যে বর্ষণে প্রেমের ছোঁয়া পর্ব -০২+৩

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২

“তোকে বারবার মানা করেছিলাম গিয়ে ঝামেলা বাঁধাস না। তুই কারোর কথা শুনিস না কেন বল তো? আমার তো এখন ভয়ে লোম দাঁড়িয়ে আছে। ওই ছেলেটার বন্ধুরা তোর দিকে কীভাবে তেড়ে আসছিল দেখেছিস?”

হাঁটতে হাঁটতে উত্তেজিত সুরে মোহকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল তানিয়া। মোহ বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,
“আশ্চর্য! আমি কী করে জানব ওটা সেই লোক না? তুই-ই তো উনাকে দেখিয়ে দিয়েছিলি। আর ভয় পেয়ে কী আর হবে? ঘটনা সেখানেই চুকে গেছে।”

“চুকে গেছে? তুই কী করে সিউর হলি? আমার তো মনে হচ্ছে ব্যাপারটা চুইংগামের মতো বড়ো হয়ে যাবে। যখন তোরা ঝগড়া করছিলি একটা লোককে বলতে শুনেছিলাম কোন যেন মন্ত্রীর ছেলে। নাম কী যেন! ওহ হ্যাঁ মি. সরোয়ার সাহেরের ছেলে। যদি তাই হয় তাহলে ব্যাপারটা অনেকদূর গড়াতে পারে, মোহ! অনেক কিছু ঘটতে পারে।”

মোহের টনক নড়ে এবার। হাঁটার গতি ধীর হয়। বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগে পাল্লা দিয়ে। মোহ বলে,
“আগে থেকে এসব ভেবে ভয় পেয়ে লাভ নেই। তাছাড়া আমি উনাকে সরি বলেছি। বদৌলতে বলেছি থা/প্পড় মে/রে শোধ তুলতে। উনি সেটা করেননি। বাকিটা পরে দেখা যাবে। আমি আর এই বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চাইছি না।”

তানিয়া প্রতিত্তোরে জবাব না দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে মোহের চোখেমুখে ফুঁ দিয়ে বলে,
“বৃষ্টি আসবে! আমার বাড়ি কাছেই। চল বাড়িতে।”

মোহ নীরবে চলতে থাকল। তানিয়ার কথার জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না এখন। মাথায় ঘুরছে কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। আদেও সব ঠিকঠাক মিটে গিয়েছে তো?

ঝুম বৃষ্টি থেমেছে। কিছুটা সময় পর সন্ধ্যা নামবে। আকাশটা এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে সন্ধ্যা লেগেছে যেন এখনি। তানিয়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছে মোহ। তার ইচ্ছে করল কোনো অটো ধরে বাড়িতে যাওয়ার তবে উপায় পেল না। তখন মায়ের সাথে কিছুটা রাগারাগি করে টাকা না নিয়েই বেরিয়েছে সে। সুতরাং, পুরো পথ হেঁটেই যেতে হবে। মাঝরাস্তায় এসে ফের বিপত্তি বাঁধল। বৃষ্টির বেগটা বাড়তে লাগল। সেই সাথে দৃঢ় বেগের বাতাস নিজ ছন্দে বইতে লাগল। জোরে গিয়ে সামনে সেই চায়ের দোকানটাই পেল মোহ। বিড়বিড়িয়ে নিজ মনে বলল,
“কাল ইন্টারভিউ আছে। আজ যদি জ্বর বাঁধিয়ে ফেলি তাহলে কাল যেতেই পারব না। দোকানেই কিছুক্ষণ দাঁড়াই।”

যেই ভাবা সেই কাজ। চায়ের দোকানের ছোটো ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঝুঁটি করা কোঁকড়ানো চুল অর্ধেকই ইতিমধ্যে ভিজে গিয়েছে। চুল খুলে এলোমেলো করে ঝাড়তে ব্যস্ত হলো সে।

হাই স্পিডে বাইক চালিয়ে সেই চায়ের দোকানে এসে থামল স্বচ্ছ। সে ভেবেছিল, সবাই হয়ত এখানেই আছে। কিন্তু এখানে কাউকে দেখল না স্বচ্ছ। তার ফোন পানিতে ভিজে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফেরার কথা মাথায় আনতেই তীব্র বর্ষণের সঙ্গে তখন উৎপাত ঘটল বজ্রপাতের। তড়িঘড়ি করে বাইক থেকে নেমে ছাউনির নিচে দাঁড়াতে গিয়েই বিপত্তি ঘটল। এক নারীজনের সাথে গা ঘেঁষে গেল তার। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে দূরে সরে গেল সেই নারী। আঁখি দুটো কপালে উঠে গেল স্বচ্ছের। সেই দুঃসাহসিক কাজ করা মেয়েটি আবারও তার সামনে। মেয়েটি থতমত খেয়ে বলল,
“আপনি আবার?”

