রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব:১২

গল্প: #রঙহীন_জীবনের_রঙ
পর্ব ১২
লেখনীতে: #স্বর্ণা_সাহা (রাত)

দিশানী বাড়ি ফিরতেই সুজাতা ওকে কথা শোনাতে আরম্ভ করে দিলো। দিশানীর ফিরতে ফিরতে প্রায় নয়টা সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। বেশ অনেক্ষন কথা হয়েছে দিশানী আর নীলাদ্রির মধ্যে,একসাথে ডিনারও করেছে দুজন। দিশানী ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় সুজাতা দিশানী কে জিজ্ঞাসা করলো,
—এই যে মহারানী, কটা বাজে সে খেয়াল আছে? রাতের রান্নাটা কে করবে শুনি নাকি আজকে পুরো রাত টা আমাদের সকলকে পেটে গামছা বেঁধে কাটাতে হবে?

দিশানী শান্তগলায় সুজাতা কে বললো,
—সেকি মা, আপনারা রাতের রান্না করেননি?

সুজাতা মুখ বেঁকিয়ে বললো,,
—ঢং দেখে বাঁচিনা, বলি রাতের রান্না আমরা করতে যাবো কোন দুঃখে, রান্না তো প্রতিদিন তুমি করো, এখন আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি রাতের রান্না শুরু করো দেখি, কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই খেতে বসে পড়বে।

দিশানী মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
—আপনারা পটের বিবি হয়ে বাড়িতে বসে থাকবেন আর আমি বাইরে থেকে ফিরে রান্না করবো, সেটি তো হয়না মা।রান্না যখন বসানোই হয়নি তখন আজকে আর কষ্ট করে রান্না-বান্না কিছু করতে হবেনা, তাছাড়া আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি তাই আমার আর কোনো টেনশন নেই, এখন আপনারা আপনাদের জন্য কি করবেন সেটা আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

সুজাতা ভ্রু কুঁচকে বললো,,
—বাপ্ রে মুখের কি জোর দেখছি,শোনো বাপু তোমার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আমাদের কিছু আসে যায় না,সে তুমি বাইরে থেকেই খেয়ে এসো নয়তো ভেতর থেকে, আমার কথা হচ্ছে তুমি আমাদের খাবার বানাও তুমিই খাবার বানাবে।

—আমি আপনার বাড়ির চাকর নই আর না আপনি আমার মনিব যে আপনার সব কথা আমাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।

—আমাদের খেয়ে আমাদের পড়ে এতো বড় বড় কথা আসে কোত্থেকে?

—শুধু শুধু এতদিন খাইয়েছেন নাকি? কাজ করিয়ে নিয়ে তার বদলে খাইয়েছেন,ও হ্যাঁ সাথে কুৎসিত ব্যবহার ফ্রি ছিলো।আরে দেখুন শুধু শুধু কথা বাড়ছে, কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে যান, আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।

—————–
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু ওদের টেবিলে কোনো খাবার নেই,দিশানী ঘর থেকে বের হয়ে জল খেতে এসে দেখে সবাই ওভাবে বসে আছে। দিশানী ওদের সামনেই জগ থেকে জল ঢেলে খেয়ে নিলো, তখনি নির্ঝর ওকে জিজ্ঞাসা করলো,
—আমরা কি আজ খালি পেটে থাকবো, খাবার কই?
—সেটা আমি কি করে জানবো?
—কেনো তোমার জানার কথা না এটা?
—না,এটা তোমার মা আর বোনের জানার কথা, কারণ আমি বাইরে গেছিলাম আমার দেরি হচ্ছে দেখে তো তাদের উচিত ছিলো রান্নাটা বসানো কিন্তু তারা দুজনের একজনও এই কাজটা করেনি, এখন না খেয়ে থাকো, কি আর করবে তাছাড়া?

নির্ঝর দিশানীর চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগলো,,
—এই, তোর সাহস হয় কি করে আমার মা-বোন কে কাজ করতে বলার, আর রান্না তো প্রতিদিন তুই করিস তাহলে ওরা আজ কেনো করতে যাবে, তুই বাইরে থেকে খেয়ে আসবি সেজন্য কি আমাদের খালিপেটে থাকতে হবে?

