“রুপের_তরী🍁🌷পর্ব ৪+৫

পর্ব ৪+৫
#পর্ব_৪
গল্পঃ #রুপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
…….
কারও নরম ঠোঁটের আলতো স্পর্শ কপালে সহ গালে ও হাতে অনুভূত হতে লাগলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে রূপ।ঘুম ভাঙলে দেখতে পায় তরী ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।
তরীর মুখটা রূপের মুখের সাথে একদম লেগে আছে। রূপের কিছুটা হাসি পায় তরীকে এভাবে দেখে। মেয়েটা যে আসলেই পাগলী।তারপর ভাবে, হয়ত বোনকেও এমনভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোয়।
তরীকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে সুন্দর করে নিজের জায়গায় শুইয়ে দেয়। চুলগুলো না থাকায় একদমই বাচ্চাদের মত লাগছে তরীকে দেখতে৷ রূপ চাইছে তরীর কপালে ভালেবাসার পরশ একে দিতে। কিন্তু সে এমন কিছুই করলো না।
আবারও নিজের জায়গায় গিয়ে তরীর দিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো।

বিছানার দু পাশেই বিশাল বিশাল কাঁচের জানালা।

কাচের জানালা ভেদ করে চাদের রূপালি আলো তরীর মূখে এসে পড়ছে। এতে ওর মুখটা দেখতে আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে। রূপ সেদিকে তাকিয়ে ভাবনার সাগরে ডুব দিল।

রূপের বাবা মা ভালোবেসেই খুব কম বয়সে বিয়ে করেছিল।তখন দুজনেই মেডিকেল স্টুডেন্ট। আসলে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার কারনটাও বড় ছিল। রূপের মা প্রেনেন্ট ছিলেন। রিশাদ চৌধুরী (রূপের বাবা) ওর মাকে ঠকাতে চেয়েছিলেন না বলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেন।কয়েকমাস যাওয়ার পর রূপ জন্ম নেয়। তবে রূপের মা নিজের ক্যারিয়ার ঠিক করার লক্ষ্য রূপের বাবার সাথে ঝামেলা করেন।

এরপর রিশাদ চৌধুরীর অনিচ্ছা সত্তেও দুজনের আলাদা হয়ে যেতে হয়। রূপের মা চাননি রূপকে নিতে। তাই রূপ তার বাবার কাছেই বড় হতে থাকে। রিশাদ চৌধুরী নিজের ছেলেকে ও ক্যারিয়ার দূটোই সমানভাবে পরিচালনা করতে থাকে।এক পর্যায়ে এসে উনি সুখের মুখ দেখেন।আস্তে আস্তে রিশাদ চৌধুরী একজন বড় ডক্টর হয়ে সাফল্য অর্জন করেন। রূপের মা আফসোস করলেও আর কোন ভাবেই রিশাদ চৌধুরীকে মানাতে পারেন না।

নিজের ছেলে ও কাজ নিয়ে সবসময় বিজি থাকতেন তিনি।

রুপ ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়ের মত প্রচুর মেধাবী।তাইতো এখন সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করতে পারছে।

মায়ের শূন্যতা রিশাদ চৌধুরী কখনোই উপলব্ধি করতে দেন নি রূপকে। রূপও কখনো মায়ের কাছে যেতে চায়নি। ওর কাছে ওর বাবাই সব।

সেদিন পানিতে তরীকে ডুবতে দেখে রিশাদ চৌধুরীই উদ্ধার করেন। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মায়া ও স্নেহের অনুভূতি জাগে। তাই চার পাঁচ দিন ধরে ওর সব খবরাখবর নিয়ে সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। উনি ইচ্ছে করেই টাকাগুলো এনেছিলেন যাতে, তরীকে নিজের বাড়ির বউ বানানোয় কোন শংশয় না থাকে। এবং এ শংশয় কেটে গেল যখন রেজিস্ট্রি পেপারে তরী সাইন করলো।

(একটা জিনিস ক্লিয়ার করি,বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে কনের স্বাক্ষর তার বাবা করলে যেমন বিয়ে হবে,তেমনি ছেলের বাবা ছেলের হয়ে স্বাক্ষর করলেও বিয়ে হবে,এটা অনেকের কাছেই গোলমাল লেগেছে।তাই বলে দিলাম)
….
ভাবনার ঘোরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল রূপ তার ঠিক নেই। মুখে পানির ছিটা পড়ায় চোখ টিপে টিপে ঘুম ভাঙ্গল ওর। ব্যাপারটা কিছুটা বিরক্তির হলেও সেটাই আবার তরীকে দেখে ভালেলাগায় পরিনত হলো।
হাসি মুখে তরীর দিকে চেয়ে মুচকি হেসে দিয়ে বলল,

–সকাল সকাল পানি ছিটিয়ে ঘুম ভাঙ্গাচ্ছেন যে?আপনার হাত দিয়ে কি ডাকতে পারলেন না?