স্বচ্ছ চোয়াল শক্ত করে দূরে সরে দাঁড়াল বৃষ্টির মাঝে। মেয়েটির আশেপাশে থাকারও ইচ্ছে নেই তার। স্বচ্ছ বলল,
“কেন জায়গাটা কি তুমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছ নাকি?”

মোহের বুঝতে দেরি হলো না স্বচ্ছ তাকে ব্যঙ্গ করে কথা বলতে চাইছে। তবে সে উত্তরে নিশ্চুপ রইল। কারণ সে জানে ভুল তার ছিল। আর এই ভুলের পর যেকোনো লোকের রেগে থাকা স্বাভাবিক। মোহ যথাসম্ভব শান্ত থেকে বলল,
“আমি একথা কখন বললাম? আপনি চাইলে আমার পাশে দাঁড়াতে পারেন। অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।”

“ওহ আচ্ছা! আমি তোমার পাশে দাঁড়াব তারপর তুমি সেই অপরাধে আমাকে আরেকটা থা/প্পড় মে/রে দেবে। তোমার ইটেনশান কি শুধু আমাকে চ/ড় মা/রা?”

“আরে আশ্চর্য! আমার পাশে দাঁড়ালে আপনাকে কেন থা/প্পড় মা/রতে যাব? তখন ওটা আমার ভুল ছিল। আপনাকে চিনতে ভুল করেছি যেটা আমি স্বীকার করেছি। আপনি ভিজে যাচ্ছেন তাই আপনাকে বললাম দাঁড়াতে। আজকাল মানুষের ভালো করতে নেই দেখছি।”

স্বচ্ছ বিদ্রুপাত্মক হাসি দিয়ে বলল,
“ওহ মাই গড! তুমি দেখি খুবই মহান একজন নারী! জুতো মে/রে গোরু দান করতে বেশ ভালো মতোই জানো।”

মোহ এবার উত্ত্যক্ত হলো। গোল মুখে দেখা দিলো রক্তিম বর্ণের আভা।
“আমি বারবার একটা কথা স্বীকার করেছি যে আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে আপনি এতোটাই ঘাড়ত্যাড়া মানুষ যে কথাগুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই ভুলের দিকেই নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আপনার এখানে দাঁড়াতে হলে দাঁড়ান নয়ত আমার সাথে মুখ লাগাবেন না।”

স্বচ্ছ কিছু বলার আগেই দোকানের ভেতরে থাকা দোকানদার এবার ধমকে উঠল মোহের দিকে।
“এই মাইয়া এই! কারে কী কইতাছ? মনে ভয়ডর নাই? মনে সম্মান শ্রদ্ধা নাই?”

মোহ সোজাসাপ্টা বলল,
“সম্মান-শ্রদ্ধা পাওয়ার জন্য সেই সম্মানজনক কাজ করতে হয় কাকা। নয়ত কখনোই সেই সম্মান অর্জন করা যায় না।”

“তোমার জ্ঞানের কথা তোমার নিজের কাছেই রাখো। আজ যদি তোমার এই বেয়াদবির কারণে কথা উঠে তাহলে সবার আগে আমার দোকান উঠাইয়া দিবে। তুমি যাও তো এখানে থাইকা। এমনি মেলা বড়ো ঝামেলা হইয়া গেছে।”

“কিন্তু কাকা বাহিরে বৃষ্টি…”

দোকানদার ফের ধমক দিয়ে বললেন,
“তুমি যাইবা এখান থাইকা? আমার বিপদ আর বাড়াইয়ো না।”

মোহ কড়া দৃষ্টিপাত করল স্বচ্ছের দিকে। ভেতরটা ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে অথচ সে কিছু বলতে পারছে না। মোহ ছাউনি থেকে বের হতেই স্বচ্ছ মৃদু হেসে ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়াল ভেজা ছিপছিপে গায়ে। প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
“কার জায়গা কোথায় বুঝতে পেরেছ? তোমার জায়গা ওখানেই। আর আমার জায়গা এখানে।”

মোহ আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলার আগেই স্বচ্ছ নিজের তর্জনী আঙ্গুল নিজের ঠোঁটের কাছে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
“হুঁশশ! এই একটা থা/প্পড়ে তুমি আমার সম্মান যতটা হানি করেছ আমাকে যতটা নিচে নামিয়েছ তোমাকেও ঠিক একটু একটু করে তার চেয়ে দশগুন নিচে নামাব মিস. বিছুটি পাতা। তোমার সব রস যদি আমি নিংড়ে না নিয়েছি তবে আমার নাম আহিয়ান স্বচ্ছ নয়। নাউ গো! যত দ্রুত বাড়িতে যাবে তোমার নিজেরই মঙ্গল। নয়ত পুরো শরীর ভিজে যাবে রাস্তার ছেলেরা টিজ করবে তখন আবার কাকে চ/ড় মে/রে বসবে কে জানে! তোমরা কিছু মেয়েরাই তো এমন। দোষ করো তোমরা নিজে আর দোষী বানাও ছেলেদের। তোমরা নিজেদের দেখিয়ে বেড়ালে দোষ নেই কিন্তু ছেলেরা তাকালেই দোষী!”

