#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[০৩]
মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছে ভূমি। চোখমুখে তার একরাশ বিস্ময়তা। কিছুক্ষণ আগেই দিয়াকে কল করেছিল সে। দিয়া তখন কলেজে ওর বয়ফ্রেন্ডের দেওয়া চকলেট খাচ্ছে। ভূমি কল করতেই দিয়া তাড়া দিয়ে বলল,
” বিয়ে করছিস তাও আবার আরাভ স্যারকে। একথা আমাকে আগে বলিসনি কেন?
” আগে জানলে কি করতি?
” বিয়েটা ভেঙে দিতাম। ওই খচ্চর স্যারটা নিশ্চয় তোকে জোর করে বিয়ে করছে। দাঁড়া আমি ওর ব্যাবস্থা করছি।
” এই দিয়ু কি করবি তুই?
” আমি কিছু করবোনা। যা করার গুন্ডারা করবে। গুন্ডারা ওই খচ্চরটাকে তুলে নিয়ে হাত পা গুড়া করে বিয়ের সাধ গুচাবে। বেটা খচ্চর নিজেকে ভাবেকি হুম? নিজেতো ড্রাগস এডেক্ট। নিশ্চয় নেশার জোরে তোকে বিয়ে করতে চাইছে। শুন তুই একদম ভয় পাবি না। তোকে বেশী জোর করলে তুই আমার বাড়িতে চলে আয়। শহরের সবচেয়ে ভালো ছেলে দেখে আমি তোর বিয়ে দিবো।
” কার বিয়ে দিবেন আপনি?”
সুস্পষ্ট গম্ভীর কারো কন্ঠশ্বর শুনে থেমে যায় দিয়া। গলার শ্বরটা দিয়ার পরিচিত। হ্যাঁ খুব করে জানে এটা কার কন্ঠশ্বর। এই রুক্ষ কন্ঠশ্বরের মালিক সেদিন দিয়াকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলো। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে পিছনের দিকে ঘুরে তাকায় সে। সামনে আরাভকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচুকরে নেয় দিয়া। তবে কি স্যার সবটা শুনে ফেলল। আড় চোখে একবার আরাভের দিকে তাকালো দিয়া। আরাভ আবার প্রশ্ন করলো,
” কার বিয়ের ঘটকালি করছেন?”
” আ- আমার ফ্রেন্ড। আ আসলে স্যার ওকে বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে তাই বলছি বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে।”
আরাভ দিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কিছু একটা আন্দাজ করে অধোর কামড়ে ধরে। দিয়ার ফ্রেন্ড। সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে দিয়াকে শুধু ভূমির সাথে মিশতে দেখেছে। আর বিয়ে? ভূমির বিয়ে। আচ্ছা দিয়া কোনভাবে ভূমির কথা বলছে না তো। তাহলে ভূমিকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরাভের ভাবনার মাঝেই কেটে পরে দিয়া। আরাভ দিয়াকে কিছু জিগ্যেস করবে দেখে দিয়া নেই। বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে কলেজের বাহিরে চলে যায়। রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ পাইচারি করে আরাভ। ভূমি তাহলে পরিবারের চাপে পরে বিয়েতে রাজি হয়েছে। আর কিছু ভাবতে পারছে না আরাভ। নিজের ভবিষ্যৎ হিসাবে অজ্ঞাত আরাভ নিজের মন আর মাথার সাথে পেরে উঠছে না। মন বলছে ভূমিকে কাছে টানটে আর মস্তিষ্ক বলছে ভূমির থেকে নিজেকে দূরে রাখতে। ভূমির বিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারবে না সে। নানান নেগেটিভ চিন্তা ঝেকে বসেছে মাথায়। সবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় সে আজ ভূমিদের বাড়ি যাবে না। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে চলে যায় নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত ফ্ল্যাটে। ড্রয়িংরুমের সুফায় গা এলিয়ে দিতেই সোহানের চিৎকারের আওয়াজ পায়। আরাভ উঠে দ্রুত একটা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে।
