“রূপের_তরী🍁🌷পর্ব ৮+৯

পর্ব ৮+৯
#পর্ব_৮
গল্পঃ #রূপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
……..
পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তরীকে সোফায় শুয়ে থাকতে দেখে রূপ। একদম বাচ্চাদের মত গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে সে। বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে তরীর মুখ বরাবর বসে পড়ে। এক দৃষ্টিতে তরীর দিকে চেয়ে থাকে সে।

তরী হালকা নড়েচড়ে উঠলে হুড়মুড় করে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায় বাথরুমে। বাথরুমে গিয়েই দরজা আটকে দেয় সে।

এদিকে তরী হেসেই চলেছে। আসলে ও না ঘুমিয়ে এসবই লক্ষ করছিল।ঘুম থেকে উঠার ভান করে বাথরুমের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে সে। ভেতর থেকে রূপ আওয়াজ দিয়ে বলে,

–ওহ আপনি উঠে পড়েছেন?একটু অপেক্ষা করুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তরী দুষ্টু দুষ্টু হাসি দিচ্ছে।একটুপর রূপ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলে তরী জিজ্ঞেস করে,

–আপনি কখন উঠলেন?বললেন না তো কিছু।

–এইতো মাত্রই উঠলাম। (হাই তুলতে তুলতে)

–ওহহ,

রূপ পাশ কাটিয়ে চলে আসে,মনে মনে ভাবে ইশশশ রে ধরা পড়ে গেলে তো আজ আবার বকুনি শুনতে হতো। অন্যদিকে তরী ভাবছে, ধ্যাত আমি কেন ঘুমানোর ভান করে থাকলাম,যদি উনি থাকতেই চোখ খুলতাম তাহলে আর কাউকে কিছু বোঝাতে হত না।

খাওয়ার টেবিলে রিশাদ সাহেব তরীকে জিজ্ঞেস করলো,

–তরী!

–হ্যা বাবা,

–কলেজে কাল কোন সমস্যা হয়েছিল।

তরী ভাবছে কিছু বলবে কিনা, তার আগেই রিশাদ সাহেব আবারও বলে উঠলো,

–সমস্যা হলেও চিন্তা করোনা। আমি কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে কথা বলেছি। কেউ তোমায় কিছু বলবেনা।

–ঠিক আছে বাবা।

এর মাঝে রূপ বলে ওঠে,

–বাবা আমরা ভাবছিলাম ওদের বাড়ি থেকে দু’তিন দিনের জন্য ঘুরে আসি।আমিও তো যাইনি, আর এমনিতেও বিয়ের পরে নাকি কি সব রিচুয়াল থাকে।

–হ্যা সেটাও ভালোই হয়। তরী? যাবে মা?

বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে তরী খুশি হবে নাকি বেজার হবে ভেবে পাচ্ছেনা। কারন তরী খুশি হলেও ও বাড়ির কেউই তরীকে দেখে খুশি হবেনা।
–ঠিকআছে বাবা।

–তাহলে রূপ, কবে যেতে চাস?

–আজ দুপুরের আগেই রওনা দেই,কারন অনেকটা পথ যেহেতু যেতে হবে।

–ওকে,তাহলে তরী,,তোমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু প্যাক করে ফেল।

–জ্বি।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুমে আসে তরী।বিছানায় মন খারাপ করে বসে থাকা দেখে রূপ এসে ওর সামনে বসে।
–এই যে রুপের তরী,আপসেট কেন?

–নিশ্চুপ

–আমায় বলতে পারেন।
তরী রূপের চোখের দিকে তাকালে রূপ ওর চোখে জল দেখতে পায়। কিছুটা চিন্তার স্বরে বলে,

–কি হয়েছে আপনার?চোখে জল কেন?

–আপনি তো জানেনই আমার মা বাবা বোন…।আমাকে বিদয় করা নিয়ে সবাই অনেক চিন্তায় ছিল। এখন যদি আবার আমি ওই বাড়িতে পা রাখি, হয়তো ওরা আপনাকেও।

রূপ খানিক হেসে দিয়ে তরীর হাতদুটো ধরে বলে,

–আচ্ছা এই ব্যাপার?আপনার এই ধারনাটাই যদি আমি ভুল প্রমান করি তো?,

–মানে?(করুন চোখে)

