রইলো তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব -২১+২২

#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২১]

মোটরবাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে একজোড়া কপোত কপোতী। মুক্ত পাখিয়ে ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। সামনের জন মনে অনাবিল সুখ নিয়ে বাইক চালাচ্ছে আর পিছনের জন তাকে দু-হাতে জড়িয়ে পিঠে মাথা রেখে উপভোগ করছে রাতের শেষভাগের সিগ্ধ হাওয়া। এমন সুন্দর মাতাল করা হওয়া দুজনের মনের ভিতরের সুপ্ত প্রেমকে জাগিয়ে তুলছে। ইচ্ছে করছে এমন করেই কেটে যাক আরো হাজার বছর। তারা এভাবেই পারি দিতে পারবে কয়েক হাজার বছর। আচ্ছা, প্রিয় মানুষটার সংস্পর্শে এত সুখ কেন? মনে হয় সে তার কাছে থাকলে আর কিছু চাওয়ার নাই। ভূমি আরাভের পিঠে নাক ঘসলো। আরাভের পিঠ দিয়ে হীম শীতল শ্রোত বয়ে গেলো। মনে হয় যেন বরফের রাজ্যে ভাচ্ছে সে। অধোর কামড়ে ড্রাইভ করায় মন দিলো সে। ভূমি আরো শক্তকরে আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
” ফর হোয়াট?”
” আজকের এই মুহূর্তের জন্যে। এমন সারপ্রাইজ আমায় মাঝে মাঝে দিবে।”
আরাভ হাসলো। কিছু বলল না। আরো কিছুক্ষণ পর ওদের বাইক একটা গ্রামের রাস্তায় ডুকলো। গ্রামের কাচা রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে আরাভ। কাচা রাস্তায় আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু, যার ফলে ভূমি আরো বেশী করে লেপ্টে যাচ্ছে আরাভের সাথে। কিছুক্ষণ পর আরাভ একটা নদীর সামনে এসে বাইক থামালো। আরাভ বাইক থেকে নেমে ভূমিকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে চলল নদীর তীরের দিকে। পারে এসে একটা নৌকা বাধা দেখে দু’জনে নৌকায় উঠে বসে। আচমকা ভূমিকে নিজের বুকের সাথ চেপে ধরে আরাভ। আকস্মিক ঘটনায় ভুমি কিছুক্ষণ চুপকরে থাকে তারপর আরাভের পিঠে নিজের হাত বুলায়। তারপর ভূমিকে ছেড়ে দিয়ে ভূমির মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চাঁদের সিগ্ধ আলোতে ভূমির মুখটা আরো বেশী সিগ্ধ লাগছে। আকাশের দিকে তাকালো আরাভ, ওর খুব বলতে ইচ্ছে, হেই অন্ধকারের সিগ্ধ আলোর রশ্মি, তোমার এখন ডুবে যাওয়া উচিৎ, আমার কাছে তোমার চেয়েও সিগ্ধ আমার চাঁদ আছে। মুখে বলল, “কে বেশী সিগ্ধ, চাঁদ নাকি আমার নীলাদ্রিতা। অবশ্যই আমার নীলাদ্রিতা। আরাভের এমন কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল ভূমি। আরাভ ভূমির মুখটা দু-হাতে তুলে মৃদু হাসলো। তারপর ভূমির অধোরে নিজের অধোর বসিয়ে দিলো। ভালোবাসায় আবেশে ভড়িয়ে দিতে লাগলো ভূমিকে। ভূমিও আরাভের মাথায় হাত রেখে রিসপন্স করলো। আরাভ ভূমির অধোর ছেড়ে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে। গলায় ঘাড়ে প্রেমের উষ্ণে ভালোবাসার সাগরে ভেসে যেত লাগলো ভূমি। আরাভ ভূমির গলা ছেলে ওকে নিজের কোলে বসিয়ে দুহাতে বুকে জড়িয়ে রাখলো। ভূমিও আরাভের বুকে মাথা রেখে উপভোগ করতে লাগলো তাদের এই ভালোবাসাময় মুহূর্ত। দু’জনে চুপ। কেউ কোন কথা বলছে না। মৌনতা যেন তাদের ব্রত। শুধু একে অপরের হৃদস্পন্দন উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে আরাভ বলল,

“আগামি কাল ডেথ এর মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমি।”

ভূমি অবাক। এমন সময় এই কথা সে এক্কেবারে প্রত্যাশা করেনি। নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরাভ আরো শক্তকরে জড়িয়ে ধরে। ভূমি বলল,
” ডেথ! আচ্ছা ডেথ কে জানতে পেরেছো?”

” নাহ তবে সন্দেহ করছি। আমার সন্দেহ সঠিক হলে কাল সকালেই জানতে পারবো।”

” তুমি কাকে সন্দেহ করছো?”

