#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ২৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat
প্রিয় রুদ্রাণী,
রুদ্রাণী কখনো আমাবস্যার চাঁদের মতো আঁধার হয়ে থাকে না। রুদ্রাণী তো রোদের মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠে। চারপাশ আলোতে উজ্জ্বল করে তোলে। আমি জানি আমার এই রুদ্রাণী কখনো আমাবস্যার মতো মন খারাপ করে থাকবে না। রোদের মতো হাস্যজ্বল হয়ে সবাইকে আলোকিত করে তুলবে।
ইতি
রৌদ্র
সকাল প্রায় ছয়টায় আরশির ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই নীলার কথা ভেবে মন খারাপ করে ফেলে। মনটা একটু হাল্কা করতেই বারান্দায় আসে। সকালের স্নিগ্ধতায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। আনমনে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর রুমে আসবে তখনই রৌদ্রর নীল রঙের চিরকুট মেঝেতে পরে থাকতে দেখে। হয়তো কাল রাতেই চিরকুটটা দিয়েছে। চিরকুটটা পড়েই আরশির ঠোঁটের কোণে তৃপ্তি তৃপ্তি ভরা হাসি ফুটে উঠেছে। চোখ বন্ধ করে লম্বা লম্বা করে তিনবার শ্বাস নিল। চিঠিটা পড়ে এই মুহূর্তে নিজের মনের মধ্যে প্রচন্ড ভালো লাগা অনুভব করলো। ছোট্ট একটা চিরকুট হলেও এর কয়েক লাইন পড়েই যেন মনোবল ফিরে পেল আরশি। সে বুঝে গেছে এখন তাকে কি করতে হবে। আরশি রুমে এসে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে গেল। কাসফিয়ার ফোনে ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ড্রয়িং রুমে এসেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল আরশি। মনে মনে কিছু একটা ভেবে আবারও রুমে এসে পরলো। দ্রুত পায়ে বারান্দা গিয়ে গোলাপ গাছ থেকে নতুন ফুটন্ত সব গুলো তাজা ফুল ছিড়ে সাইড ব্যাগ সুন্দর করে নিয়ে নিল। পাশের বারান্দায় এক ঝলক তাকিয়ে আবারও বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ঘড়ির কাঁটায় সাতটা বেজে দশ মিনিট। আরশি টাইম দেখে একটা বড় শ্বাস নিয়েই কলিং বেলে চাপ দিল। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। পরপর তিনবার কলিং বেল বাজানোর পর দরজা খুলে গেল। আরশি একটা মনকাড়া হাসি দিয়ে সালাম বিনিময় করলো।
“সরি আন্টি সকাল সকাল তোমার ঘুম ভেঙে দিলাম।”
মিসেস রোজা বেগম খানিকটা কড়া শাসনের স্বরে বললেন-
“এক থাপ্পড় দিব ফাজিল মেয়ে। সরি বলছিস কেন!! আয় ভিতরে আয়।”
আরশি ভিতরে এসে নম্রতার সাথে বললো-
“আসলে আন্টি আমি নিলুর কাছে এসেছিলাম। ও কি এখনো ঘুমাচ্ছে??”
রোজা বেগম চিন্তিত গলায় বললেন-
“আর বলিস না আরশি। কাল সন্ধ্যা থেকেই রুমের মধ্যে বসে আছে। ওর নাকি প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে আমাকে বলেছে আমি যেন ডাকাডাকি কিরে ডিস্টার্ব না করি।”
আরশি নীলার আম্মুর অগোচরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
“ওহহ… আচ্ছা নীল কবে আসবে আন্টি??”
“আজ অথবা কালকেই চলে আসবে। নীল তো যেতেই চায়নি ওর আব্বুই তো জোর করে নিয়ে গেছে অফিসের কাজে। যাইহোক তুই যা নীলার রুমে। আমি যাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাই।”
আরশি মাথা নাড়িয়ে নীলার রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজা খুলে রুমের ভিতরে আসলো। পুরো রুমে নজর বুলিয়ে নিল একবার। বারান্দার দরজা খোলা, মেঝেতে ফোনের ভেঙে যাওয়া টুকরো পরে আছে। বিছানার মাঝে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে নীলা। এলোমেলো চুল আর ফোলা ফোলা চোখ মুখ দেখেই আরশি সব বুঝে গেল। মেয়েটা সারারাত নির্ঘুম কেঁদে কেটেই পাড় করেছে। আরশি নীলার বিছানার পাশে এসেই চেচিয়ে ডাকা শুরু করলো।
“নিলু এইইইইই নিলু। আর কত ঘুমাবি ওঠ এবার। এইইইই নিলুউউউ…..”
