#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৬
স্বচ্ছের মুখোমুখি বেতের চেয়ারে বসে আছে মোহ। তার মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে কতটা অনিহা নিয়ে সেখানে বসে আছে। পাশেই তার হাতটা চেপে বসে আছে তানিয়া। সাদা শার্ট ইন করে পরিহিত ভদ্র ভাবসাব নিয়ে বসে রয়েছে রিহান তানিয়ার সামনেই। অনেকক্ষণ নীরবতার পর রিহান স্বচ্ছের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“কী রে! এই মেয়েটা কে রে? তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি? গতকাল অবধি তো এই মেয়েকে তোকে থা;প্পড় মা;রতে দেখলাম। আজকের মধ্যেই গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছিস?”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চেপে কণ্ঠস্বর কোনোরকমে নিচু করে বলল,
“আমার মনে হয় তোমার চিন্তাধারার ধরণটা যামিনী আন্টির সাথে থেকে থেকে ওমনই হয়ে গেছে। একেবারে হাই লেভেলের থিংকিং পাওয়ার তোমাদের। নয়ত কারোর হাতে থা/প্পড় খেয়ে কে প্রেমে পড়ে সেই মেয়েকেই প্রেমিকা বানিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে পারে?”
“আরে আজকাল তো এসব হয়। ছেলেপেলেরা তো ঝগড়া থেকেই প্রেমে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তো এমনই হয় দেখি।”
স্বচ্ছ হতাশ কণ্ঠে বলে,
“সবার সঙ্গে আমার তুলনা দিও না ভাই। তুমি আমাকে খুব ভালো করে চেনো। মেয়েটার ভাগ্য ভালো যে ও এখনো সহিসালামত দাঁড়িয়ে থেকে আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারছে।”
রিহান মৃদু হেসে শুধায়,
“ওকে সহিসালামত থাকতে কে দিয়েছে? তুই-ই তো?”
“হ্যাঁ আমি কিন্তু…”
কথাটা বলে থেমে যায় স্বচ্ছ। কপালে পরপর তিনটে কিঞ্চিৎ ভাঁজ দৃশ্যমান হয়। রিহানের দেওয়া ইঙ্গিত তার বোধগম্য হয়। তেতে উঠে সে বলে ওঠে,
“আরে ভাই তুমি কী ভাবছ এসব? সত্যিই তুমি দেখি আন্টির চেয়েও বেশি ডেঞ্জারাস! আসলে ব্যাপারটা তেমন কিছুই নয়। আমি তো মেয়েটাকে শা/স্তি দেওয়ার উপায়ই পাচ্ছিলাম না। ছেলে হলে না হয় আধম/রা করে হসপিটালে এক মাসের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু ও তো একটা মেয়ে!”
“ওটাই তো সমস্যা! একজন মেয়ে একজন ছেলের পুরো দুনিয়া দখল করে বসতে সময় নেয় না।”
এতক্ষণ যাবত মোহ আর তানিয়া সরু চোখে দুই ভাইয়ের ফিসফিসিয়ে বলা কথাবার্তার দিকে নজর রাখছিল। মোহ এবার বেতের গোল টেবিলে থাবা দিয়ে বলল,
“ভাইদের মাঝেই কি কথাবার্তা চলবে? আমার জানামতে এখানে পাত্র পাত্রীর পারসোনাল কথাবার্তা বলতে এসেছে।”
স্বচ্ছ সময় নিলো না পাল্টা প্রশ্ন করতে। বলল,
“পারসোনাল শব্দের মানে ব্যক্তিগত ম্যাডাম! আপনি তাদের পারসোনাল ম্যাটারে কী করছেন জানতে পারি?”
“এটা তো আমিও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি। আপনি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ের মাঝে কী করছেন?”