_____________________
সন্ধা সাতটায় ভূমিদের বাড়ি পৌঁছায় আরাভ। সাথে তুহিন আর তাহমিদ। সারাদিন কাজ আর দুঃচিন্তায় মাথা ব্যাথা করছে তার। তার উপর অনিমা বেগমের রাগী রাগী কথা আরাভের মাথার যন্ত্রণা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিকালে দিকে কাজ শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই দুচোখে নিদ্রা নেমে আসে। ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছে জানা নেই তার। চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তাহমিদ ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিদের পরনে আজ ফরমাল পোষাক। আরাভ লম্বা হাই তুলে উঠে বসতে বসতে বলল,
” কোথাও যাচ্ছিস? ”
তাহমিদ কোন জবাব না দিয়ে আরাভের মোবাইলটা এগিয়ে দিলো। আরাভ মোবাইল হাতে নিতেই অবাক হয়ে যায়। মা, নাম্বার থেকে ষোলোটা মিসড কল। তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করে আরাভ। অনিমা বেগম কল রিসিভ করেই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠেন,
“তোমার কাণ্ডজ্ঞান কোন দিন হবে না। সকালে আসতে বললাম বললে, ক্লাস আছে। দুপুরে বললাম তখন বললে, কাজ করছি বিকালে আসবো। আর বিকালে ফোন করলাম তুমি রিসিভ করলে না। বলছি আমার সম্মানের কথাটা একটু ভাবোনা নাকি। সবসময় নিজের মর্জিমাফিক চলবে। আমি ভূমিদের বাড়িতে আছি। তোমাকে আধঘণ্টা সময় দিলাম এর মধ্যে তোমাকে এ বাড়িতে দেখতে চাই।” বলেই কল কেটে দিলেন অনিমা বেগম।
মোবাইল রেখে তাহমিদের দিকে তাকায় আরাভ। তাহমিদ শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে,
” তোকে পাচ মিনিট সময় দেওয়া হলো এর মধ্যে রেডি হয়ে চলে আসবি। আমরা ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করছি।”
” আমরা মানে? তুইও যাবি নাকি?”
” হুম, তুহিন ও যাচ্ছে।” তাহমিদ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আরাভ দু-হাতে চুল টেনে ধরে বিড়বিড়ায়, ” আমি যতই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি ততটাই গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ছি। ডেঞ্জারাস মেয়ে একটা।”
সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিলেন রোজিনা হোসাইন। একমাত্র মেয়ের এইনগেজমেন্ট বলে কথা। কোন কিছুরই ত্রুটি রাখতে চাননা তিনি। ভোরে উঠে নামায পরে ইউনুছ হোসাইনকে বাজারে পাঠান আর নিজে বাড়ির সব কাজ করেন। ইউনুস হোসাইন বাজার থেকে ফিরলে তিনি রান্না শুরু করে দেন। আরাভদের দুপুরে আসার কথা ছিলো তাই তিনি দুপুরের মাঝে সব রান্না শেষ করেন। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয় কিন্ত আরাভদের আসার কোন নামই নেই। ভূমির এইনগেজমেন্ট উপলক্ষে আসা বাড়ির বাড়ি ভর্তি মেহমান। পাত্র পক্ষ না আসার কারনে তারা নানা কথা বলতে থাকে। তারপর যে যার মতো খাওয়া দাওয়া করে সন্ধা নামার আগেই বাড়ি চলে যায়। থেকে যায় শুধু ভূমির দুই ফুবাতো বোন আর একটা মামাতো বোন। সন্ধায যখন অনিমা বেগম কল করে বলে তারা আসতেছে তখন রোজিনা হোসাইন আবার নতুন করে সব রান্না করেন। সকাল বেলা অনেকগুলা আইটেম থাকলেও এবার শুধু মাত্র তিনটা আইটেম করেছেন তিনি। তুহিন খেতে বলে বলল,
