রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -২৮

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_28

আজ খুব ভোরে হঠাৎ করে বিহান তার বাড়িতে উপস্থিত হয়। অন্যান্য দিনের মতো আজকেও বিহান কে দেখেও না দেখার ভান করে রিনি নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।

হঠাৎ করে বিহান রিনির সামনে এসে দাঁড়ায়! রিনি একটু চমকে ওঠে। কারণ, বিহান কখনো হুট এভাবে ওর সামনে আসে না। সামনেই তো আসে না তাহলে আজ কেনো আসছে?

বিহান গম্ভীর কন্ঠে বলে,”রুমে যাও দ্রুত রেডি হয়ে নিচে চলে আসবে।”

রিনি- কিন্তু কেনো?

বিহান – যা করতর বলেছি তাই করো।
তোমার কোনো প্রশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য না।

রিনি- আমিও কারো কথা মতো চলতে রাজী না।
তাই কারণ না বলা পর্যন্ত আমি এক পাও কোথাও যাবো না।

বিহান – গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আজ তো ছয় মাস হয়ে গেছে। তোমাকে প্রথমে ভার্সিটি তে নিয়ে যাবো বয়ান দেওয়াতে। তারপর তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাবো।”

রিনি- বাড়িতে যাবার কথা শুনে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায় রেডি হতে। রেডি হয়ে নিচে আসার সময় সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে আসে।

রিনির হাতে বড় কাপড়ের ব্যাগ দেখে বিহান গম্ভীর কন্ঠে বলে,”যে ভাবে এক কাপড়ে এ বাড়িতে এসেছিলে আজ ঠিক সে ভাবে ফেরত যাবে।”

রিনি এবার প্রতিবাদী কন্ঠে বলে,”আমার ব্যবহৃত জিনিশপত্র রেখে কেনো যাবো?”

বিহান – এই মেয়ে এতো অযথা তর্ক কেনো করো? তোমার বাপের টাকার অভাব নেই। সে বাড়িতে বহুত কাপড়চোপড় আছে। আমাদের গরীবদের বাড়ির কাপড় নিয়ে গেলে তোমার সম্মান থাকবে না। এই বন্যা (বিহানের বোন) দ্রুত ব্যাগটা রুমে রেখে আয়।

বিহান কথা গুলো বলেই হনহন করে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে। রিনি আর কোন উপায় না পেয়ে বিহানের পিছনে দ্রুত ছুটতে থাকে।

এদিকে রিনিকে নিয়ে বিহান সোজা খান বাড়ির রাস্তায় চলতে শুরু করে। তখন রিনি বলে,”আপনি না আগে ভার্সিটিতে যেতে চাইছিলেন! তাহলে হঠাৎ আগে আমার বাড়ির পথে কেনো? আপনার সাথে ভার্সিটিতে যাওয়াটা খুব দরকারি কাজ তো।”

বিহান – সে বিষয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।

রিনি চুপচাপ নিজের বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
বৃষ্টি বাড়ির যতো সামনে এগিয়ে আসতে থাকে ততোটা অবাক হতে থাকে। তার বাড়ির আশেপাশে অনেক মানুষের ভীড়। রিনি খুশি মনে বলে ওঠে,”দেখেন আজ আমি ফিরে আসবো বলে বাবা আমার জন্য বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কতো মানুষের আয়োজন করেছে।”

বিহান মলিন মুখে বলে,”হুম ভালোই! ”

রিনি- বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই থমকে যায়। তাদের বাড়ির সামনে বহু মানুষের ভীড়। তবে সে ভীড় কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানের নয়। এটা শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান। রিনির বুকের মাঝে মোচড়াতে শুরু করে। আল্লাহ আমাদের বাড়ির সামনে খাটিয়াতে সাদা কাফনের কাপড়ে কাকে মুড়িয়ে রেখেছে? একটু বাড়ির ভেতরে দিকে যেতেই দেখে মিসেস খান কে তার বোন জড়িয়ে ধরে বসে আছে। প্রচুর কান্নাকাটি করছে সে। ঠিক অপরপাশে রোদ বিষণ্ণায় আচ্ছন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদকে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টির দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির চোখে জল! রোদের চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে।

রিনিকে দেখেই মিসেস খান ছুটে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করে। রিনি মা কে জড়িয়ে ধরতেই মিসেস খান বলে,”রিনি তোর বাবা…! ”

রিনির বাবার কথা শুনতেই জমে বরফে পরিণত হয়। ওর মস্তিষ্কে জানান দেয় তাহলে ঐ সাদা কাপড়ের মোড়ানো লাশ টা আমার বাবার!

রিনির মস্তিষ্কচালনা কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। একটুপর রিনি তার মা কে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে এসে খুব জোড়ে বাবা বলে চিৎকার করে ওঠে।

রিনির চিৎকারে পুরো পরিবেশটা স্তব্ধ হয়ে যায়।

রোদ রিনির কাছে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরতেই রিনি রোদ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আমার বাবা নেই এই কথাটা আমাকে জানানোর যে প্রয়োজন মনে করে নাই। আমাকে স্পর্শ করার কোন অধিকার তার নেই।

রিনি দৌড়ে গিয়ে বাবার লাশের পাশে বসে কান্নাকাটি করতে থাকে। বিহান বৃষ্টির কাছে এসে বলে রিনিকে বাড়ির অন্দরমহলে নিয়ে যেতে।

রিনির বাবার মুখটা একটু দেখার পর বৃষ্টি এসে জোড় করে রিনিকে বাড়িরে ভেতরে নিয়ে চলে আসে।
এরপর বাড়ির পুরুষের জানাজা নিয়ে কবরস্থানে চলে যায়।

কবর স্থান থেকে রোদ আর বিহান বাড়িতে ফিরে এসে দেখে পুরোবাড়িতে নিরবতা বিরাজ করছে। এটা বাড়ি না অন্যকিছু বুঝতে পারছেনা।

বিহান রোদকে বলে,”এমটা হলো কি করে?”

