“রুপের_তরী🍁🌷পর্ব ৬+৭

0
419

পর্ব ৬+৭
#পর্ব_৬
গল্পঃ #রুপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
……..
অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে তরী। তরীর মাথার কাছে বসে আছেন রিশাদ সাহেব। এবং রুমে দু জন সার্ভেন্টও রয়েছে।

তরীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে রূপের জান যায় যায় ভাব। হাতে থাকা জিনিসপত্র টেবিলে রেখে দৌড়ে গিয়ে তরীর পাশে বসে। মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে আছে। রিশাদ সাহেবের দিকে চিন্তিত চেহারায় তাকিয়ে বলে,

–কিভাবে হলো এমন বাবা?

–আমিও জানিনা বাবা। চিত্রা(সেদিনের সেই মধ্যবয়সী মহিলা)তরীর রুমে খাবার দিতে এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে লক।যখন অনেকবার ডাকার পরও তরী দরজা খুললো না চিত্রা আমাদেরকে ডেকে আনে। এরপর দরজা ভেঙ্গে দেখি ও ব্যালকনির দরজার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তারপরই তো তোকে ফোন করলাম।

–কিন্তু এমন কিভাবে হলো?(কান্নামাখা কন্ঠে)

–আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। এমনিতেও রাত। তারওপর ওর এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম রে।

–আচ্ছা তোমরা না হয় এখন যাও। আমিবওকে দেখে নেব।(শান্তভাবে)

–সেটাই বেটার হবে।আমি তাহলে উঠি।

রিশাদ সাহেব ও সার্ভেন্টরা চলে যায়। দরজা বন্ধ করে দিয়ে রূপ এসে তরীর মাথার কাছে বসে। মুখটা কেমন শুকনো লাগছে ওর। হয়তো দূপুরে খায়নি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেই তরী আস্তে আস্তে জেগে ওঠে। এবং উঠেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তরীর কান্নাকাটি দেখে রূপ কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
এভাবে কান্নাকাটি করার কারন জানতে চাইলে তরী আরও জোড়ে কান্না করতে থাকে।।এক পর্যায়ে রূপ ওকে জোড়ে একটা ধমক দেয়। তরী অত জোড়ে ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায়।কিন্তু তখনও আস্তে আস্তে কাঁদতে থাকে। এবার রূপ ওর কাছে এমন হওয়ার কারন জানতে চাইলে তরী বলতে থাকে,

–সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ছাদ থেকে বেডশীট টা নিয়ে রুমে এলাম। এরপর ব্যালকনিতে গিয়ে যেই লাইট দিলাম দেখি ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারে শাড়ি পড়া একটা কংকাল বসে আছে। আর তার মুখে লাল আলো জ্বলছে (কেঁদে কেঁদে)।আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। তারপর আমি দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসার সময় হোচট খেয়ে পড়ে যাই।

তরী যে একটু বোকা তা রূপ জানতো। তবে সে যে এতটা ভীতু তা সে জেনে হা হা করে হাসতে শুরু করে দেয়। ওর হাসি দেখে তরী আবারও কাঁদতে শুরু করে৷ আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে,

–আপনি খুব খারাপ। আমি ভুত দেখে ভয় পেয়ে কাঁদছি আর আপনি হাসছেন?

রূপের হাসির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। হাসতে হাসতে তরীকে বলে,

–ওহহ, ভালো কথা। তাহলে চলুন, আমি আপনাকে ভুতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

–কিহহহহ?(চোখ বড় করে)

–হুম চলুন(তরীর হাত ধরে)

–না না। আপনি পাগল নাকি?আমি এমনিতেও অনেকটা ভয় পেয়েছি। তারওপর আর ওখানে আমি যাবনা।আমি আর ব্যালকনিতে যাবনা (কান্না করে)

–আহা,আমি বলছি তো। ওই ভুতের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ আছে। আপনাকে কিচ্ছু করবে না।

–ভুতেদের সাথে ফ্রেন্ডশিপও করা যায়?আগে জানতাম না তো।

–এখন তো জানলেন?আর ভুতের পরনে একটা শাড়ি ছিল তাইনা?

