তীব্র প্রেমের নেশা পর্ব -শেষ পর্ব

#তীব্র_প্রেমের_নেশা
#অন্তিম_পর্ব
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________

তীব্রর সেন্স ফিরতেই তিহা তো তার ভাইকে জড়িয়ে ধরেই কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে৷ আমি তুরকে বুকে আগলে নিয়ে তখন রুমের এক কোণে গুটিশুটি মে’রে দাঁড়িয়ে আছি। তুর ভদ্র মেয়ের মতো আমার বুকে মাথা দিয়ে তাকিয়ে আছে নিজের বাবা আর ফুপির দিকে। তিহার কান্নায় তীব্র তাকে থামানোর চেষ্টা করে৷ বার কয়েক আমাকে আর আমার কোলে তুরের দিকে সে তাকিয়েছে৷ তিহার কান্না কিছুটা থামতেই তীব্র আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। আমি তখন নিজের কান্না আটকাতে ব্যস্ত। এই লোকটার সামনে আমি একটুও কাঁদবো না। পা’ষাণ লোক! তীব্র কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘প্রাণ এখানে কেনো তিহু? প্রাণের কোলে ওটা কে? আর এটা কোন জায়গা?’

তিহা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে আমার কোল থেকে তুরকে নিয়ে আমার হাত টেনে এগিয়ে আসে৷ মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বলে, ‘তোমার মেয়ে ভাইয়া।’

তীব্র চমকায়। ভ্রু কুঁচকে মুখ গম্ভীর করে। তিহা ধীরে ধীরে তাকে গত ৩ বছরের সবটাই বলে। তীব্র অবাক হয়ে বলে, ‘আমি কোমায় ছিলাম! ৩ বছর কেটে গেছে!’

তিহা ঠোঁট চেপে কান্না করতে করতে মাথা নাড়ায়। তীব্র তুরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়। একবার আমার আর একবার তিহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে, ‘আ-আমার মেয়ে?’

হুট করেই তুরকে জড়িয়ে ধরে। চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়ায়। তুর শুধু তাকিয়ে আছে নিজের বাবার মুখ পানে। তীব্রর চোখে মুখে চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মেয়েকে। ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,

‘জীবন থেকে সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত গুলো আমি হারিয়ে ফেলেছি মা। কতগুলো দিন আমি তোমার পাশে ছিলাম না।’

তুর নিজেও বাবার কোলের মধ্যে গুটিশুটি মেরে আছে। অনেকটা সময় পর তুর মাথা তুলে তাকায় নিজের বাবার দিকে। ছোট ছোট হাতে তীব্রর চোখ মুছে ভাঙা ভাঙা বলে,

‘বাব্বা! না না।’

তীব্র ফিক করে হেঁসে বলে, ‘আচ্ছা মা। আমি আর কাঁদবো না।’

আমি আর তিহা শুধু দেখলাম দুজনের কান্ড। এরপর পুরোটা সময় তীব্র তুরকে নিয়েই কাটালো।
___

কেটেছে বেশ কয়েকদিন। তীব্র এখন সুস্থ। তবে এর মধ্যে আমাদের কথা হয়নি তেমন একটা। তীব্র সারাটাদিন তুরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আর তুরও তার বাবার সাথে খুশি খুব। আমি নিজে থেকে তীব্রর সাথে ওভাবে কথা বলিনি৷ কাটুক ৩ বছর। আমার অভিমান এখনো আছে। কেনো সেদিন সে আমাদের ছেড়ে গেছিলো! কিচেনে এসে সব গুছিয়ে রাখছিলাম আর এসব ভাবছিলাম তখন পেছন থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখলাম তীব্র দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ পিটপিট করে তাকাতেই তীব্র ছোট করে বললো,

‘কফি নিয়ে আসো তো একটু।’

আমি মাথা নাড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। এখন রাত বাজে ১১ টা। একটু আগেই তুরকে ঘুম পাড়িয়ে এসে খেয়ে নিয়েছি। তাই কিচেনে সব গুছিয়ে রাখছিলাম। তীব্রর কথা শুনে কফি বানিয়ে নিয়ে আসলাম রুমে। রুমে কোথাও তাকে না দেখে ছোট্ট ব্যালকনিতে উঁকি মারলাম। ওখানে তীব্রকে দেখে সরাসরি ওখানেই ঢুকলাম। নিচু স্বরে বললাম,

‘আপনার কফি!’