মোহের প্রশ্নের জবাবে স্বচ্ছ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে উঠল,
“পাত্র আমার ভাই হয়।”
পাল্টা জবাবে মোহও বলল,
“তো পাত্রী আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়।”
তানিয়া দুজনের কথোপকথনে বুঝেই গেল এখনি যদি তাদের শান্ত করা না যায় তবে আজকে আবার বড়োসড়ো ঝামেলা বাঁধতে পারে। তাই সে দুজনকে থামিয়ে বলল,
“আসলে আমি এসব বিষয়ে খুব নার্ভাস তাই আমি আমার বান্ধবীকে ডেকেছিলাম। প্লিজ এই নিয়ে কেউ কথা কাটাকাটি করবেন না।”
দুজনে থেমে গেলেও যেন একে অপরের দৃষ্টি দ্বারা নিজের রাগ ঝাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অন্তত দুজনের ঝগড়া স্থগিত হওয়ায় রিহান সুযোগ পেল কথা বলতে। সে সোজাসাপটা ভাবে তানিয়াকে বলল,
“মিস তানিয়া! আপনাকে নতুন করে জিজ্ঞেসা করার কিছুই নেই কারণ সবই মা জিজ্ঞেস করে নিয়েছে তাই আমি আপনাকে সোজা ভাষায় বলি আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছে।”
তানিয়া অস্বস্তিতে পড়ে গেল। হাসি বজায় রাখতে চাইল নিজের অস্বস্তি ঢাকতে। তবে লাভজনক কিছুই হলো না। বারংবার আঁড়চোখে মোহের দিকে। কিন্তু মোহ তো তখন চোখে চোখে বিবাদ করতে ব্যগ্র। তানিয়াকে চুপ থাকতে দেখে রিহান সন্দিহান হয়ে বলল,
“আচ্ছা যেহেতু বিয়ের কথাবার্তা এগিয়েই যাচ্ছে তখন একটা বিষয় ক্লিয়ার হয়ে নেওয়া প্রয়োজন।”
“জি, বলুন!”
“বিয়ের আগে এখন বেশিরভাগ মানুষেরই প্রেম, ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে। আপনার কি এমন কেউ আছে?”
এবার যেন নিজেকে স্থির রাখতে পারল না তানিয়া। ঢল গিলে নড়েচড়ে বসে মোহের দিকে সহায়হীন হয়ে তাকায়। রিহান তখন বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে উঠল,
“না ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এমন থাকতেই পারে। কিন্তু আজকাল সময়টা তো একটু খা/রাপ। ভালোবাসার নামে অনেক কিছুই হয়। শারীরিক চাহিদার কথা বলছিলাম। তাই জানতে চাইছিলাম আপনার জীবনে এমন কোনো ঘটনা নেই তো?”
তানিয়া এবার বিষম খেয়ে গেল। স্বচ্ছ ঘাড় ঘুরিয়ে লোচন দুটো বৃহৎ গোল করে দৃষ্টিপাত করল রিহানের দিকে। মোহও আকাশসম বিস্ময়ের সাথে স্তব্ধ রইল খানিক্ষন। নিজ বিস্ময় কাটিয়ে স্বচ্ছ দ্রুততার সাথে রিহানের কানের কাছে গিয়ে বলল,
“ভাই! কী বলছ এসব? এগুলো কেউ এভাবে প্রথম দেখায় প্রশ্ন করে?”
রিহান সরল মনে বলল,
“কিন্তু মা তো সব জেনে নিতে বলে দিয়েছে এখনি। আমার কী দোষ?”
হাতটা কপালে চলে গেল স্বচ্ছের। সামনে দুই নারীর দিকে আর তাকাতে পারছে না সে। এরইমাঝে মোহ আচানক বলে বসল,
“মি. পাত্র আপনি কি ভার্জিন?”
সবার মাঝে তখন নীরবতা বিরাজ করছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। মোহের প্রশ্নে সকলের হুঁশ উড়ে যাওয়ার উপক্রম। তানিয়া হম্বিতম্বি করে কিছু বলার আগে রিহান কাঁপা গলায় বলে,
“মিস. তানিয়া? আপনার বান্ধবী এসব কী জিজ্ঞেস করছে?”
মোহ স্পষ্টভাবে উত্তরে বলে উঠল,
“কেন? আপনি যদি একটা মেয়েকে এই প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে একটা মেয়ে কেন আপনাকে এই প্রশ্ন করতে পারে না?”
স্বচ্ছ স্পষ্ট বুঝতে পারছে আর কিছুক্ষণ যদি সে এখানে থাকে তাহলে তা মানসম্মান বলতে কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। অস্থিরতার সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়াল সে।
“আমার কিছু কাজ আছে। আমি আসছি। রিহান ভাই তুমি এখন সামলাও।”
রিহান স্বচ্ছকে ডাকলেও স্বচ্ছ দূরত্ব গতিতে চলে গেল। মোহ কোমড়ে হাত রেখে উঠে দাঁড়িয়ে কড়া সুরে বলল,
“লিসেন মি. পাত্র! প্রথমেই বলে রাখা ভালো তানিয়া আপনাকে জীবনেও বিয়ে করবে না। কারণ ওর বিয়েতে মত নেই। তবুও আপনি যদি ওকে বিয়ে করতে চান তবে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপনি তানিয়াকে বিয়ে করতেই পারেন। বাট বিয়ের পরেরদিনই আমি তানিয়াকে ভাগিয়ে নিয়ে যেতে একটুও সময় নেব না। ওকে ওর প্রেমিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেব। বুঝতে পেরেছেন?”
