রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -২৬

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_26

বৃষ্টি এমন এক নতুন বউ যে তার বউ ভাতের অনুষ্ঠানকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করে।
বৃষ্টির এমন কাজে তার শ্বশুর-বাড়ির সবাই হতবাক।

নতুন বউ লজ্জায় লাল হয়ে থাকবে। লজ্জার ঠেলাতে সবার সামনে মাথা উঁচু করে তাকাতেই পারবে না। তবে এই মেয়ের মধ্যে কোথাও লজ্জার ছিঁটেফোঁটা নেই।

রোদ বৃষ্টি এই হঠাৎ আজারে কাজ দেখে বিরক্ত হচ্ছে। এই মেয়েটার জন্য এমনিতে নিজের সাথে পরিবারের সবাই অশান্তিতে আছে তার মধ্যে এমন ব্যাঙ্গমি করছে।

এই জন্য বলে কুমারী মেয়ে বিবাহ করা উওম! বিবাহিত মেয়ে দেখে লাজ-লজ্জা বিষর্জন দিয়েছে। নতুন বউয়ের কোন আভাষ নেই তার মধ্যে বিদ্যা মান। যদি ছিঁটেফোঁটা থাকতো তাহলে বিয়ের পরেরদিন এভাবে ধেইধেই করে সারাবাড়ি মাথায় করে রাখতে পারতো না। মনে হচ্ছে এ বাড়ির গিন্নি সে। বাড়ির সব কিছুতেই তার বিচরণ।

বৃষ্টি বউভাতের জন্য রেডি হয়ে নিচে স্টেজের সামনে এসে বসে। বৃষ্টির একজন কে ডাক দিয়ে কি যেনো বলে। তারপর তার বউভাতের স্টেজের সামনে সাংবাদিক আর মিডিয়ার লোকজন এসে জড়ো হয়।

তারা বৃষ্টিকে কে নানারকম প্রশ্ন করে। তাদের সবার প্রশ্ন গুলো বৃষ্টি নিরবে শুনতে থাকে। তাদের সবার প্রশ্ন করা শেষ হলে বৃষ্টি বলে,”আপনাদের বলা শেষ হয়ছে এবার আমি বলবো আপনারা শুনবেন। ”

এমন সময় শিকদার মির্জা তার বাড়িতে টেলিভিশন চালু করে দেখে বৃষ্টির লাইভ প্রোগ্রাম চলছে। বউয়ের সাজে স্টেজের সামনে চুপচাপ বসে আছে বৃষ্টি। শিকদার মির্জা মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছে। যদি তার পরিবার সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য করে এই মেয়ে তাহলে সামনে ইলেকশনে তার প্রভাব খুব বাজে ভাবে পরবে। এই মেয়ের জন্য আজ বুঝি এতোবছরের মান-সম্মান একদম ধুলোয় মিশে যাবে।

ডায়না মির্জা ও চুপচাপ টিভির সামনে অধীর আগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির বক্তব্য শুনবে। সে শিউর এই মেয়ে আজ তাদের সব কিছু ধ্বংস করে দিবে। এই ডায়নি মেয়ের বিশ্বাস নেই।

এদিকে বৃষ্টি সবার উদ্দেশ্য বলতে শুরু করে।
– আসসালামু আলাইকুম।
আমি অনেক ভাগ্যবতী নারী! কেনো জানেন? উঁহু কেউ জানেন না। আমি বলছি আপনাদের। সারা পৃথীবির নজরে আমি বিধবা! কিন্তু শিকদার মির্জা এবং তার পরিবারের সবার কাছে আমি তাদের বাড়ির মেয়ে। তারা কোনদিন ও আমাকে বিধবা বউয়ের নজরে দেখে নি। তারা সব সময় আমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছে। তা-ই তো দেখেন আজ কতো ভালো একটা পরিবারে আমার বিবাহ দিলেন। আমি তো নিজেও ভাবতেই পারি নাই আমার জীবনে কখনো এমন একটা সুন্দর সংসার হতে পারে। শিকদার মির্জার পরিবারে টাকাকড়ি, মান-সম্মান কোন কিছুর কমতি ছিলো না। ইচ্ছা করলে আমি সারাজীবন তাদের বাড়িতে বসে বসে খেতে পাড়তাম। আর কিছুদিন গেলেই হয়তো আমিও রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়তাম। তবে ঐ যে তারা আমাকে নিজের ছোট ছেলের বিধবা বউ না, মেয়ে মনে করে তাই রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই আমাকে সংসারী করে দিলেন। তারা জানতো একটা ইয়াং মেয়ে সারাজীবন একাকী কাটাতে পারে না। একটা সময় পর তার সঙ্গীর দরকার হবে। তাছাড়া একা একটা মেয়ের এই সমাজে প্রচুর সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। তারা আমার সব কিছু ভেবেছিল বলে আজ আমি এই শহরের বড় নাম করা বাড়ির বউ। তাহলে সবাই বুঝতেই পারছেন শিকদার মির্জা এবং তার পরিবারের সবার মন মানুষিকতা কতোটা উন্নত মানের। তারা আমাকে নিয়ে যখন এতো কিছু চিন্তা ভাবনা করেছে তখন নিজের দেশ কে নিয়ে কতো বেশি চিন্তা করবেন।আশা করি সবাই আমাকে দেখেই বুঝবেন তাদের মন-মানুষিকতা। তাই আমি চাই-বো দেশের সবাই শিকদার মির্জার পরিবারের সাথে থাকবেন সব সময়। আমি এখন তার পরিবারের সদস্য না তাতে কি হয়েছে? দুই বছর তারা আমাকে ভালোবাসার চাদরে আগলে রেখেছিল। সেই ভালোবাসার জন্য হলেও আমি সব সময় তাদের ভালোই চাই-বো। আশা করি আপনারা সবাই তাদের পাশে সব সময় থাকবেন ধন্যবাদ সবাই কে।”

