# রক্ষিতা
# Writer – Taslima Munni
চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে আকাশ আমার ঠোঁট কামড়ে ধরে।দু’হাতে তাকে সরাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু একহাতে সে আমার কোমরে ধরে রেখেছে। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে। তবু্ও আকাশ ছাড়ছে না।একটু পরে ছেড়ে দিয়ে একহাতে আমার গালে চেপে ধরে বলে -‘ আকাশ চৌধুরী চাইলে তোর মতো দশটা মেয়ে পায়ের কাছে পড়ে থাকবে। ‘
এক ঝাটকায় আমাকে সরিয়ে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। একদিকে এতো জোরে গালে চেপে ধরায় আমার গাল ব্যথা করছে অন্যদিকে ঠোঁটে জ্বালা করছে,মনে হয় কেটেই গেছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।
আমার জীবনে এটা দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। আজ যদি আমার বাবা-মা বেঁচে থাকতো তবে এই দিন আসতো না।এসব ভেবে চোখের জলে নিজেকে ভাসাচ্ছি।
ফোনে কথা বলতে বলতে আকাশ ঘরে প্রবেশ করে। ফোন টা রেখে বললো – ‘এসব ন্যাকামি এখানে চলবে না। তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস, তার মাশুল সারাজীবন তোকেই দিতে হবে। ‘
সত্যিই বড় ভুল করেছি আমি। বাবা-মার মৃত্যুর পরে মামার অভাবের সংসারে ঠাঁই মেলে আমার। তখন আমাদের কিছুই নেই।নদী ভাঙ্গনে বাড়িঘর- জমিজমা সব হারিয়ে বাবা-মার সাথে শহরের ছোট একটা বাসায় উঠেছিলাম। সবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছি তখন।কত স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো,কিন্তু ডাক্তারি পড়ার আর সামর্থ্য নেই তখন।বাবা খুব কষ্ট পেতেন কারণ ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ডাক্তারি পড়তে পারলাম না। আমি বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাই। আমার সান্ত্বনা মাথার উপর বটের ছায়া বাবা- মা আছে আমার। ভাগ্য আমাকে নিয়ে খেলতে শুরু করে। একদিন এক্সিডেন্টে আমার বটের ছায়ারা চলে যায় না ফেরার দেশে। তারপর মামা উনার বাসায় নিয়ে আসে।মামা এক অফিসের কর্মচারী ছিলেন। কোনোরকমে সংসার চলে যেত।দুই ছেলেমেয়ের খরচ চালিয়ে আমি তাদের উপর বাড়তি চাপ হয়ে যাই।মামা কখনো কিছু বলতেন না। কিন্তু মামী কেন চুপ করে থাকবেন?
ছুটা কাজের মহিলা বিদায় হলো। ঘরঝাড়ু,কাপড় ধোয়া,রান্না করা,বাজার করা সব একএক করে আমার উপর পড়ে। তার মধ্যে কয়েকটি টিউশনি জোগাড় করে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করি।
ক্লাসে তো যেতেই পারিনি। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়ে আসি।মামি সেটাতেও আপত্তি। যতটা সম্ভব নিজের খরচ কমিয়ে টিউশনির টাকা কিছু মামির হাতে তুলে দেই।মামা সব বুঝতেন কিন্তু মামির উপর কথা বলতে পারতেন না।ঝাড়ি খেয়ে মুখ কালো করে বসে থাকতেন।
এভাবেই মামির সংসারে গায়ে খেটে পড়াশোনা শেষ করি। মামাতো ভাই – বোন সাইফ আর সুমনা, মামিকে লুকিয়ে আমার কাজে অনেক সাহায্য করতো।
কিন্তু কথায় বলে না,অভাগী যে দিকে চায় সাগর ও শুকিয়ে যায়।আমার বেলায় ও ব্যতিক্রম হয়নি।মামার অফিস থেকে একদিন ফোন আসে মামা খুব অসুস্থ, হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। মামিকে নিয়ে ছুটে গেলাম। সপ্তাহ খানেক পরে মামা বাসায় ফেরেন ঠিকই, কিন্তু প্যারালাইজড হয়ে গেছে। দুই পা অসার। মামার অফিসের কয়েকজন এসেছিলেন দেখতে। মামা অনেক বলেকয়ে মামার কাজটা আমাকে দিতে অনুরোধ করেন। ভাগ্য বুঝি মুখ তুলে চাইলো।কি দয়া হলো উনাদের, আমাকে চাকরি টা দিয়ে দিলো।
সেই অফিসের বস আকাশ।আমি মামার পোস্টেই জয়েন করি।
একদিন একটা ফাইল নিয়ে হুট করেই আকাশের কেবিনে ঢুকে পড়ি।যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এই অফিসের একটা মেয়ে আকাশের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায়!