–মানে না হয় পরেই বুঝবেন।এখন চলুন, জিনিসপত্র প্যাক করে নিন।

সকাল এগারোটা নাগাদ ওরা রওনা দেয় লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে।
রাত ন’টার দিকে ওরা গিয়ে বাড়ি পৌছে। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে তরীর সৎ মা ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়।ওকে ধরে কতরকম আদুরে কথবার্তা বলতে থাকে। তরী এসব দেখে রূপের দওকে তাকায়। রূপ খানিকটা মুচকি হাসি দেয়। তরীও ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। রূপকে সাদরে স্বাগতম জানায় ওর সৎমা।রাতে সবাই মিলে হাসি ঠাট্টা ও নানানরকম গল্প গুজব করে।

আগামিকাল ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বাড়িতে ছোটখাটো একটা খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে।।।
পরদিন সকালে একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে তরী। হাত মুখ ধোয়ার জন্য গোসলখানার দিকে এগোতে নিলেই পেছনের বারান্দা থেকে একটা মেয়ের হাসির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। হাসির আওয়াজটা ওর কাছে অচেনা লাগেনা। তাই পেছনের বারান্দার সামনে গিয়ে দাড়ায় তরী। এবং সেখানে হাসতে থাকা মেয়েটিকে দেখে তরীর মাথা ঘুরে যায়।

–সুইটি?তুই কবে এলি?

চিন্তিত মুখে তরী প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেয়েটিকে,

–কেন রে?আমি এসেছি বলে কি ভয় পাচ্ছিস?তোর জামাইয়ের সাথেও যদি হাসিঠাট্টা করি এই ভয়ে,(বলেই একটা ডেভিল হাসি দেয় সে)

সুইটি আসলে তরীর সৎ মায়ের বোনের মেয়ে।
তরী ও সুইটি সমবয়সী হলেও সুইটি একটু অভদ্র টাইপের মেয়ে। বলতে গেলে ছেলেদের সাথে ওর ফ্লার্ট করাটা অভ্যাস। এই সুত্রে, তরী ভয় পাচ্ছে রূপের সাথে যদি ও আবলতাবল কিছু..।

–নাহ নাহ, তা কেন ভাবতে যাব?এমনিই। অনেকদিন পর দেখলাম তো তাই। (করুন কন্ঠে)

–ওহহ,তা তোর জামাইকে তো দেখলাম না। এখনও ঘুমোচ্ছে নাকি?(চোখ মেরে)

–এ্যাহ,হ্যা হ্যা। ঘুমোচ্ছে। আচ্ছা আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি কেমন?

তরী জলদি ওখান থেকে চলে আসে। এবং ওর ঘরের দিকে পা বাড়ায় । ঘুরে ঢুকে দেখে রূপ বিছানায় বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মাত্রই ঘুম ভাঙ্গল ওর। রূপের কাছে গিয়ে তরী জিজ্ঞেস করে,

–আচ্ছা আপনি তো ফ্রেশ হননি তাইনা?চলুন, একসাথে যাই আমিও ফ্রেশ হইনি।

–একসাথে?!!!!(অবাক হয়ে)

–হ্যা,চলুন না।

তরীর হঠাৎ করে কি হল তা রূপ বুঝতে পারলোনা। তবে ও এটা ভাবছে তরী আর যাই হোক আজ প্রথম নিজের ইচ্ছেই ওর হাত ধরেছে।

………
খাওয়াদাওয়ার আয়োজন চলছে জোরদার। অনেকেই এসেছে তরীদের চেনাজানা৷ তরীও হালকা ব্যাস্ত৷ সৎ মাকে সাহায্য করছে সে। অবশ্য এখন সৎ মা বললে ভুল হবে, কারন উনি একদম নিজের মায়ের মত ব্যবহার করছেন তরীর সাথে। একটা প্লেটে কয়েক রকমের মিস্টি সাজিয়ে তরীর হাতে ধরিয়ে দেন উনি। এবং বলেন,

–জামাই সে কখন সকালে খেয়েছে। যা গিয়ে দিয়ে আয়।কি মনে করবে দ্যাখ। আমিও তো ভুলেই গেছিলেম।

তরী হাসিমুখে প্লেটটা নিয়ে ঘরে ঢোকে। কিন্তু সেখানে পায়না রূপকে। না পেয়ে এদিক ওদিক খুজতে থাকে তরী। এরপর বাড়ির পেছনের পুকুরপাড়ে যায় সে।
সেখানে একটা চরাট পাতা আছে।
চরাটের ওপর রূপ…….
.
.
#পর্ব_৯
গল্পঃ #রূপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
………….
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পুকুরপাড়ের পাশে বানানো চরাটের ওপর চোখ রেখে আছে তরী।

