#রুপালির_রূপ
#সাইয়্যেদাতুন_নেছা_আফনান
পর্ব:২+৩
– দেখুন, এভাবে তাকিয়ে না থেকে বিদায় হন। নাকি টাকা পয়সা কিছু লাগবে? আমি দয়ালু মেয়ে দশটাকার কচকচ নোট দিবো।
রাদ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
– আমি রাদ শেখ। আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। চলছে বললে ভুল হবে, বিয়ে ঠিক হয়েছে। আপনি শপিংয়ে আসেন নি দেখে খোঁজ নিতে এসেছি।
রুপালি তব্দা কন্ঠে বললো,
– এই একমিনিট, আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে? তাহলে আমার মা যে বললো এক বুড়ো দাদুর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে?
রাদ বোকা চোখে তাকিয়ে বললো,
– বাইরে দাঁড় করিয়ে কথা বলতে চান?
রুপালি মাথা নেড়ে ভিতরে আসতে বললো।
সোফায় বসে রুপালি বললো,
– সেদিন যারা এসেছিল তারা আপনার কি হয়?
– আমার মা আর বোন।
– তাহলে আপনার বলন বললো কেন দাদার সাথে বেশ বানাবে?
– ভাইয়ের আরেক নাম কি?
– দাদা।
– তাহলে প্রশ্ন করছেন কেন?
রুপালি সোফায় হেলান দিয়ে বললো,
– যাক্ বাবা, এ জন্মে বেঁচে গেলাম।
রাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– কি থেকে বাঁচলেন?
– এই যে বুড়ো লোককে বিয়ে করা থেকে বেঁচে গেলাম।
রাদ মুচকি হেসে বলে,
– আমাকে এক গ্লাস পানি দিবেন?
রুপালি জিভে দাঁত কেটে বলে,
– ইশ, একদম খেয়াল নেই। আপনি বসুন আমি আনছি।
রুপালির এমন চটপটে ভাব দেখে রাদ হাসে। রুপালি এক গ্লাস পানি নিয়ে হাজির হয়। রাদের হাতে গ্লাসটা নিয়ে আবারো ফিরে যায় কিচেনে।
হাতে 7up, চিপস আর আইসক্রিমের কৌটা নিয়ে ফেরে। রাদের দিকে এগিয়ে বলে,
– এখান থেকে খান আর আমার সাথে বসে কার্টুন দেখেন।
রাদ তব্দা দিয়ে তাকিয়ে থাকে রুপালির দিকে, বলে,
– আপনি এখনো কার্টুন দেখেন?
– হ্যাঁ, দেখি, আমি আমার বাচ্চা-কাচ্চার সাথে বসেও কার্টুন দেখবো, আপনার কোনো সমস্যা?
রাদ মাথা নাড়ায়। রুপালির সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো টিভি দেখায় মশগুল। তবে রাদের দৃষ্টি থমকে গিয়েছে #রুপালির_রূপে।
———-
সবার শপিং প্রায় শেষের দিকে। লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে দেখে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে সবাই।
খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে সবাই। তখন মিসেস রেহানার ফোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রুপালি বলে,
– মা, যেই লোকের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছো সেই লোক আমাদের বাসায়, এখন দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে, কিন্তু আমি টিভি দেখায় এতটাই মগ্ন ছিলাম সেটা মনে ছিল না। এখন রান্না কখন করবো আর খাবে কখন? তারচেয়ে তুমি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু অর্ডার দিয়ে পাঠিয়ে দাও না!
মিসেস রেহানা হা হয়ে গেলেন। রাদ তাহলে এখান থেকে তাদের বাসায় গিয়েছে! সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে রুপালিকে আশ্বাস দিলেন খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
বাকিদের যখন তিনি জানান রাদ এখান থেকে তাদের বাসায় গিয়েছেন তখন সবার মুখ মিসেস রেহানার মতো হা হয়ে যায়।
——–
রাদ বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়,দুপুরের সময় হয়েছে। ক্ষুধার্ত বেশ। এরই মধ্যে রুপালি এসে রাদকে বসতে বলে। কলিংবেল বেজে উঠতেই রুপালি দরজা খোলে। খাবারগুলো নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। রাদের নিকট এসে বলে,
– স্যরি, আমি খেয়াল করি নি দুপুরের খাবারে সময় হয়েছে। আম্মুকে বলার পরে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন এগুলো কি এভাবেই খাবেন নাকি প্লেট নিয়ে আসবো?