–(অবাক ভাবে) হ্যাঁ।আপনি কিভাবে…

–ওই শাড়িটা আমিই ওকে গিফ্ট করেছি।

–আপনার মাথা ঠিক আছে?কি আবলতাবল বলছেন?

–আবল তাবল?তাহলে চলুন।সব বুঝতে পারবেন।

তরী যেতে না চাইলেও রূপ ওকে জোড় করে টেনে ব্যালকনিতে নিয়ে যায়। এখনও কংকালটাকে ওখানে বসে থাকতে দেখে কান্না শুরু করে দেয় তরী।

–মিট মাই ফ্রেন্ড কংকাল রানী। এবং কংকাল রানী এটা আমার ওয়াইফ রুপের তরী। সো এখন বলুন কেমন লাগলো আমার ফ্রেন্ডকে?

তরী একবার রূপের দিকে আর একবার কংকালটির দিকে তাকিয়ে কপালে ভাজের রেখা ফেলে বলে,

–তারমানে এটা,..

–জ্বি হ্যা রুপের তরী। এটা কোন ভুত নয়। এটা একটা সাধারন কংকাল। তবে আমার কাছে অসাধারন। এই কংকালটি দিয়েই মেডিকেল কোর্স শেষ করেছি আমি। অতটা স্পেশাল কিছুও নেই। এটা একটা মেয়ে কংকাল। তাই এভাবে শাড়ি পরিয়ে রেখে দিয়েছি। আসলে ব্যালকনিতে একা বসে থাকতে ভালোলাগতো না। তাই এই কংকালটি সাজিয়ে রাখা।

–আচ্ছা আপনার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি নেই?এভাবে একটা কংকাল রেখেছেন। তারওপর এমনভবে সাজিয়েছেন। যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে। আমিও অনেকটা ভয় পেয়েছিলাম। (চেচিয়ে কথাগুলো বলে তরী)

–ওকে ওকে আজ থেকে সরিয়ে দিচ্ছি৷ আর এটা এখানে রাখবো না। এবার হ্যাপি?

তরী রাগে মুখ ফুলিয়ে কিছু না বলেই রুমে চলে যায়।

এরপর রিশাদ সাহেব, রূপ ও তরী একসাথে ডিনার শেষ করে। তরী খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে চলে আসে। রূপ জানে যে তরী রাগ করে আছে। বিছানার মাঝখানে একগাদা বালিশ দিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ে তরী। একটুপর রূপ রুমে আসলে দেখে একদম বাচ্চাদের মত গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে তরী। দরজাটা লাগিয়ে রূপও নিজের জায়গায় গিয়ো শুয়ে পড়ে।

মাঝরাতের দিকে দাত কড়মড় করার আওয়াজে রূপের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এমনিতেও ওর ঘুম অনেক হালকা।

ল্যাম্পের সুইচটা দিয়ে পাশে তাকায় রূপ। দেখে তরী ঠান্ডায় কাপছে। ওর মাথায় হাত দেখে গা গরমে পুরে যাচ্ছে।
রূপ মনে মনে চিন্তা করল,

–পাগলী তাহলে আসলেই অনেক ভয় পেয়েছে। নইলে এত জ্বর আসতো না।

এরপর রূপ উঠে গিয়ে একটা বাটিতে পানি ও নিজের রুমাল নিয়ে আসে। এবং সেগুলো দিয়ে তরীর কপালে জলপট্টি দিতে থাকে। এভাবে সারারাত তরীর মাথার কাছে বসে সব কিছুই করে, জ্বর কমানোর জন্য যা যা করতে হয়।যখন তরীর জ্বর কমে গেলে, একপর্যায়ে তরীর পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে রূপ।

সকালবেলা তরী ঘুম থেকে উঠে দেখে রূপ ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। রূপকে ওভাবে দেখে তরীতা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। রূপ ওকে খারাপ কিছু?