রূপের পাশে বসে মাঝে মাঝে গায়ে হাত দিয়ে কথা বলছে সুইটি।পাশে অবশ্য মিলিও আছে। তবে ওর ধান্দা এসবের মাঝে নেই। রূপের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে অনেকটা বিরক্ত, তাও সুইটি জোর করে ওকে ধরে রেখেছে। ওদের পেছন গিয়ে দাড়িয়ে খুক খুক করে কেশে ওঠে তরী। পেছন ফিরে তাকিয়ে তরীকে দেখতে পেয়ে অনেকটা স্বস্তি পায় রূপ। সুইটির চেহারা তখন দেখার মত হয়েছিল।অনেকটা বিরক্তি নিয়েই সুইটি বলে,

–তুই এখন এখানে কি করছিস তরী?

–কেন? এসে কি তোর খুব সমস্যা হয়ে গেল?

–না নাহ, সমস্যা কেন হবে।

–তাহলে এক কাজ কর,মিলিকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে যা,মা তোদের ডাকছে।

–পরে যাব, বাদ দে তো।

–বলছিনা ডাকছে?(রাগীসুরে)যা বলছি।
সুইটি মুখ ভাঙিয়ে দিয়ে মিলিকে নিয়ে চলে গেল। রূপ তরীর হাত ধরে চরাটে বসিয়ে বলে,

–বাচালেন রুপের তরী। না হলে যে ওর কবলে পড়ে,আমিও পুকুরে ঝাপ দিতাম একটু হলেই। আর আমি সাঁতারও জানিনা।

–হয়েছে,এখন এগুলো খেয়ে নিন।(মিস্টির প্লেটটি এগিয়ে দিয়ে।

–এত্তগুলো মিস্টি আমি একা খাব?

–তা নয়তো কি?আর এমনিতেও এতগুলো কোথায়?মাত্র তো উমম(প্লেটে থাকা মিস্টিগুলো গুনতে গুনতে)বারোটার মত মিস্টি রয়েছে।

–না আমি একা খাবনা।সাথে আপনিও খাবেন কেমন?

দুজনে মিলে পুকুরপাড়ে বসে গল্পগুজব করতে থাকে।
বিকেলের দিকে ওরা সবাই নদীর তীরে বেড়াতে যায়।সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরলে সবাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।তরী রূপকে রুমে গিয়ে ঘুমোতে দেখার পর নিজে হাতমুখ ধুতে যায়। এই সময়ের মাঝে সুইটি তরীর রুমে ঢোকে। এবং রূপকে শোয়া অবস্থায় গিয়ে জড়িয়ে ধরে। রূপ হালকা চোখ খুলে যখন দেখতে পায় সুইটি ওকে জড়িয়ে আছে তখন ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।

–প্লিজ রূপ, আমায় নিজের করে নিন।আমি আপনাকে তরীর চেয়েও বেশি ভালোবাসবো। আপনাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি যে।

–সুইটি!ডোন্ট ক্রস ইয়োর লিমিট। তুমি আমার বোনের মত। এত নোংড়া ধারনাও মাথায় কিভাবে নিয়ে আসলে?

–আমায় ভুল বুঝোনা প্লিজ।নিশ্চয়ই ওই তরী তোমার কাছে আমার নামে খারাপ কথা বলেছে। দেখো রূপ ওর কথায় বিশ্বাস করো না। ও তো অনেক খারাপ একটা মেয়ে। তুমি আমায় বিয়ে করে নাও (আকুতির স্বরে)

এসব কথার পরই একটা থাপ্পড়ের আওয়াজ শোনা যায়। রূপ সামনে তাকাতেই দেখে সুইটি গাল ধরে দাড়িয়ে আছে,এবং পাশেই অগ্নিচক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তরী। তরী বলতে শুরু করে,

–আমি কল্পনাও করতে পারিনি তুই এতটা নিচে নামতে পারবি কখনো ছিঃ!। বোনের স্বামীর সাথে এমন নোংড়ামি করতে তোর একটুও মনে বাধলো না?তোকে তো আজ উচিত শিক্ষা দিতে হবে। চল খালার কাছে।তোর সব কুকৃত্তির কথা বলবো।

