রুপালির রূপ
সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান
পর্ব:০৯
মোহনার থেকে ঠিকানা নিয়ে সেই উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ইকবাল হোসেনের টিম এবং হানিফ সওদাগর।
পুলিশ দেখে দারোয়ান ছুটে পালায়। গেট অতিক্রম করে সামনে যেতেই দেখলো কুকুরের মতো গলায় রশি পেঁচিয়ে বাঁধা ফাহিমকে। হানিফ সওদাগর শব্দ করে কেঁদে দৌড়ে গেলেন ছেলের কাছে। ফাহিম বাবাকে দেখে হতবাক হয়ে গেল। আনন্দে চোখে পানি নিয়ে ডাকলো,
-বাবা!
হানিফ সওদাগর হাঁটু মুড়ে বসে চুমু খান কপালে,গালে। অটো ময়লা লেগে আছে ফাহিমের মুখে। এসব দেখে চোখের অশ্রু বাঁধ মানছে না হানিফ সওদাগরের।
ফাহিমের গলা থেকে রশিটা খুলে জড়িয়ে ধরেন। ইকবাল হোসেন ভিতরের দিকে যেতে নিলে বলে,
– চাচ্চু ওদিকে যেয়ে লাভ নেই, ওরা কেউ নেই সবাই পালিয়েছে।
– টের পেল কীভাবে?
– মোহনা এসেছিল।
ইকবাল হোসেন দাঁত কামড়ে ধরলেন। এই মেয়েটা আসলে চায় কি!
তবুও ফোর্স নিয়ে পুরো বাড়ি সার্চ করে যায় ইকবাল হোসেন। হানিফ সওদাগর ফাহিমকে নিয়ে শপিংমলে যায়, ড্রেস চেইঞ্জ করিয়ে ফ্রেশ করিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়। ভাবতে থাকে এসব যদি মিসেস রেহানা শোনে তাহলে অসুস্থ হয়ে পরবে। আবার এত কিছু লুকিয়ে যাওয়ায় সম্ভব না। একদিন না একদিন ঠিকই শুনবে। তবে আপাতত তাকে না বলার সিদ্ধান্ত নেন।
———
কলিংবেল বেজে ওঠায় দৌড়ে যেয়ে দরজা খোলে রুপালি। দীর্ঘদিন পরে ভাইকে দেখে ঝাপটে ধরে। শরীর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে বলে,
– ভাই, তোর শরীর থেকে এমন বাজে দুর্গন্ধ আসছে কেন? তুই কি আব্বুকে দেখে ড্রেনে ঝাপ দিয়েছিস নাকি?
মিসেস রেহানা এতদিন বাদে ছেলেকে দেখে ঝাপটে পরে। চুমু আঁকে পুরো মুখে। ফাহিম বলে,
– মা, আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই? ক্ষুধাও লেগেছে। এসে খাবো। তোমার হাতের খাবার কতদিন খাই না!
মিসেস রেহানা অভিমানী কন্ঠে বলেন,
-কেন তোকে কি আমরা আসতে নিষেধ করেছিলাম? তোর দোষে তুই খেতে পারিস নি।
ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– আসলেই মা, আমার দোষেই আমি খেতে পারি নি। মাফ করে দিও আমায়।
মিসেস রেহানা দু’হাতে আগলে নেন ফাহিমকে। আবারো চুমু আঁকেন।
ফাহিম রুমে যেতেই মিসেস রেহানা হানিফ সওদাগরকে বলেন,
– ফাহিম কি আবার চলে যাবে? মোহনা আসে নি?
– না, মোহনা কখনোই আসবে না, আর আমাদের ফাহিমও কখনো যাবে না।
– সে-কি কথা! ওদের বিয়ে হয়েছে, ওরা এতদিন একসাথে থেকেছে এখন তোমার সিদ্ধান্তে ওরা আলাদা কেন থাকবে?