তরী তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে একটা চিৎকার দেয়। তরীর চিতকার শুনে রূপের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে তরীকে জিজ্ঞেস করে,

–আপনি ঠিক আছেন?

–ঠিক আছেন মানে? আপনি আমায়..

–কি আপনাকে?

–আপনাকে তো আমি ভালো মানুষ ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি যে এমন তা জানতাম না। ছি!

–আমি কি করেছি বলবেন তো?(চিন্তিত স্বরে)

–আপনি আমাকে ওভাবে…ছি আমার তো বলতেও লজ্জা লাগছে।

–দেখুন,আপনি হয়ত ভুল কিছু নিয়ে কথা বলছেন।

–আমি নিজের চোখে দেখেছি আর আমিই ভুল বলব?
রূপ বুঝতে পারছেনা কেন তরী এমন করছে। তবে এটা নিয়ে ও শিওর কোন খারাপ কিচ্ছু সে করেনি তরীর সাথে৷। হয়ত তরীর পাশে ঘুমিয়ে যেতে পারে। কারন রাত জাগা হয়েছে কাল।

–দেখুন আপনি আমার থেকে দশ হাত দূরে দূরে থাকবেন।
এসব নিয়ে কোন ঝামেলা না করাই ভালো বলে মনে হয় রূপের। তাই হাসিমুখে জবাব দেয়।

–ঠিক আছে। এখন ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন।আপনার কলেজে আজ প্রথম দিন।

কথাটি বলে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় রূপ। রূপের এমন জবাবের প্রত্যুত্তরে কি বলা উচিত তরীর তা সে জানেনা। তবে ওর কাছে মনে হয় মানুষটা খুবই অদ্ভুত । এখন যেহেতু তরী ওকে বলে দিয়েছে দূরে দূরে থাকতে সেহেতু আর কোন চিন্তা নেই। এখন কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে ওকে।

ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা শেষে রুমে আসে তরী। একটা বেবি পিংক কালারের লং থ্রি পিচ এবং সাদা হিজাব মাথায় আটকে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাইরে আসে তরী। গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে থাকা রূপ কালো জিন্স,হালকা গোলাপি শার্ট পড়েছে। চোখে সানগ্লাস ও হাওয়ায় উড়তে থাকা সিল্কি চুলগুলো, সব মিলিয়ে আজ রূপকে অসাধারন লাগছে দেখতে।

তরী রূপের দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। তরীকে দেখে রুপ একটা মুচকি হাসে । গাড়ির সামনের সিটের দরজাটা খুলে দেয় তরীর জন্য। তরী সেদিকে না গিয়ে পেছনের সিটের দরজা খুলতে থাকে৷। কিন্তু দরজাটা খুলতে অক্ষম হয় সে। তাই উপায় না পেয়ে রূপের পাশের সিটেই বসতে হয় ওকে। মুখ ফুলিয়ে বসে আছে তরী। রূপ সেদিকে একবার খেয়াল করে গাড়ি স্টার্ট করে দেয়।

গাড়িতে কেউ কারও সাথে কথা বলে না।
রূপ এমন একজন যে শুধু তার প্রিয়জনদের সাথেই দু একটা কথা বেশি বলে। নইলে প্রয়োজন ছাড়া সে খুব একটা কথা বলে না। এমনিতে সে খুবই নরম মনের মানুষ। ছেলে হলেও খুবই ইমোশনাল সে। তবে হাসিটা কখনোই যেন ওর চেহারা ছেড়ে যায়না। সবসময় হাসির ছাপ ওর মুখে লেগেই থাকে। হাসিটা ছাড়া যেন ও অসম্পূর্ণ।

কিছুক্ষন পর ওরা কলেজের গেইটের সামনে এসে পৌঁছে । গাড়িটা পার্ক করে দুজনেই নেমে পড়ে গাড়ি থেকে।

কলেজের ভেতরে ঢুকতে গেলে তরীর সাথে সাথে রূপও যায়। এটা দেখে তরী বলে,

–কি ব্যাপার? আপনি কেন আসছেন?