এবার মোহের মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তার বোধ হলো সে লোকটিকে চ/ড় মে/রে একদম ঠিক কাজ করেছে। এই মুহূর্তে তার বাসনা জাগছে আরো দুই চারটা থা/প্পড় লাগাতে পারলে মন্দ হতো না। তবে সে নিজেকে দমিয়ে বলল,
“ঠিক হয়েছে আপনাকে থা/প্পড় মে/রে। আপনি সেটারই যোগ্য। এতক্ষণ ক্ষমা চাইছিলাম। আর চাইব না। আপনি আরো কয়েকটা থা/প্পড় ডিজার্ব করেন। আমিও দেখব আপনার ক্ষমতা দিয়ে আমাকে কতটুকু নিংড়ে নিতে পারেন।”

আর বিলম্ব করল না মোহ এক সেকেন্ডও। সেই তুমুল বৃষ্টিপাতে হাঁটা শুরু করল রাস্তা ধরে হনহনিয়ে। কিছুটা দূর যাওয়ার পরেই তার পাশ কাটিয়ে ফুল স্পিডে বাইক চলে গেল। এমন গতিতে রাস্তায় জমে থাকা নোংরা পানি গিয়ে পড়ল মোহের গায়ে। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেল মোহ। দূরে দৃষ্টিপাত করতেই দেখল বাইকে বসে থাকা সেই অভদ্র পুরুষটাকে। স্বচ্ছ মুচকি ঘাড় বাঁকিয়ে মুচকি হেসে চেয়ে আছে। মোহের বুঝতে দেরি রইল না এটা সেই ছেলেটার করা ইচ্ছাকৃত কাজ। ক্রোধ আর সামলে উঠতে পারল না সে। নিচু হয়ে হাতে ছোটো ইঁটের টুকরো তুলে তেড়ে গিয়ে স্বচ্ছের দিকে ছুঁড়তে গেলেই ফের বাইক স্টার্ট দিয়ে মুহূর্তেই বেশ দূরে চলে গেল লোকটি। মোহের গায়ে কম্পন ধরল ক্ষোভে। কিন্তু সে কিছুই করতে পারল না।

ভেজা কাপড়েই মেঝেতে পা দুলিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে স্বচ্ছ চোখ বুঁজে। ভাবনা থেকে একটুর জন্যও সরাতে পারছে না আজকের ঘটনাগুলো। একটা সামান্য মেয়ে তাকে এভাবে অপমান করতে সেটা তার ভাবনাতেও আসেনি। মেজাজটা তার এখনো তুঙ্গে। রিনরিনে কোনো মেয়েলি কণ্ঠস্বরে চোখ মেলে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল স্বচ্ছ। লাল চকচকে পোশাক পরা হাস্যোজ্জ্বল স্বচ্ছের ছোটো বোন ফারাহ তার পাশে এসে বসেই তাকে ভেজা অবস্থায় দেখে বিস্মিত হয়ে বলে উঠল,
“ভাই! ভেজা গায়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছ কেন?”

স্বচ্ছ পাশ ফিরে শুয়ে বলল,
“এমনি, ফারাহ! ভালো লাগছে না।”

“উঁহু! তোমার মন মেজাজ দেখে ভালো ঠেকছে না। দুপুরে খেয়ে তো খুশি মনে সৌমিত্র ভাইয়ের সাথে বেরিয়ে গেলে। হঠাৎ কী হলো?”

“দেখো ফারাহ মাথায় র/ক্ত উঠে আছে। আমি চাই না আমার রাগ তোমার উপর ঝাড়তে। আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাও এখনি।”

ফারাহ মুখ গোমড়া হয়ে এলো। কিছু বলতে চাইল আরো তবে ঘরে তড়িঘড়ি করে হাজির হলো সৌমিত্র। হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“আরেহ ভাই! তুমি কখন বাড়িতে এলে? তোমাকে কত জায়গায় খুঁজলাম তুমি ওখান থেকে চলে যাওয়ার পর। কল করলাম ফোন বন্ধ! এখন বাড়িতে এসে ভেজা গায়ে রিল্যাক্স করছ?”

স্বচ্ছ এবার উঠে বসল। তার মুখের অঙ্গিভঙ্গি দেখে সৌমিত্র নিকটে এলো।
“এখনো ওই বিষয়টা নিয়ে তুমি ডিপ্রেসড? বাদ দাও না। তাছাড়া মেয়েটা তো সরি বলেছে।”

“ওহ তোকে আমি খু/ন করে সরি বলে দিলে তুই জীবিত হতে পারবি?”

সৌমিত্র একরাশ বিস্ময়ের সাথে বলল,
“ওই মেয়েটা কি তোমাকে খু/ন করেছে? তাছাড়া এই প্রথম তুমি কারোর হাতে থা;প্পড় খেলে ফিলিংস কেমন?”

