রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -৩০

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_30

এসবের মাঝে ভার্সিটিতে তাদের ডিপার্টমেন্টে নাটকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানের একটি চরিত্রের ভূমিকা বৃষ্টিকে পালন করতে হবে।

এতো সব সমস্যার মাঝে একটু বিনোদনের দরকার আছে মনে করে বৃষ্টি সে নাটকের জন্য রাজী হয়ে যায়।

এদিকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বৃষ্টি নিজের সেই অজানা আইডিতে প্রবেশ করে। আইডির ইনবক্সে গিয়ে বৃষ্টির ছবি গুলো ভালো করে দেখতে থাকে। বৃষ্টি বুঝতে পারে এই ছবি গুলো কার ফোনে তোলা। আর বৃষ্টির ফোন সে ছাড়া অন্য কেউ কখনো স্পর্শ করে না।

তবে সেসব কিছু প্রকাশের আগেই নাটকের মঞ্চে বৃষ্টির ডাক পড়ে। সে নাটকে বৃষ্টিকে নতুন কনের ভূমিকা পালন করতে হয়। নাটকের মধ্যে বৃষ্টির মিথ্যা বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। তবে নাটকের শেষে বৃষ্টির মাথায় বজ্রপাত হয় রিনির করা এনাউমেন্টে।

রিনি স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলে,”আজকে নাটকে যে বিবাহ হয়েছে ঐ বিয়েটা সত্যি কারের বিয়ের ছিলো। সবাই নতুন বর বউয়ের জন্য দোয়া করবেন।”

সবাই তো খুশিতে ওদের অভিনন্দন দিতে থাকে। বৃষ্টির সামনে সেই ছেলেটা বর বেসে দাঁড়িয়ে আছে আর বৃষ্টি তার বউয়ের।

বৃষ্টি স্টেজ থেকে নেমে সোজা ভার্সিটির বাহিরে চলে আসে। বৃষ্টির পিছনে রিনি আর ছেলেটাও দ্রুত ছুটতে থাকে। এদিকে এভাবে বৃষ্টির বিয়ে হওয়ার জন্য সাদিক রাগ করে ওদের বাড়িতে ফিরে যায়।

এদিকে রাস্তার মাঝে এসে তিনজন ঝগড়া করতে শুরু করে। বৃষ্টি বলে,”রিনি তুই আমার বন্ধু রুপে শত্রু। আর তোর থেকে তো অপরিচিত মানুষ ভালো। তারা তো আপন মানুষের সেজে পিছন থেকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিস। ”

রিনি- তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”আমি কোন কিছুই করি নাই। তুই নিজে প্রেম করেছিস আর এখন যখন ধরা পড়ে গেছিস তখন দোষ আমাকে দিতে আসছিস। ”

বৃষ্টি রিনির দিতে ঘৃণাজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এরপর সেই ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনার ফোনে আমার যে ছবি গুলো আছে বাহির করেন একটু!”

ছেলেটা ছবি গুলে বাহির করতেই বৃষ্টি বলে,”ছবি গুলো একটু ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখুন! ছবি গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউ আমার অগোচরে চুরি করে ছবি গুলো তুলেছে। আর একটা বড় কথা ছবিতে কিন্তু ডিভাইসের নাম উল্লেখ করা আছে। তবে যে ডিভাইসের নাম উল্লেখ করা আছে সে ফোন আমার নয়। আমি তো গরীব ঘরের মেয়ে এতো দামী ফোন কোথায় পাবো?”

ছেলেটা বলে,”তাহলে কেউ ইচ্ছা করে তোমার প্রতি আমার দুর্বলতা জানতে পেরে এমন কাজ করেছে।তাকে আমি ছাড়বো না। কিন্তু ছবি গুলো তো তোমার বাসায় তোলা এগুলো তো যারতার কাছে থাকার কথা নয়।”

বৃষ্টি রিনির গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম? যে তার জন্য আমার মান-সম্মান সব তুই এভাবে নষ্ট করে দিয়েছিস? ”

ছেলেটা বৃষ্টিকে বলে,”রিনি করেছে এই সব কিছু?”

বৃষ্টি- হ্যাঁ! রিনি এসব কিছু করেছে কিন্তু কেনো তার জবাব চাই আমি।

রিনি তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”তুই আমাদের বাড়িতে থেকে আমার ভাই কখনো চোখে দেখিস না,কথা বলিস নাই, তার গল্প শুনেই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।
ওইসবে মনে ভরে নাই? এদিকে সাদিক ভাইয়ের সাথে এতো ঢোলাঢুলি করিস যে সে তোর প্রতি ফিদা। এদিকে এই পোলা! একটা মেয়ের পেছনে কতো গুলো ছেলের দরকার হয়?”