দিশানী নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে নির্ঝরকে ধাক্কা দিলো।দিশানীর চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে, ও নির্ঝরের কলার টেনে ধরে বললো,,
—আমাকে দেখে কি কাজের লোক মনে হয় তোমাদের?যে আমি সবসময় তোমাদের ফায়ফরমাস খাটবো,কাজের লোকদের সাথেও বোধহয় কেউ এমন ব্যবহার করেনা যেরকম ব্যবহার তোমরা আমার সাথে করো,অনেক সহ্য করেছি তোমাদের অত্যাচার আর সহ্য করবো না, এই তিনমাস আমার কাছে একটা গোল্ডেন চান্স, এটাকে আমি অবশ্যই কাজে লাগাবো, তোমাদের এই তিনমাসে শিক্ষা দিয়ে দেবো, আর মিস্টার নির্ঝর আপনার কথা তো আমি ছেড়েই দিলাম, আপনি তো সবসময় মা-বোনের কথায় বসেন আর ওঠেন, নিজের বিবেক-বিবেচনা বলতে তো আপনার কিচ্ছুটি নেই, তাই আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা।

এসব বলে দিশানী ওখান থেকে চলে গেলো। আর বাকি সবাই দিশানীর ব্যবহারে অবাক হয়ে গেলো, দিশানীর শশুরমশাই বললেন,,
—অবশেষে লেবু চিপতে চিপতে তেতো হয়েই গেলো।
কথাটা বলে তিনি ওখান থেকে উঠে গেলেন।

——————–
সকালবেলা,,
দিশানী রান্না ঘরে যেতেই সুজাতা আজকের রান্নার মেন্যু বলতে শুরু করে তখনি দিশানী সুজাতাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
—আমি এখন থেকে আমার ইচ্ছামতো রান্না করবো, আপনাদের অর্ডার অনুযায়ী রান্না করতে গেলে আমি নিজের জন্য একটুও সময় পাই না, আমার উচিত নিজেকে সময় দেওয়া।আর আপনি এখন একটা কাজ করুন, ঘরগুলো ময়লা হয়ে আছে গিয়ে পরিষ্কার করুন।

সুজাতা দিশানীর কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,,
—আমি? আমি ঘর পরিষ্কার করবো?

—কেনো আপনি কি কানে শুনতে পাননা, আমি তো আপনাকে সেটাই বললাম। যান কাজগুলো চট করে, করে ফেলুন নাহলে কিন্তু আজকে ওই ঘর আর পরিষ্কার হবে না।

—আচ্ছা করছি।

—এইতো গুড গার্ল, যান।

সুজাতা ঘর পরিষ্কার করতে গেলো।

—————
অপরপাশ থেকে নিরা বৌদি বৌদি করে চিৎকার করছে।দিশানী নিরার ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করলো,,
—কি হয়েছে তোমার এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো?
—কি? তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি ষাঁড় বললে?
—আমি আবার এভাবে কখন বললাম আমি তো জাস্ট কথার কথা বলেছি, তুমি তো সত্যি সত্যিই নিজেকে ষাঁড় ভাবতে শুরু করে দিলে দেখছি।
—আচ্ছা বাদ দাও, আমার গ্রিন-টি কোথায়?
—আজকে আমি গ্রিন-টি বানাইনি।
—কেনো?তুমি জানো না আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রিন-টি খাই।
—জানি তো, না জানার কি আছে।
—তাহলে বানাও নি কেনো?
—এই বাড়িতে একমাত্র তুমিই গ্রিন-টি খাও, তাছাড়া অন্য সবাই চা খায় শুধুমাত্র তোমার জন্য আলাদা করে আমি গ্রিন টি বানাতে পারবো না
— বানাতে পারবে না মানে তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমি সকালে গ্রিন টি খাব না?

দিশানি মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
“সে কি,তা কেন হতে যাবে গ্রিন টি খাবেনা কেন, অবশ্যই খাবে কিন্তু নিজে বানিয়ে খাবে”

নীরা অবাক হয়ে বলল,
—কি নিজে বানিয়ে খাবো!

—হ্যাঁ নিজে বানিয়ে খাবে।একটু তো স্বনির্ভর হও আর কত অন্যের ঘাড়ে বসে বসে খাবে?

নীরা দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল,
—কালকে ডক্টর নীলাদ্রির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে তাই না?নয়তো এত জোর তোমার মধ্যে আসার কথা না।উনার সাথে কি এতো কাজ তোমার?ওনার থেকে দূরে থাকবে,বুঝেছ?

দিশানী হাততালি দিয়ে বলল,
“থ্যাংক ইউ মনে করে দেয়ার জন্য!আসলে আমি ভুলে গেছিলাম ডক্টর নীলাদ্রি তোমাকে সাবধান করতে বলেছে, তুমি যেন ওর পেছনে না লাগো তাই।

নিরা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“ডক্টর নীলাদ্রি সত্যি এই কথা বলেছে নাকি তুমি বানিয়ে বলছো?”

—বালাইষাট!বানিয়ে বলতে যাব কেন?উনি আমাকে যা বলতে বলেছে আমি তোমাকে তাই বলেছি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here