আরশির ডাকে নীলা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। চোখ কচলিয়ে আরশিকে দেখেই হতভম্ব হয়ে গেল। দেয়াল ঘড়িতে একবার সময় দেখে বিস্ময় নিয়ে আরশির দিকে তাকালো। এই সময় আরশিকে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে নীলা। আরশি নীলার দৃষ্টি পাত্তা না দিয়ে ব্যাগ থেকে সব গুলো ফুল বের করলো। সুন্দর করে সব গুলো ফুল এক সাথে মিলিয়ে তোড়ার মতো করে নিল। নীলা হতবাক হয়ে আরশির কাজ দেখছে। কোনো কথা বলছে না। আরশি ফুল গুলো হাতে রেখেই নীলার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে মলিন কন্ঠে বললো-
“আমি জানি নিলু আমি তোকে যেই কষ্টের মুখোমুখি করয়েছি সেটা সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব না। তবুও আমি চাই তুই যেন আগের মতো হয়ে যাস। কখনো কষ্ট পেলে সেটা সবার থেকে লুকিয়ে রাখলেও অন্তত আমার সাথে অভিনয় করিস না প্লিজ। কষ্ট পেলে, কান্না আসলে তুই আমার সাথে শেয়ার করিস প্রয়োজনে আমরা দুজন মিলে একসঙ্গে বসে কান্না করবো। তবুও সব কিছু মনের মধ্যে চেপে রাখিস না। আমাকে তো তুই নিজের সব থেকে কাছের ফ্রেন্ড ভাবিস তাহলে আমার সামনে কেন এতো অভিনয় করে বেড়াস নিলু!!”
নীলা অশ্রুসিক্ত চোখে আরশির দিকে আছে। নোনাপানিতে ভরে উঠেছে নীলার দুটি চোখ। হয়তো এখনই গাল গড়িয়ে পরবে। আরশি নীলার দিকে ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল-
“ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ফেলেছিস তো কি হয়েছে আমি আছি তো। will you be my soulmate?? নিলু।”
নীলার এবার চোখেরজল ছেড়েই দিল। কান্নারত অবস্থাতেই ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে আরশির পাগলামি দেখে। আরশির নীলার পাশে বসতেই নীলার আরশিকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে দিল। আরশি নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিছুটা সময় পর নীলা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে বসে। আরশির হাত থেকে ফুল গুলো নিয়েই একটা মিষ্টি হাসি উপহার সরূপ দিল। আরশি মুখে কিছুটা গম্ভীর ভাব এনে বললো-
“এই আদ্রাফ হারামি নেই তাতে কি দেখিস আমি তোর জন্য রাজপুত্র খুঁজে বের করবো। জাস্ট কিছুটা দিন অপেক্ষা কর। তুই আর আমার হবু দুলাভাই হবে বেস্ট কাপল। তোরা দুজন যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবি তখন মানুষ তোদের দেখে জ্বলবে আর মমতাজের গান গাইবে ‘ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়’ তুই শুধু অপেক্ষা কর নিলু।”
আরশির কথা শুনে নীলা খিলখিল করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে আরশির পিঠে একটা চাপড় মেরে বললো-
“হারামি তুই চুপ কর। এসব কি কথা বলছিস??”