রিহান নির্বিকার ভঙ্গিতে শুধু চেয়েই রইল। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে সে এখন এখানকার ব/লির পা/ঠা। তাকে চুপ থাকতে দেখে মোহ ধমকে বলে উঠল,
“কী? ঘটে কিছু গেছে? নাকি আরো শক্ত করে বোঝাতে হবে? এমনিতেও আমি আপনার সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আপনার যা মন মানসিকতা এতে মনে হলো আপনি সেটার যোগ্যই নন। অবশ্য হওয়ারও কথা না। কার ভাই সেটা দেখতে হবে তো!”
রিহানের কোনো হেলদোল না দেখে মোহ ফের জোর কণ্ঠে তাড়া দিয়ে বলে,
“আপনি এখনো বসে আছেন? যাওয়ার কি কোনো ইচ্ছে নেই নাকি প্যান্ট ভিজে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন?”
মোহের তাড়া দেওয়াতে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে হলো না তাদের। রিহান ঝড়ের বেগে উঠে প্রস্থান করতেই তানিয়া কপাল চাপড়ে আফসোসের সুরে বলল,
“এখন তো তুই আমার কাছে একটাই পথ খোলা রেখেছিস সেটা হচ্ছে আ/ত্মহ/ত্যা। মন তো চাইছে ছাঁদ থেকেই লাফ দিই।”
“তুই কেন লাফ দিবি? দিলে ওই ব/দমাশ পাত্র দেবে। কথাবার্তার মাঝে সামান্যতমও শালীনতা নেই! ছি! যেমন ছেলে তেমনি তার ভাই!”
“তুই তো তোদের ঝগড়া আর ইগো নিয়ে পড়ে আছিস। ওদিকে মাকে যদি ওই ছেলেটা সব বলে দেয় তাহলে আমার কী হবে? মা তো আমার ঘাড় থেকে মা/থায় আলাদা করে দেবে।”
মোহ বরাবরের মতো দায়সারা হয়ে বলে,
“তো কী হয়েছে? প্রেম করতে পারছিস আর প্রেমিকের জন্য এতটুকু করতে পারবি না?”
তানিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
“প্রেম করেছি বিয়ে করার জন্য ইয়ার! প্রাণ দেওয়ার জন্য না।”
“কিছু হবে না। সাহস রাখ। তাছাড়া মোহ আনবীর আছে তো।”
তানিয়া অবসন্ন হয়ে বলে ওঠে,
“সেটাই তো আরো বড়ো সমস্যা!”
মোহ আর তানিয়া সিঁড়ি দিয়ে আয়েশ করে নামতে নামতে দেখল সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে রিহান আর যামিনী বেগম। মোহ প্রথমেই নিজের তীর্যক দৃষ্টি দ্বারা পরিলক্ষিত করে নিলো আশেপাশে স্বচ্ছ নামক মানবটি আছে কিনা! স্বচ্ছকে দেখতে না পেয়েই যেন ঢের স্বস্তি অনুভূত হলো মোহের। মিসেস. যামিনী আশেপাশে তাকিয়ে স্বচ্ছকে না পেয়ে রিহানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন,
“এই স্বচ্ছ কোথায় গেল? একটা কল করার কথা বলে কোথাও উধাও হয়ে গেল ছেলেটা?”
রিহান মিনমিন করে প্রতিত্তোরে বলল,
“ও তো কী যেন গুরুত্বপূর্ণ কাজে চলে গেল মা।”
তৎক্ষনাৎ মিসেস. যামিনী সিরিয়াস হয়ে বলেন,
“ছেলে এত বড়ো হয়ে গেছে অথচ তার মাঝে কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই? আমি ওকে নিয়ে এসেছিল অথচ আমায় না বলেই চলে গেল? এই জন্যই তো বলি এইসব কিছু সমাধান একমাত্র বিয়ে দেওয়া। বিয়ে দিলে সব জ্ঞান মাথায় এসে যাবে।”
মিসেস. যামিনীর কথা বলা সম্পূর্ণ হতে না হতেই উনার নজরে এলো তানিয়া এবং তার পাশে হেঁটে আসা মোহকে। তিনি প্রথমে তানিয়াকে তো দেখেই ফেলেছেন এবার মোহও বাদ গেল না উনার নজর থেকে। মোহকে মুহূর্তেই পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করে বেশ মুগ্ধ হলেন তিনি। বিলম্ব না করে তানিয়ার মাকে প্রশ্ন করে বসলেন,
“আপনার বাড়িতে আরেকটা মেয়ে আছে আগে বলবেন না ভাবী? বাহ এই মেয়েটাও দেখতে মাশাআল্লাহ কী সুন্দর!”
