রুপালির রূপ পর্ব -১০

রুপালির রূপ

সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান

পর্ব:-১০

রুপালি নিজের রুমে এসেছে ক্ষানিক আগে। গেস্টরুমগুলো পরিষ্কার করেছে এতক্ষণ। সব ঠিকমতো করে তবেই রুমে আসলো। রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলো। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ আসলো,

‘রূপ কেমন আছো?’

রুপালি ভ্রু-কুঁচকালো, রুপালিকে কেউ কেউ রুপা কিংবা রুপালিই ডাকে। কিন্তু রাদ ছাড়া কেউ রূপ ডাকে না। তাই ধরেই নেয় রাদ মেসেজ দিয়েছে। রিপ্লায় দেয়,

” কেমন আছি দেখেন নাই এতক্ষণ? মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করা লাগে?”

” তোমাকে আবার আমি কখন দেখলাম?”

” আজব লোক তো আপনি! আমি আপনাকে চিনেছি বুঝেছেন রাদ শেখ!”

” আমি কোনো রাদ শেখ না। আমাকে তুমি চিনবে না।”

” চিনবো না যেহেতু, সেহেতু আপনার মেসেজের রিপ্লাই দেবো কেন?”

” এতক্ষণ যে জন্য দিয়েছো সে জন্য”

” এতক্ষণ তো ভেবেছি আমার পরিচিত কেউ হবে তাই দিয়েছি”

” পরিচিত হয়ে নেবো”

” প্রয়োজন নেই”

রুপালি ব্লক করে দেয়।

অপর প্রান্ত থেকে নাহিদ মুচকি হাসে। কিছুক্ষণ আগেই রুপালির ফোন নাম্বার জোগাড় করেছে। তর সইছিল না রুপালির সাথে কথা বলার! কিন্তু আফসোস কথা বলার আগেই ব্লক! কিন্তু চিন্তার বিষয় হল রাদ শেখ কে? তার সামনে থাকে মানে কি? রুপালির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে! বুকটা কেঁপে ওঠে। মাথা নেড়ে মারিয়া আফরোজের ঘরের দিকে রওনা দেয়।

“মা, রুপালিদের বাসায় যাবে না আর?”

” ওদের তো ফোন নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম। এখন ওরা যদি ফোন না দেয় তাহলে কীভাবে কি বলবো?”

” তুমি ফোন দাও না!”

” তুই কি শুরু করেছিস বল তো?”

” মেয়েটাকে এক নজর দেখেই পাগল হয়ে গিয়েছিস!”

” মা, প্লিজ এভাবে বলো না!”

” তা বুঝি না, আমরা কেউ বাসায় থাকি না তাই তোমার বউকে সংসারের হাল ধরতে হবে সেসব তাকে বলে দিও”

” মা, কি বলছো এসব? সে তোমার একমাত্র পুত্রবধূ হবে তার উপর এরকম শর্ত আরোপ কেন করতে চাচ্ছো?

” তাহলে? তোমার কি ইচ্ছে করবে না বউয়ের হাতে ভাত খেতে? আমার কি ইচ্ছে করবে না পুত্রবধূর হাতে ভাত খেতে?”

” মা, ভুলে যেও না যেসব তুমি আমার বউয়ের উদ্দেশ্যে বলছো সেসব কিন্তু তুমি একটাও পালন করো নি।”

” বিয়ে হয় নি, এখনই বউয়ের গোলাম হয়েছো?”

” মা, চিন্তাধারা পাল্টাও”

” তোমার বিয়ের চিন্তা তুমি করো, ওই বাসায় আমি কখনোই যাবো না।”

নাহিদ নিজের রুমে চলে আসে। মন খারাপ হচ্ছে তার ভিষণ। মা’কে কখনোই দেখে নি এরকম আচরণ করতে। হঠাৎ কেন এমন করছে সে! রুপালিকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে মুখ চেপে ধরে। রাগ ধরে রাখতে না পেরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারে।

———

সকালে উঠে ফাহিম মায়ের রুমে আসে। মিসেস রেহানা কুরআন পড়ছিলেন। ফাহিমকে দেখে বন্ধ করে টেবিলের উপরে রাখেন। ফাহিম এগিয়ে এসে মিসেস রেহানার কোলে মাথা রাখে। মিসেস রেহানা মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। ফাহিমের চোখের কার্ণিশ গড়িয়ে পানি পরে। মিসেস রেহানা ফাহিমের চোখের পানি মুছিয়ে দেন। ফাহিম বলে,

” মা, তুমি মেয়ে দেখো। আমি বিয়ে করবো।”