স্বচ্ছের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কপালের রগ দপদপ করতে আরম্ভ করল। ফারাহ কৌতূহল দমিয়ে না রাখতে পেরে বলল,
“সৌমিত্র ভাই? কী বলছ? ভাই কোনো মেয়ের হাতে থা;প্পড় খেয়েছে।”

“সে আর বলতে! কেয়া লা জাবাব সিন হে! কিন্তু ভাইয়ের জায়গায় আমি থাকলে গাল এগিয়ে বলতাম আরো কয়েকটা থা;প্পড় দিতে। এমন এংরি বিউটির হাতে চ/ড় খেতে খারাপ লাগার কথা নয়। তাই না ভাই?”

স্বচ্ছের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়তেই স্বচ্ছ তার দিকে ধারালো দৃষ্টিপাত করে বলল,
“তোরা দুজনই আমার ঘর থেকে বের হ। এখনি বের হ।”

“আরে এত রাগছ কেন ভাই? কিন্তু তুমি চ/ড় খেলে কী করে? কেন মা/রল তোমাকে?”

ফারাহ নিজের আগ্রহ দমিয়ে রাখতেই পারছে না। স্বচ্ছ ধৈর্যহারা হয়ে উঠে দাঁড়াতেই সৌমিত্র আর ফারাহ সুড়সুড় করে বেরিয়ে গেল।

সারাদিন পর বাহির থেকে বাড়ি ফিরলেন শহরের একজন ক্ষমতাশালী মন্ত্রী সরোয়ার সাহের। সদর দরজা পেরিয়ে ধীর পায়ে আড়ম্বরপূর্ণ ড্রয়িংরুমে এসেই দেখতে পেলেন নিজের স্ত্রী জেবা সাহেরকে। মিসেস. জেবা সারাদিন পর নিজের স্বামীকে দেখে স্মিত হাসেন। সরোয়ার সাহেব গিয়ে জেবার পাশে বসে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলেন,
“সারাদিন তো বাড়িতেই থাকো। তোমার ছেলে কী করে সেসবের দিকে নজর রাখো?”

বাড়িতে ফিরেই স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে হাসি উবে গেল মিসেস. জেবার মুখ থেকে। তিনি জানেন, উনার ছেলেরা খানিকটা অবাধ্য। চিন্তিত হয়ে শুধালেন,
“কী হয়েছে? কী করেছে আমার ছেলেরা?”

“আগে তোমার আদরের ছেলে মি. আহিয়ান স্বচ্ছকে ডাকো।”

সরোয়ার সাহেবের গম্ভীরতা দেখে মিসেস. জেবা বুঝলেন বিষয়টা রুত্বপূর্ণ। তিনি বাড়ির এক সহকর্মীকে ডাক দিলেন স্বচ্ছকে ডেকে আনার জন্য। কিন্তু তার আগেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখা গেল স্বচ্ছকে। কানে হেডফোন লাগিয়ে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিকেই এগিয়ে আসছে সে। তার চোখে সরোয়ার সাহেব পড়লে সে শুধু বলল,
“হাই বাবা!”

বলেই বসে গেল সরোয়ার সাহেবের বিপরীতে থাকা কাউচটায়। মিসেস. জেবা বলেন,
“স্বচ্ছ! তোমার বাবার তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাইছেন।”

স্বচ্ছের কান অবধি পৌঁছায় না তার মায়ের কথা। কানে হেডফোনে গান বাজছে উচ্চস্বরে। সে মগ্ন নিজের মাঝে। মিসেস. জেবা এবার সরোয়ার সাহেবের দৃঢ় চাহনি দেখে স্বচ্ছের কান থেকে হেডফোন টেনে খুলে দিলেন।
“কী, মা? এমন করছ কেন?”

“আগে তুমি আমায় বলো, কেন আমার মান সম্মান ডুবিয়ে দিচ্ছো?”

মায়ের বদলে বাবার পাল্টা উত্তরে কপাল কুঞ্চিত হলো স্বচ্ছের।
“আমি কী করেছি?”

“কী করেছ জানো না? তোমাদের আমি তোমাদের মতো চলতে দিই। জোর করি না আমার রাজনৈতিক বিষয়টা সামলাতে। চাপ দিই না। কারণ তোমরা আমার চোখে এখনো ছোটো। তাই বলে এতটাও ছোটো না যে নিজের বাবার মানসম্মান কীভাবে বজায় রাখতে হয় সেই সম্পর্কে তোমরা অবগত নয়।”

স্বচ্ছ এবার চটে গিয়ে বলল,
“আমি কী এমন করেছি সেটা বলো! আমি কেন খামখা তোমার মানসম্মান মাটিচাপা দিয়ে দেব?”

সরোয়ার সাহেব এবার জবাবে নিশ্চুপ থেকে সিগারেট বামহাতে নিয়ে ডানহাতে নিজের ফোন বের করলেন। একটা ভিডিও ক্লিপ বের করে স্বচ্ছের সামনে ধরলেন। স্বচ্ছ স্পষ্ট দেখতে পেল তার সজোরে সেই থা/প্পড় খাওয়ার দৃশ্য!
#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩

“কী হলো? চুপ করে আছো কেন এখন? কথা বলো!”