“হুহ্ তুই মিলিয়ে নিস আমার কথাটা।”
নীলা আরশির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল-
“তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আশু। তুই সকাল সকাল আমার মন ভালো করে দিলি। বস তুই আমি রেডি হয়ে আসি। আজ আমরা দুজন অনেক ঘুরবো।”
নীলা কথা গুলো বলতে বলতে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আরশি কিছুটা খেপে গিয়ে চেচিয়ে বলল-
“আর কখনো আমাকে ধন্যবাদ বললে তোর দাঁত ফেলে দিব নিলু।”
নীলা একটা ভেংচি কেটে ওয়াশরুমের চলে গেল।
—————————
মেঘলা বিকেল। চারপাশে অন্ধকার আর আকাশে কালো মেঘের খেলা হচ্ছে। শরীর কেপে ওঠার মতো হিমশীতল বাতাস বইছে। আরশি বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছে। কোমড় পর্যন্ত চুল গুলো বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে। পড়নে নীল রঙের কামিজ আর সাদা রঙের ওড়নাটাও বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে হেলেদুলে নড়ছে। আরশি চোখ বন্ধ করে এই শীতল পরিবেশ অনুভব করছে। আজ আরশির মনটা বড্ড বেশিই ভালো। নীলাকে আগের মতো হাস্যজ্বল দেখে বেশ স্বস্তি পেয়েছে। সারাসকাল নীলার সাথে ঘুরে ফিরে বাসায় পৌঁছে কাসফিয়াকে পেল না। কাসফিয়া বেরিয়েছে আদ্রাফের সাথে ঘুরতে। আরশি তো এটাই চেয়েছিল সবাই যেন নিজেদের মতো করে হাসিখুশি থাকে। রৌদ্র বারান্দায় এসে আরশিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিলো। রেলিঙের পাশে এসে আরশির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়ালো। আরশির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আচমকা বলে উঠলো-
“মিস আরু নিচে আসুন।”
আরশি চমকে উঠে। ফটাফট চোখ মেলে রৌদ্রর দিকে তাকালো। রৌদ্র দেখে আরেক দফায় চমকে উঠলো আরশি। মুচকি হাসি দিয়ে পকেটে দু হাত গুজে নীল রঙের শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে তাকে নীল রঙের শার্টে দেখার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে এই গম্ভীর মানুষটার মুখে হাসি দেখে। আরশির চাহনি দেখে মনে হচ্ছে রৌদ্রর মুখে হাসি দেখাটা খুবই অবিশ্বাস্য কিছু। আরশিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রৌদ্রর ঠোঁটের হাসিটা আরও প্রসারিত করে বলল-
“আমাকে দেখার আরও অনেক সুযোগ পাবে আরু।”
আরশি থামকাল। চোখের আকার বিস্ময়ে গোলাকৃতি ধারন করল। গলার কাছে আটকে আসতে লাগলো নিঃশ্বাস। রৌদ্র এভাবে তুমি সম্মোধন করে কথা বলছেন কেন?? আর মুচকি হাসছেন ই বা কেন?? আরশি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। রৌদ্রর এমন ব্যবহারে আরশির গলার স্বর যেন কৌতুহলের নিচে চাপা পরে আছে। কানে ভেসে আসছে রৌদ্রর শান্ত শীতল কন্ঠ-
“কি হলো মিস আরু!! কোথায় হারিয়ে গেলেন!!”
আরশির হুশ ফিরলো। চোখ জোড়ায় কৌতুহলের রেশ। একটা জোড়ালো শ্বাস ফেলে বলল-
“নাহ কিছু না।”
রৌদ্রর হাসলো। ডান হাতে কপালের উপর আছড়ে পড়া চুল গুলো পেছনে ঢেলে দিল। নম্র কন্ঠে বলল-
“পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি নিচে আসুন।”
রৌদ্র কথা শেষ করেই চলে গেল, বরাবরের মতো আরশির প্রতিত্তোরে অপেক্ষা না করে। আরশির বড়বড় চোখগুলোতে বিস্ময়ের তারা খেলে গেল। আজও আবার বাহিরে যেতে বলছে তাকে?? কিন্তু আজ আবার কেন!! আরশি ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। ধপধপ পায়ে রুমে চলে আসলো। সাদা রঙে ওড়নাটা বড় করে মাথায় ঘোমটা টেনে দিল। টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে বেরিয়ে পরলো। রৌদ্র একটা কালো রঙের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার মুখের ভাবভঙ্গি প্রকাশ পাচ্ছে। এক নজর তাকালেই তার হাসি মাখা ঠোঁটের দিকে সর্বপ্রথম নজর পরবে। আরশি রৌদ্রর দিকে একনজর তাকিয়ে মাথা নিচু করে এগিয়ে আসলো।
“গাড়িতে উঠুন মিস আরু।”
আরশি সন্দিহান কন্ঠে বললো-
“আপনার বাইক কোথায়? গাড়ি কেন আজ??”