রূপের হাসি দেখে তরীর কেমন অবাক লাগে। কি অদ্ভুত মানুষটা। সবসময় শুধু হাসে। কাল রাত থেকে একটা কথাও কি না হেসে বলেছে?

রূপ হাতের তুড়ি বাজিয়ে বলল,

–কি হলো?কোন রাজ্য ভাসলেন রূপের তরী?

–এ্য? না না আসলে ভাবলাম আপনাকে ছুয়ে কিভাবে ডাকবো মানে?(মাথা নিচু করে)

রূপ এবার জোড়ে জোড়ে হেসেই চলেছে। তরী ভাবছে পাগল হয়ে গেল নাকি লোকটা?।

রূপ হাসতে হাসতে পেট ধরে শ্বাস নিতে থাকে। আর হাপানো গলায় বলে,

–আপনি আমায় হাসিয়েই মারবেন দেখছি। ওহ মোর খোদা,তুমি কি শুনছো?রুপের তরী কি বলছে?আমায় নাকি হাত দিয়ে ছুয়ে ডেকে দিতে লজ্জা। হা হা হা(হাসতে থাকে)

–কেন?আমি কি করলাম?

–কাল রাতে আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছেন আর এখন বলছেন কি করলাম?(তরীর দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে)

তরী কাল রাতে এমন কিছুরই ভয়ে ছিল। বাড়িতে থাকাকালীন মিলিকে প্রায়ই এমন জরিয়ে ধরে ঘুমোতো সে। কিন্তু কাল রাতে?ছি ছি, এ কি কাজ করেছে সে?ভাবতেই কেমন লাগছে ওর ।

–লজ্জা পাবেন না। কবুল না বললেও লিগ্যালি হাসবেন্ড ওয়াইফ আমরা। সো..

তরী আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। আর যাই হোক কাল রাতে কাজটা একদমই ঠিক হয়নি। তরী ভেবেছিল রূপ ওকে কিছু করবে তবে উল্টে ও নিজেই এমন কান্ড করে বসে আছে।

বেসিনের আয়নায় মুখটা দেখছে সে। আচ্ছা এই রুপের কারনে কি এত কিছু?সবাই তাহলে রুপের পাগল। মনের ভেতর টা কেউই দেখল না।

ওয়াশরুমের দরজায় নক করার আওয়াজ হলে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে দেয় তরী।

অমনি রূপ হাসিমুখে বলে,

–আপনার হয়ে গেলে নিচে চলে যান। ব্রেকফাস্ট এর জন্য বাবাও বসে আছেন।আনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তরী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলে রূপ ভেতরে ঢোকে। একটা জিনিস তরীর খুব ভালো লাগছে। রূপের চেহারায় সবসময় হাসিটা বজায় থাকে।
যেন হাসিটা ওর মুখের জন্যই তৈরী।

মাথাটা বেবি পিংক হিজাবে আটকে নিচে চলে যায় তরী। বিশাল আকারের ডাইনিং টেবিলের এক প্রান্তে বসে আছেন রিশাদ চৌধুরী।

তরীকে আসতে দেখে বললেন,

–এখানে বসো তরী। (সামনের চেয়ারটি দেখিয়ে)

তরীও বাধ্য মেয়ের মত বসে পরে।সাথে সাথে একজন সার্ভেন্ট এসে তরীর সামনে থাকা প্লেটে ব্রেকফাস্ট দিয়ে যায়।

রিশাদ চৌধুরী আবারও বলেন,

–তোমার সাথে আমার পরিচয়টা হয়নি। কিন্তু আমার মনে হয় রূপ জানিয়েছে আমি কে। আমি তোমার শশুড়।তবে তোমার যা ভালোলাগে তাই বলেই আমায় ডাকতে পারো।যেমন ধরো,বাবা,আব্বু,আব্বা(বলেই হালকা হেসে দেন)।

তরীও ওনার কথায় খানিক হেসে ওঠে।

–আচ্ছা তরী মা, তেমায় একটা কথা বলার ছিল।।
তরী ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

–জ্বি বাবা বলুন?

