# রক্ষিতা
# Part- 3
# Writer – Taslima Munni
‘ স্যার, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি!’ পরদিন অফিসে গিয়েই আকাশকে বলে দিলাম।
-That’s like a good girl !! আমি জানতাম তুমি রাজি হবেই।যাইহোক তুমি প্রিপারেশন নাও।আমি আজই তোমাদের বাসায় যাবো।
আকাশের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উপায় নেই আমার। সাইফ-সুমনার পড়াশোনা, মামার চিকিৎসা সব বন্ধ হয়ে যাবে।
আমি জানিও না কেন আকাশ আমাকে বিয়ে করতে চাইছে! কি উদ্দেশ্য তার? আকাশের মতো ক্ষমতাবান কোটিপতি লোক যখন আমার মতো অতি সাধারণ একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তার পিছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। এক-ভালবাসা, দুই- অন্য কোনো উদ্দেশ্য!
এক নাম্বার টা হবার কোনো চান্সই নেই সেটাও আমি ভালো করে জানি। দুই নাম্বার টাই ঠিক।কিন্তু কি উদ্দেশ্য সেটাই বুঝতে পারছি না।
উদ্দেশ্য যাইহোক আমার উদ্দেশ্য ঠিক থাকলেই হবে। আমার শর্তগুলো পূরণ করতে হবে, তবেই বিয়ে করবো।
সন্ধ্যায় আকাশ বাসায় আসে, সাথে অনেক কিছু নিয়ে আসে। সবার জন্য কাপড়-চোপড়,মিষ্টি আরও অনেক কিছু।
মামার জন্য হুইলচেয়ার। মামাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ড্রয়িং রুমে আনা হয়। খুশিতে আমার চোখে পানি চলে আসে।কতদিন মামা বিছানা থেকে উঠেনি। হুইলচেয়ার কেনার মতো অবস্থা ছিলো না,অন্যান্য খরচ চালাতেই হিমসিম খেয়েছি।তার উপর টিউশনি ছেড়ে চাকরিতে ঢুকেছি,কিন্তু সারামাস হাতে কিছুই ছিলো না।
আকাশ মামা-মামীর সাথে কথা বলে। মামার একাউন্টে এখানে বসেই অনেকগুলো টাকা ট্রান্সফার করে দেয়, যাতে মামার চিকিৎসার আর সংসার খরচ ভালো ভাবেই চলে। সাইফ- সুমনার হাতে একটা চেক তুলে দেয় তাদের পড়াশোনা খরচ। মামা আপত্তি করলেও মামীর চোখ রাঙানিতে চুপ হয়ে যায়।
কিন্তু আমার তো কিছু বলার আছে।
– স্যার,অনেক কিছুই তো দিলেন। কিন্তু দুদিন পরে? কে দেখবে সংসার? সাইফের পড়াশোনা শেষ হতে সব মিলিয়ে বছর খানেক লাগবে।ততদিন? ‘
আমি নির্লজ্জের মতো বলে ফেললাম। লজ্জা করে কি হবে? সেইতো উনাদের জন্য বিয়ে করবো, তবে উনাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে কেন নয়?
– কাজল,সে সব তোমাকে ভাবতে হবে না। সাইফের পড়াশোনা শেষ হবার আগ-পর্যন্ত আমি সব দায়িত্ব নিলাম।এই নাও এগ্রিমেন্ট পেপার।
আর ওর পড়া শেষ হলে চাকরি আমি ওকে দিবো।
আকাশ আমার হাতে এগ্রিমেন্ট পেপার তুলে দেয়।
মামার চোখে পানি- স্যার আপনি এতো কিছু করলেন, আবার এগ্রিমেন্ট পেপার কি প্রয়োজন? আপনার উপর আমাদের বিশ্বাস আছে।
– আপনার থাকতে পারে, আপনার ভাগ্নির তো নাও থাকতে পারে।
তো মিস. কাজল আপনার আর কোনো আপত্তি আছে?