” মনিরুল স্যারকে।”

” মনিরুল স্যার।” অবাক হয়ে বলল ভূমি।

” হ্যাঁ। দিয়াকে ড্রা*গ দিয়ে ওকে হ্যালুশোলেট করা। দিগন্তকে নিজের হাতের তৈরী করা কেক খাওয়ানো আর ডিটেকটিভ বয় ডাকটা। এই ডাকটাই আমার সন্দেহের প্রধান কারন।”

“মনিরুল স্যার এমনটা করেছেন। ভাবতেই পারছিনা। স্যারকে কত ভালো করছিলাম।”

” প্রত্যেক জিনিসের দুইটা দিক থাকে। একটা ভালো অপরটা মন্দ। মনিরুল স্যারের সাথে যেটা হয়েছে সেটা খুব খারাপ হয়ে। দেশ এবং দেশের প্রতি পচন্ড ঘৃনা আর রাগ থেকে এমন একটা পথ সে বেছে নিয়েছে। অতিরিক্ত রাগ আর ঘৃনা দুটোই মনুষ্যজাতির জন্যে অভিশাপ। ঘৃনার থেকে মানুষের ভিতরে যে প্রতিশোধপরাণ মানুষটা তৈরী হয় সেটা খুব ভয়ংকর। জ্বলন্ত অগ্নিগিরি মতো। সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হয়তো তার জায়গায় থাকলে আমিও এমন কিছু করতাম। আমার তার প্রতি কোন রাগ নাই। তবে দেশের এই সাধারণ মানুষজনের জন্যে তাকে আটকাতেই হবে।”

কথা বলতে বলতে আরাভের হাত আলগা হয়ে আসলো। ভূমি সোজা হয়ে বসে বলল,
“দেশের প্রতি তার এত ঘৃনা?”
” হুম।আমার একটা কথা রাখবে নীলাদ্রিতা?”
” বলো।”
” কাল রাত বারোটার ওর কি হবে সেটা কারো জানা নেই। তবে ডেথ এমন কিছু যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তুমি আমায় কথা দাও, যা কিছু হোক তুমি নিজেকে শক্ত রাখবে। একদম ভেঙে পরবে না।আমি না ফেরা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হবে। নিজেকে শক্তরেখে সত্যের মুখোমুখি হয়ে সবটা সামলাবে।”

ভূমির মন অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠলো। দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। কম্পায়িত হাত রাখলো আরাভের গালে। আরাভ ভূমির হাতের উপর হাত রেখে তাতে ঠোট ছোঁয়ালো। ভূমি বলল,
” তোমার কিছু হবে না তো।”
” আমার কিচ্ছু হবে না। আমার কিছু হতেই পারেনা, না হলে আমার নীলাদ্রিতার কি হবে। আমার নীলাদ্রিতার জন্যে হলেও আমাকে ঠিক রাখতে হবে। তুমি শুধু কথা দাও নিজের খেয়াল রাখবে।”

ভূমি শক্তকরে আরাভকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” তুমি ঠিক থাকলেই আমি ঠিক থাকবো।”

আরাভ ভূমিকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো চুপচাপ। ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটে উঠছে। চাঁদমামা ডুবে যাচ্ছে তার কুলায়।চারিদিকের নিকষ কালো অন্ধকার কাটিয়ে একটু একটু করে দিনের আলোয় আলোকিত হচ্ছে এই রঙিন দুনিয়া। আরাভ আর ভূমি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উপভোগ করে ভোরের আলো ফুটে উঠার দৃশ্য।পূর্ব আকাশে যখন সূর্যিমামা উকি দিচ্ছে তখন আরাভ ভূমিকে নিয়ে সেখান চলে আসে। প্রায় সাতটার দিকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আরাভ আর ভূমি। ভূমি আরাভের রুমে দিয়ে এলো ঘুমানোর জন্যে। আর নিজে গেলো মায়ের রুমে। অনিমা বেগম বিছানা ঘুচাচ্চিলেন এমন সময় আরাভ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

” মা, মাথায় একটু জাত বুলিয়ে দাওয়া ঘুমাবো।”
” সে কিরে এখন ঘুমাবি কেন? কলেজে যাবিনা আজ?”
” আজ যাবোনা। তুমি এখানে বসতো। আমায় মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।”

অনিমা বেগম মুচকি হাসলেন। এই ছেলের পাগলামি এখনো গেলো না। মৃদু হেসে ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আরাভ অনিমা বেগমের কোলে মাথা তুলে দিলেন। দু’চোখ বন্দ করে বলে,
” ঠিক দশটার দিকে ডেকে দিবে। আচ্চা মা আজ সকালের মেনু কি?”
” কি খাবি বল।”
” তোমার হাতের স্পেশাল ভুনা খিচুড়ি খাওয়াবে।”
” ঠিক আছে। তুই ঘুমা আমি রান্না করবো।”