“বর্ষাকাল আসছে তাই আম্মু গাড়ি পাঠিয়েছে যেন বাইকে ভিজে ভিজে কোথাও যেতে না হয়।”
আরশি ছোট্ট করে বলল-
“ওহহ।”
আরশি গাড়িতে উঠে বসলো বিনাবাক্যব্যয়ে। রৌদ্র গাড়িতে উঠে ড্রাইভ শুরু করলো। একটু পরপর আড় চোখে তাকাচ্ছে আরশির দিকে। বাতাসে আরশির ঘোমটা পড়ে গেছে। চুল গুলো এলোমেলোভাবে উড়ছে। আরশি চোখেমুখ প্রচন্ডভাবে অস্বস্তির প্রকাশ ঘটাচ্ছে। বেসামাল চুল আর রৌদ্রর বার বার আড় চোখে তাকানো সব মিলিয়ে আরশি পরেছে ভয়ংকর অস্বস্তির সাগরে। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পরেছে। কিছুটা পথ যেতেই গুরিগুরি বৃষ্টি শুরু হলো। জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি আরশির মুখ ছুয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে আরশির শরীর কিছুটা কেঁপে উঠল। তবুও আরশি জানার কাচ তুলছে না। আরশির মন খুব করে চাইছে এই বৃষ্টির মাঝে নিজেকে হারিয়ে দিতে। আরশির মনের সেই ইচ্ছে যেন রৌদ্রর মনেও হানা দিল। নির্জন এক ফাঁকা রাস্তায় এসেই গাড়ি থামিয়ে দিক। পিচঢালা সরু রাস্তা আর দু’পাশে বড়বড় গাছ তাছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। রৌদ্র গাড়ি থেকে নেমে গেল। আরশি চমকে রৌদ্রর দিকে তাকালো। বৃষ্টির বেগ আগের থেকে খানিকটা বেড়ে গেছে। রৌদ্রর পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির জানালার কাছে এসে ঝুঁকে আরশিকে বলল-
“বৃষ্টি আমার খুব বেশিই পছন্দ তাই বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ পেলে কখনো হাত ছাড়া করি না। মনের কোনো ইচ্ছে পূরণ করার সুযোগ পেলে তা নিয়ে ভাবতে নেই। সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গেই সেই ইচ্ছে পূরণ করে ফেলতে হয়।”
রৌদ্র শেষের কথা গুলো আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে তা আরশির বুঝতে বাকি রইলো না। আরশি কোনো কিছু না ভেবেই গাড়ি থেকে নেমে পরলো। গায়ের ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে নিল। গাড়ি থেকে কিছু দূরে গিয়েই চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলো। রৌদ্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে।
“মিস আরু আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
রৌদ্রর মুখে আচমকা এমন কথা শুনে আরশি বৃষ্টির মাঝেই চোখ বড় বড় করে বিস্ময় নিয়ে রৌদ্রর দিকে তাকালো। “রৌদ্র এই কথা কেন বলবে!! হয়তো ভুল শুনেছি, বৃষ্টির কারনে তো তেমন কিছু ভালো করে শোনাও যাচ্ছে না।” আরশি এসব ভেবেই আর পাত্তা দিল না। কিন্তু নাহ আরশির ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবারও একই কথা কানে ভেসে আসলো তবে কিছুটা ভিন্নভাবে। তীরের মতো কানে এসে আঘাত করলো এবারের কথাটা।
“আরু আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
পিচঢালা রাস্তার ঠিক মাঝে দুটি মানব বৃষ্টির পানিতে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির এই শীতল পানি ছুয়ে দিচ্ছে তাদের শরীর আর মন দুটোই। রৌদ্রর নীল রঙের শার্ট ভিজে লেপ্টে লেগে আছে তার দীর্ঘ শক্তপোক্ত দেহে। আরশি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রৌদ্রর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা অমায়িক হাসির দিকে। এই লোকটা এতো সুন্দর করে হাসতে পারে এটা আরশির জানা ছিল না। আরশি বেশখানিকটা সময় পর হুশ আসতেই তৎক্ষনাৎ চোখ ফিরিয়ে নিলো।
#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ২৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আরু।”
আরশি থমকে গেল। বজ্রপাতের মতো ঝাটকা খেল। মাথাটা ধপধপ করছে। চোখ কেমন যেন ঝাপসা হয়ে উঠেছে। কৌতুহল ভরা চোখে রৌদ্রকে দেখছে।
“আরু!!”