সরোয়ার সাহেব কৈফিয়ত চাইলেন। কিন্তু স্বচ্ছ স্থির এবং নীরব। তার মাঝে বাবাকে জবাব দেওয়ার মতো ভাবান্তর দেখা গেল না। শুধু অস্থিরচিত্তে মাথা এপাশ-ওপাশ করছে। সৌমিত্রের উদ্ভব ঘটল সেখানে। স্বচ্ছ একটা শব্দও উচ্চারণ না করে নির্বিঘ্নে উঠে দাঁড়িয়ে বড়ো শ্বাস গ্রহণ করে ড্রয়িংরুম পরিত্যাগ করে বেরিয়ে যায়। পেছন থেকে মিসেস. জেবা বারংবার ডেকেও ছেলের সাড়া পেলেন না। মিসেস. সরোয়ার ক্ষোভ ঝেড়ে বললেন,
“দেখেছ তার ব্যবহার? দিনদিন অধঃপতন হচ্ছে তার। নিজের বাবার কথা সামান্য উত্তর দেওয়ার সময় অবধি তার নেই।”

সৌমিত্র এসে সোফার দিকে হেলে তার বাবার ফোনে চলতে থাকা ভিডিও দেখে ভড়কে গিয়ে বলল,
“বাবা! এটা কোথায় পেলে তুমি?”

“কোথায় আবার! তোমরা কী ভাবো? তোমরা যা ইচ্ছে করবে আর আমার কাছে খবর আসবে না? আমি কাজে ব্যস্ত থাকি জন্য তোমাদের খবর রাখব না? সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে স্পষ্ট ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে। একেকজন একেক কথা ছড়াচ্ছে। বুঝতে পারছি না। কোনদিকে সামাল দেব। শেষমেশ তোমাদের কিনা একটা মেয়ের হাতে থা/প্পড় খেয়ে আসতে হচ্ছে। ছি!”

মনে ভীষণ তিক্ততার সঙ্গে কথাগুলো একনাগাড়ে বললেন সরোয়ার সাহেব। সৌমিত্র বরাবরই ঠান্ডা মাথার ছেলে। তাই সে বাবাকে বোঝানের প্রয়াস চালায়।
“বাবা ওটা একটা মিস্টেক ছিল। মেয়েটা ভুল করে ভাইকে মে/রেছে। না ওখানে ভাইয়ের দোষ ছিল আর না ওই মেয়েটার। মেয়েটা পরে ক্ষমাও চেয়েছে। পুরো বিষয়টা একটা ভুল বোঝাবুঝি। ভাইকে অযথা রাগালে তুমি।”

প্রতিত্তোরে মিসেস. জেবা ব্যাকুল হয়ে বলে ওঠেন,
“ছেলেটা না খেয়ে বেরিয়ে গেল। রাতে কখন ফিরবে কে জানে!”

“আমি যাচ্ছি বাহিরে। ভাইকে নিয়ে ফিরব।”

সরোয়ার সাহেব তখন চুপ করে রইলেন। সৌমিত্র তৎক্ষনাৎ সোফায় পড়ে থাকা জ্যাকেট হাতে তুলে বাহিরে গেল। মিসেস. জেবা অভিমানী হয়ে বললেন,
“না জেনে কতগুলো কথা শোনালে ছেলেটাকে? আমি জানি ও এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমার সম্মান যায়। শুধু শুধুই…”

নিজ কথা সম্পূর্ণ করার পূর্বে মাঝপথে হাতের ইশারায় সরোয়ার সাহেব থামিয়ে দিলেন স্ত্রীকে। নিজে কিছুটা গভীর ভাবনায় মত্ত হয়ে বললেন,
“আমি নিশ্চিত হতে চাইছিলাম যে স্বচ্ছ কোনো ভুল করেছে না। নিশ্চিত হলাম। সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল করার স্পর্ধা আর আমার ছেলেকে থা;প্পড় মারার দুঃসাহসিক মেয়েটা এরা দুজন জীবনের সবথেকে বড়ো ভুল করে ফেলেছে।”

“সৌমিত্র তো বলল মেয়েটা সরি বলেছে। আর কী করবে? ভুল তো মানুষ মাত্র! এখন এসব ঝামেলা থেকে বেরিয়ে এসো। সারাদিন ব্যস্ত থাকো। একটু শান্তির শ্বাস নাও।”

সরোয়ার সাহেব কঠোর সুরে বললেন,
“শান্তির শ্বাস ফেলতে পারছি কোথায়? তুমি ভালো করে জানো জেবা আমার সম্মান, রেপুটেশন এসবে আমি সামান্য আঁচ আসতে দিই না। সহ্য করতে পারিনা আমার সম্মানে দাগ লাগলে। আমি নিচু হতে পারিনা। তাই আমাকে আমার মতো কাজ করতে দাও।”