আরাভ আর কিছু বলল না। চোখ বন্ধকরেই ঘুমানোর প্রচেষ্টা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে বলে উঠলো,
” আমার রুমে ভূমি আছে। ওর জন্যেও রাধবে মা।”

অনিমা বেগম হাসলেন। মৃদু হেসে মাথা নাড়ালেন। তবে সেটা আরাভের চোখে পরলোনা। মনের সুখে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন অনিমা বেগম।”

_____________________
দ্রুত হাতে লেপটপে কিছু টাইপ করছিলো মনিরুল ইসলাম। তার কিসের এত ব্যাস্ততা কে জানে। সমস্ত ধ্যানজ্ঞান দিয়ে লেপটপে কিছু টাইপিং করছে। এদিকে দিগন্ত কখন থেকো ডোর নক করছে শুনতে পারছে না সে। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখের বিরক্তির শব্দ করলো। তারপর বিনা পারমিশনের রুমে ডুকে পরলো। সামনে কারো ছায়া দেখে হচকচিয়ে উঠেন মনিরুল ইসলাম। চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে দিগন্তকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি তুলার বৃথা চেষ্টা করলো। দিগন্ত স্মিত হেসে বলল,
” সরি। আসলে অনেকবার নক করার পরেও আপনি রিসপন্স করছিলেন না তাই বিনা পারমিশনল চলে আসলাম। আপনি কি ব্যাস্ত।”

মনিরুল ইসলাম ইতস্ততভাবে একটু হাসলো। যেটা চোখ এড়ালো না দিগন্তের। অতঃপর বলল,
” না না একদম-ই নয়। আপনি বসুন না প্লিজ।”

দিগন্ত স্মিত হেসে মনিরুল ইসলামের সামনের চেয়ার টেনে বসে পরলো। তারপর তার সাথে কিছু কথা বলে নিলো। দিগন্ত উঠে চলে যাচ্ছিল এমন সময় বলল,
” আজ তো আপনার আমাদের ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার কথা। কখন যাচ্ছেন।”

” এইতো কিছুক্ষণ পরেই রওনা দিবো।”

” আমি কি যাব আপনার সাথে। না যদি কোন প্রয়োজন পরে।”

” তার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার কাজ করেন। আমি চলে যেতে পারবো। আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন?”

” আরাভের বসায় যাবো। একটু কাজ আছে।”

” আচ্ছা।” দিগন্ত চলে যাওয়ার জন্যে সামনের দিলে পা বাড়াতেই মনিরুল ইসলাম পিছু ডাকলো। তারপর একটু ইতস্তত টেবিলের উপর একটা চকলেট রাখলো। তারপর বলল,
” আমার নিজের হাতের বানানো। খেয়ে দেখেন ভালোলাগবে।”

দিগন্ত চকলেট হাতে নিয়ে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল,
” পরে খেয়ে নিবো।”

” এই না না, আপনি এখুনি খেয়েনিন।” তড়িৎগতিতে বলল মনিরুল ইসলাম। দিগন্ত তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো এময় তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। দিগন্ত চকলেট পকেটে পুরে মোবাইল হাসে নিয়ে মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলল, চকলেটের জন্যে ধন্যবাদ। খেয়ে অবশ্যই জানাবো।” তারপর কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে যায়।

দিগন্তের চলে যাওয়ার পর মনিরুল ইসলাম রহস্যময় হাসি দিলো। তার এই হাসির এই অর্থ বুঝা দায়। দ্রুত হাতে টাইপিং করতে করতে বিড়বিড়াল,
” তোমদের চলন ডালে ডালে আর আমি থাকি মূলে। কান্ড সহ পাতার খবর আমার জানা। যাই হোক এবার তাহলে মুখোমুখি দেখা হচ্ছে।”

আরাভ ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই চোখ আটকে গেলো রান্নাঘরে যেখানে অনিমা বেগম রান্না করছেন আর ভূমি তাকে হেল্প করছে। আরাভ নিঃপলক সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ঠোঁটের কোনে তার হাসির আভা। মনে মে বলল,
” আমি তো এভাবেই দেখতে যেচেছি আমার পরিবারকে। তবে একটু কমতি লাগছে। ছোট্টবাচ্চা ছাড়া বাড়িটা শূন্য কুলার মতো মনে হয়। আজকের কাজটা শেষ করি। তারপর খুব তাড়াতাড়ি আমি আমার বাড়ি পূর্ণ করে ফেলবো।”

আরাভ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
” মা আর কতক্ষণ লাগবে।”

অনিমা বেগম রান্নাঘর থেকে জবাব দিলেন,
” এইতো হয়েগেছে তুই ড্রাইনিং এ বস।”

