রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -১৯

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_19

এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি আর রিয়ানা নামাজ পড়ে রুমের বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে।

রিনির বাড়ির সবাই নানারকম কাজে ব্যস্ত।

বৃষ্টি আর রিয়ানা রিনির কাছে যায় তার সাথে আড্ডা দিতে। রিনি বৃষ্টিকে থেকে শুকনা ঢোক গিলে বলে,”আরে রিয়ানা আপু, হঠাৎ আমার রুমে?”

রিয়ানা ভ্রূ কুঁচকে বলে,”কেন তোমার রুমে আসতে নিষেধ তো নাই! তাহলে এমন কথা বলছো কেনো?”

রিনি- না আপু এমনিতে, তা বলো কোনো কাজের কথা বলবে?

রিয়ার – তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”নাহ,কিছু বলার নেই। এই বৃষ্টি চলো! ”

রিনি থ হয়ে বসে থাকে।

বৃষ্টির রিয়ানা যেখানে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে সেখানে বসে আড্ডা দিতে থাকে। গায়ে হলুদেরর স্টেজ সাজানোর কাজ চলছিল তখন। বৃষ্টি আর রিয়ানার কোনো কাজকাম নাই দেখে বসে বসে ফানি সেলফি তুলতে থাকে। তখন সেখানে রোদ এসে বলে,”আমিও কি তোমাদের সেলফিতে এডড হতে পারি?”

বৃষ্টি একগাল হাসি দিয়ে বলে,”জ্বি অবশ্যই! ”

তারপর রিয়ার রোদ বৃষ্টি তিনজন একসাথে সেলফি তুলতে থাকে,কখনো রোদ বৃষ্টি তো কখনো রিয়ানা বৃষ্টি। এভাবে কিছু সময় আড্ডা দেওয়ার পর রোদ চলে যায়। তার বোনের বিয়ে বলে কথা নানারকম কাজ তাকে দেখতে হচ্ছে। প্রেয়সীর সাথে সারাবেলা আড্ডা দিতে মন চাইলেও তা করা সম্ভব নয়।

এদিকে এ বিয়েতে শিকদার মির্জার পরিবার আসবে বলে সেই সকালে থেকে কয়েকজন সাংবাদিক এসে হাজির। তাছাড়া খান বাড়ির বিয়েতে অনেক বড় বড় ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। মিডিয়া তো আসবেই।

রোদ বৃষ্টির সেলফি তোলার সময় তাদের কিছু ছবি সাংবাদিকদের ক্যামেরাতে বন্দী হয়ে যায়।

এদিকে বিকালে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাই রিয়ানা আর বৃষ্টি নিজেদের রুমে এসে সাজুগুজু করতে ব্যস্ত। রিনিকে নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যে তাদের দেখে খুশি হতে পারছে না তার কাছে যাবার কোনো মানে হয় না।

এদিকে রিয়ানা আর বৃষ্টির এক ডিজাইনের এক রঙের লেহেঙ্গা। হলকা হলুদে রঙের মাঝে সবুজ রং এর ডিজাইন। দুজনে হিজাব পরেছে, হিজাবের উপর তারা গলায় ফুলের মালা পরেছে। হাতে কাচা ফুলের চুড়ি বানিয়ে পরেছে,,লাল সাদা ফুলের কম্বিনেশন। মুখে হালকা মেকআপ।

এদিকে রিনিকে লাল হলুদ রং এর একটা লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে সাথে মেচিং ফুলের গহনা। হলুদের স্টেজে রিনিকে বসিয়ে দেয়। ঠিক তার সামনে সাদিকের হলুদের আয়োজন। দুজনের হলুদের অনুষ্ঠান একসাথে করা হবে। তবে তাদের বসার অসন টা আলাদাভাবে করা হয়ে। হবু বর বউয়ের উপস্থিতিতে সবাই অনুষ্ঠান শুরু করে দেয়।

রিয়ানা আর বৃষ্টির আসতে দেড়ি হয়। সাদিক- রিনি নিজেদের হলুদের অনুষ্ঠান উপভোগ করছিল।

ঠিক তখন সাদিকের দৃষ্টি গিয়ে রিয়ানা আর বৃষ্টির উপরে পরে। সাদিক নিজের আসন থেকে নেমে দাঁড়ায় যায়।

কারণ সে এখানে কোনো ভাবেই বৃষ্টিকে আশা করে নাই। বৃষ্টি যে এখানে আসবে সে কথা কেউ তাকে বলে নাই। বৃষ্টির সাথে রিয়ানা কেনো এতো ক্লোজ হয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের দু জনকে দেখে তো মনে হচ্ছে আসমান থেকে পরী নেমে আসতেছে।

বৃষ্টির আশার পথে হঠাৎ করো রোদ হিরোদের মতো হাতে ফুল নিয়ে মাঝপথে বসে পড়ে। হাতে থাকা ফুল বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”

