রোদ্দুরে মেঘের বর্ষন পর্ব -০২

#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০২

—“কত টাকা পেলে রিয়াদকে ছেড়ে দিবি তুই তানজু,,,

“তানজুর মুখের ওপর কতগুলো টাকা ছুঁড়ে মেরে কথাটা বলে উঠল অনন্যা!’অনন্যার কাজে একরাশ বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল তানজুঃ

—“এসব কি বলছেন ম্যাম…

—“ঠিকই বলছি,তোর যত টাকা লাগবে আমি তত দিবো কিন্তু তার বিনিময়ে তোকে রিয়াদকে ছেড়ে দিতে হবে…

—“আপনি কি রিয়াদকে স্যা,থুরি রিয়াদকে কিনতে চাচ্ছেন ম্যাম…

—“ধরে নে তাই,এখন বল কতটাকা চাই তোর,এক লাখ, দু লাখ,তিন লাখ, দশ লাখ কত চাই বল শুধু…

“বলেই একেক টাকার বান্ডিল আমার মুখের ওপর মারছেন উনি,ওনার এমন কাজে সত্যি খুব বিস্মিত আমি,এতটা জগন্য মানসিকতা ওনার আগে জানা ছিল না আমার!’তানজুর ভাবনার মাঝখানে অনন্যা আবার বলে উঠলঃ

—“কি হলো চুপ করে আছিস কেন?’

—“না ভাবছি রিয়াদের দাম কত হবে…

“আমার কথা শুনে অনন্যা খুশি হয়ে বললোঃ

—“আমি জানতাম টাকার জন্য তুই সব করতে পারিস…

“ওনার কথা শুনে হাল্কা হেঁসে বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা হাতে বললাম আমিঃ

—“সত্যি আমার মতো মেয়েরা টাকার জন্য সবকিছু করতে পারে…

“কথাটা বলতে বলতে তানজু ফোন করলো রিয়াদকে!’তানজুকে কারো কাছে ফোন করতে দেখে অনন্যা বলে উঠলঃ

—“কাকে ফোন করছিস তুই…

—“না তেমন কাউকে নয়…

____

“বিছানায় বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে রিয়াদ!’এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল তার,দু’বার রিং হতে হতেই কেটে গেল,তৃতীয়বার বাজতেই চট করে ঘুমটা ভেঙে গেল রিয়াদের,শোয়া অবস্থায়ই হাত বারিয়ে ফোনটা তুলে কানের কাছে নিয়ে বললো সেঃ

—“হ্যালো…

—“স্যার আপনার রেট কত?’

“অপর পাশের ব্যক্তির মুখে এমন কথা শুনতেই রিয়াদের ঘুম উধাও!’লাফ মেরে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো সে মোবাইলের দিকে ঠিকভাবে তাকাতেই তানজুর নাম দেখে চমকে বলে উঠল রিয়াদঃ

—“এসব কি বলছো তুমি…

—“ঠিকই বলছি স্যার অনন্যা ম্যাম আপনাকে কিনতে চাইছেন…

—“কি….

“রিয়াদের কি শুনেই তানজু অনন্যার ব্যবহার আর কথাগুলো সব বলে ফেললো রিয়াদকে!’রিয়াদ তো সব শুনে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে!’স্তব্ধ হয়ে বললো সেঃ

—“আমি এক্ষুনি আসছি…

“এতটুকু বলে ফোন কেটে দেয় রিয়াদ!’

“এদিকে….

“তানজুর কথা শুনে অনন্যা বুঝে গেছে যে তানজু রিয়াদকে ফোন করেছে!’একটা রাগী লুক নিয়ে বলে উঠল সেঃ

—“তোর সাহস তো কম না তুই রিয়াদকে ফোন করেছিস…

—“বারে আপনি রিয়াদ স্যারকে কিনতে চাচ্ছেন আর যাকে কিনবেন তাকে বলবো না…

—“রিয়াদ তোকে ভালোবাসে বলে সাহস বেড়ে গেছে না তোর…

—“ধরে নিন তাই,কিন্তু আপনি যেটা করলেন সেটা কি ঠিক করেছেন ম্যাম,আপনি রিয়াদ স্যারকে কিনতে চাচ্ছেন?’