রৌদ্রর ডাকে আরশি সম্বিৎ ফিরে পেল। চোখ ফিরিয়ে নিল রৌদ্রর দিক থেকে। প্রচন্ড অস্থিরতায় চোখ বুজে ফেলল। জোড়াল নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল আরশি। আবারও রৌদ্রর দিকে তাকালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। চোখে মুখে কৌতুহল। কপালে চিন্তার ভাঁজ। আরশি নরম গলায় বলল-
“কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না ডক্টর।”
রৌদ্র সহজ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-
“কেন?”
আরশি ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। রৌদ্রর দিকে দৃষ্টি রেখেই নম্র কন্ঠে বলল-
“আপনাকে একটা কথা বলি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। হয়তো আমার কথা শোনার পর আমাকে বিয়ে করার চিন্তা আপনি নিজেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিবেন।”
রৌদ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল-
“হুম বলুন মিস আরু আমি শুনছি।”
আরশি বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে রৌদ্রর হাসিটা দেখল। আরশির কাছে খুবই রহস্যময় লাগছে এই হাসিটা। আরশি মুখের উপর লেপ্টে থাকা ভেজা চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিলো। সামনের ঝাপসা রাস্তায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কঠিন গলায় বললো-
“আমি কখনো মা হতে পারবো না। আমার এতবড় ব্যর্থতার কথা শুনেও কি এখনো বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান!!”
রৌদ্র চুপ করে আছে। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আরশি রৌদ্রর দিকে তাকালো। তীক্ষ্ণ চোখে রৌদ্রর মুখের ভাব পর্যবেক্ষণ করছে। আরশি আশাহত হলো। আরশির কথার বিনিময়ে রৌদ্রর মুখে তেমন কোনো ভাবভঙ্গীমা খুঁজে পেল না। রৌদ্র স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। রৌদ্রর পুরু ভ্রু খানিকটা কুচকে এলো। কিছুক্ষন নিরব থেকে ফুঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে সন্দিহান কন্ঠে বললো-
“প্রথমত, আপনি কখনো মা হতে পারবেন না এটা ভুল কথা। দ্বিতীয়ত, এটা এমন কোনো অজানা কথা নয় যা শুনলে আমি আমার কথা থেকে পিছিয়ে যাবো।”
রৌদ্র এমন কথায় যেন বেশ বড়সড় এক ধাক্কা খেল আরশি। বিস্ফোরিত চোখে রৌদ্রর দিকে তাকালো। দু কদম এগিয়ে গেল রৌদ্রর কাছে। চোখদুটি বড়বড় করে এলোমেলো মস্তিষ্ক নিয়ে রৌদ্রকে বোঝার চেষ্টা করছে আরশি। উত্তেজিত কন্ঠে বলল-
“অজানা কথা নয় মানে কি?? আপনি কি আমার এই কথা জানতেন??”
রৌদ্র মুচকি হাসলো। এক হাতে মুখের উপর লেগে থাকা বৃষ্টির পানি গুলো মুছে নিল। বৃষ্টির বেগ কমে এখন ঝিরিঝিরি ফোটা পরছে। আকাশে কালো মেঘের ছড়াছড়ি আর বিকেলের শেষ প্রহরের আগমন সব মিলিয়ে চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
“আমি আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম প্রায় আড়াই বছর আগে। আমাদের হসপিটালেই একটা কেবিনের বাহিরে বসে কান্না করছিলেন। সেদিনই ডক্টর আপনাকে বলেছিলেন আপনার মা হওয়ার চান্স খুব কম। তবে কখনো মা হতে পারবেন না এটা আপনার ভুল ধারণা।”
রৌদ্রর কথায় আরশি যেন আকাশ থেকে পরলো। অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল আরশি। প্রচন্ড কৌতুহল নিয়েই বলল-
“আপনি আমাকে আগে থেকে চিনতেন এটা আমাকে বলেননি কেন??”