হানিফ সওদাগর বুঝলেন ঘটনা পুরোপুরি না বললে এই নিয়ে ফাহিমকে এটা ওটা বলবেন মিসেস রেহানা। তাতে ছেলেটার মনে আঘাত বাড়বে। ক্ষতগুলো তাজা হবে। তাই সবাইকে একত্রিত করে একে একে সব ঘটনা খুলে বলেন। ছেলের উপর এত অত্যাচার হয়েছে শুনে জ্ঞান হারান মিসেস রেহানা।
———
রুমে ঢুকতেই অবাক হয় ফাহিম। রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। কাচা ফুলের ঘ্রাণ নাকে আসছে কড়া। ফাহিম দরজা ভিতর থেকে লক করে দেয়। মোহনার কথা মনে পরছে। কীভাবে পারলো ঠকাতে! কষ্টে,রাগে,জিদে চিৎকার করে ওঠে ফাহিম। ক্লান্ত দেহটা এগিয়ে নিয়ে যায় ওয়াশরুমে। ট্যাপ ছেড়ে নিচে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলে। দীর্ঘদিন পরে কান্নার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারছে না ফাহিম।
শাওয়ার শেষ করে রুমে এসে খাটের দিকে তাকায়। হাত বুলায় বিছানায়। মোহনা বলতো ‘ আমাদের বাসর ঘরটা কাচা ফুলে সাজাতে বলবো ননদীকে।’ ফাহিম উত্তরে বলতো, ‘ তুমিই তো আস্ত কাচা ফুল। তোমার ঘ্রাণটা কাচা ফুলকেও হার মানায়’ মোহনা হেসে বলতো ‘ বোকা এটা পারফিউমের ঘ্রাণ’। ফাহিম মাথা চেপে ধরে। ভাবতে পারছে না কিছু। ভাবতে পারছে না নিজের মানুষটার পুরো দেহে মনে অন্য কারো বিচরণ। অন্য কেউ মাতোয়ারা হয় সেই ঘ্রাণে। মোহনার হৃদয়টায়ও তারই বিচরণ। ফাহিম কেঁদে ওঠে শব্দ করে। কাঁদতে কাঁদতে বসে পরে ফ্লোরে।
দরজায় কড়াঘাত করে রুপালি। ভেতর থেকে ফোপাঁনোর শব্দ পেয়েছে। এদিকে মিসেস রেহানার জ্ঞান ফেরেনি এখনো। তাই ফাহিমকে ডাকতে এসেছিলো।
করাঘাতের শব্দে ফাহিম দরজা খোলে। বোনকে দেখে মৃদু হেসে বলে,
– তুই সাজিয়েছিস?
– হ্যাঁ, আসলে আমরা তো আর জানতাম না এতকিছু ঘটেছে। আমি এক্ষুণি খুলে ফেলছি দাঁড়াও।
ফাহিম আটকায় রুপালিকে। বলে,
– খুলিস না। মা’কে বলে কয়েকদিনের ভিতরে বিয়ে করবো, তখন তোর আর কষ্ট হবে না।
রুপালি ভাইয়ের চোখের দিকে তাকায়। টলটলে চোখ দেখে খারাপ লাগে নিজের কাছে। হঠাৎ করে রাদের মুখ ভেসে ওঠে চোখে। নিজেকে কেমন অগোছালো লাগছে। ফাহিমকে বলে,
– ভাই, মায়ের জ্ঞান ফেরে নি, তুমি দ্রুত পোষাক পাল্টে এদিকে আসো।
ফাহিম দ্রুত পোষাক হাতে নেয়। রুপালি রুমে থেকে চলে যায় নিজের রুমে। হাতে নেয় চিরকুট দু’টো। একটা প্রথম দিনের। দ্বিতীয়টা হসপিটালে বসে লিখেছে। দ্বিতীয়টায় লেখা,
‘ তিল তিল ভালোবাসা গড়ে,
ভাঙে কিছু শব্দে,
বিশ্বাস ভাঙে টুনকো কাজে
গড়তে নেয় শতাব্দী।
বেসেছি,ডুবেছি রূপের জলে,
সে কি জানে!
ক্ষানিক দেখায় মরছি ডুবে
রুপালি কি তা মানে?
————
মিসেস রেহানার জ্ঞান ফিরতেই আহাজারি শুরু করে। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। ফাহিম মা’কে থামানোর অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারে না। হঠাৎ রুপালি বলে ওঠে,
– মা, ভাইয়ের ক্ষুধা লেগেছে, এসো খাবার দাও তাকে।
মিসেসে রেহানা কান্না থামায়, ছেলের হাত ধরে টেবিলে বসায়। রাদ,মাহি এবং মিসেস রাহিকেও বসতে বলে। তবে মিসেস রাহি বসে না, রুপালিকে বসায় সাথে হানিফ সওদাগরকেও বসায়।
সবার খাওয়া শেষে মিসেস রাহি এবং মিসেস রেহানা বসে।
খেতে খেতে মিসেস রেহানা বলে,
– আপা, আজ কিন্তু থেকে যাবেন। কোথাও যাওয়া যাবে না।
– না, আপা, রাত হয়েছে অনেক, বাসায় বাবা একা,যেতে হবে।
– কিছু হবে না। আঙ্কেলের সাথে একটু আগে আপনার ভাই কথা বলেছে আঙ্কেল বলেছে সমস্যা নেই।
– তাছাড়াও ফাহিম এসেছে আজ, আজকে নাহয় আমরা যাই৷ পরে একদিন আসবো।
– কোনো যাওয়া নেই। তাছাড়া কিছুদিন পরে যেখানে আত্মীয় হবো সেখানে এত নার্ভাস হওয়ার কি আছে বলুন?
মিসেস রাহি কিছু বলেন না। জানেন বললেও লাভ হবে না।
চলবে,
(দুঃখিত পাঠক অপেক্ষা করানোর জন্য। আসলে আমার আম্মু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে তাই সকল কাজ আমার উপর আসে। বাচ্চা তারপরে বাসার সকল মাথার উপরে থাকায় পর্ব দিতে দেরী হলো। আশাকরি আমার ব্যাপারটা বুঝবেন। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন আশাকরি)