–কাল থেকে তুমি কলেজ যাবে। আমি তোমার যাবতীয় পড়াশুনার ব্যাপারে এখানকার একটা কলেজ ঠিক করেছি।কাল থেকে তুমি সেখানে যাবে।

কলেজ।কথাটি শুনে মন আনন্দে নেচে ওঠে তরীর। এখন তো নিজের শশুরকে মাথায় তুলে নাচতে ইচ্ছে করছ ওর। আর যাই হোক পড়াশুনা ও করতে পারবে৷ এটাই যথেষ্ট।

–কিন্তু বাবা, আমায় কে নিয়ে যাবে। মানে আমি তো এখানকার কিছুই চিনিনা।

–তরী মা, এত বোকা হলে কি করে হবে বল তো?তোকে তো রূপ দিয়ে আসবে৷ তবে আসার সময় আমাদের যে কোন একটা ড্রাইভার তোমায় গিয়ে আনবে। কেমন?

–ওহহহ,তাহলে ঠিক আছে।
…..
রূপ সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে তরীর দিকে তাকায়। তরীর মাঝে এতটাই বিভোর হয়ে যায় যে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।হালকা মাজায় ব্যাথা পায় সে৷

তরী ব্যাপারটা দেখে প্রথমে হেসে ওঠে৷ এবং বলে,রাস্তা দেখে চলা উচিত ।।।।
..
রুমে যাওয়ার পর একা থাকায় নাচানাচি শুরু করে দেয় তরী। আবার নিজের প্রিয় বন্ধুদেরকে ফিরে পাবে সে। বাহ কি মজা। বই ছাড়া তরী আর তরী ছাড়া বই কেমন যেন ফিকে ফিকে লাগে। যতই হোক সম্পর্কটা ছোট থেকেই গভীর অনেক৷

রূপ ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুমে এসে তরীর এমন কান্ডে হাসতে শুরু করে দেয়। তরী যখন বুঝতে পারলো রূপ দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে, ওর কান দিয়ে ধোয়া বেরুতে শুরু করলো। ইশশশ রে আবারও ওনার সামনে কি করলাম আমি। তবে উনি না খেয়ে রুমে এলেন যে?(গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে)

–আচ্ছা আপনি না খেয়ে চলে এলেন যে?

–না খেয়ে কোথায় এলাম হুম?খেয়েই তো এলাম।।

–এত তাড়াতাড়ি?

–আমি একজন ডক্টর। এবং একজন ডক্টরের অনেক টাইম মেইনটেইন করে চলতে হয়। খাওয়ার বিষয় থেকে শুরু করে আমি সকল কাজ তাড়াতাড়ি করে করতে পছন্দ করি।

–ওওহ।

বিছানার ওপর এতক্ষণ বসে ছিল তরী।ঘুম থেকে উঠার পর পরই কিছুটা শরীর খারাপ লাগছিল ওর। এখন ব্যাপারটা আরও বেশি খারাপ লাগছে। মাথা ব্যাথা করছে খুব।

বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে শেলফের ওপর থাকা ঔষধের বক্স থেকে একটা নাপা এক্সট্রা খেয়ে নেয়। রূপ তরীর একটা জিনিস খেয়াল করেছে। তবে বলতে পারছেনা।

মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে সে।

ঔষধ খাওয়া হয়ে গেলে বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।

এরপর কিছু একটা দেখে চোখ বন্ধ করে চিতকার দেয়…

—নাআআআআ….

#পর্ব_৫
গল্পঃ #রুপের_তরী🍁🌷
writer: #Ashura_Akter_Anu
………

সাদা বিছানার চাদরে রক্তের দাগটা স্পষ্ট।তরী নিজের জায়গায় বসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সেদিকে৷ ওর বুঝতে বাকি নেই দাগটা কিসের। হয়ত এমন কিছু জন্যই মাথা ব্যাথা করছে ওর।।

এই মূহুর্তে এতটা লজ্জা লাগছে তরীর যা বলে বোঝানো যাবে না। দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে রূপ। রূপ অবশ্য চোখ নামিয়ে রেখেছে। তরী একবার রূপের দিকে তাকালো৷ চোখে চোখ পড়তেই রূপ তাড়াতাড়ি করে রুমের দরজাটা লাগিয়ে চলে গেল।