বৃষ্টি- ছিহহহ! তোর চিন্তা ভাবনা এতোটাই খারাপ?
তুই জানতিস সাদিক ভাই কে ভাই ছাড়া কখনো বেশি কিছু ভাবি নাই। আর এই ছেলেটা কে তো নিষেধ করে দিছিলাম। তবে তুই বিচ্ছিরী প্রেমের নাটক করেছিস। আরে তোর ভাইয়ের প্রতি দুর্বলতা আছে এর মানে এটা নয় যে তাকে আমার চাই। আমি জানি আমার লিমিট কতোটা। আরে এখানে এতো প্রেম- পিরিতি করতে আসি নাই। আমি নিজের জন্য এসেছিলাম।কখনো দেখেছিস বিনা কারণে কোন ছেলের সাথে কথা বলতে? আমি তো সব সময় সবার থেকে নিজেকে আড়ালে রেখেছি। আর তুই তোর নিকৃষ্ট মন-মানুষিকতার জন্য আজ আমার বিয়ে নিয়ে এতো বড় কাহিনী করে দিয়েছিস।

তখন ছেলেটা বলে,”চিন্তা করো না বৃষ্টি তোমার সাথে আমার বিয়ে হয় নি! এটা একটা মিথ্যা নাটক ছিলো। আমার তোমার কোন বিয়ে হয় নি। তুমি চিন্তা করো না কাল আমি সবার সামনে সব কিছু ক্লিয়ার করে দিবো।”

বৃষ্টি ছেলেটা কে ধন্যবাদ দিয়ে রিনির কাছে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে ছেলেটা কে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।

আকস্মিক এমন ঘটনাতে বৃষ্টি থ হয়ে দাঁড়ায় যায়। দ্রূত ছেলেটা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে চাইলে তখন ছেলেটা বলে,”আমাকে দ্রুত আমার বাড়িতে নিয়ে চলো। আমি বাঁচবো না তা খুব ভালো করে জানি না। তুমি জানো না আমি আমার পরিবারের কাছে সবটা ক্লিয়ার না করতে পারলে তোমার জীবন ত্যাজপাতা হয়ে যাবে।”

বৃষ্টি নাছোড়বান্দা! সে ছেলেটা কে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার দেখে বলে উনাকে বাঁচানো সম্ভব না। ছেলেটা বৃষ্টিকে ওর বাড়ির ঠিকানা দেয় তখন বৃষ্টি আর রিনি মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

মির্জা বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই ডায়না- মির্জা দেখে তার ছেলে সাগর মির্জা কে দুটি মেয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের ছেলেকে এমন রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে জোড়ে চিৎকার করে ওঠে। তার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই নিচে এসে উপস্থিত হয়।
সাগর তার মায়ের বুকের উপর মাথা রেখে ঢুলে পড়ে। সাগরের মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে মেঝেতে বসে পড়ে।
সাগর তখন বৃষ্টিকে লক্ষ করে বলে, ” মা ঐ মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হয়…. বাকিটা বলার আগেই সাগর তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।”

মির্জা বাড়িতে শোকের কালোরাত নেমে আসে। সাগরে মা রেগে বৃষ্টিকে তাদের বাড়ির গার্ড দিয়ে অন্ধকার একটা রুমে বন্ধ করে রাখে।

সাগরে বাড়ির সবাই শোকেজর্জরিত এসবের মাঝে কারো বৃষ্টির কথা মনে নেই। কাজের মানুষেরা সময়মত শুধু খাবার দিয়ে যেতো। এভাবে কয়েকদিন কেটে যাবার পর ডায়না মির্জা বৃষ্টির রুমে এসে বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে ওরে খুব মারধোর করে। বৃষ্টি তাদের কাছে প্রচুর আকুতি মিনুতি করে বলে সে সাগরের বউ না তাদের বোঝার মাঝে ভুল আছে। বৃষ্টির রিনিকে ডেকে পাঠায়। রিনি তার বাবা-মা কে সাথে করে নিয়ে এসে মির্জা বাড়ির সবার সমানে বলে,”সেদিন নাটকের মঞ্চে সাগরের সাথে বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গেছে। সাগরের সাথে বৃষ্টির অনেক আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। আমরা আসার পথে সাগরের এক্সিডেন্ট হয়। সব দোষ বৃষ্টির।”

বৃষ্টি সেদিন চিৎকার চেঁচামেচি করে বলে,” রিনির সব কথা মিথ্যা! আমার সাথে সাগরের কোন সম্পর্ক নেই।আমি বিবাহিত না।”

রিনির পরিবার চলে যাইবার পর বৃষ্টির সাথে মির্জা পরিবারের সবাই অনেক খারাপ ব্যবহার করে। বৃষ্টিকে দিয়ে জোড় করে বৈধব্য পালন করায়। ইসলামিক নিয়মে ৪মাস ১০ দিন তাকে সবার কাছ থেকে আড়ালে রাখে। বৃষ্টির এসব কাহিনী শোনার পর বৃষ্টির বাবা মারা যায়। তবে বৃষ্টিকে মির্জা পরিবারের কেউ যেতে দেয় না। মেয়েটা চাচা-চাচীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারাও বৃষ্টিকে ধিক্কার জানায়।
এভাবে অন্ধকারের মাঝে নিজের সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা করতে করতে একটা সময় নিজেই হাল ছেড়ে দেয়। এভাবে অন্ধকারে নানারকম যন্ত্রণা-গঞ্জনা সহ্য করে বৃষ্টির দুই বছর পার করে।

এরপরের কাহিনী তো সবার জানা। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছে বলে আজ বৃষ্টি ঐ অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে। সেদিন যদি ইচ্ছা করতো তাহলে তোর বাবা মা নিজের মেয়ের মিথ্যা অপবাদ থেকে বৃষ্টিকে বাঁচাতে পারতে। জীবন্ত অবস্থায় মেয়েটা জাহান্নামের স্বাদ ভোগ করেছে।
(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here