তানিয়া মা বিনীতভাবে বললেন,
“আসলে ও আমাদের বাড়ির মেয়ে নয়। ও তানিয়ার প্রিয় বান্ধবী মোহ! হঠাৎ করেই এসে পড়েছে। আমিও জানতাম না।”
মিসেস. যামিনী মনে মনে কিছু একটা ভাবলেন। সেটা নিজের অভ্যন্তরে চেপে রাখলেন তখনকার মতো। মোহ তাদের কাছে এসেই প্রথমে রিহানকে চোখ রাঙালো। মিসেস. যামিনী তানিয়ার থুঁতনি ধরে বলেন,
“কী গো মেয়ে? আমার ছেলেকে কেমন লাগল তোমার? আমার ছেলে তো কিছুই বলছে না তোমার সাথে কথা বলার পর থেকে। তাই তোমাকেই জিজ্ঞেস করছি।”
তানিয়া কিছুই না বলে শুধু মাথা নুইয়ে লজ্জা পাওয়ার ভান ধরল। মনে মনে খুশি হলো এই ভেবে যে রিহান কাউকে কিছুই বলেনি। মোহ পরিস্থিতি সামলাতে ফট করে সবিনয়ে বলতে লাগে,
“আন্টি আপনার ছেলে বলতে লজ্জা পায় তাহলে তানিয়া কী করে বলবে বলুন? লজ্জা তো নারীর ভূষণ তাই না?”
মিসেস. যামিনী স্মিত হেসে মোহের গালে হাত রাখলেন।
“ঠিক বলেছ তুমি। দারুণ বুদ্ধিমতী তুমি। নাম কী তোমার?”
“মোহ আনবীর।”
“আরে বাহ! তোমার মতোই তোমার নামটাও চমৎকার। যেন তোমার মুখশ্রীর সঙ্গে নাম মিলিয়ে রাখা।”
মোহ শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক হাসি দেয়। আর কিছু কথাবার্তা বলে সেখান থেকে বিদায় নেয় সে।
তিন ভাই একসাথে বসে আছে। সৌমিত্রের চোখেমুখে টানটান উত্তেজনা আর স্বচ্ছ রয়েছে গোমড়া মুখে। আর রিহান কিছুটা হতাশ।
“ও মাই গড! দুজনকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে? তাও রিহান ভাইয়ের কথা বাদই দিলাম। স্বচ্ছ ভাইয়ের কথা তো আমি ভাবতেই পারছি না। সত্যিই মেয়েটার দম আছে বলতে হবে!”
স্বচ্ছ রাগে হিসহিসিয়ে বলে,
“জংলী বিড়াল চিনিস? জংলী বিড়াল? ওই মেয়েটা ঠিক জংলী বিড়াল!”
সৌমিত্র এবার শব্দ করে হেসে উঠল। হাসি বজায় রেখেই বলল,
“এবার সত্যিই আমারও ওই মেয়ে মানুষ রূপি জংলী বিড়ালের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ওকে বাহবা দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, তুমি একটা জ্বলে থাকা বাঘকে নিভিয়ে দিয়েছ।”
স্বচ্ছও জেদ ধরে বলে,
“তুই ভুল ভাবছিস। আমি এত তাড়াতাড়ি নিভে যাওয়ার মানুষ না। সুযোগ পেলে আমি ওকে ছাড়ব না। বিছুটি পাতার সমস্ত রস নিংড়ে নিয়ে তবেই আহিয়ার স্বচ্ছ দম নেবে।”
দুই ভাইয়ের কথোপকথনের মাঝে রিহান হতাশ কণ্ঠে বলল,
“আরে সৌমিত্র! কী করছিস? আগে তো সিদ্ধান্ত নে তুই ওই জংলী মেয়েটার দলে নাকি তোর ভাইদের দলে?”
সৌমিত্র কিছু বলবার আগেই স্বচ্ছ বড়ো শ্বাস নিয়ে নিজের চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঁজে বলল,
“ওকে কিছু বলে লাভ নেই রিহান ভাই। সুন্দরী মেয়েরা যেখানে ও সেখানেই।”
কিছুটা সময় থেমে আবার চোখ খুলে স্বচ্ছ ফের বলল,
“তুমিও কেমন মানুষ বলো তো রিহান ভাই? কোন মেয়েকে ওসব প্রশ্ন করে তাও প্রথম দেখায়? ও তো মেয়ে মানুষ। এটা তো তোমাকে মানতে হবে।”
“আরেহ বিয়ের আগে এসব জেনে নেব না তো বিয়ের পর এসব জানব? তখন লাভ কী হবে জেনে? যদি জানতাম মেয়েটা বিয়ের আগে উল্টাপাল্টা কর্ম করেছে তখন?”