–কেন আবার.আপনার ক্লাসরুম ও বাকিসবকিছু বুঝিয়ে দিই।চলুন

–আমি গ্রামের মেয়ে তবে পড়ালেখা তো জানি তাইনা?আমি নিজেই দেখে ও চিনে নিতে পারবো।

–কিন্তু আপনি..

–কোন কিন্তু না। আপনি যান।

রূপের মুখটা শুকিয়ে যায়। এবং বলে,

–ঠিক আছে।

এটা বলার পর রূপ সেখান থেকে চলে আসে। তরী একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে হাটা দেয়।
….
কলেজটা এতটা বড় ও গোলকধাঁধার মত যে তরী কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। রূপকে যেতে বলে এখন ও নিজেই বিপদে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। কয়েকজন মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানে যায় তরী।

–আসসালামু আলাইকুম আপুরা। আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ?আমি কলেজে আজ নতুন। আমার ক্লাসরুমটা খুজে পাচ্ছিনা। একটু দেখিয়ে দেবেন আমায়?

মেয়েগুলো তরীর দিকে তাকিয়ে একবার পরস্পরের দিকে তাকায়। এবং সবাই মিলে হাসিমুখে বলে,

–হ্যা হ্যা। অবশ্যই। চলো চলো।

বলে তরীকে নিয়ে যায় ক্লাসরুমের দিকে।দোতলার একেবারে শেষের রুমটায় গিয়ে পৌছে ওরা। তরীকে ভেতরে ঢুকতে বলে ওরা চলে যায় সেখান থেকে। তরী ওদের কথামতো ক্লাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু,,,,,,
.

#পর্ব_৭
গল্পঃ #রূপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
……..
পেছন থেকে কেউ তরীর হাত টান দেয়।এতে পড়ে যেতে নিলে কেউ ওকে ধরে ফেলে। যে ব্যাক্তিটি ওকে ধরেছে তার দিকে তরী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।কারন সে রূপ। তরীর চোখের সামনে বা হাত দিয়ে তুড়ি বাজায়,এতে তরী কিছুটা লজ্জা পায় ওভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য।
কিছুটা রেগে রূপকে প্রশ্ন করে,

–এভাবে কেন টান দিলেন?আমার হাতে খুব লেগেছে, ইশশ।

–আপনাকে এখানে কারা নিয়ে এল?(কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে)

–সে কি কথা। এটাতো আমার ক্লাসরুম।কয়েকটা মেয়ে আমায় এখানে দিয়ে গেল। কিন্তু আপনি এখনও যাননি?

–আমি যাবো কি না যাবো আপনাকে ভাবতে হবে না।অ্যান্ড বাই দ্যা ওয়ে আপনার ক্লাসরুম নিচতলার শেষের রুমটা। এটা নয়।

–কি?

–হ্যাঁ।ওই মেয়েগুলো হয়তো আপনার সাথে মজা করেছে।

–হতেও পারে।

রূপ ও তরী রুমটার সামনে দাড়িয়ে কথা বলছিল। একটু পরই রুম থেকে চার পাচজন ছেলে বেরিয়ে যায়। ছেলেগুলোকে দেখে মনে হয় খুব একটা সুবিধের নয়। ওদের রুম থেকে চলে যাওয়া দেখে তরী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তরীর এখন বুঝ আসলো কেন মেয়েগুলো ওকে এখানে রেখে গেছিল। রূপের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে,

–সরি….

