রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -শেষ

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_31(last part)

কেউ হাসির আড়ালে কান্না লুকিয়ে রাখে।
তো কেউ কান্নার আড়ালে একবুক বিষাক্ত যন্ত্রণা পুষে রাখে। তবে এই রোদের কঠোর উত্তাপের সামনে বৃষ্টি নিজেকে কি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছে।

দাদীমার কাছে বৃষ্টির সাথে ঘটে যাওয়া এতো করুণ কাহিনী শুনে রোদের নিজের প্রতি নিজের প্রচুর ঘৃণা হচ্ছির। তার ভাবতেই প্রচুর রাগ হচ্ছে! তার পরিবারের সবার জন্য একটা মেয়ে জীবিত অবস্থায় জাহান্নামের স্বাদ ভোগ করেছে। বাবার শেষ যাত্রার সময় সেখানে উপস্থিত হতে পারে নাই। নিজে লেখাপড়া করে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন নষ্ট করেছে। তবুও এতোদিন সে এ বাড়িতেই অবস্থা করছে। এ বাড়িতে কারো সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে নাই। যদিও বৃষ্টির মোটেই উচিৎ হয় নি এদের সাথে মিষ্টি ব্যবহার করা। বৃষ্টি যা করেছে ওটা ওর পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া সুন্দর শিক্ষার জন্য।

তবে রোদ সেদিন সবটা শোনার পর রিনির গালে সজোরে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। চিৎকার করে বলে,”ছিঃ আমার পরিবারের মানুষের জন্য যে কারো সুন্দর জীবটা জাহান্নামে পরিণত হতে পারে তা ভাবতেই পারি নাই। তবে তোমরা যে কাজ করেছো তার শাস্তি তোমাদের পেতে হবে। ”

রোদ সেদিন বৃষ্টির হাত ধরে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। আর কোনোদিন সে খান বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ করে নাই। বৃষ্টির কাছে কখনো রোদ মাথা নত করে ক্ষমা চাই-তে যায় নি। বরং রোদ সব সময় চেয়েছে বৃষ্টিকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে। যেখানে বৃষ্টির অতীতের কোন কালো ছায়া থাকবে না। বৃষ্টি কখনো নিজের দুঃখে ঝুড়ি খুলে রোদের সামনে বসে নাই।

বৃষ্টির একটায় কথা – আমার নসীবে যা ছিলো তাই হয়েছে। আমি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি। মানুষকে ক্ষমা করা মহৎ গুণ। কাউকে ক্ষমা করে দিলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। তবে কেউ যদি বার বার ক্ষমা পাবার পরেও ভুল করে তাহলে তার শাস্তি সে একদিন পাবে।

রোদ সেদিনের পর তার মা আর বোনের সাথে আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করে নাই। তবে হ্যাঁ রোদ প্রতি মাসে বেতনের একটা অংশ তার মায়ের জন্য খান বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

বৃষ্টি রোদকে বহু বার বলেছে চলো আমরা খান বাড়িতে ফিরে যায় আর কতো বছর তাদের কাছে থেকে দূরে থাকবে?

-আমাদের ছেলেটা বড় হচ্ছে! তার দাদা বাড়িতে যাওয়ার অধিকার আছে।

রোদ- আমি চাই না আমার রাইয়ান আর রিদার জীবনে খান বাড়ির ছায়াও পরুক। সে বাড়ির মানুষেরা তোমার সাথে যা করেছে তা কোনোদিন আমার ছেলে মেয়েরা জানতে পারবেন না।

আজ পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। রোদ বৃষ্টির মিষ্টি প্রেমের উপহার হচ্ছে তাদের দুই ছেলে-মেয় রাইয়ান, রিদা। রাইয়ানের চার বছর আর রিদার বয়স দুই বছর।

পাঁচ বছর ধরে বৃষ্টি রোদকে অনেক বুঝিয়েছে তবুও সে বাড়িতে ফিরে যেতে নারায। বৃষ্টির কী? রোদ তো অবুঝ নয়! তাকে বহুত বোঝাতে চেষ্টা করেছি সে যদি না বুঝতে চাই- তাতে আমার কী করার? অবশ্য সবার নিজের ভুলের মাসুল নিজেকে দিতে হয়। বৃষ্টির সাথে অন্যায় করেছিল বলে আজ রোদ তার পরিবারের কাছ থেকে দূরে।