বৃষ্টির বক্তব্য শেষ হতেই সবাই স্টেজের সামনে থেকে চলে যায়। বৃষ্টি চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে।

রোদ- বৃষ্টির এমন বক্তব্য শুনে চরম আকারে অবাক হয়েছে। কোন বিধবা মেয়ে যে তার প্রাক্তন শ্বশুর-বাড়ি সম্পর্কে এমন বক্তব্য দিতে পারে তা রোদের চিন্তা ধারার বাহিরে ছিলো। তবে মেয়েটা অনেক সাহসী নয়তো নিজের বর্তমান শ্বশুর বাড়িতে বসে প্রাক্তনের বাড়ির লোকের জন্য এতো তামঝাম করতেই পারতোনা। বৃষ্টির এমন কাজে বোঝা যায় মেয়েটা অনেক সত্যবাদী। সে আর পাঁচ-দশটা স্বার্থপর মেয়ের মতো নয়। যারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

এদিকে শিকদার মির্জা তার স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে বলে,”
দেখেছো মেয়েটার মন কতো বড়? নয়তো আমরা ওর সাথে এতো অন্যায় করেছি তারপর ও আমাদের উপকার করছে।”

ডায়না- ঐ ডায়নি আমাদের কোন উপকার করছে না। নিজের স্বার্থ হাসিল হয়ে গেছে তাই আমাদের তাচ্ছিল্য প্রকাশ করছে।

শিকদার মির্জা – কোন মেয়ে এতোটা বোকামি করবে না নিজের বর্তমান স্বামীর বাড়িতে গিয়ে প্রাক্তনের পরিবারের জন্য ঢাক-ডোল পিটাবে। তুমি বৃষ্টিকে একটু ভুল বোঝা কম করো। আর কতো ভুল বুঝবে মেয়েটাকে?

ডায়না- ঐ ডায়নির জন্য আমি আমার কলিজার টুকরো কে হারিয়েছি। আমি কোনদিন ও ঐ বেয়াদব মেয়েকে মাফ করবো না। ডায়নি মেয়ের জন্য আমার ছেলেটা আজ পরপারে। সেদিন সকালে ছেলেকে হাসি মুখে বাড়ি থেকর বিদায় করেছিলাম আর রাতে ঐ ডায়নি মেয়ে স্ত্রীর হয়ে আমার ছেলের লাশ বয়ে নিয়ে এসেছিল। ঐ মেয়ে আমার ছেলেকে নিজের সৌন্দর্যের জালে ফাঁসিয়ে মেরে দিছে। ওরে কোনদিন ও আমি ছাড়বো না।

শিকদার মির্জা – জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে সব আল্লাহর ইচ্ছা। সেখানে সেদিন আমাদের ছেলের হায়াত ফুরিয়ে গেছিল তাই সে পরপারে চলে গেছে। এখানে বৃষ্টির কোন দোয় নেই। অযথা আমাদের বোকামির জন্য মেয়েটা দু বছর নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছে। আর না বহুত হয়ছে। এবার মেয়েটার সুখের দিন।আমি চাই- না আমার পরিবারের কেউ বৃষ্টির সুখের পথে কাঁটা হবে।
আমি নিজেই ওর জীবনটা কে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো।

বৃষ্টির বউভাতের অনুষ্ঠানে ওর বাবার বাড়ির কেউ নেই। বৃষ্টির পক্ষে কেউ নেই দেখে মিসেস খান নানারকম কথা শোনাতে থাকে।

এদিকে বৃষ্টিকে শুভেচ্ছা জানাতে রিয়ানা আসে। রিয়ানা এসে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”জানো একটা সময় এটা নির্ধারিত ছিলো যে রোদের পাশের স্থান টা আমার হবে। আফসোস আজ রোদের পাশে তুমি! তবে তাতে আমার বিন্দু পরিমাণে আফসোস নেই।”

বৃষ্টি শুধু রিয়ানা কে একটা সৌজনমূলক হাসি উপহার দেয়।
(এর আগে গল্পটা লিখেছিলাম! তবে নেট সমস্যার জন্য সেভ করতে পারি নাই। আর কপি করতে গিয়ে দেখি পুরোটা রিমুভ হয়ে গেছে। একবার লেখা গল্প রিমুভ হলে দ্বিতীয় বার একই পর্ব লেখা বড় বেদনাময়।)



চলবে……!!???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here