নিজের এমন অবস্থার জন্য এই মূহুর্তে তরীর কোনরকম প্রস্তুতি নেই। কারন এ বাড়িতে আসার আগে নিজের সমস্ত জিনিসপত্র সেভাবে গোছায়নি সে।।

বেডশিটের ওপর ব্লাড দেখলেই গায়ে কেমন কাটা দিয়ে উঠছে। কোন কিছু চিন্তা না করেই বিছানা থেকে নেমে একটানে বেডশীট টা নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে চলে যায়।

বেডশীটটা কাচতে কাচতে এক পর্যায়ে তরী নিজেই ভিজে যায়। তাই একই সাথে গোসলটাও সেরে ফেলে।তবে এবার সে পড়ল আসল ঝামেলায়। তড়িঘড়িতে জামাকাপড় বা শাড়ী নিয়ে আসতেই ভুলে গেছে সে। এবার উপায়?

‘আচ্ছা উনি তো এখন রুমে নেই, তাহলে তোয়ালে টা পেচিয়ে আমিই কাপড়চোপড় নিয়ে আসি। ‘
মনে মনে ফন্দি আটে তরী। ওর যা ভাবা তাই কাজ। গায়ে টাওয়ালটা পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আলমারির সামনে এসে দাড়ায় সে।

কিন্ত কি আর করার,মুখোমুখি তো হতেই হবে পদের দুজনকে তাইনা?

স্যানিটারি ন্যাপকিন এর প্যাকেট হাতে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে রূপ।রুমে ঢোকার পর তরীকে অমন অবস্থায় দেখে চিতকার দেয়।

তরীও রূপকে খেয়াল করার পর জোড়ে চিতকার দেয়৷
এরপর ন্যাপকিন এর প্যাকেট টা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে নিজের রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে রূপ। লাইফে ফার্স্ট টাইম ওর সাথে এমন কোন ঘটনা ঘটল।

তরী আলমারীর সামনে একদম স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। কাল থেকে ওর সাথে কি সব আজব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে৷ তবে আজ তো। তরীর ইচ্ছে করছে ব্যালকনি থেকে ঝাপ দিতে। কিন্তু পরনে তোয়ালে থাকায় সেটাও পারল না।
..
রূপের এ কাজটা তরীর খুবই ভালোলেগেছে।হয়ত রূপও জানত ওর এমন কিছুর প্রস্তুতি নেই এই মূহুর্তে। তাই হয়ত সঙ্গে সঙ্গে ন্যাপকিন নিয়ে এলেন।একটা মুচকি হেসে, ফ্লোরে পড়ে থাকা ন্যাপকিনের প্যাকেটটি হাতে তুলে জামাকাপড় নিয়ে আবারও বাথরুমে চলে যায় সে।
…….
রুমের বাইরে প্রায় অনেক্ষন দাড়িয়ে আছে রূপ।ভেতরে ঢুকতে এখন অনেকটা লজ্জা করছে ওর। যাই হোক এমন কিছু হবে সে ভাবতে পারেনি। রুমে যাবে যাবে করেও যাচ্ছেনা। কিন্তু রূপ একটা কথা চিন্তা করল,যা হবার হয়েছে,আমারই তো বউ, এতে সমস্যা কোথায়?।।এটা ভেবেই দরজার লক এর দিকে হাত বাড়ায়৷ অমনি ভেতর থেকে কেউ একজন দরজাটা খুলে দেয়।

নীল রংয়ের থ্রি পিচ ও সাদা ওরনাটি মাথায় জড়ানো।চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু জলের ফোটা লেগে আছে, যে কারনে তরীর চেহারাটা আরও আকর্ষণীয় ও নেশা ধরানো লাগছে। রূপ মলিন চেহারায় তরীকে দেখে যাচ্ছে। নামটা ও ভুল দেয়নি তরীকে। আসলেই এ হলো এক #রূপের তরী।আজ পর্যন্ত কল্পনার জগতে ভেবে আসা সকল পরীদের রানী এই তরী।

হাতের তুড়ি বাজানোয় রূপ ভাবনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফেরে রূপ।

–ধন্যবাদ আপনাকে।

রূপ কিছুটা কপাল কুচকে তরীকে বলল,

— ধন্যবাদ?