সুইটি এখন বাচার আর কোন উপায় না পেয়ে তরীর পা চেপে ধরে।

–তরী বোন আমার, ভুল হয়ে গেছে৷ এবারের মত মাফ করে দে..তোর পায়ে ধরি।প্লিজ আমায় মাফ করে দে। আমি আর জীবনে কারও সাথে এমন কিছু করবোনা।

–তোকে তো শাস্তি দিতেই হবে। না হলে তুই কখনো শুধরাবি না।

–তরী প্লিজ এভাবে বলিস না।আমি কথা দিচ্ছি তোকে আমি আর কখনো এমন করবোনা। আমায় ক্ষমা করে দে বোন।।।প্লিজ।। (কেঁদে কেঁদে)

–তরী, ও যখন বলছে মাফ করে দিন।আমার মনে হয় বাড়ির কাউকে এ ব্যাপারে না বলাটাই ভালো হবে। বললে সবাই এমনিতেই নানান রকম চিন্তা করবেন।

তরী রূপের কথামতো সুইটিকে যেতে দেয়। রূপের সাথে আর কোন কথা না বলে হাত মুখ মুছে বিছানার এককোনে শুয়ে পড়ে। রূপ তরীর সাথে কথা বলার জন্য দু একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাইলেও তরী কোন জবাব দেয় না।
পরদিন সকাল সকাল ওরা ঢাকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।
মধ্যম গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে রূপ। তরী জানালার বাইরে মুখ দিয়ে বসে আছে। ওদের দুজনেই অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করছে। তবে ওদের চিন্তাটা একই বিষয় নিয়েই। তবে ওরা কেউই জানেনা।
তরী ভাবছে,লজ্জা হোক আর যাই হোক ওনাকে আমার মনের কথা সবকিছু খুলে বলব। উনি তো আমারই স্বামী। ওনাকে এসব বলবোনাতে কাকে বলবো?এমনিতেও স্বামী স্ত্রী কখনো এমন দূরে দূরে থাকে? আজ বাড়ি ফিরে সবকিছু বলব ওনাকে। উনি কিছু বলুক আর না বলুক, তাতে কি আসে যায়?যদি আমাকে ভালোনা বাসে তাহলে ওনার ঘার ভালোবাসবে। দেখ যাবে সবকিছু।
এসব ভেবেই তরী একবার রূপের দিকে তাকায়। দেখে রূপ সামনের দিকে তাকিয়ে মনযোগ সহকারে ড্রাইভ করছে। যেন এটাই ওর ইমপরট্যান্ট কাজ।
তরী মনে মনে ভাবছে,
“ইশশ দেখোনা কি ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। পাশে যে বউ বসে আছে তার দিকে খেয়াল নেই। নিজে তো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা, আবার আমায়ও কিছু জিজ্ঞেস করেনা। আরে আমায় জিজ্ঞেস করলে তো আমিই বলে দেই সব। হুহ।”

তরী তো আর যানেনা যে রূপও ওরই মত একই চিন্তায় মগ্ন। সেও এসব কথাই ভাবছে। অনেক হয়েছে। এখন তরীকে মনখুলে ভালোবাসি বলতেই হবে।।।।
তরীর দিকে একনজর তাকিয়ে বলে ওঠে, তরী!
রূপের গলার আওয়াজটা তরীর কাছে নতুন নয়। তবে এখন তরীকে রূপ যেভাবে ডাকল সেই গলার স্বরটা তরীর কাছে অনেকটা নতুন।এই আওয়াজটায় একটা আবেগ মেশানো আছে,কিছু অনুভুতি জড়ানো আছে, অনেকটা ভালোবাসা মোড়ানো আছে।
তরী রূপের দিকে নরমভাবে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
“জ্বি বলুন”
“তরী একটা কথা বলবো?রাগ করবেনা তো?”
রূপের মুখে তুমি শোনাটা তরীর কাছে যেন হৃদয়ে শীতল বাতাস বয়ে যাওয়ার মত মনে হলো। উৎসুক দৃষ্টিতে রূপের চোখে দিকে তাকিয়ে বলল সে,
“রাগ করবো কেন?আপনি বলুন”
“…….”
কথাটি বলার আগেই রাস্তার উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ওদের গাড়িটিকে হিট করে। রূপ ও তরীর গাড়িটি ট্রাকের ধাক্কায় উল্টোতে উল্টোতে রাস্তার পাশের বড় বটগাছটির সাথে গিয়ে ধাক্কা লেগে থেমে যায়, গাড়ির ভেতরে থাকা রূপ ও তরী রক্তাক্ত…….””””””

