রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -১৮

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ১৮
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“এই হারামি তুই এখানে এভাবে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? সেই কখন থেকে তোকে খুঁজে যাচ্ছি। ভার্সিটিতেও পেলাম না কোথায় গিয়েছিলি তুই??”

রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো আরশি। স্থির চোখে রৌদ্রর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক তখনই নীল এসে আরশির মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে রাগান্বিত হয়ে কথা গুলো বলল।

আরশি নীলের দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাতেই নীল ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও বলে উঠলো-

“ফোন কই থাকে তোর কত বার কল করেছি আমরা দেখছিস?? কাসফি তোর জন্য চিন্তা করতে করতে অস্থির হয়ে পরেছে।”

“কাসফি ঘুমাচ্ছিলো তাই আমি ওকে মেসেজ দিয়ে এসেছিলাম। আর এখানে এতো অস্থির হওয়ার কি আছে??”

আরশির এমন নির্লিপ্ত জবাবে নীল একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে হতাশ হয়ে বলল-

“কিছু না রে বইন। তুই আমাদের কল রিসিভ করিস নি কেন??

আরশি ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে দেখে পঞ্চাশ বারেও বেশি কল এসেছে সবার। এত গুলো কল দেখে আরশি ভড়কে উঠলো দাঁত কেলিয়ে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল-

” আসলে ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো আমি খেয়াল করিনি।”

“ফোন কি সাইলেন্ট করে রাখার জন্য কিনেছিস?? চল বাসায় চল। কাসফির বকা না খেলে তুই ঠিক হবি না।”

নীল ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথা গুলো বলেই রেগেমেগে আরশির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরশি অপরাধীর মতো চুপসে আছে। কিছুটা সামনে যেতেই আদ্রাফ দৌড়ে তাদের কাছে আসলো। হাল্কা ঝুঁকে দু হাটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল-

“কোথায় পেয়েছিস ওকে নীল??”

“আমি পুরো ভার্সিটিতে খুঁজেছি আর ম্যাডাম এখানেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল হ্যাবলার মতো।”

আদ্রাফ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বিস্মিত হয়ে বলল-

“আশু তুই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলি কেন? আর কল রিসিভ করিস নি কেন??”

নীলার এবারও রাগে কটমট করে বলল-

“ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছেন উনি।”

“আমার খেয়াল ছিল না ফোনের কথা। তোরা শুধু শুধুই রেগে যাচ্ছিস।”

“কি খেয়াল থাকে তোর আশু? তুই একা একা ভার্সিটি এসেছিস আমাদেরকে অন্তত বলতে পারতি। কাসফি না হয় অসুস্থ ছিল কিন্তু আমরা সবাই কি মরে গেছি না-কি!! আর ফোনটা কিসের জন্য এনেছিস সাথে করে যদি আমাদের কারও কলই তোর রিসিভ করার ইচ্ছা না থাকে।”

আদ্রাফের কঠিন বাক্য শুনে আরশি মাথা নিচু করে আছে। সাবাই এতোটা রেগে যাবে আরশি ভাবেনি। আরশি মিনমিন করে বলল-

“আচ্ছা হয়েছে তো এতো রেগে যাচ্ছিস কেন!!”

নীল এবার শান্ত গলায় বললো-

“শোন আশু আংকেল আন্টি আমাদের সবার উপর ভরসা করেই কিন্তু তোকে আবার ঢাকা পাঠিয়েছে। তুই নিশ্চয়ই ওইদিনের কথা ভুলে যাসনি!! তোকে নিয়ে আমাদের সকলের মধ্যেই ভয় ঢুকে গেছে। আমরা কেউ-ই চাইনা তোর সাথে কোনো খারাপ কিছু হোক। তাই দয়া করে এভাবে কাওকে কিছু না বলে একা একা বাহিরে যাস না। আর সব সময় নিজের ফোনটা চেক করিস। তুই ভালো করেই জানিস কাসফি তোকে নিয়ে কতটা চিন্তা করে। নিজের পাকনামির জন্য এখন বাসায় গিয়ে বকা খা আমাদের কি!!”

আরশি আর কিছু বললো না। চুপচাপ আদ্রাফ আর নীলের সাথে বাসায় চলে গেল। বাসায় পৌঁছে আরশি ভয়ে কাচুমাচু করে বলল-

“দোস্ত প্লিজ তোরা দুজন এবারের মতো আমাকে কাসফির কাছ থেকে রক্ষা কর। প্রমিজ আর কখনো এমন ভুল হবে না। কাসফিকে একটু বুঝয়ে বলিস আব্বু আম্মুর কাছে যেন এসব নিয়ে কিছু না বলে।”

আদ্রাফ আর নীল কিছু বললো না তার আগেই নীলা দরজা খুলে দিল। নীলাকে দেখে নীল ভ্রু কুচকে বলল-

“তুই কখন আসলি এখানে!! আর তোর চোখমুখ এমন ফোলা লাগছে কেন?? বাসায় তো ঠিকই দেখেছিলাম সকালে।”

নীলের কথা নীলা হকচকিয়ে উঠলো। অপ্রস্তুত হয়ে বলল-

“কাসফির ফোন পেয়ে এসেছি এই মাত্র বেশিক্ষন হয়নি। ভিতরে আয় তোরা কাসফি অপেক্ষা করছে।”

নীলা কোনো রকম করে কথা এড়িয়ে গেল। আদ্রাফের দিকে চোখ তুলেও তাকায় নি একবারের জন্য। সবাই ড্রয়িং রুমে আসতেই কাসফিয়া আরশিকে দেখে জ্বলন্ত চোখে তাকালো। কাসফিয়া কিছু বলবে তার আগে আদ্রাফ আরশিকে ধাক্কা দিয়ে শক্ত বলল-