মিসেস. জেবা আর কিছুই বলতে পারলেন না। তিনি জানেন, সরোয়ার সাহেবের সম্মান নামক অহম ঠেকাতে কতদূর অবধি যেতে পারেন।

মোহের বাড়িতে খাবার টেবিলে সপরিবারে খেতে বসেছে। ইথানকে জোর করে খাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মোহ। কিন্তু ইথান খেতে রাজি নয়। মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। জেদ ধরেছে, চকলেট খাবে! চেয়ার থেকে নেমে দৌড়ে মোহের বাবা আজহার সাহেবের আড়ালে এসে দাঁড়াল ইথান। সুন্দর করে আবদার করে বলল,
“ও নানাভাই আমি ভাত খাব না। চকলেট খাব। মাকে জোর করতে বারণ করে দাও।”

আজহার সাহেব মুচকি হেসে নাতিকে টেনে বললেন,
“অবশ্যই ইথান বাবু চকলেট খাবে। কিন্তু খালি পেটে চকলেট খেলে পেট ব্যথা হবে। তাই ইথানকে আগে ভাত খেয়ে নিতে হবে। তারপর ইথানকে তার নানাভাই চকলেট দেবে।”

ইথানের ছোট্ট মুখে হাসি ফুটল। দেখা গেল তার প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ইঁদুরের মতো ছোটো ছোটো দাঁত। মোহ বলল,
“বাবা একদম ওকে চকলেটের লোভ দেখাবে না। ওর দাঁত অলরেডি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু খেতে সমস্যা হয়। সিল করতে হয়েছে।”

প্রতিত্তোরে ইথান বলে,
“তাতে কী হয়েছে? নানুমণি তো বলেছে, এই দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন করে দাঁত উঠবে। তখন থেকে আর চকলেট খাব না। তাহলেই হবে।”

মোহ ক্লান্তি নিয়ে মায়ের দিকে তাকাল। বহু কষ্টে ইথানকে ভাত খাওয়াতে আরম্ভ করতেই আজহার সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,
“শুনলাম পাত্রপক্ষ এসেছিল তোমায় দেখতে।”

“হ্যাঁ এসেছিল। ইথানের কথা শুনেই তাদের কথা বলার ধরণ পাল্টে গেল।”

মাঝে মিসেস. সুফিয়া মোহের কথায় ফোঁড়ন কেটে বলেন,
“সেটা তো স্বাভাবিক! একটা অবিবাহিত মেয়ের যদি বাচ্চা থাকে তাহলে সবার প্রতিক্রিয়া বদলাবে স্বাভাবিক। তুই একটু ঠিকঠাক কথা বললেই হয়ত উনারা মানতেন। ছেলে তো খারাপ ছিল না। কিন্তু তোর সবসময় সবার মুখের ওপর কথার বলার স্বভাব সব ঘেঁটে দেয়।”

মোহ তিতিবিরক্ত হলো।
“মা আমি ওভাবে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু উনাদের কথার ধরণ আমার ভালো লাগেনি। তাই…”

“মোহ! তোর কিন্তু যথেষ্ট বয়স হয়েছে। আমি আর তোর বাবা কি সারাজীবন তোর পাশে থাকব? জীবনে তো একা চলা যায় না তাই না?”

“আমি একা কোথায়? আমার ইথান রয়েছে।”

মিসেস. সুফিয়া এবার মেয়ের প্রতি ক্রুদ্ধ হোন।
“আমি একটা জীবনসঙ্গীর কথা বলছি মোহ। ইথানকে নিয়ে একা কত যু/দ্ধ করবি? আমরা না হয় এখন তোর পাশে আছি। সবসময় কি থাকতে পারব?”

মোহ মিইয়ে গেল এবার। মাথা নুইয়ে গেল। ইথানকে খাওয়ানো বন্ধ করল। নিভে গেল তার উচ্চকণ্ঠ।
“মা আমি আশেপাশের মানুষকে বিশ্বাস করতে ভয় পাই। আমার মনে সেই অনুভূতি আসেই না যেই অনুভূতি দিয়ে আমি কাউকে আপন করতে পারব।”

মিসেস. সুফিয়া কিছু বলার আগেই আজহার সাহেব মুখ খুললেন এবার।
“মেয়েটাকে নিজের মতো একটু থাকতে দাও সুফিয়া। জোর করো না।”

স্নেহের সাথে মোহের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো মোহের গোল গোল দুটো আঁখি। ছোট্ট ইথানের মায়া হলো মায়ের প্রতি। চেয়ারে উঠে দাঁড়িয়ে মোহের চোখ মুছে দিয়ে বলল,
“মা, কাঁদছ কেন তুমি? কষ্ট পেয়েছ? আমি আছি তো তোমার!”