—“জাস্ট শাট আপ…

—“চুপ করতে বললেই কি সব মিথ্যে হয়ে যাবে ম্যাম,,আমি আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে জানতাম কিন্তু আপনার মানসিকতা যে এতটা নোংরা সেটা জানা ছিল না…

“তানজুর কথা শুনে অনন্যা রেগে গিয়ে থাপ্পড় দিতে নেয় তানজুকে!’অনন্যার কাজে তানজু চোখ বন্ধ করে ফেলে এমন সময় দরজা খুলে রুমের ভিতরে ঢুকে রিয়াদ!’অনন্যার কান্ড দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠল সেঃ

—“এসব কি হচ্ছে অনন্যা….

“আচমকা রিয়াদের কন্ঠ শুনে তানজু অনন্যা দুজনেই তাকায় রিয়াদের দিকে!’অনন্যা তো রীতিমতো ঘাবড়ে যায় সে ভাবতে পারে নি রিয়াদ চলে আসবে এখানে…

“সিটকে কিছুটা দূরে চলে আসলো অনন্যা!’তারপর রিয়াদের সামনে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ এগিয়ে এসে রাগী কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“ব্যস!’তোমায় কিছু বলতে হবে না,আমি সব শুনেছি….

—“তুমি যেটা ভাবছো সেটা ন…

—“জাস্ট শ্যাট আপ অনন্যা,,তোমার মাথায় এমন নোংরা একটা জিনিস আসলো কি করে?’

—“না মানে…

—“চুপ করো, টাকা দিয়ে তুমি আমায় কিনতে চাচ্ছো…

—“তুমি যেভাবে ভাবছো তেমনটা নয়,আমি শুধু..

“অনন্যার কথা শুনে রিয়াদ প্রচন্ড রেগে যায়!’রাগী কন্ঠে বলে উঠল সেঃ

—“এনাফ ইজ এনাফ অনন্যা,

“এতটুকু বলে তানজুর হাত ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আবারো বললো রিয়াদঃ

—“তোমায় একটা স্পষ্ট কথা বলে দিচ্ছি, আমি তানজুকে ভালোবাসি আর এই ভালোবাসা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না বুঝেছো, ফারদার এমন ভুল করো তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,আর তুমি ভাবলে কি করে টাকার জন্য তানজু আমায় ছেড়ে দিবে,,নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে এতটুকু বলে থেমে যায় রিয়াদ!’অসম্ভব রাগ হচ্ছে রিয়াদের, সে ভাবতেই পারে নি অনন্যা এমন কিছু করবে,কিছুক্ষন চুুপ থেকে ধমকের স্বরে বললো রিয়াদঃ

—“গেট আউট দিস রুম…

“রিয়াদের ধমকে পুরো কেঁপে উঠলো অনন্যা!’এই ফাস্ট টাইম অনন্যা রিয়াদকে এতটা রেগে কথা বলতে দেখছে!’অনন্যা আর কিছু না বলেই চলে যেতে নেয় সেখান থেকে, দু’পা এগোতেই বলে উঠল তানজুঃ

—“আপনার টাকা গুলো নিয়ে যান ম্যাম….

“তানজুর কথায় চোখ গরম করে তাকালো অনন্যা তানজুর দিকে!’এরই ভিতর রিয়াদ বলে উঠলঃ

—“হুম টাকাগুলো নিয়ে যাও…

“উওরে অনন্যা বলে উঠলঃ

—“আমার এসিস্ট্যান্ট এসে নিয়ে যাবে…

“এতটুকু বলে হন হন করে বেরিয়ে যায় অনন্যা!’চোখে মুখে রাগের ছাপ তাঁর!’তানজুুকে যে কি করবে তা সে নিজেও জানে না….

_____

“অনন্যা যেতেই বিছানার উপর বসে পরলো রিয়াদ জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে সে!’রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে তার!’