রুপালির বোকা কথায় রাদ হাসে। বাস্তবতা রুপালি বোঝেই না, নয়তো হবু স্বামীকে কেউ প্রশ্ন করে প্লেটে খাবে নাকি এভাবেই প্যাকেটে খাবে!
রাদ মাথা নেড়ে বললো,
– দরকার নেই, প্যাকেটেই খাবো। আপনি পানি নিয়ে আসুন। রুপালি পানি নিতে যায়। রাদ প্যাকেট খুলে সব খাবার টি-টেবিলে রাখে। রুপালির পানির সাথে দু’টো প্লেটও নিয়ে আসে। রাদ কথা না বাড়িয়ে খাবার নেয়। রুপালিও নিজের খাবার প্লেটে নিতে নিতে বলে,
– আমাদের বাসায় কখনো খাবার সার্ভ করা লাগে না, যার যেটা লাগে নিজ থেকে নিয়ে নেয়। আশাকরি আপনার তাতে অসুবিধা হবে না।
রাদ রুপালির দিকে তাকিয়ে বলে,
– সেটা আপনার বাসার ব্যাপার। আপনার বাসায় আপনার নিয়ম চলবে, আমার বাসায় আমার নিয়ম।
– ছেলেদের আবার বাসা আছে নাকি?
– সারাজীবন শুনলাম মেয়েদের বাসা নেই এখন আপনি বলছেন ছেলেদের বাসা নেই!
– একজন মেয়ে বিহীন বাসাটাকে বাসা না গোয়ালঘর বলে।
রাদ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রুপালির দিকে। রুপালির এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নিজের মতো খাচ্ছে।
———
খাবার শেষে সবাই নিজ নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
মিসেস রেহানা কলিংবেল দেন। রুপালি হাতে প্লেট নিয়ে দরজা খোলে। মিসেস রেহানাকে দেখে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,
– তোমাদের ঠিক করা বুড়ো লোককে নিয়ে খাবার খাচ্ছি।
– তুমি মনেহয় রাদকে পছন্দ করো নি? তাহলে রাদের দাদুকেই পাত্র বানাই কি বলো?
মিসেস রেহানার টিটকারি কথায় রুপালি চুপসে যায়।
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে রাদকে খেতে দেখে মিসেস রেহানা বলে,
– রুপালি তুই ছেলেটাকে কি ডাইনিংয়ে নিয়ে যেতে পারিস নি? এত বড় অলস তুই!
– আমি কি করেছি? উনি তো বলে নি এখানে বসে খাবে না! হুহহ।
রাদ অপ্রস্তুত হেসে বলে,
– মা, সমস্যা নেই। আমার খাওয়া শেষ। আজ তাহলে আসি?
– সে কি! বিশ্রাম করো। সবে খেয়ে উঠলে, বিশ্রাম করো পরে যেও।
রাদেরও শরীর ক্লান্ত লাগছিলো তাই নিষেধ না করে গেস্টরুমে এসে শুয়ে পরে।
———
রুপালি রুমে এসে ভাবতে থাকে আসলেই বিয়েটা করবে কীনা! এত দ্রুত বিয়েটা করে নিজেকে বন্দিনী করার কোনো ইচ্ছা নেই। তবে এখান থেকে পার পাওয়ারও কোনো রাস্তা নেই। মাথাটা ভিষণ ধরেছে। ভাবছে একবার রাদের সাথে এই বিষয়ে আলাপ করবে। কারণ সে চাইলেই বিয়েটা ভাঙতে পারে।
আসরের আজান দিয়েছে সবেমাত্র। নামাজে বের হবে সবাই, সেখান থেকেই রাদ চলে যাবে। রুপালি সুযোগ বুঝে রাদের নিকট এসে বলে,
‘ আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে, আগামী কাল আব্বাকে ফোন দিয়ে আমাকে ডেকে নিবেন’
রাদের মাথার উপর থেকে গেল কথাগুলো। কথা বলবে বলেই তো আজ এখানে এসেছিলো অথচ এত সময়ে কিছু না বলে কাল বলতে চাইছে! কি চলছে রুপালির মনে সেটাই বুঝলো না রাদ। চিন্তিত মনে চলে গেল।
রুমে এসে রুপালি ভাবছে আসলেই কাল রাদকে বিয়ে ভাঙার বিষয়টা বলা উচিত কীনা। অতঃপর ভাবলো কেন সে এই বিষয়ে নিজের বন্ধদের পরামর্শ গ্রহণ করছে না! দ্রুতই গ্রুপকলে ফোন দিলো।
কল রিসিভ করতেই রুপালির বেস্ট ফ্রেন্ড বললো,
– কীরে রুপা তোর তো কোনো খবরই নেই।
– দোস্ত একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে।
পিয়াসা হেসে বলে,
– দোস্ত তোর কাছে আবার কোনো সমস্যা এসে বসে থাকে? এমনটা তো কখনো হয় নি।
– এখন হয়েছে। আব্বা আমার বিয়ে ঠিক করেছে কিন্তু আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না আবার ছেলেটাকেও পছন্দ হয়েছে। কি করি বল তো?