ওহে হলুদের পরী!
তুমি হবে কী আমার রাজরানি?
আমি নাই বা হতে পারি তোমার সাজাহান,
তাতে কি তুমিই আমার হলুদে পরী।”

বৃষ্টি উপস্থিত সবাইকে জ্বালানোর জন্য রোদের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে নেয়।
রিয়ানা বলে,”বাহ রোদের উদয় বুঝি আজ পশ্চিমে হয়েছে।”

রোদ- হয়তো।

রোদ বৃষ্টির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে বলে,”যাও গো সুন্দরি যাও,নিজের স্থানে গিয়ে বসো! সারাজীবন তো বসবাস করবে আমার হৃদয়ের ছোট বসতনগরী তে।”

বৃষ্টি রিয়ানা কে বলে,”চলো আপু নয়তো রোদ ডাক্তার কে পাবনা পাঠানো লাগতে পারে।”

রিয়ানা – হুম ঠিক বলছিস।

রোদ স্থান ত্যাগ করে তার কাজের জন্য। এদিকে একটু সামনে এগিয়ে যেতেই সাদিক টুপ করে বৃষ্টির সামনে এসে দাঁড়ায়।

বৃষ্টি চমকে ওঠে না কারণ সে আগে থেকে জানতো সাদিক তাকে এখানে দেখলে রিয়াক্ট করবেই। তাই নরমাল ভাবে বলে,”আরে দুলাভাই যে! সুন্দরি শালিকা কে বরণ করতে হবু নতুন জামায় নিজেই এগিয়ে আসছে। এতে আমি পুলকিত। ”

সাদিক- রেগে বলে,” রাখো তোমার নাটক। তুমি এখানে কেনো আসছো? তোমাকে কে দাওয়াত দিয়েছে? বিনা দাওয়াতে মুখ উঠিয়ে চলে আসতে লজ্জা করছে না?”

বৃষ্টি-বিনা দাওয়াতে এখানে আসতে একটু লজ্জা করছে না আমার। আপনার যদি লজ্জা লাগে আপনি স্থান ত্যাগ করতে পারেন।

সাদিক কিছু বলবে তার আগেই রিয়ানা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,”সাদিক তোমার সাহস হয় কি করে? আমার ছোট বোন কে অপমান করার? সে বিনা দাওয়াতে আসবে কেনো? তাকে রোদ নিজের প্রেয়সী হিসাবে দাওয়াত দিয়ে আনছে।”

বৃষ্টি রিয়ানার কথায় তাল মিলিয়ে বলে,”সাদিক ভাই কিছুদিন পর ভাবী বলে ডাকতে হবে। তা না হয় আজ থেকে ভাবী ডাকটা দিয়ে আমার কলিজা জুড়িয়ে দিবেন। ”

সাদিক- তেড়ে কিছু বলতে তার আগে সেখানে অন্যরা এসে পরে। সাদিক সবার সামনে আর কিছু বলতে পারে না। আস্তে করে বলে,”বৃষ্টি আমার বিয়েতে যদি তোমরা দুজনে কোনো ঝামেলা করছো তাহলে খবর আছে। ”

বৃষ্টি- তা সাদিক দুলাভাই কয়টার খবর করবেন শুনি?
সাদিক আর কিছু না বলে নিজের আসনে গিয়ে গোমড়া মুখ করে বসে থাকে।

সাদিকের গোমড়া মুখ দেখে রিনির বুঝতে অসুবিধে হয় না কেনো তার জামাইয়ের মুখটা বাংলার পাঁচ হয়ে আছে।

সাদিক রিনির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেনো সে বৃষ্টির কথা তাকে আগে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না। এই বৃষ্টি তো নিজেই চলতে ফিরতে বিপদ। না জানি তাদের বাড়ির সবার জন্য কোন বিপদ নিয়ে আসে। সে নিজে সুখি না বলে আমাদের সুখ নষ্ট করতে আসছে। এসব নানারকম চিন্তা ভাবনার মাঝে ওদের হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। কতো নাচ গান হই-হুল্লোর কিন্তু দুজনের এসবে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। দুজনের মাথা ব্যাথা তো এখন একটায় বৃষ্টি।

এদিকে এই সাজে রোদ বৃষ্টির নানারকম ক্লোজ ছবি তুলে। তারা এসবের মাঝে কিছু একান্ত সময় পার করে। এইভাবে হলুদের দিন পাড় হয়ে যায়।

পরেরদিন নতুন সূর্য ওঠে। রিনির বিয়ে আজ। সবাই অনেক খুশি তবে শুধু খুশি হতে পারছে না বৃষ্টি। বৃষ্টির বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।
(ভুল ত্রুটি গুলো একটু ধরিয়ে দিবেন সংশোধন করবো🙂)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here