শত যাতনার মাঝেও ইথানের এই সুন্দর কথায় চোখ ভর্তি পানি নিয়ে মোহ হেসে দিলো। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল। মস্তিষ্কে নাড়া দিলো বিকেলে ঘটে যাওয়া বিরক্তিকর ঘটনাটি। ফট করে বলল,
“বাবা, আজকে বিকেলে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমি একটা ভুল করে বসেছি।”

আজহার সাহেব ব্যতিব্যস্ত হয়ে শুধালেন,
“সে কী! কী করেছ?”

মোহ পুরো বিষয়টা খুলে বলল নিজের পরিবারকে। সঙ্গে সঙ্গে ভড়কে গেলেন মিসেস. সুফিয়া।
“এত বড়ো কাণ্ড করে বসেছিস? হায় আল্লাহ! আমি বলেছিলাম! আমি বলেছিলাম তোকে একটু নম্র হতে, চুপচাপ হয়ে চলতে। কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস কোথায়? এখন যদি শোধ তুলতে ওরা কিছু করে দেয়? সাধারণ মানুষ হলে তাও কথা ছিল। ক্ষমতাশালী লোকজন!”

মিসেস. সুফিয়ার কথা কানে তুললো না কেউই। আজহার সাহেব তৎপর হয়ে বললেন,
“তুমি ক্ষমা চেয়েছিলে তাই না? তাও কেন চিন্তা করছ?”

“চিন্তা করছি কারণ আমার ক্ষমা চাওয়াতে লোকটা সন্তুষ্ট নন। উনি রীতিমতো আমায় হু/মকি দিয়েছেন। আমি উনাকে তখনি বলেছি উনার যা শা/স্তি দেওয়ার তা যেন তখনি দিতে পারেন। কিন্তু উনি সেটা করলেন না। ক্ষোভ জমা রাখলেন নিজের মনে।”

আজহার সাহেব বুঝলেন নিজের মেয়ের অস্থিরতা। তাকে শান্তনা দিয়ে বললেন,
“ভুল সবার দ্বারা হয়। তুমি ক্ষমা চেয়েছ এটাই বড়ো। বাকিটা ভাগ্যের উপর।”

মিসেস. সুফিয়া মোহকে শক্ত কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। তবে তৎক্ষনাৎ কলিংবেলের আওয়াজে সকল মনোযোগ দরজার দিকে চলে গেল। মিসেস. সুফিয়া বিড়বিড়িয়ে বললেন,
“এতরাতে আবার কে! দেখি তো!”

বসার ছোটো ঘরের শেষ মাথায় গিয়ে দরজা খুলতেই বাড়িওয়ালা প্রবেশ করলেন ঘরে। তিনি পুরো ঘরের আশপাশটা দেখতেই মিসেস. সুফিয়া বিচলিত কণ্ঠে প্রশ্ন করেন,
“এতরাতে আপনি! কোনো কিছু কি লাগবে?”

“আপনার মেয়ে বাড়ি আছে নাকি নেই?”

বাড়িওয়ালা সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। মিসেস. সুফিয়া থতমত খেয়ে জবাবে বলেন,
“হ্যাঁ ও তো বাড়িতেই আছে। ও কি কোনো সমস্যা করেছে?”

বাড়িওয়ালা বিস্ময়াপন্ন হলেন।
“আপনি জানেন না আপনার মেয়ে কত বড়ো কাণ্ড ঘটিয়েছে? সেই ফলটা আমাদের ভুগতে হচ্ছে। মন্ত্রীর ছেলেকে চ/ড় মে/রে দুঃসাহসিক কাজকর্ম করে আমাদের বিপদে ফেলার মানে কী?”

বাড়িওয়ালা কথা শোনাতে শোনাতে মোহ আর তার বাবা খাওয়া ছেড়ে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে শেষ কথাগুলো মোহের কানে এসেছে। মোহ শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
“আঙ্কেল আমার জন্য কোনো প্রবলেম হয়েছে আপনার? তাহলে আমি দুঃখিত!”

বাড়িওয়ালা বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গে মোহকে কটাক্ষ করে বললেন,
“তোমার দুঃখিত দিয়ে কাজ হবে না। তোমরা আমার বাড়িতে থাকলে আমার বিপদ হবে। তোমরা এখনি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।”

আজহার সাহেব চমকে উঠে বলেন,
“আপনি কী বলছেন এসব ভাই? আপনি এটা করতে পারেন না।”

“আমার কিছু করার নেই। বাড়িতে এমন একটা দুঃসাহসিক মেয়ে রাখলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তেই হবে। আমার বাড়িতে কিছু ছেলেপেলে ঢুকেছিল। রীতিমতো শাসিয়ে গেছে। যদি রাতের মধ্যে আপনাদের আমার বাড়ি থেকে বের করতে না পারি তাহলে আমার কপালে দুঃখ আছে। আপনাদের আশ্রয় দিয়ে আমি নিজে বিপদ ডেকে আনতে চাই না। যান তো এখন!”