“আর তানজুর চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদের পাশ দিয়ে!’এত একটিং কিভাবে করে উনি,কেনটা আসল আর কোনটা নকল বোঝাই যায় না!’এসব ভেবে চিন্তে হঠাৎই বলে উঠল সেঃ

—“ব্রেকফাস্টে কি খাবেন স্যার…

—“তোমার মাথা…

—“আমার কি দোষ স্যার আমি কি করেছি….

—“তোমার মাথা করেছো…

—“দেখুন স্যার এইমাএ যা হলো তার জন্য শুধুমাএ আপনি দাই,আপনার জন্য কত বাজে বাজে কথা শোনা লাগলো আমার….(মন খারাপ করে)

“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ নীবর কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“আমি সত্যি ভাবতে পারি নি অনন্যা এমন কিছু করবে….

—“আমিও,,

“এমন সময় অনন্যার এসিস্ট্যান্ট এসে দাঁড়ালো রিয়াদদের রুমের সামনে!’দরজার নক করে বললো সেঃ

—“May i come in, sir…

—“yes come…

“রিয়াদের কথা শুনে অনন্যার এসিস্ট্যান্ট ঢুকে পরলো রুমে!’অনন্যার এসিস্ট্যান্ট হলো একটা মেয়ে নাম তনুশ্রী!’তনুশ্রী রিয়াদের সামনে এসে বললোঃ

—“আমায় অনন্যা ম্যাম পা…

“আর কিছু বলার আগেই রিয়াদ পারমিশন দিয়ে দিলো তনুশ্রীকে!” কারন সে জানে মেয়েটি কেন এসেছে,রিয়াদের পারমিশন পেতেই তনুশ্রী নিচে পড়ে থাকা টাকাগুলো উঠাতে লাগলো….

“রিয়াদ দু’মিনিট বসে থেকে কাট কাট গলায় বললোঃ

—“৩০ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে আমার রুমে আসো তানজু….

“বলেই চলে গেল রিয়াদ!’

“রিয়াদ যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরই চলে যায় তনুশ্রী!’সবাই বের হতেই তাড়াতাড়ি রুমের দরজা বন্ধ করে ফ্রেশ হতে ঢুকে পরলাম আমি ওয়াশরুমে….

“১০মিনিটে ফ্রেশ হয়ে একটা সাদা রঙের টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পড়ে চুলগুলো উঁচু করে বেঁধে হাল্কা মেকাপ দিয়ে তৈরি আমি,,তারপর কুইকলি বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে!’

“এরই ভিতর মোবাইলে মেসেজ আসলো রিয়াদ স্যারের…

“রুমে যেও না নিচে আসো আমি গাড়িতে বসে আছি….”

“মেসেজটা দেখতেই চটজলদি রুম লক করে হোটেলের লিফটে উঠে পরলাম আমি!’

_________________________________________

______________________

!!

“গাড়ির ভিতর বসে মোবাইলে গেম খেলছে রিয়াদ!’পড়নে তার ব্লাক হুডি,ব্লাক জিন্স, মাথা ভর্তি চুলগুলো সুন্দর করে জেল দিয়ে সাজানো,হাতে ব্লাক ওয়াচ,পায়ে ব্লাক জুতো এক কথায় ব্লাকে সজ্জিত রিয়াদকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে এসে হাজির তানজু,একটু লেট হয়ে গেছে তাঁর!’তানজু গাড়ির ভিতর ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলঃ

—“সরি স্যার একটু লেট হয়ে গেছে…

“তানজু বসতেই রিয়াদ হাতের মোবাইলটা নামিয়ে তানজুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ

—“এখানে একটু লেট পুরো পাঁচ মিনিট দেরি করেছো তুমি…

—“পাঁচ মিনিট কি বেশি স্যার..(মনে মনে)সরি স্যার….

—“ইট’স ওকে….

—“আমরা এখন কোথায় যাবো স্যার…

—“আপাতত একটা কানাডিয়ান রেস্টুরেন্টে..

—“হোটেলেই তো ভালো ভালো খাবার ছিল স্যার…

—“কিন্তু আজ হোটেলের খাবার খাবো না…

—“ওহ,,

—“হুম…

“ড্রাইভার অনেক আগেই গাড়ি চালাতে শুরু করেছেন!’তাই আমিও আর বেশি কিছু না ভেবে চুপচাপ বসে রইলাম!’অত্যাধিক সুন্দর দেখতে একটি দেশ কানাডা!’আর Canada Quebec নামক একটা জায়গার পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা,রাস্তাগুলো যতটা মোলায়েম তার চেয়েও বেশি সুন্দর এর আশেপাশের প্রকৃতি,কমলা আর সবুজ রঙের গাছের পাতার সমৃদ্ধের পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা,বাহিরের পরিবেশ এতটাই সুন্দর যেন সহজে চোখ সরতেই চায় না,একটা শীতলতার ভাব আছে খুব….

“অনেক্ক্ষণ পর….

“আচমকা কি হলো রিয়াদ স্যার উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলেন!’হুট করে ওনার হাসি পাওয়ার কারন বুঝতে পারলাম না আমি!’তাই অবাক হয়ে বললামঃ

—“কি হলো স্যার আপনি হাসছেন কেন?’

—“একটা জিনিস তো ক্লিলিয়ার তানজু…

—“কি জিনিস…

—“এই যে অনন্যা কালকের সম্পূন্ন বিষয়টাকে সত্যি ভেবে নিয়েছে…

—“মানে…

—“মানে এটাই কালকের একটিংটা একদম পারফেক্ট ছিলো তাই সকালে ওহ তোমায় ওই অফার দিতে আসলো…

—“আপনার কি সবকিছু মজা মনে হচ্ছে স্যার,সবকিছু যতটা ইজিভাবে নিচ্ছেন বিষয়টা ততটা ইজি নয়…

—“ডোন্ট ওয়ারি তানজু,জাস্ট প্যারা নাই চিল…

—“😒😒

“হেঁসে উঠলেন উনি!’এরই ভিতর আমরা এসে পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্যে….

—“চলো তাহলে যাওয়া যাক!’

“বলেই মাথায় টুপি আর চোখে ব্লাক সানগ্লাস পড়ে বেরিয়ে গেলেন রিয়াদ স্যার!’আমিও বেশি কিছু না ভেবে মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে আসলাম গাড়ি থেকে!’মুখ গোমড়া করেই হেঁটে চলেছি আমি,আমায় এইভাবে থাকতে দেখে বলে উঠলেন রিয়াদ স্যারঃ

—“কি হলো তোমার..

—“কিছু হয় নি তো..

—“তুমি এখনো অনন্যার বিষয় নিয়ে পড়ে আছো…

—“এই একটিং করতে গিয়ে পড়ে বিপদে পরলে আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই স্যার…

—“প্রবলেম আর কি হবে বেশি প্রবলেম হলে তোমায় সত্যি সত্যি বিয়ে করে নিবো…

“রিয়াদ স্যারের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম আমি তারপর চোখ চোখ বড় বড় করে বলে উঠলামঃ

—“কি….

“আমার কাজে রিয়াদ স্যারও দাঁড়িয়ে পরলেন তারপর হেঁসে আমার গাল দু’গাল টেনে বললেনঃ

—“কাম অন তানজু আমি জাস্ট মজা করেছি,আর এমনিতেও বেশি ভেবো না…

___

“এদিকে….

“দূর থেকে একজন ফটোগ্রাফার তানজুর আর রিয়াদের গাল ধরার দৃশ্যটা ক্যাপচার করে নিলো!’সে তো ভেবেই নিয়েছে এঁরা সত্যি সত্যি গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড!’এমন সময় ফটোগ্রাফার ছেলেটির মেবাইলটা বেজে উঠল ফোনটা বের করে বলে উঠল সেঃ

—“ইয়েস ম্যাম আপনার কথা মতো রিয়াদ স্যারকে ফলো করছি আমি….

“ফটোগ্রাফারের কথা শুনে অপরপাশেরজন হাল্কা হেঁসে বললোঃ

—“ওকে….
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে……….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!”আর গল্প কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here