– জি না।আর কোনো আপত্তি নেই।
ঠিক হলো দুদিন পরেই বিয়ে,তবে সেটা ঘরোয়া আয়োজনে করতে চায়।মামা-মামী তাতেও রাজি হয়ে গেলেন।ভাবলেন আমাদের খরচ বাড়তে চায় না, তাই এভাবে বিয়ে করতে চাইছেন।
পরদিন আমার গায়ে হলুদ দিলো।আকাশ বিয়ের শাড়ি-গয়নাসহ যাবতীয় জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিলো।
তারপর দিন বিয়ে হয়ে গেলো। কাজি,ইমাম আর আকাশ ছাড়া কেউ আসেনি।আমার পরিবারের কয়েক জন আর আমার কাছের বান্ধবী ইরা ছাড়া কাউকে কিছু বলা হয়নি।
আকাশের বিয়ে অথচ ৫-৬ জন মানুষ ছাড়া কেউ জানলো না!
বিয়ের পর আকাশ আমাকে ওর বাসায় নিয়ে আসে। আমি জানি না আকাশের বাড়ি কেমন। কে কে আছে বাড়িতে। উনার বিয়ের বিষয়ে কেউ কিছু জানে কিনা।জানলে বিয়েতে যায়নি কেন।আর যদি না জানে তবে কিভাবে রিয়েক্ট করবে??
হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।ভাবতে ভাবতে এক বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়ি হর্ন দেয়।গাড়ির হর্নে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ে। বিশাল গেইট খুলে যায় আর গাড়ি ভেতরে ঢুকে। ভেতরে দেখে আমার চোখ কপালে!
এতো বিশাল এরিয়া জুড়ে অনেক বড় দুইটা বাগান। বাগানের দুপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছ- গাছালি। বেশ ভিতরে বাড়িটা যেন রাজ- প্রাসাদ!
আকাশ গাড়ি থেকে নেমে বলে – বেরিয়ে এসো।
আমি ভয়ে ভয়ে বের হয়ে এলাম গাড়ি থেকে। একজন লোক এসে গাড়ি থেকে আকাশের ব্রিফকেস নিয়ে যায়।
বাড়ির ভেতরে ঢুকতে গিয়ে আমার হাত-পা কাঁপছে।
আকাশ দরজায় পা দিতেই সব কাজের লোকেরা দুপাশে ভাগ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যায়।এটা হলরুম না ড্রয়িং রুম! এযে রাজ প্রাসাদ!
একজন ছুটে গিয়ে একটা ট্রেতে করে ঠান্ডা পানি,কয়েক ধরনের জুস নিয়ে আসে।
আকাশ পানির গ্লাস টা নিয়ে শুধু পানি টুকু খায়।
এদিকে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। অথচ কেউ আমাকে পানিও দিলো না!
– এসো আমার সাথে।
আকাশ আমার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
রুমে গিয়েই
চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে এই কান্ড ঘটনায়! বাড়িতে এসেই এতো দিনের জমানো ঝাল আমার উপর ঝাড়লো।
বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে মানুষের। স্বপ্ন দেখে একটা মানুষকে নিজের করে পাওয়ার,একটা মানুষের কাছে নিজেকে সপে দেয়ার! আমি এসবের কিছু করছি না। আমি নিজেকে আকাশের হাতে সপে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে আসিনি।আকাশের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি।এই পৃথিবীতে আমার কাছের বলতে যে মানুষগুলো আছে, তাদের সুখের জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি!
এসব ভাবনা ফেলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটু পরেই আমার জন্য রুমে খাবার আসলো। নানা ধরনের খাবার, অনেকগুলোর নামই জানি না। আমি শুধু একটু পানি খেয়েছি। গলা দিয়ে খাবার আমার নামবে না।
এমন সময় আকাশও এসে দেখে কিছুই খাইনি।
– খাওনি কেন?
– খিদে নেই।
– খিদে না থাকলেও খেতে হবে। না খেয়ে অসুস্থতার বাহানায় অফিস কামাই করা যাবে না!
আমি আগে জানতাম না বিয়ের পর আকাশ চাকরি টা করতে দিবে কিনা,তবে এবার তার কথা শুনে নিশ্চিত হলাম যে চাকরি করতে পারবো।
– খেয়ে নাও।
– খাবার তো আমার ইচ্ছেতে খাবো, সেটাতেও কি আপনার অর্ডার মানতে হবে?
– অবশ্যই হবে। কাগজে এমনটাই লেখা আছে,?
– কিসের কাগজ?
– কাবিননামা! সেখানে কি লেখা আছে জানো না?
চলবে….