– আরে চিল কর চিল, এই বয়সে বিয়ে কীসের?
– কিন্তু বাসায় বানাবো কীভাবে?
– চল, সবাই মিলে ছেলেটার পা ভেঙে দিয়ে আসি, তাহলেও তো বিয়েটা পিছিয়ে যাবে, সেই সুযোগে নাহয় কিছু একটা রিজন বের করবো।
– উম্মাহ দোস্ত।
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে ফোন বিচ্ছিন্ন করে বারান্দায় আসে। হঠাৎ ফোনের ব্যাকপার্টটা একটু মোটা মনে হওয়ায় ব্যাকপার্ট খুলে দেখে একটা কাগজ। চিরকুটটা মেলে পড়তে থাকে,
‘ এলোমেলো চোখ যায় রুপালি চাঁদে,
সে যখন মিস্টি করে একটু হাসে,
বকবকানির থাকে না কথা এঁটে,
ফেঁসেছি আমি রুপালি চাঁদের রূপে।
চলবে,
রুপালির_রূপ
সাইয়্যেদাতুন_নেছা_আফনান
পর্ব-০৩
বারান্দায় আনমনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রুপালি। মিসেস রেহানা রুপালির কাঁধে হাত রাখে। রুপালি চমকে পিছনে তাকায়। মা’কে দেখে ক্ষীণ হাসে। বলে,
– মা, তুমি আমার মনের খবর জানো, তুমি আমাকে সিদ্ধান্ত দাও।
– তুমি আসলে বিয়েটা করতে কেন চাইছো না সেটা বলো!
– মা, আমি এই ছেলেটাকে চিনি না জানি না তাকে কীভাবে বিয়ে করবো বলো?
– শুধু এতটুকু কারণ?
– না, আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না, আমি আমার নিজের মতামতের উপর চলতে পারবো না, মানে আমি পুরোটাই অন্যের অধীন হয়ে চলতে হবে যেটা আমি চাইছি না।
– তুমি যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলে তখন তুমি তোমার ক্যাম্পাস চিনতে না, তবুও তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য না চিনে না জেনে সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকো একসময় মানে বর্তমানে সেটাই তোমার আপন ঠিকানা। তেমনই বিয়েটাও, যার কপাল খারাপ হয় সে কিন্তু ভার্সিটিতে টিকতে পারে না তেমনই কপাল খারাপ হলে সংসারটাও টিকবে না। এখানে যেমন ভার্সিটির কিছু নিয়ম আছে যা না মানলে ভার্সিটি দিয়ে বহিষ্কার করা হয় তেমন বিয়েরও কিছু নিয়ম আছে যা না মানলে বহিষ্কার হতে হবে। ভার্সিটিতে অনেক নিয়মই তোমার পছন্দ না তবে তুমি মানিয়ে নিচ্ছ,এই বিয়ের ক্ষেত্রেও তেমন। এমন বহু উদাহরণ আছে।
রুপালি মায়ের দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকে। ভাবতে থাকে মায়ের বলা কথাগুলো।
———
সকাল বেলা সোরগোলের আওয়াজ শুনে রুপালির ঘুম ভাঙে। ড্রয়িংরুমে আসতেই শোনে রাদের এক্সিডেন্ট হয়েছে। হতভম্ব হয়ে দ্রুত নিজ রুমে এসে ফোনটা হাতে নেয়। মেসেঞ্জারের গ্রুপে এসে দেখে বান্ধবীদের মেসেজ। কপালে হাত দিয়ে মোবাইলটা পাশে রাখে। এই ডেঞ্জারাস বান্ধবীগুলো কীভাবে তার কপালে জুটেছিল!