অনিমা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন আরাভ আর ভূমি পাশাপাশি বসে আছে। ভূমি অনিমা বেগমকে বলল,
” মামনি তুমিও বসোনা। আমরা সবাই একসাথে খাই।”

” তুই শুরু কর আমি বসছি।”

সবাই মিলে এক সাথে গল্প বলার ফাকে খাবার খাচ্ছে। এমন সময় আরাভের সেলফোনটা বেজে উঠে। স্কিনে ডিটেকটিভ নামটা জ্বলজ্বল করছে। আরাভ কিছুক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে কল রিসিভ করলো। নরম কোমল শান্ত কন্ঠে বলল,
” কাজ হয়েছে?”
ওপাশ থেকে দিগন্ত বলল,
” হুম। ভাগ্যিস ঠিক সময়ে সোহান কল করেছিলো না হলে আমাকে হয়তো চকোলেটটা খেতে হতো।”
” ওটা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠিয়ে দাও। আর হ্যাঁ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ফরেন্সিক রিপোর্ট চাই।”
” ঠিক আছে।”
কল কেটে দিলো দিগন্ত। আরাভ আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

________________________
রুমজুরে পায়চারী করছে আর হাতের তালু ঘসছে আরাভ। তাহমিদ তুহিন আর সোহান পিসির সামনে বসে মনিরুল ইসলামের এর সম্বন্ধে তথ্য বের করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ আগেই দিগন্ত ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে দিয়েছে। হ্যাঁ দিগন্তকে দেওয়া সেই চকলেটের মধ্যে “দ্যা ফরবিডেন” ড্রা*গ পাওয়া গেছে।এখন সবাই সিউর এই ডেথ আসলে মনিরুল ইসলাম। তাই তারা সকলে মিলে মনিরুল ইসলামের বায়োডাটা চেক করছে। এই পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মধ্যে মনিরুল ইসলামের পালিত বাবা মায়ের নাম আর ওনার বর্তমান বাসস্থান সম্পর্কে জেনেছে। তবে মনিরুল ইসলাম কি করতে চাইছে সেটা এখনো অজানা। আরাভ সারা রুমজুরে পায়চারী করেও কিছু বুঝতে পারলো না। এদিকে বিকাল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে প্রায়। কোন কোল খুঁজে পাচ্ছে না আরাভ সহ তার সঙ্গিরা। কিছুক্ষণ পর আরাভের ফোনে দিগন্তের কল আসলো। ওপাশ থেকে দিগন্তের কথা শুনে আরাভ স্তব্ধ হয়ে গেল। পুরো জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে আরাভের মাথা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠে,
” স্যারকে এখনি হসপিটাল এডমিট করো।”

দিগন্তের সাথে কথা বলার সময় আরাভের উত্তেজনা দেখে তাহমিদ প্রশ্ন করে,
” এমন ছটফট করছিস কেন? ওদিকে সব ঠিক আছে তো?”
” না ঠিক নেই। কিচ্ছু ঠিক নেই।”
” কি হয়েছে?”
” ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের গোপন ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। যেহেতু এটা স্ট্রোং পাসকোড দেওয়া ছিলো এবং সিকিউরিটি খুব প্রবল। পাসকোড ছাড়া এটার ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে সাইলেন বেজে উঠলো। তাই ডেথ আজ ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সেখানকার প্রধান রফিক মির্জাকে দ্যা ফরবিডেন ড্রা*গ দিয়ে তাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাসকোড জেনে নিয়েছে।”

” ওহ মাই গোড। এটা তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। এবার উপায় কি?” উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করলো তুহিন।”

” রাত বারোটার পর ডেথ দেশের সমস্ত গোপন তথ্য নিয়ে অন্যদেশ চলে যাবে। তারপর সেখানে আমাদের দেশের তথ্য বিক্রি করে দিবে। তোরা বুঝতে পারছিস আমাদের দেশ এখন কতটা হুমকির মুখে।”

” এমনটা হতে দেওয়া যাবে না।”

” আমি বের হচ্ছি। তোরা ডেথ এর সমস্ত ইনফোরমেশ কালেক্ট কর। তারপর চলে আসবি মনিরুল স্যারের এর ঠিকানায়। আর তাহমিদ তুই আমাকে মনিরুল স্যারের পালিত বাবা ঠিকানা দেয়।”

” মনিরুল স্যারের পালিত বাবার ঠিকানা দিয়ে তুই করবি।”

” স্যার ওখানেই আছেন। চারিদিকে যখন ঘৃনা আর বিতৃষ্ণায় মন ভরে উঠে তখন একটু ভালোবাসা পেলে মন সেখানেই ঠায় পেতে চায়। মনিরুল স্যার তার পালিত বাবাকে যতটা ঘৃনা করতেন ঠিক ততটাই ভালোবাসতেন তার পালিত মাকে। তাই তার শেষ সময়টুকু তিনি তার পালিত মায়ের স্মৃতি সাথে কাটাতে চান। আর এটাই হিউম্যান সাইকোলজি।”