তীব্র চোখ ফিরে তাকায় আমার দিকে। তার দিকে না তাকিয়েও বলতে পারি সে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাথা নিচু রেখেই দৃষ্টি এদিক ওদিক করে কোনো রকমে কফি হাতে ধরিয়ে দিয়ে উল্টো পথে বের হয়ো আসতে নিলে উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো!’

আমি ফাঁকা ঢোক গিললাম। হাতের তালুতে হাত ঘষতে থাকলাম। একবার রুমে উঁকি দিয়ে তুরকে দেখে নিয়ে পিছু ফিরে তাকালাম তীব্রর দিকে৷ তীব্রর দৃষ্টি তখনো আমার দিকে। আমি ভড়কে গেলাম। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে এগোলাম তীব্রর কাছে। তীব্র কতক্ষণ চুপ থেকে হুট করেই বললো,

‘আমি তোমাকে ছেড়ে আসার পরও আমাকে এতো ভালোবাসতে কেনো? তুমি তো পারলেই সেদিন আমাকে মৃ’ত্যুর মুখে ছেড়ে দিতে পারতে তাহলে আগলে রাখলে কেনো?’

আমি হাসলাম উনার দিকে তাকিয়ে। চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘ভালোবাসি তাই আগলে রেখেছি। কতটা ভালোবাসি তা বোধহয় আপনার অজানা নয়!’

তীব্রর আর কিছু বলে না। চুপ করে কফিতে চুমুক দেয়। কতক্ষণ দুজনে নীরবতা নিয়েই দাঁড়িয়ে রইলাম। তীব্র কিছু বলছে না বলে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসতে নিলে উনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রাণ।’

শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো। কেঁপে উঠলাম। মুহুর্তেই অজানা এক অনুভূতিতে ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি জানতাম সে আমাকে ভালোবাসে তবে তার মুখ থেকে শোনার জন্য অপেক্ষা করেছি কতগুলো দিন। আজ অবশেষে তার মুখ থেকে শুনলাম। তীব্র ফের কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

‘সেদিন আমার কাছে কোনো উপায় ছিলো না। সেদিনের সেই সাময়িক বিচ্ছেদটুকু না হলে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম। হারিয়ে ফেলতাম আমাদের তুরকে। তোমার বাবা-মায়ের খু’নী আরামে ঘুরে বেড়াতো। তবুও ভীষণ দেড়ি হয়ে গেছে। ৩ টা বছর ওরা খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

আমি দ্রুত পায়ে তার কাছে এগোলাম। উনার কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে বললাম, ‘আপনি জানেন আমার বাবা-মায়ের খু’নী কে? আর-আর আপনি কেনো বললেন তুরকে হারিয়ে ফেলতাম? আপনি জানেন আমি…’

তীব্র আমাকে আঁকড়ে ধরলেন। স্মিত হেঁসে বললেন, ‘হুম জানতাম। তোমার মনে আছে নানুবাড়ির সেই দুর্ঘটনা? সেদিন যা ছিলো তা অনিচ্ছায় ছিলো না বরং যা ঘটেছিলো পুরোটাই আমার ইচ্ছেতে। তোমাকে দেওয়া থা’প্প’ড়টা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও বাকি সবটাই ছিলো ইচ্ছাকৃত। আমি জানতাম এমন দিন আসবে যেদিন তোমার আমার বিচ্ছেদের কথা উঠবে। আমি তোমাকে নিজের করে রাখার জন্য সব করতে পারি কিন্তু তুমি ভুল বুঝে কষ্ট পাও এটা চাইনি। সেদিন তোমার আমার বিচ্ছেদ হওয়ার কথা ছিলো না তবে আমি বাধ্য ছিলাম সেদিন। বিশ্বাস করো এতটুকুও ভালো ছিলাম না আমি। একটুও না।’

উনার বুকে মাথা রেখে আছি। অভিমানগুলো সব গলে জল হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। তীব্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি তীব্রর বুকে মুখ গুজে দিয়ে বললাম,

‘আমাকে সবটা বলবেন না?’