রুপালি রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। মিসেস রেহানাকে বলে,
– মা, আমাকেও নিবে?
মিসেস রেহানা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
– চলো।
———-
হসপিটালের বেডে পা ঝুলিয়ে শুয়ে আছে রাদ। রাদকে দেখে রুপালির পেটফাটা হাসি আসে, তবে এত মানুষের মধ্যে হাসলে সবাই বেয়াদব বলবে বলবে সাথে মায়’য়ের হাতের মার একটাও নিচে পরবে না। সবাই একে একে বের হয় রুপালি আর রাদকে একান্তে সময় দেয়ার জন্য। সবাই বের হতেই কেবিনের দরজাটা আটকে হেসে ফেলে রুপালি, এই হাসি যেই সেই হাসি না! অট্টহাসি যাকে বলে। রাদ বোকার মতো তাকিয়ে আছে রুপালির দিকে। হঠাৎ দরজা বন্ধ করে এভাবে হাসির কি হলো! রুপালি হাসি থামিয়ে রাদকে বলে,
– জানেন, আমাদের স্কুলের সামনে এক পাগল থাকতো সেই পাগল লুঙ্গি উঠিয়ে এভাবে গাছের উপর পা উঠিয়ে ঘুমাতো। আপনাকে দেখে সেই পাগলের মতো লাগছে।
রাদ মাথা নিচু করে ফেলে। এই মেয়ের মুখে কিছুই আটকায় না। একবার বিয়েটা হোক তখন সেও দেখিয়ে দিবে কত ধানে কত চাল!
রুপালি রাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– এভাবে পা ভাঙলো কীভাবে আপনার?
– আপনি সাঙ্গপাঙ্গ পাঠিয়েছিলেন তারা করেছে এই দশা!
– আমার সাঙ্গপাঙ্গ?
– হুম, কারণ পা ভেঙেছে আর বলেছে বিয়েটা যদি না ভাঙি তাহলে নাকি নাকি জয়েন্টগুলোও ভেঙে দিবে।
রুপালি আবারো হেসে ওঠে। বলে,
– ওরা যে এত দ্রুত কাজ করবে আমি বুঝি নি, ঘুম থেকে উঠে নিষেধ করবো ভেবে ঘুমিয়েছি কিন্তু ওরা আমার ঘুম ভাঙা অবধি অপেক্ষা করে নি।
– আপনি কি সত্যিই বিয়েতে অমত?
– কাল অবধি ছিলাম অমত, তবে এখন আর নেই।
– কেন নেই?
– এই যে, আমার দোষটা জানা থাকলেও গোপন করেছেন সেই কারণে। জানেন তো, বউয়েরা আর কিছু না স্বামীর থেকে মূল্যায়নটা সবার আগে চায়।
রুপালি চলে যায় কেবিন থেকে। রাদ এপাশ ওপাশ করে কিছু খুঁজতে থাকে। ব্যর্থ হয়ে যখন চোখ বন্ধ করে কপালে হাত দেয় তখনই রুপালি ডেকে ওঠে।
– শোনেন, নোট প্যাড আর কলম সাথে আমার মোবাইলটা এখানে রেখে গেলাম। যত্ন করে লিখবেন।
রুপালি এবার আর দাঁড়ায় না, পিছন ফিরেও তাকায় না। তাকালে হয়তো শ্যামপুরুষের প্রেমে পরে যেত।
——–
কেটে গিয়েছে সপ্তাহ। রাদকে বাসায় নেয়া হয়েছে। আজ সবাই সেখানে দেখতে যাবে।
মিসেস রেহানা রুপালিকে ডাকে। আজ রাদদের বাসায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে কবে বিয়ে হবে, এখন এই মূহুর্তে রুপালির মতামত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রুপালি রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। হানিফ সওদাগর রুপালিকে কাছে ডাকে। রুপালিকে কাছে ডেকে বসিয়ে বলে,
– মা, আমি কখনোই তোমার বিরুদ্ধে যাই নি, তোমার মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে কিছুই করি নি। তুমি কি বিয়েতে রাজি?