“তুমি আর তোমার মন মানসিকতা দুটোই অদ্ভুত!”
বদ্ধ ঘরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে মোহ। সে কোথায় আছে তাও বোঝার উপায় নেই। কারণ চোখটাও তার বাঁধা। বিদঘুটে গন্ধে দম বন্ধ লাগছে তার। গলা কা/টা মুরগীর ন্যায় ছটফটিয়ে যাচ্ছে সে। গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। মৃ/ত্যু যেন তার নিকটেই। সে আকুতি করতে লাগল বাঁচার! হঠাৎ সে কর্ণপাত করল কিছু পুরুষের বিশ্রী হাসির আওয়াজ। সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল তার।
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৭
মোহের শ্বাস রোধ হয়ে আসছে। হাঁসফাঁস করছে মুক্তির জন্য। গলার স্বরটাও যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এবার ছটফটিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল মোহ। নিজের চেনা ছোট্ট ঘর এবং পাশে ঘুমন্ত ইথানকে দেখে প্রথমেই চোখ বুঁজে কয়েকটা বড়ো বড়ো স্বস্তির শ্বাস নিলো। মোহের এমন অস্থিরতা জাগিয়ে তুলল ইথানকেও। ঘুম জড়ানো চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে ইথান উঠে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কী হয়েছে মা? পচা স্বপ্ন দেখেছ?”
মোহ ইথানের মাথা নেড়ে দিয়ে নিজের মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিতেই ইথান হুট করেই মোহের নম্র মুখবিবরে চুমু খেয়ে বলল,
“আমি স্বপ্ন দেখে ভয় পেলে তো আমায় এভাবেই আদর করে ভয় তাড়িয়ে দাও। আজ আমিও তোমার ভয় তাড়িয়ে দিলাম।”
ইথানের পাকা কথায় আপনাআপনি হাসিটা চলে আসে মোহের। ইথান আবার বলে,
“ওটা শুধু স্বপ্ন ছিল আর কিছু না। ভুলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আমার সাথে।”
মোহ বিনাবাক্যে অগাধ ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে শুয়ে পড়ল ইথানের সাথে। মনটা বারবার বলে চলল, এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেটা তার চেয়ে ভালো কে জানে? মোহ তার দুটো চিকন হাত উপরে তুলে পলকহীন চোখে চেয়ে রইল বেশ কিছু সময়। কত সময় পেরিয়ে গেছে! অথচ কবজিতে থাকা সেই অবাঞ্ছিত দাগ আর মিইয়ে যায় না। সেই স্বপ্নরূপী সত্যি তাড়া করে সর্বক্ষণ। যেখান থেকে তার ছুটি নেই।
সকাল সাতটা ছুঁইছুঁই। বর্ষার ঠাণ্ডা শিরশিরে বাতাসে গা ছেড়ে দিয়ে এলোমেলো হয়ে একপ্রকার নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সৌমিত্র আর রিহান। এমন সময় দরজা ঠেলে ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসেন মিসেস. যামিনী। জোরে ডাক ছেড়ে বলেন,
“সৌমিত্র!”
সৌমিত্রের গভীর ঘুম হালকা হলো। তবে রিহানের কোনো হেলদোল নেই। সৌমিত্র রিহানের পাশ ফিরে রিহানকে ঠেলা দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আরে রিহান ভাই! আজকাল তোমার মা তো আমার ঘুমের মাঝেও বিচরণ করছে। কোথায় সুন্দর কোনো মেয়ে স্বপ্নে আসবে তা নয় বিয়েওয়ালী আন্টির কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি!”
মিসেস. যামিনী চোখ গরম করে এবার চিল্লিয়ে বললেন,
“সৌমিত্র! এটা আমিই!”
সৌমিত্র ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। সঙ্গে রিহানও চোখ মেলে তাকাল। সৌমিত্র হতাশ গলায় বলল,
“আরে আন্টি! আপনার বাচ্চারা এখন বড়ো হয়ে গেছে। তাই ঘরে আসার সময় এটলিস্ট নক তো করা উচিত তাই না? আর এত সকালে তেজময় সূর্যের মতো কেন উদয় হলেন?”
বিলম্ব না করেই মিসেস. যামিনী সৌমিত্রের কান টেনে ধরে বলতে লাগলেন,
“আচ্ছা! কালকেই বিয়ের কথা বলতেই তুই বললি তুই নাকি এখনো বাচ্চা! আর এখন বলছিস বড়ো হয়ে গেছিস? সবখানে ধান্ধাবাজি?”