–আমার সমস্যাটা বোঝার জন্য।

–তো এতে ধন্যবাদ দেয়ার কি আছে হুম?(ভ্রু নাচিয়ে) আমি এমনিতেও এমন সব ছোট ছোট কাজ করে থাকি(কোমরে হাত রেখে বুক ফুলিয়ে বলল রূপ)

তরী হেসে দিল।এ কি হৃদয় জুড়ানো হাসি। তরীর হাসি দেখে রূপের পালস রেট বেড়ে যাচ্ছিল৷ এতটা সুন্দর করেও যে কেউ হাসতে পারে তা তরীকে দেখলে বুঝতোই না সে।

–আচ্ছা হয়েছে,।আর শুনুন।এভাবে হাসবেন না প্লিজ।

করুন ভাবে তরীকে বলল রূপ। তরী ঠোট উল্টে চোখ গোল গোল ঘুরিয়ে বলল,

–কেন?হাসলে কি আপনার কানের সমস্যা হবে?(বাকা হেসে)
রূপ মনে মনে উত্তর দিল,

–তুমি কি করে বুঝবে আমার রূপের তরী, ওভাবে হাসলে যে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। এরপরের বার মরেও যেতে পারি।

বুকের বা পাশে হাত রেখে কথাগুলো মনে মনে বলছিল রূপ। তরীর কন্ঠে আবারও চোখ মেলে তাকায়,

–আপনি কি এখানেই দাড়িয়ে ছিলেন?

–হুম

–কিহ্?

–না মানে,মাত্রই তো আসলাম। আমি তো নিচে ছিলাম।

–সত্যি তো?

–তো আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে আবার টাওয়ালে মোড়ানো দেখতে দাড়িয়ে থাকবো?

তরীর দিকে কিছুটা ঝুকে দুষ্টু হেসে কথাটি বলে রূপ। তরী খানিকটা লজ্জাও পায়। কারন মনে মনে ও এটাই ভাবছিল।

রূপ ওকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। আলমারি থেকে কাপড়চোপড় বের করে বিছানায় রাখতে রাখতে বলে,

–আমি একটু পর বেরবো।ফিরতে রাত হতে পারে। আপনার একা থাকতে কোন সমস্যা হলে আন্টিকে ডেকে নেবেন।

–আচ্ছা।

–আপনার যদি কিছু দরকার হয় আমায় বলে দেবেন।আমি আসার সময় নিয়ে আসবো।

তরী মুখ ফসকে বলে দেয়,

–এখানে ফুচকা পাওয়া গেলে ফুচকা নিয়ে আসবেন।
বলার পর পরই জিহ্বায় কামড় দেয় সে। মনে মনে ভাবে,ধুর কি বলে ফেললাম। এখন তো আমায় খাদক ভাববে।

তরীর কথায় সে হেসে দেয়। মেয়েটা যতটা পাগলী ততটাই বোকা আর খুবই কিউট। এতটা কিউট যেন সুন্দর কোন নিস্পাপ শিশুদের মত। এরপর আর দেরি না করে টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় রূপ। গোসল শেষে প্রতিদিনের মতই টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে রূপ। বিছানার ওপর বসে নখ কাটছিল তরী। রূপকে ওভাবে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। উন্মুক্ত ফর্সা বুক ও পিঠে দেখতে দারুন লাগছে রূপকে। তরীর চোখ বন্ধ করা দেখে রূপ হেসে দেয়।

–এই যে রুপের তরী? চোখ বন্ধ করলেন যে?

–মানে টা কি হ্যা?আপনি এভাবে আমার সামনে আসবেন আর আমি চোখ খুলে আপনাকে দেখব?।

–তো সমস্যা কোথায়? আমি তো আর অন্য কেউ নই তাইনা?

–আচ্ছা আপনার কি লজ্জা লাগছে না? এভাবে আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন?

–লজ্জা লাগবে কেন?আপনি তো আর অন্য মেয়ে নন। আপনি তো আমার বউ। তো লজ্জা কোত্থেকে আসবে?

–ইশশ,আমারই এখানে থাকা ভুল হয়েছে। আপনি জামাকাপড় পড়ুন।আমি গেলাম।

চোখ বন্ধ করেই দরজার বাইরে দৌড় দেয় তরী৷
রূপ ওকে দেখে হেসে বাচেনা।
…….
হসপিটালে আজ চাপ একটু কম। অন্যান্যদিনের মত আজকে তেমন কোন ক্রিটিক্যাল পেশেন্ট আসে নি।
ওয়ার্ডে গিয়ে আগের পেশেন্টদের ফাইলগুলো দেখছিল রূপ। ইন্টার্নি করলেও ওর চিকিৎসা দেখে মনে হবে কত্ত অভিজ্ঞ ডাক্তার। তাই তো বড় বড় ডাক্তাররা সার্জারী বা বড় কোন অপারেশন করতে গেলে রূপকে সাথে রেখে কাজ করেন। হসপিটাল বা পেশেন্ট সংক্রান্ত কোন বিষয় হলে রূপের অন্য কোনদিকে খেয়াল থাকে না।