কথাগুলো বলে বেড়িয়ে যায় আরাভ। আর বাকিরা তাদের কাজে লেগে পরে। আরাভ সেখান থেকে সোজা নিজের বাড়ি চলে আসে। ভূমও তখনো ওদের বাড়িতেই ছিলো। আরাভ বাড়ি যেতেই ভূমি একগাল হেসে আরাভের সামনে এসে দাঁড়ায়। আরাভ ভূমিকে পাশ কাটিয়ে নিজের কাবার্ড থেকে একটা লাল হুডির মতো জ্যাকেট নিয়ে ভূমির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভূমির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়। পিছন থেকে ভূমি প্রশ্ন করে,
” এটা কিসের জ্যাকেট?”
” এটা বুলেট প্রুফ।”

আরাভ পিছন ফেরে বলে, মায়ের একটু খেয়াল রেখো। আমি আসছি।” আরাভ বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার সময় অনিমা বেগমের রুমে উকি দিয়ে দেখে অনিম। বেগম মনের যত্নে আরাভের জন্যে সুতার গেঞ্জি তৈরী করছে। আরাভ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর সে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে।

চলবে,,,,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[২২]

রাতের শহরে বাইক নিয়ে ঘুরে ঘুরে একটা বাড়ি খুঁজে যাচ্ছে আরাভ। আর টি প্লাজার ওনার আসলাম খানের বাড়ি খুঁজে পেতে এতটা কষ্ট হবে সেটা বুঝতে পারেনি। এতবড় বিজনেসম্যান এর বাড়ি খুঁজতে তাকে এত কাঠখড় পুড়াতে হবে ভাবেনি। উত্তরার সাত নং সেক্টরে এসে একটা ছেলেকে আসলাম খানের বাড়ি কথায় জিগ্যেস করতেই সে বলল এই নামে কাউকেই চিনে না। আরাভ ব্যর্থ আর হতাশাগ্রস্থ মন নিয়ে বাইকে উঠে বসে। সমনের রাস্তা বরারব অনেকটা পথ এগিয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, তবে কি শেষ পর্যন্ত ডেথ এর জয় হবে।হেরে যাবে আমাদের এতগুলো মানুষের এতদিনের পরিশ্রম। না ডেথ কিছুতেই জিততে পারেনা। তবে যে শেষ হয়ে যাবে আমাদের দেশ। এই দেশের গোপন তথ্য যদি অন্য কোন দেশে বিক্রি করে দেয় তাহলে আমাদের দেশ আবার অন্যদেশের গোলামি করবে। এই দেশের মানুষের উপর আবার শুরু হবে অন্যায় অত্যাচার শোষণ। এমনিতেই নীলকররা আমাদের কম অত্যাচার করেনি। তাহলে এবার কি করা উচিৎ? ডেথ এর সন্ধান ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। হাতে আছে আর মাত্র চারঘন্টা। ভাবনায় ডুবে বাইক চালাচ্ছে আরাভ এমন সময় ওর বাইকের সামনে এসে পরে একটা অর্ধবয়স্ক লোক। আরাভ ব্রেক করতে করতে লোকটা সাথে লেগে যায়। লোকটা রাস্তার পাশে পরে যায়। আরাভ দ্রুত বাইক থেকে নেমে লোকটার কাছে যায়। তাকে উঠিয়ে পাশে বসায়। লোকটা হাতে অনেকটাই লেগেছে। কুনুইয়ের পাশ থেকে রক্ত বের হচ্চে। আরাভ মাথা নিচু করে লোকটার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। লোকটা আরাভের দিকে তাকিয়ে বলে,

” তোমাদের বয়সের দোষ এটা। এই বয়সে তোমাদের মাথায় যে কত কি চলে। কোন কাজে ঠিক মতো মন দাওনা তোমরা। ফাকা রাস্তায়ও এক্সিডেন্ট করো। তা কোথায় যাচ্ছো?”

” এদিকেই। আসলে আমি একটা বাড়ি খুজছিলাম।”
“কার বাড়ি?”
” আসলাম খানের বাড়ি।”
” আসলাম খান! এদিকে তো কোন আসলাম খান নেই।
” আপনি কি এখানে অনেক আগে থেকেই থাকেন?”
” হ্যাঁ, ছোট থেকেই থাকি। এখানেই জন্ম এখানে বড় হয়ে উঠা।”
” আর টি প্লাজার ওর্নার আসলাম খান, চিনেন। ডাকাতের হাতে যিনি খুন হয়েছে।”
” সে তো অনেকবছর আগে মারা গেছে। তার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তুমি কি করবে।”
” কোথায় বাড়ি?”
” ওই তো সামনে গিয়ে বামে দেখবে এটা রাস্তা তার কিছুদূর একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। সাদা রং করা।কিন্তু ওখানে তো কেউ থাকে না। ওনার বউ আগেই মারা গেছে তারপর সে। তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে একটা ছেলে আসে এই বাড়িতে। সেই দেখাশুনা করে বাড়িটা।”
আরাভ উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
” ধন্যবাদ আংকেল।”

লোকটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরাভ বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আর লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরাভের চলে যাওয়ার দিকে।

ধবধবে সাদা একটা আধুনিক ডিজাইনের ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করায় আরাভ। আশ্চর্যের বিষয় এই বাড়িতে একটা কেয়ারটেকার ও নাই। আরাভ গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। পুরনো এ্যান্টিক ডিজাইনের শোপিচ দিয়ে সাজানো বাড়ির ড্রয়িংরুম। আসবাবপত্র সবই আধুনিক। বাড়ির ভিতরটা রাজপ্রসাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আরাভ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বাড়িতে একটা মানুষের উপস্থিতি পেল টের পেল। আশ্চর্য এই বাড়িতে কি কেও থাকে না নাকি। সামনে শিড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। কেউ না থাকায় মন্দ হয়নি। শিড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় আরাভ। ভিতর থেকে একটা মৃদু শব্দ আসছে। মন মাতাল করা শেই শব্দ। এই শব্দ সে আগে কখনো শুনছে কি না বলা মুশকিল। দরজায় টোকা দিতেই সেটা খোলে গেল। ভিতরে প্রবেশ করলো আরাভ। সামনে দিকে তাকাতেই আশ্চর্যের সিমা যে পেড়িয়ে গেলো। এ যেন কোন কম্পিউটার ল্যাব। আরাভ হতবিহম্বল হয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে থাকে। সামনে কালো হুডি পরিহিত একটা লোক বসে আছে মাথার অর্ধেকটা ডাকা তাই বুঝতে পারছে না লোকটা কে? আরাভ ভিতরে প্রবেশ করলো। লোকটা মাথা থেকে হুডি খুলে আরাভের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

” ওয়েলকাম, ওয়েলকাম মিস্টার জুহায়িন আহমেদ আরাভ।”

স্বস্তির শ্বাস ফেলল আরাভ। মনিরুল ইসলাম। তার ধারণাটাই ঠিক। এসবের মূলে আসলে মনিরুল ইসলাম। যেদিন প্রথম ডেথ এর নাম ধারন করে মনিরুল ইসলাম তখন তিনি এই কালো হুডি কিনেছিলেন। অদ্ভুত এক ক্ষমতা আছে এই হুডির। এটা পরলে নিজেকে খুব পাওয়ারফুল মনে হয়। মনিরুল ইসলাম আবার বললেন,
” আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?”

” কেন করছো এসব? নির্দোষ মানুষের প্রান নিয়ে খেলে তোমার কি লাভ?”

” পাওয়ায়, পাওয়ায়, বুঝলে। আর কি বললে, নির্দোষ। নির্দোষ তো আমার বোনটাও ছিল তাহলে তাকে কেন জিবন দিতে হলো।”

” তার শাস্তি তো তুমি দিয়েছো তোমার পালিত বাবাকে। তাহলে এই দেশ? দেশের প্রতি কেন এত বড় অন্যায় করছো? তুমি বুঝতে পারছো এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ।”

মনিরুল ইসলাম হাসলো। ভয়ংকর সেই হাসি। পুরো রুম কেপে উঠলো তার হাসিতে। তারপর বলল,
” ওদিকে তাকিয়ে দেখো ডাটা সেভেন্টি ফাইভ পারসেন্ট লোডিং। বাকি টুয়েন্টি ফাইভ হলেই সব গোপন ইনফরমেশন আমার হাতে।”

আরাভ হাসলো। ভিষন রহস্যময় সেই হাসি। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে পিসির সামনে গিয়ে বসলো। কিবোর্ডে হাত রাখতেই মনিরুল ইসলাম বলল,
” কিচ্ছু করতে পারবে না। না তুমি আমাকে মারতে পারবে আর না এই ডাটা লোডিং বন্ধ করতে পারবে। আর আমি না চাইলে তুমি এখন থেকে বেরও হতে পারবে না।”

আরাভ কিবোর্ডের উপর হাত রাখলো।চারিদিকে এক অদৃশ্য দেয়াল দ্বারা আবৃত। এখানে কোন ইন্টারনাল কোডিং ব্যবহৃত হয়েছে। যার পাসকোড শুধু মনিরুল ইসলামের জানা। এখন এখান থেকে বের হওয়া মুশকিল। চিন্তায় পরে যায় আরাভ। তবে সেটা মনিরুল ইসলামকে বুঝতে দেয়না। কিবোর্ড ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মনিরুল ইসালমের মুখোমুখি দাঁড়ায়। আরাভে মুখে লেগে আছে হাসি। রহস্যময় হাসি। যেটা দেখে রাগে শরীর কিড়মিড় করছে মনিরুল ইসলামের।