–কেন?আমি চলে গেলে ভালো হতো তাইনা?(কিছুটা হাসির ছাপ মুখে নিয়ে)

–দয়া করে ওভাবে বলবেন না। আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিন প্লিজ(হিজাবের ওপর দিয়েই কান ধরে)

–এভাবে বললে করবো না। আমার একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–আমার বন্ধু হতে হবে..।

–ওহহ এই শর্ত। আমি তো রাজি (দাত বের করে হেসে দিয়ে)

তরীই আগে হাত বাড়িয়ে দেয় রূপের দিকে। রূপ আস্তে করে তরীর কোমল হাতটি ধরে। একসাথে ক্লাসের সামনে এসে দাড়ায়। তরী রূপের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বিদায় দিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে পরে।তরী রুমে ঢুকে গেলে রূপও চলে আসে সেখান থেকে।এটা ভেবে সে খুবই খুশি,আর যাই হোক ফ্রেন্ডশিপ তো হলো।

এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে তরীর। কত কথা আজ সকালে ওনাকে শুনালো সে।মনে মনে বলছে, যদি আজ উনি চলে যেতেন তাহলে আমি আর নিজের মাঝে ফিরতে পারতাম না।।।

ক্লাসরুমে ঢোকার পর সে দেখে, তখনকার মেয়েগুলো সামনের সিটগুলো ছেড়ে পেছনে গিয়ে বসে আছে। রাগে ক্ষোভে ওদের সামনে গিয়ে বলতে থাকে,

–আপনারা তো খুব বজ্জাত দেখছি। একটু সাহায্য কি চাইলাম উল্টে আপনারা আমায় বিপদে ফেলতে চাইলেন?

ক্লাসে থাকা সবাই তরীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এবং তরী যে মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বলল তারা তরীকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। যখন মেয়েগুলোর কেউই আর কথা বলল না তরী পেছনে ফিরে চলে আসতে নেয়। সামনে আর যেতে পারেনা ও। একদল ছেলেরা দাড়িয়ে আছে তরীর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে।
ওদের মাঝে একটা ছেলে বলে ওঠে,

–তোমার সাহস তো কম না মেয়ে।আমাদের ক্লাসরুমে এসে আমাদের ফ্রেন্ডকে কথা শোনানো হচ্ছে?

কথাগুলো শুনে তরীর রাগ হয়ে যায়।সাথে সাথে জবাব দেয় সে,

–ওহহ, সাহায্য চাইলে আমাকে ভুলভাল জায়গা দেখাবে আর আমি মনে হয় তার সেবা করবো?যা করেছি বেশ করেছি। পরের বার আমার সাথে এমন কোন মজা করলে আবারও বলবো। হুহ। আসছে কোন নাটের গুরু।

ছেলেগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, পারলে তরীকে চিবিয়ে খায়। কিন্তু কিছু করার আগেই রুমে স্যার ঢুকে পড়ে।তরী তারাতাড়ি সামনে একটা সিটে বসে পড়ে।
মনোযোগ দিয়ে পুরোটা ক্লাস করার পর ক্লাসরুম ছেড়ে চলে আসতে নেয় তরী। তখনি ওই মেয়েগুলো তরীকে চেপে ধরে। ওদের মাঝে একটা মেয়ে বলে ওঠে,

–খুব তো বড় বড় কথা বলছিলি।তোর সাহস কি করে হয় আমাদের মুখের ওপর কথা বলার। জানিস আমি কে?আমার বাবা এই কলেজের ফাউন্ডার। তোর কি হাল করতে পারি তা তোর জানা নেই। এখন চল, চুপচাপ ক্ষমা চা।

তরী কিছু একটা ভেবে মেয়েটিকে সরি বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রূপ ওদের ড্রাইভারকে বলেছিল ও নাও আসতে পারে তরীকে নিতে তাই আগে থেকেই তরীর জন্য গাড়ী এসে রয়েছে।তরী সকাল সকালই বাড়ি ফিরে।
….
সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর বাড়ির ভেতর পুরোটা ফুল দিয়ে সাজানো দেখে রূপ। দেখা যায় রিশাদ সাহেব এসব কিছুর দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন । বাবার কাছে গিয়ে রূপ হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে,

–এসব কি হচ্ছে বাবা?কোন পার্টি বা অন্য কোন ফাংশন?আমি তো জানিনা?