” তুই অভিমান থেকে বলছিস, একটু সময় নে। মোহনাকে তুই ভুলতে পারিস নি। আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে এনে তার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে না পারলে তার কষ্ট হবে। তার চোখে তুই অপরাধী হবি। তারচেয়ে সময় নে, স্বাভাবিক হ। তারপরে আমি পছন্দ করে বিয়ে করাবো।”

” মা, আমার জীবনে কেউ না আসলে আমি স্বাভাবিক হতে পারবো না। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না, খেতে পারি না, একা সময় কাটালেই কষ্ট হয়। তোমরা চিন্তা করো না, আমি চাকরি খুঁজে নেবো। তোমাদের প্রেশার দিবো না।”

” কি বলছিস বাবা? তোর চাকরির জন্য তোকে বিয়ে করাতে চাইছি না এমন নয়।”

” জানি মা, তবে আমারও ব্যস্ত সময় দরকার। তাহলে এসব থেকে বেরোতে পারবো”

” আচ্ছা, আমি খুঁজবো।”

” মা, আজ তোমার সাথে ব্রেকফাস্ট বানাই?”

” তুই রেস্ট কর”

” ইচ্ছে করে না মা।”

” তাহলে চল।”

———-

সবাই নাস্তার টেবিলে তখন কলিংবেল বেজে ওঠে। রুপালি যেয়ে দরজা খোলে। ইকবাল হোসেনকে দেখে সালাম দেয়। ইকবাল হোসেন ভিতরে এসে বলে,

” ভাইজান, মোহনাকে পেয়েছি৷ ওর বাবাসহ সবাইকেই পেয়েছি। জেলে রেখে এসেছি।”

” কাকা, কোথায় পেলেন?”

ফাহিমের প্রশ্নে ইকবাল হোসেন বলেন,

” পালাতে চাইছিলো শহর থেকে। ট্রেন-স্টেশন থেকে এরেস্ট করেছি”

হানিফ সওদাগর বলেন,

” বস, ব্রেকফাস্ট কর। এরপরে বেড়িয়ে যাই”

ইকবাল হোসেনও বসেন সবার সাথে। ব্রেকফাস্ট সেড়ে রুপালি, ফাহিম, মিসেস রেহানা এবং হানিফ সওদাগর ইকবাল হোসেনের সাথে রওনা দেন। রাদরা চলে যায় তাদের বাসায়।

——–

” চাচ্চু, তোমরা বাইরে যাও, আমি মোহনাকে কিছু বলতে চাই।”

ফাহিমের কথা শুনে সবাই বাইরে আসে। মোহনা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাহিম সামনে এসে দাঁড়ায়। মোহনাকে বলে,

” মোহনা, কেন ধোঁকা দিলে আমায়?”

” আমি তোমাকে ধোঁকা দেই নি। ওরা জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়েছে”

” তাই? তাহলে ওদের উপরে এত দয়া কীভাবে আসলো?”

” ফাহিম তুমি আমাকে বের করো এখান থেকে। আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি। চলো আমরা বিয়ে করে নেই।”

ফাহিমের চোখ গড়িয়ে পানি পরে। মোহনার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিয়ে বলে,

” তোমার কি সত্যিই অনুশোচনা হয় না মোহনা?”

মোহনা মাথা নিচু করে নেয়। সত্যিই সে ফাহিমের উপর জুলুম করেছে। চাইলেই সবাইকে জানিয়ে দিতে পারবো ফাহিম বন্দী ওর বাবার কাছে। কিন্তু বলে নি। কেমন যেন বলতে ইচ্ছে করে নি। মারজানের সাথে সুখে সংসার করেছে। কখনো ফাহিমের কষ্টটা বোঝার চেষ্টাও করে নি। ফাহিমের চোখের দিকে তাকানোর সাহস হয় না মোহনার। ফাহিম বলে,

“তুমি আসলে কখনো আমায় ভালোই বাসো নি মোহনা।”

ফাহিম বেড়িয়ে আসে ভিতর থেকে। চোখের পানিটা মুছে বলে,

” এদের যা ইচ্ছা করো চাচ্চু। আমি এদের চিনিও না জানিও না। ”

ফাহিম বেড়িয়ে যায় থানা থেকে। চোখের অশ্রুগুলো গড়িয়ে পরছে অবাধ্যের মতো। বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। এতগুলো বছর এই মানুষটাকে ভালোবেসেছে অথচ এর ভিতরটা চিনতে পারে নি কখনো! ভিতরটাকে আঁচও করতে পারে নি।

চলবে,

(পাঠক, আপনারাই ঠিক করে দেন রুপালিকে কার সাথে মিল দিবো? আমি আপনাদের কমেন্ট পড়ে হতাশ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here