আমি দেখেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
– হাউ ডেয়ার ইউ?!! নক না করে আমার কেবিনে ঢুকার সাহস হয় কি করে তোমার?
রাগে গরগর করতে থাকে আকাশ।
– আই এম সরি, স্যার।ভুল হয়ে গেছে।
আসলেই আমি অন্যমনস্ক ভাবেই নক করতে ভুলে গেছি।
– কোথা থেকে এসব জুটেছে কে জানে! এই মেয়ে বাবা-মা ভদ্রতা শেখায়নি? ডেইজি নামের মেয়েটি এগিয়ে এসে বললো।
এই মেয়ের মুখে ভদ্রতার কথা শুনে গা রি রি করছে আমার।আমার ভুল আমাকে আরও কিছু বললেও মেনে নিতাম, কিন্তু আমার বাবা-মাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারি না।
– এক্সকিউজ মি মেম, আমার ভুল হয়েছে আমি স্বীকার করছি।কিন্তু তাই বলে আপনি আমার মা- বাবাকে তুলে কথা বলতে পারেন না।আর ভদ্রতা কাকে শেখাতে হবে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি!
– ইউ ইডিয়ট!
ডেইজি আমাকে চড় মারার জন্য হাত তুলতেই ওর হাত ধরে ফেলি।
– Don’t dare you! এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে দেই।আমার ব্যবহার ডেইজি বোকা হয়ে গেছে। ভাবতেও পারেনি এমন টা করতে পারবো।
আকাশ এতো সময় শুনছিলো।এবার এগিয়ে আসে –
‘ এই মেয়ে তোমার তো খুব সাহস দেখছি!’
– স্যার আপনার মিটিং এর ফাইল রেডি।এক্সকিউজ মি!
ফাইল টা ডেস্কে রেখে আমি বেরিয়ে আসি।
মাস খানেক কেটে যায়। ডেইজি আমার পেছনে লেগেই আছে। আমি সতর্ক থাকি যাতে আমার ভুল ধরতে না পারে।আকাশ সেদিনের পর আমাকে কিছু বলেনি।কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই আমার পোস্ট পরিবর্তন করা হয়।আগে মামার পোস্টে থাকলেও এখন আমি আকাশের পি.এ.।
আকাশের পাশের কেবিন টা আমার।
এদিকে মাসের শেষে অফিসে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়। পার্টি চলাকালীন আমি এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকি।এসবে আমি অভ্যস্ত নই।
হঠাৎ খেয়াল করলাম সকলের মধ্যমণি আকাশ নেই।
কিছুক্ষণ পরেই আকাশের ফোন। একটা জরুরি ফাইল নিয়ে কেবিনে যেতে বলে।
নক করে কেবিনে ঢুকে দেখি আকাশ চেয়ারে নেই।কেবিন টার একপাশে বসার জন্য আলাদা যায়গা আছে। তার পাশের জানালার কাছে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
– স্যার, ফাইল।
– টেবিলে রাখো।
রেখে চলে যাচ্ছি তখন আকাশ পেছন থেকে হাত টেনে ধরে। আমি ভয় পেয়ে ঘুরে দাঁড়াই।আকাশ একদম কাছে চলে এসেছে আমার।
তার চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে গেছে। পার্টিতে ড্রিংকস করেছে অনেক। হাত ছাড়াতে পারছি না।
চলবে….
# পার্ট -১