–হুম।আসলে ভাবলাম তরীর আর তোর বিয়েটা তো হলো তাও আবার তুই ছিলি না। আর তোদের বিয়েটা পড়ানোও বাকি ছিল। তাই আরকি আজ ভাবলাম বাকি কাজটা সেরে ফেলি।

–কিন্তু বাবা তুমি তো চেয়েছিলে বিষয়টা পরে করতে, তাহলে হঠাৎ আজ?

–পরে কি হবে না হবে তার তো কোন কিছুই বুঝতে পারিনা তাইনা?তাই ভাবছি জলদি জলদি সব সেরে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

–হুম ঠিক। কিন্তু তরী জানে?

–আরে ওই..

–কি? (ভ্রু কুচকে রিশাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে)

–আরে ও তো জানেনা। তবে তুই বল।সেটাই বেটার হবে।

–ওকে।

এই বলে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায় রূপ। দরজায় নক করার পর ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,
–জ্বি আসুন আপনার পছন্দের গল্প পড়তে গল্পের লিংক story link( ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প) গ্রুপে জয়েন করুন এবং পেইজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন

রুমে ঢুকে রূপ তরীকে বিছানায় বসে বই পড়া অবস্থায় পায়।
–আজ কি ফুচকা আনেন নি?

–সরি সরি (জিহ্বার মাথায় কামড় দিয়ে)।একদম ভুলে গেছি। তবে হ্যা কাল শিওর নিয়ে আসবো। ও হ্যা, নতুনকলেজ কেমন লাগলো?আর কলেজ থেকে কখন এসেছেন?

–হুম অনেক ভালো লাগলো। আর বাড়ি ফিরেছি সে তো অনেক আগেই।

–হুম বুঝলাম। আজ বাড়িতে কি হচ্ছে তা কি জানেন?

–কই না তো?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রূপের দিকে চেয়ে)কিছুই তো জানিনা।
রূপ এদিক ওদিক চোখ উল্টিয়ে সরাসরি বলে তরীকে,

–আজ আমার আর আপনার বিয়ে।
তরী অবাক হয়ে বলে,

–বিয়ে?

–হ্যা। আমাদের বিয়ে পড়ানো হবে আজকে।

–ওহহ।

এটুকু বলে আবারও চুপচাপ নিজের বই পড়ায় মন দিল তরী। রূপ তরীর এমন রিয়্যকশনে অবাক। কারন ও ভেবেছিল তরী হয়তো আরও কিছু বলবে। কিন্তু নাহ আর একটা কথাও না বলে স্বাভাবিকভাবে বই পড়ে যাচ্ছে সে। রূপ অতশত না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে।
..
রাত আটটার দিকে বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী এসে চৌধুরী ম্যানশনে পৌঁছালো।

হালকা কিছু লোকজনজনের সমাগম হলো বাড়িতে।

সাদা শার্টের ওপর কালো কোট ও কালো প্যান্টে রূপকে দারুন লাগছে। নিজেকে পার্ফেক্ট লাগছে কিনা তা আয়নায় দেখছে রূপ। এর মাঝে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো তরী। লাল এবং কালোর মিশ্রনে একটা শাড়ী ও মাথায় কালো রংয়ের হিজাবে। বেরিয়ে এসেই রূপের দিকে হা করে তাকিয়ে বলছে সে,

–আপনিও কালো পড়েছেন?বাহ।

–ওহহ,,হোয়াট অ্যা কো-ইনসিডেন্স।

–হুম আমিও তো তাই ভাবছি।

–আচ্ছা ভাবাভাবির পর্ব শেষ করুন। চলুন নিচে চলুন। নইলে বাবা আপনাকে কিছু না বললেও আমায় আস্ত রাখবেনা।

–ঠিকআছে চলুন।

বিয়ের বাকি কাজ ভালোভাবেই শেষ হয়ে যায়। এরপর খাওয়াদাওয়া হালকা গল্পগুজব করে সবাই চলে যান।
নিজের রুমে এসে জামাকাপড় চেইন্জ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়ে রূপ। আজ অনেকটাই ক্লান্ত সে। রূপকে দেখে তরী বলে,