সৌমিত্র চোখমুখ খিঁচে কান ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আরেহ জান! তুমি কোথায় ধান্ধাবাজি পেলে এখানে? আমি খুব বড়োও না ছোটোও না। তেইশ বছর কি খুব বড়ো বলো যে এখনি আমার বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে? এখন তো আমার সাথে চার-পাঁচটা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরেফিরে বেড়ানোর বয়স। তোমার যদি বিয়ের কথা ভাবতেই হয় তাহলে স্বচ্ছ ভাইয়ের কথা ভাবো। অলরেডি ভাইয়ের আটাশ বছর বয়স! কয়দিন পর তো তার ভেতরে যা ইমোশন ছিল সব শেষ হয়ে যাবে।”
মিসেস. যামিনী তড়িঘড়ি সম্মতি জানিয়ে সৌমিত্রের আরো নিকটে বসে নিজের ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে বললেন,
“সেটার জন্যই তো তোর ঘরে এসেছি এত সকাল। আমি কাল একটা মেয়ে পছন্দ করেছি। মাশাআল্লাহ! আমার স্বচ্ছের সঙ্গে দারুণ মানাবে। তুই একটু দেখ তো। তাহলে বুঝতে পারব আসলেই ওদের দুজনকে মানাবে কিনা!”
সৌমিত্র আঁড়চোখে রিহানের দিকে তাকাতেই রিহানও উঠে বসল। সৌমিত্র অনেক আগ্রহ নিয়ে ফোনের দিকে তাকাতেই মিসেস. যামিনী মোহের সঙ্গে তানিয়ার একখানা ছবি বের করে মোহকে দেখিয়ে বলে ওঠেন,
“দেখ মেয়েটাকে! আবার পাশের জনকে দেখিস না। ওটা রিহানের জন্য।”
সৌমিত্র মোহকে দেখেই ফট করে চিনতে পেরে চমকে উঠে বলল,
“আরেহ এ তো ওই মেয়েটাই!”
সৌমিত্র ঘাড় ঘুরিয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে হাসল। কারণ তার জানা রিহানের সঙ্গে মোহ কী করেছে। রিহান রেগেমেগে গিয়ে মাকে বলল,
“আরেহ, মা! তুমি এটা কাকে পছন্দ করছ? কোনো অবিবাহিত মেয়েকে দেখলেই মনে ধরে যায় তোমার? এই মেয়েটা তাও আবার স্বচ্ছের জন্য?”
রিহান আরো কিছু বলার আগে সৌমিত্র আড়ালে রিহানের হাতে জোরে চিমটি কেটে থামিয়ে দেয়। চেঁচাতে গিয়েও চেঁচায় না রিহান। সৌমিত্র হাসি মুখ করে মিসেস. যামিনীকে বলে,
“তোমার পছন্দের তো তারিফ করতে হবে আন্টি! স্বচ্ছ ভাইয়ের সঙ্গে পুরোপুরি পারফেক্ট ম্যাচ।”
সৌমিত্র খানিকটা থেমে মিসেস. যামিনীর কাছে এসে বলল,
“আর একটা সিক্রেট শুনবে?”
“কী বল?”
সৌমিত্র একটু দুঃখী ভাব নিয়ে বলল,
“এই মেয়েটা তো আমার ভাইয়ের রাতের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে। যে ভাই বৃষ্টিতে ভিজলে একেবারে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে যায় সেই ভাই বৃষ্টিতে স্বেচ্ছায় মেয়েটার জন্য ভিজেছে। এই মেয়ে তো ভাইয়ের মনে বসে গিয়েছে।”
বিস্ফো;রিত চোখে দৃষ্টিপাত করলেন মিসেস. যামিনী। যেন উনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। সৌমিত্র কথাগুলো ফিসফিস করে বললেও পুরোটাই রিহানের কান অবধি গিয়েছে। সে সৌমিত্রকে চেপে ধরে নিচু সুরে প্রশ্ন করল,
“এই তুই কী বলছিস এসব? মাথা ঠিক আছে তোর?”
“রিল্যাক্স রিহান ভাই! আন্টিকে যা ইচ্ছে করতে দাও ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে। আমরা মজা নেব!”
তৎক্ষনাৎ সৌমিত্রের হাত চেপে ধরে মিসেস. যামিনী অতি আগ্রহ নিয়ে শুধালেন,
“তার মানে ওদের দুজনের মধ্যে কিছু আছে?”
সৌমিত্র মুখ ভার করে বলল,
“না, আন্টি। ইটস ওয়ান সাইডেড লাভ!”
“মানে কী? মেয়েটা আমার স্বচ্ছকে পছন্দ করে না? কী কমতি আছে আমার স্বচ্ছের মধ্যে? ছেলেটা এত সুন্দর লম্বা, রাজপুত্রের মতো দেখতে, আর ওর বাবার পর তো ও নিজে রাজনীতির হাল ধরবে। তাহলে?”
