রুপালির রূপ পর্ব -০৬

রুপালির রূপ

সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান

পর্ব:০৬

রাদের রুমে জগ রেখে চলে যেতে নিলে রাদ ডেকে ওঠে। বলে,

– রুপালি বসো। কিছু কথা বলি!

রুপালি কিছু না বলে ঘুরে দাঁড়ায়। রাদ রুপালির নিশ্চুপতা দেখে বলে,

– সেদিন তোমার সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। আসলে হুট করেই কেন যেন রাগ লাগছিল,তাই….!

– ইট’স ওকে।

রুপালি দাঁড়ায় না আর, রাদ রুপালির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।রুপালি ড্রয়িং রুমে এসে মিসেস রাহিকে বলে,

-আন্টি আমি চলে যাবো, টিউশনির টাইম হয়ে গিয়েছে।

– দুপুরের খাবারটা খেও যাও।

– না আন্টি, আমি রোজা রেখেছি। আসি।

রুপালি বেড়িয়ে পরে বাসা থেকে। রাদের উপর একটা শ্রদ্ধা ছিল যেটা শেষ হয়ে গিয়েছে সেদিন। রাদের মায়ের উপর রাগ নেই কারণ মা হয়ে সন্তানের কষ্ট না দেখতে পারাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাদ! সে তো সত্যটা জানতো। তাকে তো বলা হয়েছে সবটা তবুও কেন সেদিন বাজে কথাগুলো বলেছিলো! রোদের তাপটা বেড়েছে অনেক। রিক্সা ডেকে উঠে পরে রিক্সায়। হুট টেনে নেয়। রুপালি রিক্সাওয়ালার দিকে তাকায়। গরমে ঘেমে একাকার,গায়ের শার্ট ভিজে গিয়েছে। হাতগুলো টগবগে লাল। পায়ের প্যান্ডেল টানছে ঠিকই তবে ক্লান্ত দেহ একটু বিশ্রাম চাচ্ছে। রুপালি বলে,

– মামা, একটু সাইডে থামান তো।

– কোনহানে?

– ওই দোকানটার সামনে।

রিক্সাওয়ালা মামা রুপালির কথা অনুযায়ী দোকানের পাশে দাঁড় করায়। রুপালি রিক্সা থেকে নেমে একটা ঠান্ডা পানি আর একটা আইসক্রিমের বক্স কেনে। একটা অন-টাইম চামচ নিয়ে মামার কাছে এসে দাঁড়ায়। মামাকে ছায়ায় আসতে বলে নিজেও ছায়ায় আসে। মামার দিকে ঠান্ডা পানির বোতল এগিয়ে দিতেই ক্লান্ত মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে। রুপালিও হাসে। কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারলে নিজেরও ভালো লাগে।

——–

নাহিদ আহসান অফিস ব্রেকে বাইরে এসেছিল খাবার কিনতে। রোজ রোজ ক্যান্টিনের খাবার ভালো লাগছিলো না। হঠাৎ রুপালিকে দেখে চোখ আটকে যায়। আরো মুগ্ধ হয় রুপালির কাজে। অফিসে ফোন করে হাফ ছুটি নেয়। রুপালিকে ফলো করতে একটা রিক্সাও নেয়। ভর-দুপুরে নাকি পেত্নীর সাথে মোলাকাত হয় কিন্তু নাহিদের ক্ষেত্রে হলো উল্টো! এক হলুদ পরির সাথে দেখা হলো।

হলের গেটে এসে রিক্সা থামে। দু’শো টাকার নোট এগিয়ে দেয় রিক্সাওয়ালার দিকে। মামা খুশি হয়ে তৃপ্তির হাসি হাসে। নাহিদও রিক্সা থেকে নেমে রুপালির দিকে এগিয়ে আসে। বলে,

– আরে আরে শুনোন।

– জি বলুন।

– আঙ্কেল কি বাসা ছেড়ে গিয়েছেন? বাসায় গিয়েছিলাম খোঁজ পাই নি।

– না তো, আমরা তো বাসা চেইঞ্জ করি নি।

– আপনি একটু আপনার বাবাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন।

– আহা, বললাম তো কোথাও যায় নি!

– আপনি বলুন তো কোন বাসায় দেখে এসেছেন তাদের?

– মিরপুর-১ আমাদের বাসা ভাই! খান ভিলার চারতলা আমাদের নিজেদের ফ্লাট ভাই! ওখান থেকে কোথায় যাবো বলুন?

– তোমার বাবার নাম জহির উদ্দিন না? তুমি ময়না না?

– জ্বী না, ভুল ঠিকানায় এসেছেন।

-তাহলে তোমার নাম কি?