______________________
আরাভকে ওভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে চিন্তায় পরে যায় ভূমি। যাওয়ার আগে একবারও ভূমির সাথে কথা বলেনি নি। মনে হলো যেন ভূমিকে ইগনোর করলো সে। ভূমি আর বসে থাকতে পারেনা। অনিমা বেগমকে বলে আরাভের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে। বাড়ির গাড়ি নিয়ে ফ্ল্যাটের সামনে এসে দেখা হয় দিগন্তের সাথে। দিগন্ত হন্তদন্ত হয়ে আরাভের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে। ভূমিকে দেখে দিগন্তের পা থেমে যায়। ভ্রুযুগলে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে ভূমির কাছে এসে জিগ্যেস করে,
” তুমি এখানে?”

“আরাভের সাথে দেখা করতে এসেছি।”

দিগন্ত কথার সমাপ্তি টানে।
” ওও আচ্ছা, আমিও ভিতরে যাচ্ছি। চল তাহলে।”

দু’জনেই ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজালে তুহিন এসে দরজা খুলে দেয়। দিগন্তকে দেখে প্রসন্ন হাসলেও ভূমিকে এক্কেবারেই আশাকরেনি। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভূমির দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করে,
” ভাবি আপনি?”

ভূমি তুহিনের কথার কোন জবাব দেয়না। ওকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে গিয়ে আরাভকে ডাকতে থাকে। ততক্ষণে সবাই ভূমির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আরাভে দেখতে ন। পেয়ে ভূমি তাহমিদের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
” আরাভ কোথায়? ওকে দেখছিনা কেন?”

“আরাভ সন্ধার দিকে বের হয়েছে আর ফিরেনি।”

” কেথায় গেছে?”

” মনিরুল স্যারের বাড়ি। এতক্ষণে বোধহয় স্যারের সাথে দেখাও হয়েছে। এখন আর ওক নাম্বার ট্যাপ করা যাচ্ছে না।”

ভূমির মনটা কেমন বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। সবার দিকে একবার তাকালো। এখানে উপস্থিত সকলে খুব চিন্তায় আছে সেটা তাদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্চে। দিগন্ত প্রশ্ন করলো,
” তোমরা সবাই যাবে তো নাকি?”

” হ্যাঁ, এইতো বের হবো।”

” তাহলে আর দেরী করে কাজ নাই। চলো সকলে বেড়িয়ে পরি।”

” আমিও যাব।” বলল ভূমি।

তাহমিদ ভূমির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” তুমি যাবে মানে?”

” হ্যাঁ যাব আমি আপনাদের সাথে।”

সবাই যখন বেড়িয়ে যাচ্ছিলো তখন ভূমি বলে উঠলো,
” আপনাদের সেফটি হিসাবে কিছু নিবেন না।”

তুহিন দাঁড়িয়ে বলল,
” সেফটি মানে!”

” আরাভ যাওয়ার সময় ওর বুলেট প্রুফ জ্যাকেট নিয়েছে। আপনাদের টাও নিয়ে যান যদি কোন প্রয়োজন হয়।”

“বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। এই তুমি কোনভাবে আরাভের রেড জ্যাকেট এর কথা বলছো না তো।” প্রশ্ন করলো তাহমিদ।

” হ্যাঁ, ওই রেড কালারের জ্যাকেট।

ভূমির কথা শুনে তাহমিদ তুহিন ও সোহান একে অপরের দিকে তাকালো। ওদের চোখমুখ জুড়ে অজানা আতঙ্ক। ভয়ে হতবিহম্বল। তিনজনে একসাথে বলে উঠলো,
” কিহহহ,,, আরাভ ওই জ্যাকেট নিয়ে গেছে আর আপনি এখন বলছেন। আপনার ধারনা আছে ওটায় কি আছে?”

ভূমি হতবিহম্বল চোখে সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আরাভ তো বলল ওটা বুলেট প্রুফ জ্যাকেট।”

” মিথ্যে বলেছে। ওটা বুলেট প্রুফ নয়। ওটা টাইমার জ্যাকেট। এক বিজ্ঞান মেলায় কিনেছিল আরাভ। আমরা যখন জিগ্যেস করলাম এটা দিয়ে কি করবি। তখন বলল, যদি প্রয়োজন হয় কোনদিন কাজে লাগাবো সেদিন।”

সোহানের কথা শুনে ভূমি দুপা পিছিয়ে যায়। আতঙ্ক চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে পরে। দিগন্ত ভূমিকে ধরে শোফার বসিয়ে ওর সামনে এক গ্লাস পানি ধরে। ভূমি সেদিকে না তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,
” আমি এখনি আরাভের কাছে যাবো।”