“যা রুমে যা এখন। পুরো রাস্তা তো নীল আর আমার বোকা খেয়ে কান্না করতে করতে আসলি। এখন আবার নির্লজ্জের মতো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন!! রুমে যা।”

আদ্রাফের কথা আরশি বেকুব বনে গেক। আদ্রাফের দিকে গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে আছে। আর কাসফিয়া তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। আদ্রাফ আরশিকে চোখ টিপ দিতেই আরশি সব বুঝে গেল। আরশিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীল ধমকের স্বরে বললো-

“এখনো দাঁড়িয়ে কেন বেয়াদবের মতো!! আংকেলকে ফোন দিয়ে বলবো না-কি তুই যে একা একা ঘুরে বেড়াস! যা রুমে যা।”

আরশি দ্রুত রুমে চলে আসলো। রুমে এসেই দরজা লক করে জোরে জোরে হেসে দিলো। কাসফিকে এভাবে বোকা বানিয়ে তার খুব হাসি পাচ্ছে। রুম থেকে আরশির হাসির শব্দ শুনে কাসফিয়া বললো-

“আরশি কি হাসছে নাকি!!”

“আরে না হয়তো কান্না করছে বসে বসে। নীল আর আমি আজ প্রচুর বকা দিয়েছে গাধিটাকে এসব বাদ দে এখন, একটু পর এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কাসফিয়া আর কথা বাড়ালো না। নীলা বার বার না চাইতেও আদ্রাফের দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রাফ কাসফিয়ার সাথে কথা বলছে আর নীলা চুপচাপ দেখছে। নিজেকে সবার সামনে স্বাভাবিক রাখার অভিনয় করে যাচ্ছে খুব নিখুঁতভাবে। কেউ যেন কিছু বুঝতে না পারে সেই চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু ভিতর ভিতর যেন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে নীলা।

—————————

প্রিয় রৌদ্র,

আমার একটা চিঠিতে কেউ এতটা চমকে যেতে পারে আমার জানা ছিলো না। তবে আপনার কথা মতো অপেক্ষায় রইলাম আমাকে চমকে দিবেন সে আশায়। আরেকটা কথা আমি পাখিটার নাম কিভাবে রাখবো!! আমি তো আপনার মতো এত কাব্যিক নাম জানি না। তবুও ভেবে দেখবো খুজে পাই কি-না।

[বিঃদ্রঃ আমার গাছগুলোতে পানি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।]

ইতি,
রুদ্রাণী

রৌদ্র চিরকুটটা পরে একটা রহস্যময়ি হাসি দিয়ে বলল-

“আজকেই আপনাকে চমকে দিবো মিস আরু।”

রৌদ্র বেশি দেরি না করে একটা চিরকুট লিখে আরশির বারান্দায় ছুড়ে মারলো। তারপর নিজের মতো করে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরলো। সারারাত হসপিটালে জেগে থাকায় খুব ক্লান্তি লাগছিল তাই সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরলো রৌদ্র।

—————————

প্রিয় রুদ্রাণী,

আপনাকে বেশি অপেক্ষা করাবো না। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ছাদে আসবেন আপনাকে চমকে দিব। ভয় পাবেন না আমাকে ভরসা করতে পারেন। আপনার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

ইতি,
রৌদ্র

রৌদ্রর দেওয়া চিরকুটটা পরে আরশি ভাবনায় পরে গেল। কিভাবে আরশিকে চমকে দিবে তার চিঠির মানুষ!! তার কি ছাদে যাওয়া ঠিক হবে!!!

“আরশি বাহিরে আয় লাঞ্চ করবি। সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য।”

কাসফিয়া ডাকে আরশি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। মাথা থেকে এসব চিন্তা ভাবনা বের করে দরজা খুলে দিল। কাসফিয়াকে দেখেই মুখ গোমড়া করে ফেললো আরশি।

“আর নাটক করতে হবে না। আমি প্রথমেই বুঝে গেছি তোরা আমাকে বোকা বানাচ্ছিস। এইবারে মতো তোকে মাফ করে দিলাম কিন্তু পরের বার এমন কিছু করলে আমি নিজেই আংকেলকে বলবো তোকে যেন একেবারের জন্য বাসায় নিয়ে যায়। মনে রাখিস!”

কাসফিয়া কাঠকাঠ গলায় কথা গুলো বললো। আরশি কাসফিয়ার কাধ জড়িয়ে ধরে বলল-

“আচ্ছা মনে থাকবে। চল এখন হারামি গুলার কাছে যাই।”

আরশি সবার সাথে হাসি ঠাট্টায় বিকেল পর্যন্ত পাড় করে দিল। আদ্রাফ ওরা চলে যেতেই আরশি নিজের রুমে চলে আসলো। টেবিলের উপর নীল রঙের চিরকুটটা দেখে সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল ছাদে যাওয়ার কথা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পাঁচটার কাটা ছুই ছুই। আরশি পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে কিন্তু সময় যেন পাড়ই হচ্ছে না। আরশির মনে কৌতুহল কাজ করছে অনেক ছাদে কি সেই মানুষটা আসবে না-কি ভেবেই। অবশেষে পাঁচটা পঁচিশ মিনিটে কাসফিয়া কে ছাদে যাওয়ার কথা বলেই আরশি ছাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। ভয়ংকর রকমের কৌতুহল নিয়েই ছাদের দরজা খুলে ছাদে আসলো। পাশের ছাদে তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে আরশির ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। আরশি অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পরেও কাউকে দেখতে পেলো না। মনে মনে নিজের উপরই আরশির প্রচন্ড রাগ হচ্ছে চিঠির কথা মতো ছাদে এসে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here