মিসেস. যামিনীর বিচলিত কণ্ঠ শুনে বেশ হাসি পেল সৌমিত্রের। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে সে বলতে থাকল,
“আমি তো জানি না মেয়েটা কেন ওকে পছন্দ করে না।”
“থাক! আমি আজকে তোর মায়ের সাথে নিজে যাব মেয়ের বাড়িতে। এতদিন পর স্বচ্ছ কাউকে মন থেকে পছন্দ করল। মেয়েটাকে তো আমি রাজি করিয়েই ছাড়ব।”
সৌমিত্র মুচকি হেসে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“হয়ত সামনে ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত খাব নয়ত যু/দ্ধের গু/লি।”
সকাল থেকে সূর্য মেঘের আড়ালে অন্তর্হিত। এটা বর্ষার সময় নতুন কিছু না। যেকোনো সময় বিনা সংকেতে মেঘ ডাকবে, বর্ষণ নামবে স্বাভাবিক। ইথানকে খাইয়ে উঠেই নিজের পছন্দের সাদা রঙের জামা পরিধান করে নিলো মোহ। তার কোঁকড়ানো একগুচ্ছ চুলে চিরুনি দিয়ে জট ছাড়াতে বেশ বেগ পেতে হলো তার
অগত্যা সামান্য বেণি করে একপাশে ছেড়ে দিয়ে আজহার সাহেব এবং মিসেস. সুফিয়ার সাথে কথা বলে বেরিয়ে পড়ল কাজে। আজ তার কাজের প্রথম দিন। তাকে কতটা মার্জিত লাগছে সেটা সে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাওয়া প্রতিটা গ্লাসে দেখছে। শেষমেশ খালি অটো পেয়ে উঠে পড়ল সে।
ফ্যাক্টরির সামনে অটো থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে নিজের কাজের জায়গার দিকেই অগ্রসর হলো মোহ। কয়েকধাপ যেতেই অদ্ভুত কিছু ব্যাপার দেখল সে। ফ্যাক্টরির বেশিরভাগ লোক তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসছে। তাদের সকলের মুখে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া। কারোর রাগ নয়ত কারোর দুঃখ। মোহের কিছুই বোধগম্য হলো না। সে ধীর পায়ে ভীত হয়ে ফ্যাক্টরির মেইন দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখতে পায় তার নিজের মামা সাইফুল হোসেন ভারাক্রান্ত মনে বসে রয়েছেন তাও ফ্লোরে। উনার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে ভড়কে গেল মোহ। দ্রুত পায়ে মামার কাছে এসে বসে বিচলিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল,
“মামা! কী হয়েছে আপনার? আপনি ঠিক আছেন?”
সাইফুল সাহেব কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে কান্নারত কণ্ঠে বললেন,
“আমি বরবাদ হয়ে গেলাম। আমি পথে বসে গেলাম!”
“কিন্তু হয়েছেটা কী, মামা? আর সবাই এভাবে কাজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কেন? পুরো ঘটনা না বললে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“যেখানে আমি বুঝতে পারছি না সেখানে তোকে কী বোঝায় বল তো মা? আমার উচিত ছিল তোকে কল করে আসতে মানা করা কাজের জন্য। যখন ফ্যাক্টরিটাই নেই তখন কাজ করবি কী করে?”
মোহ তখন বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হতভম্ব হলো মামার কথায়।
“কিন্তু মামা ফ্যাক্টরি থাকবে না কেন?”