” দোস্ত তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন বোধহয় অনেক কৃপণ। আজ মেয়ের এইনগেজমেন্ট কোথায় ভালো ভালো রান্না করবে তা না করে শুধু ডিম মাংস আর ডাল রান্না করেছে।”
আরাভ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। তুহিনের কথায় কান দিলো না। তাহমিদ বলল,
” দুপুরে আসার কথা বলে রাতে আসছো। কপালে ডাল আর মাংস জুটছে এটাই অনেক।”
তুহিন অসহায় মুখ করে আরাভের দিকে তাকালো। ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে থাকে বলে ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়া হয়না। ওই মাঝেমাঝে অনলাইন এ অর্ডার করে যা খায়। ভেবেছিল আরাভের এইনগেজমেন্টে এসে তৃপ্তি সহকারে খাবে সেটাও হলো না।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটিয়ে সবাই ড্রয়িংরুমে গল্পে মশগুল। আরাভ তাহমিদ আর তুহিন একপাশে। অনিমা বেগম রোজিনা হোসাইন আর ইউনুস হোসাইন একসাথে বসে কথা বলছেন। আরাভ গল্প করলেও ওর মন বারবার ভূমির সাথে দেখা করতে চাইছে। সকালে দিয়ার কথাগুলো শুনার পর থেকে ভূমির সাথে কথা বলার জন্যে উসখুস করছে। বারবার আশপাশ তাকাচ্ছে আরাভ।
রাত প্রায় সারে এগারোটা। এমনসময় ড্রয়িংরুমে ভূমিকে নিয়ে আসা হয়। ভূমির পরনে আজ মিষ্টি কালারের শাড়ী। মুখে হালকা মেকাপ চোখে গাঢ় কাজল। ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক। দু-হাতে রেশমি চুড়ি। মাথায় কৃষ্ণভ্রমরের মতো রাশি রাশি চুল দোলানো কোমড় অব্ধি। ভূমিকে দেখে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকে আরাভ। অপলক দেখে যাচ্ছে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে আরাভ। ভূমি যতই তার কাছে আসছে আরাভের হার্ট ততদ্রুতই বিট করছে। ভূমি সাথে ওর কাজিন রেশমা এসে বসে ওদের অপজিট পাশে। আরাভের চোখ আটকে যায় ভূমির গলায় থাকা ব্রাউন কালারের তিলে। কেপে উঠে আরাভ। শুকনো ডুক গিয়ে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে নিচের দিকে তাকায় সে।
আধঘণ্টার মাঝে এইনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয় ওদের। তারপরেই বাড়ি ফিরে। যদিও এইনগেজমেন্টের পরে আরাভ আর ভূমিকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কথা বলার জন্যে। আরাভ সোজা নিজের কাজের বাহানা দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। ঘুমানোর জন্যে চোখ বন্ধ করতেই চোখের সাথে ভেসে উঠে শাড়ি পরিহিত ভূমি। তারপরেই চোখ আটকে যায় ভূমির গলার তিলে। ধড়ফড় করে উঠে বসে আরাভ। পাশ থাক গ্লাস থেকে পানি খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ভূমিকে একটা মেসেজ করে,
” তোমার গলার তিনটা বড্ড নেশাতুর। যতবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ততবারই আমার তৃষ্ণা আড়িয়ে দিচ্ছে।”
মেসেজ সেন্ড করার কয়েকমুহূর্ত পর মনে পড়লে ও কি লেখেছে। তাড়াতাড়ি মেসেজটা ডিলিট করতে যায় তখনি দেখে ওপাশে মেসেজ সিন হয়েছে। অধোর কামড়ে ঠোট চেপে ধরে আরাভ।তারপর মোবাইল বন্ধকরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
চলবে,,,,,,,,
Mahfuza Afrin Shikha.