‘বলবো। কাল আমরা ফিরে যাবো আমাদের বাড়িতে। যা হওয়ার সেখানেই হবে। তুমি যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত থেকো।’

আমি শক্ত করে তীব্রর টি-শার্ট আঁকড়ে ধরলাম। ভয় পাচ্ছি কাল কি হবে! তীব্রকে দেখে সবার রিয়েকশনই বা কেমন হবে! আমার ভাবনার মাঝেই তীব্র বললেন,

‘আগের থেকে বেশি সুন্দরী হয়ে গেছো প্রাণ।’

আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম মুখে দুষ্টু হাসি। আমি উনার বুকে কি’ল মে’রে মুখ গুজে রইলাম। সারা রাত দুজনে গল্প করেই কাটালাম। আকাশে চিকন একটা চাঁদ আর তার পাশের তারাগুলোও যেনো মন দিয়ে আমাদের গল্প শুনছে। এতোগুলো দিনের অপেক্ষার পর দুজনের জীবনে প্রেম আবার আসছে। আবার দুজনে পরিপূর্ণ হচ্ছি। আমাদের সুখের সময়টুকুর সাক্ষী হয়ে থাকুক এই অন্ধকার রাত, অন্ধকার শহর।
______

অনেকগুলো দিন পর আমরা আবারও তীব্রর বাড়িতে ফিরছি। বাড়ির বাহিরে গাড়ি থামতেই বেশ অবাক হলাম। সবকিছুই কেমন যেনো বদলে গেছে৷ তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুরকে কোলে নিয়ে আরেক হাতে আমার হাত শক্ত করে ধরলো। তিহা, আমি আর তীব্র বাড়ির দিকে এগোলাম। তীব্র নিজেই কলিং বেল চাপলো। দরজা খুলে দিলেন আজাদ আঙ্কেল। চোখের সামনে আমাদের দেখে বেশ অবাক হলেন। অবাক চোখে শুধু চেয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। এরপর তুরকে কোলে নিয়ে আদর করে তিহার কাছে দিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরলেন। বাবা-ছেলের বেশ অনেকক্ষণ সময় কাটলো। তাফিয়া আন্টি তীব্রকে দেখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন। চমকে গেলেন ভীষণ। আন্টি তীব্র আর তিহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলেন। আমার আর তুরের দিকে তাকালেনও না। কান্নাকাটি শেষে বরাবরের মতোই আন্টি আমাকে দোষ দিয়ে বললেন,

‘তুমি আমার ছেলে মেয়েকে লুকাইয়া রাখছিলা তাই না? আমাদের বলছো ওরা মা’রা গেছে আর তুমি তলে তলে এতসব কইরা রাখছো!’

আঙ্কেল বিরক্ত হয়ে ধমকে থামিয়ে দিলেও আন্টি থামলেন না। একে একে কিছু মুহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে গেলো তীব্র বেঁচে আছে। আমার ফুপিরা সবাই হাজির হলেন। কারো মুখে আতঙ্ক তো কারো মুখে খুশি। ফারদিন ভাইকে দেখে তীব্র বাঁকা হেঁসে বললেন,

‘কি খবর বড় ভাই? আপনার সাথে সাক্ষাৎকারের জন্যই আমি অপেক্ষায় ছিলাম। আসেন আসেন বসেন!’

ফারদিন ভাই ফাঁকা ঢোক গিললেন। আমাদের ৩ জনের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বললেন, ‘তো-তোরা সবাই বেঁচে আছিস!’

তীব্র বিনিময়ে হাসলো। ফুপি আমার কাছে আসতে নিলে তীব্র আটকায়। আমাকে সরিয়ে বলে, ‘আরেহ এতো তাড়া কিসের আন্টি? একটু সবুর করেন৷ এতো কষ্ট করে আপনাদের জানালাম আমার বেঁচে থাকার খবরটা। এতো কষ্ট করে এখানে আনালাম আর এখন সব কিছু না শুনেই আমার বউ, বাচ্চার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন!’

ফুপি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, ‘তীব্র প্রানেশা শুধু তোমার বউ না আমার ভাইয়েও মেয়ে।’

‘হ্যাঁ সেই ভাইয়ের মেয়ে যাকে আপনি আর আপনার স্বামী মিলে গত ২২ বছর আগে খু’ন করেছিলেন! তাই না?’

আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। অবাক চোখে চেয়ে রইলাম তীব্রর মুখের দিকে। ফুপি থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বললেন, ‘তীব্র এতোদিন পর নাটক করে এসে এখন একদম মিথ্যা বলবা না।’

‘প্রুফ ছাড়া তাশজিদ শেখ তীব্র কিছু বলে না। আর সত্যটা আপনিও জানেন আমিও জানি। ৩ বছর আগে এই সত্যর বিনিময়েই আপনি আমার হাতে প্রাণকে তুলে দিয়েছিলেন। আমাদের মধ্যে ডিল ছিলো ‘আপনি আমার আর প্রানেশার বিয়েতে রাজি হবেন বিনিময়ে আমি এই সত্য আপনার সামনেই পু’ড়িয়ে ফেলবো।’ সেদিন আমি আপনার সামনে আপনারই স্বীকার করা কর্মকান্ডের ভিডিও, ডকুমেন্ট ডিলিট করে দিলেও ওগুলোর অরিজিনাল কপি ছিলো অন্য জায়গায়। এটা আপনি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো সেদিন সমুদ্রে প্রানেশাকে অ্যাটাক করা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমার লোকের জন্য তা পারেননি। তাই তো মিসেস পলক আহমেদ!’

আমি শুধু অবাকের ওপর অবাক। কি হচ্ছে, কোথা থেকে কি হয়েছে তার কিছুই আমার মাথায় যাচ্ছে না। সমুদ্রে সেদিন কি হয়েছিলো! ফুপি চেচিয়ে উঠলেন। চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো। ফুপি এগোতে নিলে কোথা থেকে দুজন মহিলা এসে ফুপির হাত চেপে ধরলো। ফুপা আর ফারদিন তাদের আটকাতে আসলে ২ জন লম্বা, দানবের মতো শরীর নিয়ে আটকে ধরলেন তাদের। পলি ভয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরলো। আমি ওকে শান্ত করতেই তীব্র একটা লোককে কিছু নির্দেশ করলেন। তারা উপরে গিয়ে একটা ল্যাপটপ আর পেনড্রাইভ আনতেই তীব্র তা প্লে করলেন। সেখানে ফুপির নিজে মুখের স্বীকারোক্তি আর ক্ষোভ দেখে আমি ভারসাম্য হারালাম। সবাই চুপ হয়ে যায়। আমি শুধু তীব্রর মুখের দিকে তাকালাম। আমার সব প্রশ্ন বুঝতে পেরে বোধহয় উনি মুখ খুললেন,

‘তোমার যখন জন্ম হয় তখন তোমার বাবার বিরাট লাভ চলছিলো। দেখতে দেখতেই তোমার বাবা যেনো এক লাফে ব্যবসায়ের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে কিন্তু তখন তোমার ফুপার ব্যবসার হাল ছিলো খুবই খারাপ। রাস্তায় বসার মতো অবস্থা হলে তোমার বাবার কাছে হাত পাতে। তোমার ফুপার অবৈধ ব্যবসায়ের কথা তোমার বাবা জানতো বলে তাদের মুখের ওপরই সাহায্যর জন্য না করে দেয়। তখন তারা লোভে, ক্ষোভে, জিদে তোমার বাবা-মা’কে মে’রে ফেলে। তোমার বাবা-মা বোধহয় বুঝেছিলো এমন কিছু হতে পারে। তাই তাদের সব সম্পত্তি তোমার নামে করে দিয়েছিলো। তোমার ১৮ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো সম্পত্তি পাবে না। কাগজে কলমে সে সম্পত্তি পাওয়ার জন্যই তোমাকে তারা লালন-পালন করে। ফারদিনের সাথে বিয়েও দিতে চায়। তবে তোমার বয়স ১৮ হওয়ার পর পরই তোমার থেকে সাইন কিভাবে নিবে এটা প্ল্যান করতে থাকে। ততদিনে তুমি জড়িয়ে পড়েছো আমার সাথে। তারা তোমাকে মে’রে ফেলার প্ল্যান করলেও আমার জন্য পারতো না। ফারদিনের সাথে আমার শ’ত্রুতার জন্য সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে আমি সব ডকুমেন্ট ধীরে ধীরে জোগাড় করলাম। ততদিনে তোমার কাছে আমার পরিচয় শুধুই ‘ধ’র্ষ’ক’। আমি জানতাম তুমি এমনিতে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না তাই তোমার ফুপিকে ব্ল্যাকমেইল করেই একপ্রকার ডিল করে বিয়েটা করি। এরপর ধীরে ধীরে সব ঠিক হলেও তোমার ফুপি, ফুপা খোঁজ পেয়ে যায় আমার কাছে তাদের বিরুদ্ধে সকল প্রুফ আছেই। তারা টার্গেট করে আমাকে। তাদের মূললক্ষ্য তোমাকে মা’রা ছিলো না। আমি তোমাকে ওই বাড়িতে দিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম কারণ আমার মা তখন তোমার ফুপির কথায় কথা মিলাচ্ছিলো। তোমার থেকে নিজেকে দুরে না সরানো পর্যন্ত আমি ওদের শাস্তি দিতে পারতাম না। ফারদিন জেতার নেশায় তখন অন্ধ। তোমাকে পাওয়াটাই তার নেশা ছিলো। তোমার যে কোনো ক্ষতি হতে দেবে না তা আমি ভালো ভাবেই জানতাম। সেদিন রাতে আমি জেনেছিলাম যে তুমি প্রেগন্যান্ট। ভেবেছিলাম তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো আর একবারে এদেরকে পুলিশের কাছে দিবো। তবে ফিরে আসার আগেই পেছন থেকে পলক আঙ্কেলই আমাকে মে’রে ফেলার জন্য গু’লি করেছিলো। সম্ভবত হসপিটালের আগুনটাও আঙ্কেল আর আন্টি মিলে লাগিয়েছিলো।’