সাইফুল সাহেব এবার যেন কেঁদেই দিলেন। কান্নারত সুরে বলে উঠলেন,
“আমাদের ফ্যাক্টরি ভাঙার কথা ছিল। এই জায়গা কিনে সরকারি কিছু অফিস গড়ার কথা ছিল। তো সেখান থেকেই আমাদের চুক্তি হয় মন্ত্রীর লোকজনের সাথে। আমাকে বলা হয় সব মিলিয়ে বিশ লাখ টাকা আমায় দেওয়া হবে। প্রস্তাব শুনে আমি রাজি হই আর পেপারে সাইন করি। বিশ্বাস কর, সেখানে বিশ লাখ টাকার কথায় উল্লেখ ছিল। দেখেই সাইন করেছিলাম। কিন্তু আজকে ওই সরোয়ার সাহেরের কিছু লোকজন এসে বলছে ফ্যাক্টরি যেন খালি করে দেই। আমি প্রস্তুত ছিলাম খালি করতে। কিন্তু ওরা আমায় পেপার দেখিয়ে বলল আমি নাকি শুধু পাঁচ লাখ টাকা পাব। আর পেপারেও পাঁচ লাখ টাকাও উল্লেখিত আছে। এখন যদি পেপারে সাইন করার পরেও ফ্যাক্টরি না ছেড়ে দিই তো আমাদের নাকি পুলিশে দেওয়া হবে।”
বাকহারা হয়ে বসে রইল মোহ। এত বড়ো ঘটনা শোনার পর এর বদলে কী বলে শান্তনা দেওয়া উচিত অথবা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত জানা নেই তার। সাইফুল সাহেব ফের ভেজা গলায় বললেন,
“বিশ লাখ টাকা পাব ভেবে আমি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আরেকটা ফ্যাক্টরির কাজ শুরু করেছি। ভেবেছিলাম যে এটা ছেড়ে দেওয়ার পর সবাই মিলে ওটার হাল ধরব। যেহেতু পরে বিশ লাখ টাকা পাব তখন ব্যাংকের লোন শোধ করে দেব। কিন্তু আমার তো সব শেষ হয়ে গেল রে! এখন আমি টাকা কী করে শোধ করব? কীভাবে ঘুরে দাঁড়াব?”
কথাগুলো বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন সাইফুল সাহেব। মোহ উপায়ন্তর না পেয়ে মামাকে শান্তনা দিয়ে বলল,
“মামা, জীবনে সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যায় না। কিছু না কিছু ঠিক ব্যবস্থা করা যাবে।”
কথাগুলো শেষ হতে না হতেই কিছু ছেলেপেলে উপস্থিত হলো সেখানে। মোহ এবং সাইফুল সাহেবকে শাসিয়ে বলল,
“তোরা এখনো জায়গা খালি করিস নি? ভালোই ভালোই যাবি নাকি বের করে দিতে হবে ঘাড় ধরে?”
সাইফুল সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে কান্না এবং রাগ মিশ্রিত সুরে বললেন,
“হয় আমার এই ফ্যাক্টরি ফেরত দিতে হবে নয়ত আমাকে যেই টাকার কথা বলা হয়েছিল সেটা দিতে হবে নয়ত আমি এখান থেকে যাব না।”
“টাকা? তোকে তো টাকা দেওয়া হবে পাঁচ লাখ। তোর সাথে তো তাই চুক্তি হয়েছিল। এখন যদি বেরিয়ে না যাস ভালো হবে না কিন্তু।”
এমনিতেই ভেতরে ভেতরে সবেমাত্র ক্ষোভের অগ্নিকুণ্ডের জন্ম নিতে শুরু করেছিল মোহের মনে। নিজের মামার সাথে এমন ব্যবহার দেখে বরাবরের মতো চুপ থাকতে পারল না সে। যেই লোক দুর্ব্যবহার শুরু করেছিল তার বরাবর গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো কথা ব্যতীত শব্দ করে দুটো চ/ড় বসিয়ে দিলো গালে। অতঃপর লোকটির শার্টের কলার চেপে ধরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
“ভদ্রতা বলতে কোনো জিনিস তোদের মাঝে আছে কি নেই? অবশ্য থাকবে কী করে? যারা অন্যের পা চেটে থাকে তাদের তো আত্মসম্মানও থাকে না। তোর বাড়িতে বাবা নেই? বাবার সাথে এমন ব্যবহার করিস?”
মোহকে এমন ক্ষেপতে দেখে সাইফুল সাহেব দ্রুত মোহকে দূরে সরিয়ে নিয়ে বললেন,
“এমন করতে নেই মোহ। ওরা মন্ত্রীর লোক। আমি কথা বলছি।”
ছেলেরা মোহের দিকে এগোতে চাইলে মোহের হাত ধরে বাহিরে নিয়ে এলেন। মোহকে বোঝালেন,
“এদের কথা না বাড়ানোই ভালো। এর ফলাফল ভয়ানক হতে পারে।”
মোহ নীরব রইল তখন। মামাকে দেখল মলিন মুখে। মানুষটা যেন একপ্রকার নিঃস্ব হয়ে বসেছে। মোহ নিচু গলায় প্রশ্ন করল,
“এখন কী করতে চাইছেন মামা?”
“আর কী করব? ফ্যাক্টরির সবাই ওই সরোয়ার সাহেরের বাড়িতে গিয়েছে একজোট হয়ে। ভাবছি সেখানেই যাব। তাও যদি কোনো কাজ হয়!”
“আমিও যেতে চাই আপনার সাথে। দেখে তো নিই কত রকম ঠকবাজ মানুষ আছে পৃথিবীতে। মুখটা একটু দেখতে চাই।”
চলবে….
[