–এই যে,আপনি তো আমার জায়গা নিয়েই শুয়ে পড়লেন।

ঘুম ঘুম কন্ঠে আস্তে রূপ বলে,

–আজ আর সেকশন আলাদা না করি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আপনি প্লিজ আজকের মতো অ্যাডজাস্ট করুন।কাল থেকে না হয় বর্ডার দিয়েই শুবো।

তরী আর কিছু না বলে চেইন্জ করে নেয়। এরপর বিছানার সামনে সোফায় গিয়ে নিজের ক্লাসের একটা বই খুলে বসে পড়ে।কিছুসময়ের মাঝেই রূপ গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে যায়।

বইয়ের পাতার ওপর থেকে চোখ তুলে রূপের দিকে তাকায় তরী। একটা মুচকি হেসে বইটা বন্ধ করে ধীর পায়ে রূপের মাথার কাছে গিয়ে বসে সে। ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করার পর সে দেখলো আসলেই রূপ গভীর ঘুমে। এবার সে তার ডান হাতটা রূপের মাথার চুলে ডুবিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে হাত বুলোতে থাকে রূপের মাথায়। আর মনে মনে হাজারও কথা বলতে থাকে সে,

—আপনি আমাকে যে বোকা বলেন,আপনি তো নিজেই বোকা। কিচ্ছু বোঝেন না। অবশ্য বোঝার মত আমি তেমন কিছুই করিও নি। আপনি যে কেমন তা আমি প্রথম দিনই বুঝে গেছি। কিন্তু আমি কেমন তা আপনি হয়তো এখনও বোঝেন নি। আমার অতটাও যোগ্যতা নেই যে আমি আপনার ওপর নিজের রাগ ক্ষোভ উজার করবো। আমি নিতান্তই একটা ছোট পরিবারের মেয়ে। আপনার মত ছেলের সাথে বিয়ে হবে তা আমি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। জানেন,আপনি যতটা সুন্দর দেখতে, তার থেকে হাজারও গুন সুন্দর আপনার মন মানসিকতা ও আপনি। আপনাকে যতটা দেখি ততটাই অবাক হই।আচ্ছা আপনার ঠোঁটে সবসময় ওই হৃদয় কাড়ানো হাসি কিভাবে থাকে বলবেন আমায়?আপনার হাসিটা যে দেখার জন্য আমি লুকিয়ে লুকিয়ে আপনার দিকে চেয়ে থাকি । জানেন কাল রাতে একটু রাগ হয়েছিল আপনার ওপর। আপনি যে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন তা আমি টের পেয়েছিলাম। তবে আমার রাগ এই কারনে হয়েছিল যে, সারারাত আমার জন্য আপনি অত কষ্ট কেন করলেন?আমায় একটিবার ডাকতেও তো পারতেন?তাই তো আপনার সাথে সকালে অমনটা করেছিলা। সেটার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। দয়া করে মাফ করে দেবেন। আজ অবশ্য বিয়ে পড়ানোর বিষয়টা আমিই বাবাকে বলেছিলাম।ভাবলাম বিয়ে তো বিয়েই, বাকি কেন থাকবে?আর হ্যা, ইচ্ছে করেই শাড়িটা আপনার সাথে ম্যাচিং করে পড়েছিলাম। আপনাকে আমি হয়ত এসব কিছু মুখ ফুটে কখনো বলতে পারবো না। তবে আপনি যেদিন আপনার মনের কথাগুলো আমায় বলবেন, সেদিন এমনিই বুঝে যাবেন সবকিছু।
আমার তো এটাই মনে হয়, আপনি আমার জীবনে পাওয়া সেই উপহার যা সারাজীবন ধরে আমার ঠোঁটে হাসি ফোটাতে পারবে।

আপনি বলেন না,আমার রুপের জন্য আপনি আমায় ডাকেন রুপের তরী। কিন্তু আমিতো নিজেকে আপনার তরী বলে ভাবি। #রূপের_তরী🍁🌷।
.
.
#চলবে___
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here