ক্লাসের ঘন্টা বেজে ওঠার পর সকল স্টুডেন্টরা বাস্তব জগতে ফিরে আসে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কার্ডিয়াক বিভাগের লেকচারার ডা.শাহরোজ আদ্রিয়ান সকল স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলেন,
“সরি গাইস,নাও ক্লাস আওয়ার ইজ ওভার। আই হ্যাভ টু গো। আজ কিছুই পড়ানো হলোনা শুধু তোমাদের সবার মন রাখতে। এবার আমার মন রাখতে একটা কাজ করবে সবাই, নেক্সট টার্মের জন্য ভালোভাবে প্রেপারেশন নাও। যেহেতু টার্মের আগে এটাই লাস্ট ক্লাস।”

ওনার কথার মাঝেই, স্টুডেন্টদের মাঝ থেকে সবচাইতে ব্রিলিয়ান্ট তবে ইমোশনাল একজন স্টুডেন্ট জান্নাতুল মাওয়া আরশ জলে ভেজানো চোখে বলে উঠলো,

–স্যার এরপর রূপ ও তরীর কি হলো?

বা হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলটি দ্বারা ভ্রু চুলকে আদ্রিয়ান বললো,

–আরশ, আগের টার্মে তোমার রেজাল্টটা অনেকটা লো ছিল। সো এখন এসবকিছুর মাঝে না থেকে পড়াশুনায় মন দাও। আই থিংক ইউ হ্যাভ টু বি মোর অ্যাটেনটিভ অন ইওর লেসনস।

সো তাহলে আজকে এ পর্যন্তই, তোমরা সবাই ভালো থেকো। এবং ভালোভাবে টার্মটি শেষ করো। আবার দেখ হবে কয়েক মাস পরে। আল্লাহ হাফেজ।

কথাগুলো শেষ হতেই ডা.আদ্রিয়ান থার্ড ইয়ার মেডিকেল স্টুডেন্টদের ক্লাসরুম ত্যাগ করলেন। ওদিকে আরশ আদ্রিয়ানের ঝারি খেয়ে চুপচাপ বসে আছে।
–ওই হারামি,স্যার যখন টার্মের বিষয়ে বলছিল, তুই লাফালাফি করে আবার লাভ স্টোরি সম্পর্কে কেন জানতে চাইলি?তুই সবসময় নিজের দোষেই স্যারের কাছে ঝারি খাস।

তানিয়ার কথায় সম্মতি জানিয়ে আরশ উত্তর দিল,

–তো কি করব বল?তুই তো জানিস আমি কতটা ইমোশনাল। তার ওপর স্যার আজ ওই ইমোশনাল লাভস্টোরি শোনালেন। তাহলে কি আর চুপ করে থাকা যায় বল?কি সুন্দর লাভ স্টোরি রূপের তরী, আহা, নামটাতেই কেমন গা শিরশির করে ওঠে।

–ধ্যাত বাদ দে তো।ওসব লাভ স্টোরির চক্রে পড়লে টার্মে আর পাস করতে হবে না। তখন আদ্রিয়ান স্যার তোমায় ভালোমত সোজা করবে বলে রাখলাম। এমনিতেই আগের রেজাল্টের জন্য তোর ওপর রেগে আছেন উনি।

–ধু ভাল্লাগে না। এত স্টুডেন্ট থাকতে উনি কেন আমার পেছনে লাগেন বলতো?

তানিয়া আরশের কাধে বাড়ি মেরে বলে,

–বলেছিলাম না?কিছু আছে.(মুখ পাকিয়ে)

–একটা মারবো। চল হোস্টেলে। আজ তোকে আমি সোজা করবো। বেশি পাকা হয়ে গেছিস।

দূজন বেস্ট ফ্রেন্ড দুস্টুমি করতে করতে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে হোস্টেলের উদ্দেশ্য হাটতে থাকে।
এদিকে ক্লাসরুমের নীরবতায় পরে থাকে রূপ ও তরীর অসমাপ্ত কাহিনিটা। 🍁

নাহ, এ কাহিনি যে অসমাপ্ত হওয়ার নয়। আরও কিছুদুর যে যেতে হবে। আরও কয়েক পৃষ্টা উল্টোতে হবে স্মৃতির পাতা থেকে। তবেইনা পূর্ন হবে রূপ ও তরীর গল্প। কারন গল্পটি যে ওদেরই,গল্পটি তো….
#রূপের_তরী🍁🌷
.
.
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here