“কিন্তু এতরাতে আমরা কোথায় যাব? আমাদের সমস্যার কথাও তো একটু ভাবুন।”

উদ্বেগ প্রকাশ করে বললেন মিসেস. সুফিয়া।

“আমি কী করে জানব? এই পরিস্থিতিতে পড়ার আগে আপনাদের এটা ভাবা উচিত ছিল।”

“আপনি এমন করলে কিন্তু আমরা পুলিশের কাছে যাব।”

এবার কিছুটা ক্ষেপে গেলেন আজহার সাহেব। তবে লাভের লাভ কিছুই হলো না। শেষমেশ কোনোমতে শুধুমাত্র কাপড়টুকু গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হলো সকলকে।

পাড়ার রাস্তায় অবিন্যস্ত পায়ে হেঁটে চলেছে মোহ। অন্যমনস্ক হয়ে একমনে রাস্তার দিকে চেয়ে একহাতে ইথানের হাত অন্যহাতে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে সে। গন্তব্য মামার বাড়ি যাওয়া। খালি গাড়ির খোঁজ করছে তারা। পেছন পেছন চলতে চলতে মিসেস. সুফিয়া রাগ ঝাড়ছেন।
“বারবার মানা করেছিলাম। সবসময় মাথা নিচু করে চলতে বলেছি। কিন্তু আমার কথা তো কারোর কানেই যায় না। এখন বিপদ সামলাও। আর তুমি সবসময় মেয়েকে লাই দিয়ে মাথায় তুলেছ। তুমিই শিখিয়ে দাও প্রতিবাদ করতে। সেই চক্করে আমরা এখন রাস্তায়।”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো আজহার সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন মিসেস. সুফিয়া। আজহার অসহ্য হয়ে বলেন,
“চুপ করো না সুফিয়া! এটা সময় এসব কথা বলার?”

“চুপ করে আর কী হবে? মাথায় উপর থেকে ছাঁদই কেঁড়ে নিলো তোমার মেয়ের কাণ্ড।”

মোহ নীরবে শুনছে। সে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে সামান্য একটা থা/প্পড় মারা শোধ তুলতে এত বড়ো কাণ্ড করে বসবে ওই ঘাড়ত্যাড়া মানবটি। এই ভাবনাগুলো মধ্যখানে কোত্থেকে এসে যেন একটা সাদা বর্ণের গাড়ি ব্রেক কষে মোহের একেবারে সামনে। হকচকিয়ে তাকায় মোহ। ইথানের হাতটা জোরে চেপে ধরে। আতঙ্কিত চোখেমুখে কালো গ্লাসটা বন্ধ দেখতেই রাগ হলো তার।
“কী সমস্যা? দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না? আপনার মতো কিছু মানুষজনের জন্য সাধারণ মানুষগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে রাস্তায় হাঁটতে পারেনা।”

গ্লাসটা ধীর গতিতে নেমে গেল নিচে। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোতে দৃশ্যমান হলো ডেই চেনা মুখখানা। চোখেমুখে লোকটির অদ্ভুত প্রতিশোধমূলক হাসি।
“মাথার উপরে ছাঁদ নেই অথচ তেজ এখনো যায়নি।”

স্বচ্ছের বিদ্রুপাত্মক কথা শুনে মোহের পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে উঠল। কিন্তু সে এই মুহূর্তে আর কিছু বলে আর কোনো বিপদ দাঁড় করাতে চায় না পরিবারের সামনে।
“আপনি একাজ করেছেন?”

“তো আর করবে? আরো কাউকে চ/ড় টড় মে/রেছ নাকি?”

“কেন করছেন? আমি আপনার সম্মানহানি করেছি। তো আপনি উপর প্রতিশোধ নিন। কিন্তু আপনি সেটা করলেন না। আপনি আমার পুরো পরিবারের পেছনে পড়ে গেলেন। কেন?”

স্বচ্ছ মুখে আর কোনো কথা বলল না। রাস্তার সামনে তাকিয়ে রইল একধ্যানে। মোহ আরো বলল,
“আপনাদের মতো ক্ষমতাশালী লোকজনের এই একটাই সমস্যা! আপনাদের বস্তা বস্তা ইগো! এই ইগোর মতো বড়ো পাথরের চাপে কত লোকজনকে পিষে দিয়েছেন ঠিক নেই। এখন পালা আমাদের?”

“দেখো রাগ উঠিয়ো না আর। তুমি যা করছ সেটার ফল পাচ্ছো। ভুগতে থাকো।”

বলেই মাথা থেকে পা অবধি মোহকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো স্বচ্ছ। মোহের জামাকাপড় আর বাঁকা করে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুল বাঁধার ধরণ দেখে দেখে মনেই হচ্ছে তারা এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছে। বাঁকা চোখে তাকাল মোহের হাত ধরে থাকা ছোটো বাচ্চা ছেলের দিকে। স্বচ্ছ ফের বলল,
“ইনজয় ইউর নাইট! কিছুক্ষণের মাঝে আবার বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। ভালোই জমবে তোমাদের রাত!”

বলেই দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মোহের সামনে থেকে চলে এলো স্বচ্ছ।

চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here