___________________
মনিরুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দুপা পিছিয়ে যায় আরাভ। অধোরে হাসি রেখে বলে,
” তোমাকে বলেছিলাম আইনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করো। আমার কথা শুনলে না।” এই বলে জ্যাকেটের চেইন খুলতে খুলতে পাশে তাকায়। পিসিতে স্পষ্ট ভাসমান ডাটা লোডিং এইটটি এইট পারসেন্ট। আরাভ সেদিকে তাকিয়ে বলল, “গ্রেট” আচ্ছা ডেথ তোমার মনে আছে আমি বলেছিলা, মৃত্য যেদিন তোমার সামনে এসে দু-হাত বাড়িয়ে ডাকবে সেদিন আর তোমার নিস্তার নেই।” এই বলে জ্যাকেটের পুরো চেইন খুলে দিলো। তারপর মনিরুল ইসলামের দিকে দু-হাত বাড়িয়ে বলল,

” এই নাও, আজ আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়েছি তোমার মৃত্যু হয়ে। ডাকছি তোমায় দুহাত বাড়িয়ে।”

আরাভের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠে মনিরুল ইসলাম। আরাভের বুক থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। মনিরুল ইসলামের বুঝতে বাকি রইলো না, এই জ্যাকেটে টাইম বোম লাগানো আছে। মনিরুল আরাভের থেকে দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” দূরে থাকো আমার থেকে। ভূলে যেওনা আমি তোমার সিনিয়র।”

আরাভ প্রাসন্ন হেসে জবাব দেয়,
” আজ আমি আমার সিনিয়র স্যার নয় ডেথ এর মুখোমুখি হয়েছি। আমার ভাবতেই অবাক লাগে মিস্টার মনিরুল ইসলাম উপস্ সরি ডেথ, একজন শিক্ষক হয়ে কি করে একটা জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করে। যেখানে শিক্ষকের ধর্মই হলো জাতিতে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া।”

মনিরুল ইসলাম আরাভের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এই ছেলে আটঘাট বেধেই এসেছে। দেশের প্রতি জাতির প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে এমন করতে পারে একটা মানুষ। যে নিজের জিবন দিতে দু’বার ভাবে না। আরাভ বলল,

” তুমি অনেক ট্যালেন্টেড ডেথ। তোমার ট্যালেন্ট যদি তুমি ভালোকাজে ব্যাবহার করতে তাহলে হয়তো আজ তোমার মৃত্যু হয়ে তোমার সামনে দাঁড়াতাম না। বরং আমার মতো হাজারজন তোমার মৃত্যুর পথ রুখে দাঁড়াতো। নিজেদের জিবন দিয়ে হলেও তোমাকে বাচাতো।তবে আফসোস, তুমি সেটার প্রাপ্য নও।”

আরাভের বুকের ক্ষত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। ব্যথা করছে। যন্ত্রনায় ছটফট করতে তার পুরো শরীর। চোখের সামনে ভেসে উঠে তার নীলাদ্রিতার নিষ্পাপ মুখখানা। কতটা ভালোবাসা মিশে আসে সেই চাওনিতে। তার নীলাদ্রিতা অপেক্ষা করছে। তারই প্রতিক্ষায় সে প্রহর গুনছে। ফিরতে হবে তাকে। তবেই যে এই যন্ত্রনা থেকে তার মুক্তি মিলবে। মনিরুল ইসলাম ঠায় চেয়ে আছে আরাভের দিকে। আজ মনে হচ্ছে এই পুরো জিবনটাই বৃথা তার। এত এত পরিশ্রম কতে জিবন থেকে কি পেলো সে। সেইতো দিনশেষে হাজারজন মানুষের ঘৃনা আর অভিশাপ। প্রতিশোধের নেশার জিবনের মানেটাই ভুলে গেছে সে। হয়তো তারও থাকতো আজ আরাভের মতো এমন এক বন্ধু যে তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করতো। দুচোখ ভরে আসে তার। আজ জিবম নিয়ে তার বড্ড আফসোস হচ্ছে। আরাভ নিজের হাতের ঘড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায় তারপর মনিরুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে। আর সাথে সাথে বিকট শব্দে উড়ে যায় পুরো ল্যাব হয়তো এই আধুনিক ডিজাইনের অতি যত্নের বাড়িটাও। আর তখনি এই বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয় তাহমিদ তুহিন সোহান ভুমি আর দিগন্ত। সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আগুনে লেলিহান শিখায় জ্বলসে যাওয়া বাড়ির দিকে। কি থেকে কি হলো করো বুঝে উঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পরে ভূমির দেহখানি।

চলবে,,,,,,

#Mahfuza Afrin Shikha.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here