রৌদ্র ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল-
“আমি আপনাকে চিনতাম না। হসপিটালে প্রথম আপনাকে কান্না করতে দেখে কিছুটা বিস্ময়ের বশেই ডক্টরের কাছে আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। তবে ওই ঘটনাটা ওইদিনই শেষ। আপনার চেহারা এমনকি আপনার কথাও আমার মনে ছিল না। বাসে এমন আকষ্মিক ঘটনা ঘটার পরেও আপনাকে চিনতে পারিনি। তবে পা মচকানোর সময় যখন আপনার ফ্রেন্ডের মুখে আশু নামটা শুনেছি তখনই হঠাৎ করে দু’বছর আগেই সেই কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আর এটা তো তেমন কোনো কারণ নয় যে আমি আপনাকে বিয়ে করার জন্য পিছ পা হবো।”
আরশির আশাভঙ্গ হলো। আকাশসম অস্বস্তি ঝেঁকে ধরেছে। অভ্যাসগত ভাবে হাত কচলানো শুরু হয়ে গেছে। এই প্রথম এমন কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছে। বাকি সব ছেলেদের মতো রৌদ্র পিছিয়ে যাচ্ছে না কিন্তু কেন!! রৌদ্র আরশির সামনা-সামনি এসে দাঁড়ালো। আরশির মাথায় আলতো করে হাত রেখে নরম সুরে বলল-
“আপনি মা হতে পারবেন কি না সেটা অনেক পরের কথা। আর এখানে তো আপনার কোনো দোষ নেই। শুধু শুধু কেন নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চাইছেন মিস আরু!!”
রৌদ্র মাথা থেকে হাত নামিয়ে পকেটে গুজে দিল। আরশি মাথা তুলে তাকালো। বড় একটা শ্বাস নিয়ে শান্ত চোখে রৌদ্রর দিকে চেয়ে বলল-
“আমি জেনে শুনে কোনো মানুষের জীবন নষ্ট করতে চাই না। সব পুরুষই চায় তার সন্তান তাকে বাবা বলে ডাকবে। প্রতিটি পরিবারই চায় তাদের ঘর আলোকিত হোক ছোট ছোট বাচ্চার খিলখিল হাসিতে। ঠিক তেমনি আপনারও নিশ্চয়ই ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে বাবা ডাক শোনার!! আপনার বাবা-মাও নিশ্চয়ই চায় আপনার সন্তানের মুখে দাদা-দাদি ডাক শুনতে, তাদের সাথে খেলতে! এমন আরও অনেক স্বপ্নই হয়তো তারা দেখছে আপনা ভবিষ্যত নিয়ে, আপনার সন্তান নিয়ে। আমি কিভাবে জেনে শুনে পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেসে দিতে পারি বলুন তো।”
রৌদ্রর মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ ফুটে উঠলো। ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। আঁধার নেমে এসে তার মনে। গম্ভীর গলায় বললো-
“বাচ্চা হবে কি না তার চিন্তা করে আপনি কেন আপনার নিজের জীবনটা নষ্ট করছেন?? একটা বাচ্চার জন্য নিশ্চয়ই আমাদের জীবন থেমে থাকবে না!! আর এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ হাতে। ভবিষ্যতে কি হবে না হবে তা ভেবে এখন কেন সব দূরে ঢেলে দিচ্ছেন। একটা সম্পর্কে ভালোবাসা বেশি ইম্পর্টেন্ট। সম্পর্কে মধ্যে ভালোবাসা থাকলে সন্তান ছাড়াও দুইটা মানুষ একা একা সারাজীবন সুখে শান্তিতে পাড় করে দিতে পারে।”
রৌদ্র কথা আরশির কাছে ভালো লাগলেও তেমন কোনো পরিবর্তন হলো না। আরশি আগের মতোই নির্লিপ্ত ভাবে বলল-
“ভালোবাসার কথা বলছেন!! সুখে শান্তিতে থাকার কথা বলছেন!! কিন্তু কতদিন?? দু বছর?? চার বছর!! বেশি হলে ছয় বছর না হয় সুখে শান্তিতে ভালোবাসা নিয়ে থাকবো। তারপরই শুরু হবে হাহাকার। সন্তানের জন্য হাহাকার। শুরু হবে আফসোস। কেউ বিয়ের এতবছর পরও বাবা ডাক শুনতে না পেরে হতাশ হবে। আবার কেউ কেউ দাদা-দাদি, ফুপি, চাচ্চু ডাক শুনতে না পেরে আফসোস করবে। আশেপাশের মানুষ নানানরকম তিক্ত কথা বলবে। বারবার জানতে চাইবে বাচ্চার কথা। এমন আরও অনেক পরিস্থিতিতেই তখন পরতে হবে। আর আমি চাই না এইসব কিছু আমার সাথে বা অন্য কারও সাথে হোক। নিজের সাথে সাথে আশেপাশের মানুষ গুলোকেও আমি কষ্ট দিতে পারবো না। সবার কষ্টের ভার বয়ে বেড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না। সেই শক্তি আমার নেই। তাই সারাজীবন একা একা থাকাই আমার কাছে বেটার অপশন বলে মনে হচ্ছে।”