রোদ বৃষ্টি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর বিহান রিনির হাতে ডির্ভোস পেপার ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আমি বিয়ের দিন বলেছিলাম সম্পর্কটা ছয় মাসের। আপনার বাবা সেই শর্তে রাজি হয়ে আমাদের বিয়েটা দিয়েছিল। যেহেতু আজ সে জীবিত নেই তাই তার অপূর্ণ কাজটা আমি পূর্ণ করে দিচ্ছি। ছয় মাস কমপ্লিট হয়েছে তা-ই চুক্তি অনুযায়ী আমাদের বিয়েটার মেয়াদকাল শেষ। আজ থেকে আমরা কেউ কোন সম্পর্কে যুক্ত নেই।ভালো থাকবেন বলে বিদায় নেয়।”

বিহান রিনিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়। এদিকে নিজের করা ভুল গুলো সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে! বাবার ছায়া মাথার উপর থেকে সরে গেছে আজীবনের জন্য,বড় ভাই বউকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে অবশেষে স্বামী স্ত্রী কে ত্যাগ করেছে।

রিনি কোনোদিন ও ভাবে নাই সাদিক কে নিজের করে পাবার জন্য সে যে বন্ধুত্বের সম্পর্কের মান নষ্ট করেছে। বান্ধবীর জীবনটা নষ্ট করেছিল আজ সেই স্বামী কে নিয়ে সুখে আছে। আর রিনির সব কিছু থেকেও কোন কিছু নেই।

রিনির মা এতো বড় ধাক্কা সামলাতে না পেড়ে সেখানে স্টোক করে মারা যায়। রিনির পুরো পৃথিবীটা এক মূহুত্বের মধ্যে বদলে যায়।

রোদ পরিবারের কারো সাথে কোন যোগাযোগ রাখে না দেখে তার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে না।

রিনি পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এতোবড় বাড়িতে বাবা-মা, ভাই- ভাবী কেউ নেই আজ সে বড় একা।

তার করা পাপের শাস্তি সে ভোগ করছে। বাড়ির বাহিরে যেতে পারে না রিনি! পুরো সমাজের মানুষেরা তাকে দেখলে ছিঃ ছিঃ ছিঃ করে। রিনি এক প্রকারের বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হয়ে যায়। রিনির দাদীমা রিনির দেখাশোনা করে। দাদীমা আজকাল খুব চিন্তায় থাকে তার বয়স হয়েছে। রিনির এমন অবস্থায় সে কি ঠিক মতো দেখাশোনা করতে পারবে?

যেই সাদিকের জন্য রিনি বৃষ্টির জীবনটা নষ্ট করেছিল আজ সেই সাদিক অন্য নারীকে বিয়ে করে সুখেই দিন কাটাচ্ছে। সে ভুল করেও একটা দিন রিনির খোঁজ নিতে আসে না।

তবে রিয়ানা এসেছিল! তার আর বিহানের বিয়ের দাওয়াত দিতে। হুম রিনির বিয়েরপর বিহানের সাথে রিয়ানা নিজেই যোগাযোগ করে। তাদের মধ্যে খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা সেই সম্পর্কটাকে আরো মজবুত করতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে।

রিয়ানা রিনির এই অবস্থা দেখে বলে,”নানী মা! লোকেরা ঠিকি বলে,অন্যের জন্য খাল কাটলে সে খালে নিজেকে পড়তে হয়। রিনি বৃষ্টির জীবনে দুইটা বছর নষ্ট করেছিল! আজ কয় বছর দেখো রিনি নিজেই কোন অবস্থায় আছে। এমন ভাবে জীবিত থাকার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো।”

দাদীমা চোখেরজল মুছে চুপচাপ নিরবতা পালন করে।

রিয়ানা তার নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সে আর পিছনে ফিরে দেখবে না। একদিন রাতে সাদিকের সাথে ঘুরতে গিয়ে খারাপ মানুষদের থেকে নিজেদের বাঁচাতে তারা যে স্বামী-স্ত্রীর এটার প্রমাণ দিতে সে, সাদিক কে সবার সামনে চুম্বন করেছিল। চুম্বন টা ইচ্ছা করে করেছিল না সম্পর্ক গুলো যেনো বিষাক্ত না হয় তা-ই করেছিল। তবে সেদিনের পর থেকে সাদিকের কাছে রিয়ানা খারাপ মেয়েতে পরিণত হয়। তাতে রিয়ানার কী? রিয়ার মনে তো কোন পাপ ছিলো না। ভাগ্যটা ভালো বলে অবশেষে সে বিহানের মতো জীবন সঙ্গী পাচ্ছে।