ফাইলগুলো দেখার মাঝে এতটাই বিভোর ছিল যে পেছন থেকে একজন ডেকে যাচ্ছে তা টেরই পায়নি সে।

ওয়ার্ডের দরজার পাশে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে মৃধা।মৃধা বলা চলে রূপের বেস্ট ফ্রেন্ড। ওরা দুজনে মেডিকেল কোর্স একসাথে কমপ্লিট করেছে। এখন পর্যন্ত একসাথে আছে দুজনে। এমন বন্ধুত্ব আজকাল খুব কমই দেখা যাবে। তবে রূপের বিয়ের ব্যাপারটা এখনো জানেনা সে। কারন তড়িঘড়িতে বিষয়টা বলা ওঠা হয়নি।

এত ডাকার পরও যখন উত্তর নিলনা তখন পেছন থেকে এসে মাথায় একটা বারি মেরে দিল মৃধা।রূপ জানে যে এটা মৃধার কাজ, তাই পেছনে না ফিরে ফাইল দেখায় মন দিল সে।

–ওই তুই সবসময় কাজ নিয়ে এত বিজি থাকিস কেন বলতো?

–তোর অত শুনতে হবে না,যা গিয়ে কাজ কর।

–ধুর, সবসময় কাজ করতে ভালোলাগে?

–হুম, তোর এই আলসেমির জন্যই তো রোগীদের বারোটা বেজে যায়।

–(জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে),আচ্ছা, বাদ দে। তোর কাজ শেষ?

–হুহ,এইতো এই ফাইলটাই দেখা বাকি আছে।

লাস্ট ফাইলটি দেখা হয়ে গেলে মৃধাকে বলে,

–এবার বল?

–চল ক্যান্টিনে যাই।

–ওহ,চল তোকেও কিছু বলবো। কালই বলতাম কিন্তু খেয়াল ছিল না। (চিন্তিত মু
দুজনে মিলে ক্যান্টিনে চলে যায়।মৃধা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

–হ্যা রে কি এমন বলতে চাইলি?নাকি না জানিয়ে বিয়ে টিয়ে করে ফেললি?

কথাটি বলে হাসতে থাকে মৃধা। রূপ কিছুটা ঘাবড়ে আছে। কারন এ কথ যদি মৃধা যানে তো ওকে একেবারে মেরে কিমা বানিয়ে দেবে। ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,

–কাল আমি বিয়ে করেছি।
মৃধা কথাটি শুবে আরও জোরে জোরে হাসতে থাকে। ওকে দেখে মনে হচ্ছ রূপ যেন একটা মজার জোকস শোনালো ওকে। হাসিটা কন্ট্রোল করার চেস্টা করে মৃধা বলে,
–হ্যা রে তাই নাকি?আমিও তো কাল হানিমুন থেকে ফিরেছি।

আবারও হাসতে থাকে সে।এরপর রূপ ওকে একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। এবং পুরো ঘটনা খুলে বলে৷ মৃধা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর রূপের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। নিজের চেয়ার ছেড়ে রূপের পিঠে দুমদাম করে কিল দিতে থাকে। ওকে না জানিয়ে বিয়ের ফল পাচ্ছে হয়ত রূপ।
এরপর বিয়ের ট্রিট হিসেবে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে একগাদা খাবার অর্ডার করে তবেই শান্ত হয়।

বাড়ির পথে আসার সময় রূপের মনে পড়ে তরী ফুচকার কথা বলেছিল।তাই একটা ফুচকার দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে ফুচকা কিনতে যায়। মোবাইলটা গাড়িতেই রেখে যায়।

এদিকে রূপের মোবাইলে বারবার কল এসেই যাচ্ছে। ফুচকা কিনে গাড়িতে ঢোকার পর দেখে ফোন বাজছে। ফোনটা ধরার পর ওপাশের ব্যাক্তিটির কথা শুনে রূপের মুখটা এমন হয়ে যায় যেন কেউ ওর জীবন কেড়ে নিতে চেয়েছে।
তড়িঘড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে……..।
.
.
.
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here