রৌদ্র হতাশ হয়ে পরলো। কিছুটা দূরে গিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। বৃষ্টি থেমে গেছে কিছুটা সময় আগেই। চারপাশে এখন সতেজতা। স্নিগ্ধ পরিবেশ আর বৃষ্টির পানিতে কালো চিকচিক করা পিচঢালা রাস্তা সব কিছুতেই মুগ্ধতা ছেয়ে আছে। কিন্তু রৌদ্রর মন বিষাদে ভারে উঠেছে। চোখ মেলে গম্ভীরমুখে বলল-
“কাকতালীয় ভাবে আপনার সাথে আমার খুব মিল আছে মিস আরু।”
আরশি কৌতুহলে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে রৌদ্রর দিকে তাকালো। রৌদ্র আবারও আরশির কাছে আসলো। শান্ত গলায় বললো-
“আপনার মতো আমারও বাবা হওয়ার ক্ষমতা নেই। এই কথাটা এর আগে কাউকে বলিনি। নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখেছিলাম। আর এই কারনেই আজ পর্যন্ত কারও সাথে সম্পর্কে জড়ানোর সাহস পাইনি। তবে আপনাকে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো আপনি আমাকে মেনে নিবেন। যেহেতু আমরা একই মেরুর প্রানি। তাই সাহস নিয়েই আপনকে বিয়ের কথা বলেছি। তবে সমস্যা নেই আমি আপনাকে এখনই জোর করছি না আর কোনো চাপও সৃষ্টি করতে চাইছি না আপনার উপর। আমি চাই আপনি মন থেকেই আমাকে মেনে নিন।”
আরশি প্রচন্ডরকম চমকে উঠলো রৌদ্রর কথায়। আরশির মাথায় যেন বাজ পড়েছে। পুরো মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আজ যেন তার জন্য চমকে ওঠার দিন। একের পর এক ধাক্কা খেয়েই যাচ্ছে। আরশি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না এখন কি করা উচিত। নিজেকে কোনো মতে সামলিয়ে নিয়ে জড়ালো কন্ঠে বললো-
“আমি বাসায় যাবো।”
আরশি আর দেরি করলো না কথাটা বলে। ধীর পায়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো। রৌদ্র এখনো স্থির দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়। দৃষ্টি তার রুদ্রাণীর দিকে৷ ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি। ভেজা চুল গুলো হাতের আঙুলে ঝাড়া দিয়েই গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। গাড়িতে বসে হঠাৎ করেই ঝুঁকে পেছনের সিট থেকে একটা টাওয়েল নিল। আরশি একদম জানালার সাথে চেপে বসে আছে। রৌদ্র আচমকা আরশির মাথায় টাওয়েল দিয়ে ডেকে দু হাতে মাথা মুছে দিতে লাগলো। রৌদ্রর এমন কাজে আরশি পাথরের মত শক্ত হয়ে বসে আছে। শ্বাস আটকে আসছে। স্তব্ধ হয়ে আছে আরশি। বিন্দু পরিমাণ নাড়াচাড়া করার মতো শক্তি বা সাহস কিছুই পাচ্ছে না। রৌদ্র আরশির চুল গুলো মুছে দিয়ে টাওয়েলটা আরশির গায়েই জড়িয়ে দিল। রৌদ্র নিজের মতো করে ড্রাইভ করছে। আরশি পুরো রাস্তা একটা টু শব্দও করেনি। মনে হচ্ছে আজ একের পর এক ধাক্কা খেয়ে এখনও নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারেনি। বাসার কাছে এসে গাড়ি থামলো। আরশি চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে যেবে তখনই রৌদ্র ডাক দিল।
“আরু।”
আরশি থমকে গেল। দূর্বল চোখে রৌদ্রর দিকে তাকালো। রৌদ্রর আরশির মাথায় হাত দিয়ে শালীন কন্ঠে বলল-
“বাসায় যেয়ে গরম পানি দিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিও। আর জ্বর জ্বর ভাব বা ঠান্ডা লাগলে আমাকে একটা কল দিও। আমি বারান্দা দিয়ে ঔষধ দিয়ে দিব।”
আরশি মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলো। এক মুহূর্ত দেরি না করে বাসায় চলে গেল। রