেন্ড এর টপিক তুলল কেন? আশ্চর্য! ও প্রশ্ন করল,

-” হটাৎ আমার হ্যাজবেন্ডের ব্যাপার তোমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো কেন? ”

ইলি কিয়ৎক্ষণ চুপ রইল। একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল কেবল তীরুর পানে। তারপর যেভাবে হুট করে উদয় হয়েছিল সেভাবেই ছুটে বেড়িয়ে গেল। তীরু তখন বোকা বনে বসে। ইলিকে বড্ড অদ্ভুত লাগে তার! মেয়েটা ভারী উদ্ভট কাজকর্ম করে। মাঝেমধ্যে তার মনে হয় ইলির নিশ্চয়ই কোনো মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার কাজকর্মই অমন অদ্ভুত ধরনের।

ক্লাস শেষে মাত্রই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেছে তীরু, ইলি। এখানে ওরা দু’জন পার্ট টাইম জব করে। ইলি ওয়েটার এবং তীরু শেফের দায়িত্বে রয়েছে। রান্নার হাত দারুণ মেয়েটার। তাই শেফের জবটা পেতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।
তীরু স্যান্ডউইচ তৈরি করে ট্রে তে রাখছিল তখনি ছুটে আসে ইলি। মেয়েটা হাঁপাচ্ছে রীতিমতো। তীরু তাকে দেখে চিন্তিত হলো।

-” আর ইউ ওকে? এভাবে ছুটে এলে কেন ইলি? কোন সমস্যা হয়েছে কি? ”

ইলি চটপট ইংলিশে বলে উঠলো,

-” ঐ যে তোমাকে বলেছিলাম না আমাকে একটা ছেলে ধোঁকা দিয়েছে তাকে তোমাকে চিনিয়ে দিব যাতে তুমি ঐ ছেলের পাল্লায় না পড়ো? মনে আছে না? ছেলেটা এই রেস্টুরেন্টে এসেছে। তাও জানো কাকে নিয়ে? ওর বউ! ”

তীরু বিশেষ আগ্রহ দেখাল না। ব্যাস্ত হলো নিজের কাজে। ইলি তীরুর অনাগ্রহ দেখে দুঃখী গলায় বলল,

-” তুমি ওকে দেখবে না? ”

তীরু ইলির হাতে ট্রে ধরিয়ে দিয়ে তাড়া দিল,

-” দেখব। আগে এটা ঐ কর্ণারের কাস্টমারকে দিয়ে আসো। ”

ইলি হাওয়ার বেগে ছুটে গেল। তীরু অবাক! সে বুঝল না ইলি কেন তাকে ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য এতোটা উদগ্রীব।

ইলি ফিরে এলো। তীরুর হাত টেনে ধরে কিচেন থেকে নিয়ে এলো বাহিরে। তারা দাঁড়াল পাইন ট্রির ঠিক পেছনটায়। ইলি আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলল,

-” ঐ দেখো, ঐ যে একটা মেয়ের হাতে চুমু দিচ্ছে যেই ছেলেটা। ব্ল্যাক ড্রেস। ”

তীরু তাকাল। যতটা অনাগ্রহে তাকিয়েছিল সেটা কে টে গেল লহমায়। উক্ত ছেলেটিকে দেখে ও থমকাল! রাদিফ?

ইলি তোতাপাখির মতো অনবরত বলতে লাগল,

-” চিনে রাখো শ য় তা ন টাকে। বউ রেখে এই ব্যাটা যে কতো মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে। বিয়ে করেছে পাঁচ বছরের বেশি। ওর ওয়াইফ সবকিছু জানে ইউ নো? তবুও কিছু বলে না। সবই টাকার জোড়। রাদিফ বড়লোক দেখে ও বিবাহিত জানার পরও সব মেয়েরা ওর সাথে লিভ ইন এ যেতে এক পায়ে রাজি। কোনো মেয়ে যদি ওর নজরে আসতো কিন্তু ওকে পাত্তা দিত না তখন ও ছ্যাচড়ার মতো ওদের পেছনে পড়ে ওদের ঠিকই হাসিল করে নিতো অতঃপর নির্দিষ্ট সময় বাদে ছুঁড়ে ফেলে দিতো। আমি যদি আগে জানতাম টীরু তাহলে কক্ষনো ঐ ছেলের পাল্লায় পড়তাম না। ”

তীরু হা করে তাকিয়ে। রাদিফের চরিত্র এতোটা বাজে? মাই গড! তীরু তো এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না। ছেলেটা তো তার সাথেও ফ্লার্ট করার চেষ্টা করেছিল। হয়ত সে সুযোগ দিলে বিরক্ত করা জারি রাখত। ভাগ্যিস তার বিয়েটা হয়ে গেছে। এই প্রথম বিয়েটা হওয়ার জন্য তার মনে প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে।

_

-” তীরু, আজ তোদের ওখানে সকাল সাড়ে সাতটায় অরোন পৌঁছাবে কিন্তু। ”

তীরু ভারী ব্যাস্ত। দেরী হয়ে গেছে তার। তানহার কথায় বিশেষ ধ্যান দিচ্ছিল না। তবে অরোনের প্রসঙ্গ আসতেই হিজাব পড়া বন্ধ করে মায়ের পানে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। জিজ্ঞেস করলো,

-” কোথায় পৌঁছাবে? আমার বাসায়? তুমি ওনাকে আমার ঠিকানা দিয়ে দিয়েছ! ”

-” না তোর বাসায় কেন? প্যারিসে বলছি। তোর ঠিকানা দিব না কেন? তোর ঠিকানা তো সেই কবেই দিয়ে দিয়েছি। অরোন পৌঁছে তোকে হোস্টেল থেকে নিয়ে যাবে। ”

তীরু আমতা আমতা করল, ” কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে? ”

-” কি বোকার মতো প্রশ্ন করছিস? অরোন যেখানে থাকে সেখানে নিয়ে যাবে। তোদের বিয়ে হয়েছে তো নাকি? একসাথে থাকবি না? অরোন বলেছে ১২ টার দিকে তোর ওদিকে যাবে। ”

কিয়ৎক্ষণ মৌন রইল তীরু। পরক্ষণেই তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো,

-” দেরী হচ্ছে মা। রাখলাম। ”

তীরু ইলিকে ডেকে বেড়িয়ে পড়ে চটজলদি। এখন হেঁটে যেতে হবে প্রায় পনের মিনিটের পথ। হাঁটার মাঝে তীরুর মস্তিষ্কে কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে অরোন এর কথা। তীরু সময় দেখল। এখন সাতটা বাজে। তার মানে অরোনে প্যারিসে পা রাখবে আর আধা ঘন্টা পর। অরোনের সাথে সাক্ষাৎ হবে পাঁচ ঘন্টা বাদেই। অজান্তে তীরু কেঁপে উঠল! হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বেড়ে গেল খানিকটা। সেই বোধহয় একমাত্র ব্যাক্তি যে কিনা, তার স্বামীকে বিয়ের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরও নিজ চোখে দর্শন করেনি।

_

ক্লান্ত দেহ! অলস পায়ে ধীর গতীতে হাঁটছে তীরু। ইলি নানান কথা বলছে কিন্তু একটা শব্দও তার কানে ঢুকছে না। ভূমিতে দৃষ্টি এঁটে অবিন্যস্ত কদম ফেলে ও ভারী ধীরে হাঁটছে। ইলি বিরক্ত হয় এতে। বলে,

-” এতো আস্তে হাঁটছো কেন টীরু? ”

তীরু ম্লান গলায় শুধাল, ” আ’ম টায়ার্ড ইলি। ”

হোস্টেলের কাছাকাছি আসতেই তাদের সাক্ষাৎ হলো উইলির সাথে। তীরুর আরেক রুমমেট! যে তাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না। উইলিকে দেখে দ্রুত পা চালাল তীরু। মেয়েটার আশপাশে থাকতে তার ভালো লাগে না। কিভাবে যেন তাকায়। যেন তীরু এলিয়েন অথবা আবর্জনা কোনো। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে তীরুকে সর্বদা উপেক্ষা করে চলা উইলি তীরুকে দেখা মাত্র তার দিকে ছুটে আসছে। তীরুর নিকট পৌঁছে ও লম্বা শ্বাস টেনে বলে উঠলো,

-” টীরু, তোমার সাথে কেও দেখা করতে এসেছে। ”

তীরু প্রশ্ন করল, ” কে? ”

-” ওনার নাম অরোন। গার্ডেনে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। মাদার তাকে হোস্টেলে যেতে দেয়নি।”

তীরুর চমকায়! লোকটা এসেও পড়েছে? ইলিকে রেখেই তীরু পা বাড়াল। কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! তার এতো অস্বস্তি হচ্ছে কেন? পা যেন চলছেই না।

চলবে~

_____________

#কিছু_গুরুত্বপূর্ণ_কথা

এক. আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছিনা রাদিফ, সাদিফ কে আপনারা নায়ক ভেবে বসে আছেন কেন? আমি কি একবারও বলেছি যে ওরা নায়ক? না, তাই নয় কি? গল্পের শুরুতে যেই ছেলে আসবে তারাই যে নায়ক হবে এটা কেমন নিয়ম? হ্যা হতে পারে আপনারা এতদিন যাবৎ এমনটাই পড়ে আসছেন কিন্তু একটু আলাদা চিন্তা করা যায় না? রাদিফ, সাদিফকে আনা হয়েছিল গল্পের একটা ঘটনা কেন্দ্র করে। ব্যাস এতটুকুই! এখন আপনারা যদি এক্সট্রা করে ভেবে নেন তাহলে কি করে হয় বলুন তো?

দুই. অনেকেই বলছেন তীরুর একটা বিয়ে যেতে না যেতেই ফট করে আরেকটা বিয়ে কেন? ভাই! ১ম টাতো বিয়েই ছিল না। ঐটা সামান্য একটা এক্সিডেন্ট। আর আমি তো টাইম গ্যাপ দিয়েই দিয়েছি। দেড়টা মাস! এখন যদি এই দেড় মাস গ্যাপ না দিয়ে মাঝে কাহিনি দেখাতাম তাহলে কিন্তু আপনারাই বলতেন আজাইরা লিখে গল্প বড় করছি আমি।

তিন. রেসপন্স করা কমিয়ে দিলেন? আমি এখন লিখব কেমন করে আপনাদের পাশে না পেলে? উৎসাহ হারিয়ে যাচ্ছে তো…! একটু রেসপন্স করবেন প্লিজ। আর আমার ওপর ভরসা রাখুন। গল্পটার চমৎকার একটা প্লট ভাবা আমার। ভালো কিছুই দিতে যাচ্ছি।

চার. সবাইকে ভালোবাসা অবিরাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here