আমি ধপ করে বসে পড়লাম। ফুপি, ফুপা, তাফিয়া আন্টি মাথা নিচু করে বসেছিলো৷ ফারদিন ভাই বেশ অবাক হয়েছেন। পলি কাঁদছে। আমি ভুলেই গেছি কি থেকে কি হলো! আমি চুপচাও ওভাবেই বসে রইলাম। তীব্র তাফিয়া আন্টির কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘আম্মু তোমার প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের মেয়েও কিন্তু আমাকে মা’রতে চেয়েছিলো!’

আন্টি অবাক হয়ে তাকালেন। যার জন্য তিনি আমাকে পছন্দ করেন না সেই মেয়েই তীব্রকে মা’রতে চেয়েছিলো বিষয়টা তিনি হজম করতে পারলেন না। তীব্র হেঁসে বললো, ‘তানহা সেদিনের অপমান হজম করতে পারেনি৷ প্রানেশার কাছে হারবে না বলে আমাকেই মে’রে ফেলতে চেয়েছিলো।’

আন্টি অপরাধী চোখে তাকিয়ে রইলেন। মাথাটা ঘুরে আসলো। ছোট থেকে যাদের কাছে বড় হলাম তারাই আমার বাবা-মায়ের খু’নী বিষয়টা হজম করতে ভীষণ কষ্ট হলো। দুর্বল শরীরে এতোকিছু নিতে না পেরে জ্ঞান হারালাম।
__

সবাইকে পুলিশ নিয়ে গেছে। তীব্রর যা ক্ষমতা তাতে উনারা যে এতো সহজে মুক্তি পাবে না তা আমি জানি। চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে ছিলাম। তুরকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিয়ে রুমে ঢুকলো তীব্র। তুরকে শুইয়ে দিয়ে আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

‘খারাপ লাগছে খুব?’

বিষন্ন গলায় বললাম, ‘আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তীব্র। আপন মানুষ গুলো এমন হয় কেনো? আমাকে ছোট বেলাতেই এতিম করে দিয়ে তারা কি সুখ পেলো?’

তীব্র তুরের দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে হালকা করে সরিয়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো। নিজের সাথে আঁকড়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খেলো। তারপর কন্ঠস্বর ধীর করে বললো, ‘লোভ খুব খারাপ জিনিস প্রাণ। যাকে একবার পেয়ে বসে সে ঠিক ভুলের পার্থক্য বুঝে না। খারাপ অতীতকে অতীতেই রেখে দাও। আমরা নতুন করে সব শুরু করবো। নতুন করে শুধু নিজেদের জন্য, আমাদের তুরের জন্য বাঁচবো। কোনো খারাপ অতীতকে আর আসতে দেবো না বর্তমানে। আজীবন দুজনে এভাবেই থাকবো।’

আমি তীব্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। বিড়বিড় করে বললাম, ‘হুম। অতীত তবে অতীতেই থাক। হয়তো অতীতের ব্যাথাাগুলো ভুলতে কষ্ট হবে তবে সময় নিলেও আমি ভুলে যাবো সব৷ আমি আজীবন এই তীব্র প্রেমের নেশায় ডুবে থাকবো। আজীবন এই তীব্রর প্রেমের নেশাতেই পু’ড়তে চাই। ভালোবাসি তীব্র।’

তীব্র কপালো ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বললো, ‘ভীষণ রকম ভালোবাসি প্রাণ।’

সমাপ্ত..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here