রুপালি নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তোমরা আমার জন্য সেরাটাই বাছাই করেছো সবসময়, এবারেও তোমাদের উপরই বিশ্বাস করলাম।
হানিফ সওদাগরের মুখে হাসি ফোটে। তিনি তাড়া দেন সবাইকে বের হওয়ার জন্য।
——–
রাদের কেন যেন মন খারাপ। পা ভেঙে ঘরে শুয়ে আছে, রুপালির উপরে বেশ রাগ হচ্ছে। বিয়ে করতল চায় না ভালো কথা, বললেই হতো। শুধু শুধু পা ভেঙে দিলো।
বাসায় হৈচৈ শুনে বুঝতে পারে রুপালিরা এসেছে। তবে কেন যেন রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিতে রুপালিকে।
কেন যেন রাদ নিজের রাগটা দমন করতে পারছিলো না।
রাগ কমাতে পাশের গ্লাসটা ফেলে দিলো। রুপালিও এসেছিল রাদের কাছে। রুমের কাছে এসেই গ্লাস ভাঙার আওয়াজ শুনে দ্রুত রুমে আসে।
রুপালিকে দেখে আগুনে ঘি ঢালার মতো রাদের রাগ বেড়ে যায়। বলে ওঠে,
– কেন এসেছো এখানে? একজন পরপুরুষের রুমে আসতে লজ্জা লাগে না? লাগবে কেন! ঢলাঢলি তো ছেলেদের সাথেই করো। সেসব সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে নিজের কাজও হাসিল করো তাদের কাজও।
আচমকা এরূপ কথায় হতভম্ব হয়ে যায় রুপালি। বলে,
– আপনি কি বলছেন? কাকে বলছেন?
– এই রুমে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই যেহেতু সেখানে আপনাকে ছাড়া আর কাকে বলবো?
রুপালির চোখে অশ্রুরা ভীড় করে। এভাবে অপমানিত কোনোদিন হয় নি। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়।মিসেস রাহি রুপালি বপর হওয়ার পরেই রুমে আসে। রাদকে বলে,
– এগুলো কোন ধরনের ব্যবহার রাদ?
– মা, ওই বেয়াদব মেয়েটা ওর উশৃংখল বন্ধুদের দিয়ে আমার পা ভেঙে দিয়েছে যাতে বিয়েটা না করতে হয়। কত বড় বেয়াদব তুমি বুঝতে পেরেছো?
মিসেস রাহি অবাক হয়ে যায়। রুপালি চঞ্চল এটা ভালো লাগে তবে এরকম বেয়াদবের মতো কাজ করলে কখনোই এই বাড়ির বউ করা যাবে না।
মিসেস রাহি রুম থেকে চলে যান, ড্রয়িংরুমে এসে থমথমে কন্ঠে সবার মধ্যে জিজ্ঞেস করেন,
– রুপালি তুমি জানতে তোমার বন্ধুরা রাদের পা ভাঙবে?
রুপালি মাথা নিচু করে বললো,
– আন্টি আমি জানতাম তবে…..
– থাক্ আর বলতে হবে না। আপা,ভাইয়া আপনারা দয়াকরে খাবার খেয়ে যাবেন। আত্মীয়তা সম্ভব নয়।
সবাই যেমন হুট করেই অসাড় হয়ে গেল। এমনটা হবে বুঝতেই পারে নি। হানিফ সওদাগর মেয়ের দিকে তাকালেন। তিনিও এরকম অপমান কখনোই হন নি। রুপালির দিকে এগিয়ে বললেন,
– আমার আফসোস হচ্ছে তুমি আমার মেয়ে বলে। আফসোস হচ্ছে কেন তোমাকে স্বাধীনতা দিয়েছিলাম!
রুপালি হতভম্ব হয়ে গেল। মিসেস রেহানার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
– মা, তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো না, প্লিজ আমার কথাটা শুনো।
মিসেস রেহানা রুপালির চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,
– শুনবো, বাসায় চলো।
রাইয়ান শেখ নিজের বউমার এরূপ অপমানজনক কথায় মাথা নিচু করে রইলেন। কথা বলার শক্তি যেন নেই তার।
চলবে,
(একটু গঠনমূলক কমেন্ট করলে ভালো লাগে, নাইস,নেক্সট না লিখে গঠনমূলক কমেন্ট করলে খুশি হতাম)