– রুপালি।

-স্যরি, বিরক্ত করার জন্য।

রুপালি বিরক্তি নিয়ে ভিতরে চলে গেল।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাহিদ তৃপ্তির হাসি হাসে। সাথে মুখে আওড়ায় ‘রুপালি’!

———-

মিসেস রেহেনা ফোন দেন রুপালিকে। রুপালি ফোন ধরে সালাম দেয়,

– আসসালামু আলাইকুম মা, কেমন আছো?

-ওয়ালাইকুমুস সালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো, জানো আজ কি হয়েছে?

– কি?

– আজ রাহি আন্টি এসেছিলেন আমার কলেজের সামনে।

-কেন?

রুপালি একে একে সব ঘটনা খুলে বলে। মিসেস রেহানাও সবটা বলেন। রুপালির কাছে জানতে চাইলেন,

– কিছু সময় পর হলেও কি রাদকে বিয়ে করবে?

– না মা, আমি আসলেই রাদকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না।

মিসেস রেহানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

– শুধু রাদকে বিয়ে করবে না নাকি বিয়েই করতে চাচ্ছো না?

– বিয়ে করবো। তোমরা পাত্র দেখো।

মিসেস রেহসনা চমকালেন। চমকে বললেন,

– সত্যি?

– হুমম।

মিসেস রেহানা আমতা আমতা করে বললেন,

– রুপালি তোর দা’ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হয়?

– গত কয়েকদিন ধরে হয় নি।

– সে কি আসবে না বাড়িতে?

– তোমরাই তো আসতে নিষেধ করেছো, কি করে আসবে?

– তোর বাবাকে দেখলাম ফাহিমের ঘরে ঢুকে ওর ছবি ধরে কাঁদতে। এরা ভাঙবে তবু মচকাবে না।

– আমি বেশী কিছু বললে আমার সাথেও যোগাযোগ রাখবে না।

– তবুও বলে দেখিস, এভাবে ইগো নিয়ে ক’দিন থাকবে? বুড়ো বাপ-মা মরে গেলে তবে কি ইগো ভাঙবে তোর ভাইয়ের সেটা তাকে জিজ্ঞেস করিস।

মিসেস রেহানা ফোন কেটে দেন। ভাবতে থাকেন নিজের ছেলের দূরে যাওয়ার রহস্য।

——–

মেঘে ঢাকা সকাল ছিল সেদিন। অল্প বৃষ্টিও ছিল। ব্রেকফাস্টের সময়ে সবাই টেবিলে বসা ছিল। হঠাৎ ফাহিমের ফোনে একটা কল আসে। কলটা রিসিভ করে ওপাশের কথা শুনে খাবার টেবিলে রেখেই হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যায়। পিছন থেকে বেশ কয়েকবার হানিফ সওদাগর ডাকেন। তবে ফাহিমের তাড়া এতটাই ছিল যে সেই ডাক উপেক্ষা করেই চলে গিয়েছিল।

ফিরে এসেছিল বিকাল নাগাদ। একা আসে নি সাথে বউ নিয়ে এসেছিল। ভাগ্যক্রমে দরজাটাও সেদিন হানিফ সওদাগর খুলেছিলেন। ফাহিম মাথা নিচু করে ফেলে হানিফ সওদাগরকে দেখে। তিনি বলেন,

– এই জন্য তাড়া নিয়ে বেরিয়ে পরেছিলি?

– আব্বু, ওকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো ওর বাবা।

– ওর বাবার থেকে কি তুই বেশী ভালোবাসিস ওকে?

– আব্বু, বোঝার চেষ্টা করো।

– তুই কতটুকু বুঝেছিস ওর বাবাকে? এই মেয়েটাকে এত কষ্ট করে বড় করেছে সেটাকে ভাগিয়ে নিয়ে এলি সাথে সেই লোকের এত বছরের অর্জিত মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে এসেছিস। তুই আমার ছেলে হওয়ার যোগ্যতাই রাখিস না। যেই বাবার কোল খালি করে নিয়ে এসেছিস সেই বাবার কোলে দিয়ে আয়।

হানিফ সওদাগর সেখান থেকে রুমে ফিরে আসে। মিসেস রেহানা ফাহিমের কাছে গিয়ে বলেন,

– যা, দিয়ে আয়।

ফাহিম মোহনার হাত ধরে নিচে নিয়ে যায়, সবাই ভেবেছিল হয়তো মোহনার বাবার কাছে নিয়ে যাচ্ছে তবে না, ফাহিম মোহনাকে নিয়ে আলাদা ফ্লাটে ওঠে। নিজের ছোট চাকরি নিয়ে সংসার করছে।

হানিফ সওদাগর রেগে ফাহিমের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি। আর ফাহিমও রাখে নি।

চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here