এদিকে রিনির এক খালা রিনির এ অবস্থা দেখে রিনিকে নিজের কাছে নিয়ে যায়। সে রিনির ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। যতো যাই হোক মেয়েটা কে তো আর মরার জন্য ফেলে রাখতে পারে না। রিনির চিকিৎসা রত অবস্থায় রিনির সেই খালার ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। যাতে কেউ কোন বাজে কথা না বলতে পারে।

রিনি এখন মোটামুটি সুস্থ! বরের সাথে সে সুমুদ্দুর রাজকন্যা কোয়া-কাটা ঘুরতে আসে। সেখানে এসে দেখে পড়ন্ত বিকালে সূর্যি মামা অস্ত যাবে তা দেখতে কতো মানুষের ভীড়। সে সকল ভীড় থেকে একটু দূরে আসতেই রিনির চোখে একটা একজোড়া দম্পতি পড়ে। তাদের কোলো ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে আর পাশে একটা ছেলে খেলা করছে। দম্পতির চেহার দেখা যাচ্ছে না। স্বামী-স্ত্রী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার চুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।

রিনির ভাবছে,” আচ্ছা বাচ্চাকাচ্চা হলেও যে দাম্পত্য জীবন থেকে রোমান্স হারিয়ে যায় না তা এদের দেখে বোঝা যাচ্ছে। ”

রিনি সেই দম্পতি কে দূর থেকে দেখছিল। হঠাৎ করে তারা পিছনে ফিরতেই রিনি এক দৌড়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

রিনি বৃষ্টির পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে থাকে। এতো গুলো বছর পর রিনিকে দেখে রোদ- বৃষ্টি চমকে ওঠে। এই রিনি কি সেই রিনি? না আছে আগের মতো চেহারার সৌন্দর্য না আছে চেহারাতে প্রাণোচ্ছল ভাব।
রিনি প্রচুর কান্না করতে থাকে। কান্নারত অবস্থা রিনি যে বাবা-মা দু জনকে হারিয়েছে সে কথা বলে। মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে বড় ধরণের আঘাত পায়। রোদ রিদা কে সাথে সাথে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

বৃষ্টির বুঝতে পারছে আর যাই হোক বাবা মা’র মৃত্যর সংবাদ সহ্য করা এতো সোজা কাজ নয়।

রোদের খালাত ভাই এসে রোদের কাছে সেদিনের পর থেকে রিনির অসুস্থ হওয়ার সব কথা খুলে বলে। এরপর বৃষ্টি রোদ কে বলে, ”প্লিজ তুমি রিনি কে মাফ করে দাও। আমরা ছাড়া রিনির আর কেউ নেই। ”

রোদ আর কতোদিন অভিমান করে থাকবে। এবার সে রিনিকে মাফ করে দেয়।

এতোগুলো বছর পর নিজের ভুল কাজের ক্ষমা পেয়ে রিনি খুব খুশি হয়।

রোদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”#রোদ_বৃষ্টির প্রেম সব সময় অন্যরকম হয়।এখানে এদের একজনের মাঝে কড়া উত্তাপ তো আরেকজনের মাঝে শীতলতার ছোঁয়া। আমি এতোদিন রেগে ছিলাম তবে বৃষ্টি তো সত্যি পানির মতো সবটা ভুলে আমার অভিমান ভাঙ্গাতে ব্যস্ত ছিলো। ”

রিনি রোদ বৃষ্টির সাথে কয়েকদিন থেকে চলে যায় নিজের সংসারে। তবে রোদ- বৃষ্টি আর ফিরে যায় না তাদের চিরো-চেনা সেই নীড়ে। তারা এই সুমুদ্দুর রাজকন্যার এলাকাতে নিজেদের ভালোবাসার সুন্দর ঘর গড়তে ব্যস্ত।
ভালো থাক সবার ভালোবাসা। নিজেকে কখনো এতোটা স্বার্থপর করোনা যাতে স্বার্থসাধনের পর আর কেউ চিনতেই না পারে। স্বার্থপরেরা কখনো সুখি হতে পারে না। সবাইকে ভালোবাসা ভালো ব্যবহার উপহার দিলে আপনিও তাই ফেরত পাবেন।
(জানি গল্পটা কে সেই সুন্দর ভাবে গুছিয়ে শেষ করতে পারি নাই। তবে নিজে ইচ্ছা করে দ্রুত অগোছালো ভাবে শেষ করছি।
“”””””””””””””সমাপ্ত “”””””””””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here