রোদ- বাবার শরীরটা কয়েকদিন ভালো যাচ্ছিল না। মেডিসিন দিয়েছিলাম তবে সে মেডিসিন খায় নি। কিসের যে এতো টেনশন করছিল সে আল্লাহ জানে। অতিরিক্ত টেনশনের কারণে সে স্টোক করে।প্রতিদিনের মতো রাতে সে সুস্থ ভাবে ঘুমিয়ে ছিলো। সে ঘুমের মাঝে স্টোক করে। আমরা কেউ বুঝতে পারি নাই। আম্মা রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে বাবার কাছে এসে তার গায়ে হাত দিয়ে চিৎকার করে ওঠে। আম্মুর চিৎকার শুনে আমরা রুমে চলে আসি। বাবাকে চেকআপে পর বুঝতে পারি সে আর এই দুনিয়াতে নাই।

বিহান -ওহ আচ্ছা! তা তোমার ছোট কাকার ছেলেকে তো দেখলাম না!

রোদ- সাদিকের ভাগ্যটা খুব খারাপ। কাল রাতেই সে ব্যবসার কাজে বাহিরে গেছে। ওর সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। যখন যোগাযোগ করা হয়েছে তখন অনেকটা সময় দেড়ি হয়ে গেছে। ওর আসতে সময় লাগতো তাই কেউ ওর জন্য অপেক্ষা করি নাই।

এদিকে বৃষ্টি রোদ আর বিহানের সামনে হালকা একটু খাবার রেখে বলে,”শোক পালনের জন্য শক্তির দরকার! আর শক্তির জন্য একটু হলেও খাবার খেতে হয়।”

রোদ আর কিছুই বলে না! বিহান নিজেই রোদ কে জোর করে একটু খাবার খেতে বাধ্য করে।

এদিকে রিনির খালামনি ওর মা’র সাথে তার রুমে আছে। রিনির মা অসুস্থ হয়ে গেছে। তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়ছে।

বৃষ্টি রিনির জন্য একটু খাবার নিয়ে সামনে যেতেই রিনি বৃষ্টির উপর চিৎকার করে ওঠে।

বৃষ্টি- আহ রিনি এমন করতে নেই। সারাদিন না খেয়ে আছো। একটু কিছু মুখে দাও নয়তো অসুস্থ হয়ে যাবে।

রিনি- তুই একটা ডায়নি! তোর জন্য আমার বাবা মারা গেছে। তুই যখনি আমার জীবনে আশিস তখুনি আমার দুঃখের শেষ হয় না। এর আগেও তোর জন্য বিপদে পড়েছিলাম। তখন বাবা-মা ছিলো বলে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু এবার তোর জন্য আমার বাবাই চলে গেছে।

এমন সময় রিনির গালে ঠাশ করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় রিনির দাদীমা। তিনি নিজের পুত্র শোকেজর্জরিত। তবে এতোটাই না যে রিনির এতো বেহুদা কথাবার্তা মেনে নিবে। আর কেউ না জানুক তিনি জানে বৃষ্টির কোন দোষ নেই। আল্লাহ চাই-ছে তাই তার পুত্র আল্লাহর কাছে চলে গেছে। সবাই কে যেতে হবে একদিন আগে তো পড়ে। তবে এভাবে বাড়ি ভরা আত্মীয়দের সামনে বাড়ির বউয়ের অপমান সে মেনে নিতে পারবে না। রিনি যদি মেয়ে হয় তাহলে উনি রিনির বাবার গর্ভধারিণী মা।
যদিও দুইবছর আগে রিনির জন্য তিনি রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলো। তবে আজ ছেলেকে শেষ বিদায় দিতে ঠিকি ফিরে আসতে হলো।

রিনি থাপ্পড় খেয়ে কোনো কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। কারণ তা দাদীমা মানুষটা সুবিধের না। এই শোকেজর্জরিত মূর্হত্বে যদি তার কালো অতীত সামনে চলে আসে তাহলে মান-সম্মান থাকবে না।

বৃষ্টি বিহানের জন্য গেস্ট রুমে থাকার আলাদাভাবে ব্যবস্থা করে দেয়।

এদিকে রোদ নিজের রুমে এসে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। বৃষ্টি জনে পুরুষেরা সহজে কান্না করে না। তবে যখন কান্না করে তখন তাদের বাধা দিতে নেই।

এভাবে শোকেজর্জরিত মানুষদের দিন গুলো কাটতে থাকে। সাদিক বাড়িতে ফিরে এসে প্রচুর আফসোস করে। রিয়ানা কে খবর দেওয়া হয়েছে তবে সে আসতে পারবে না বলে সোজা জানিয়ে দিয়েছে। রিয়ার এমন কান্ডে বাড়ির সবাই হতভম্ব হয়ে থাকে।
(কাল বা পরশুদিন ইনশাআল্লাহ অতীত ক্লিয়ার করা হবে)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here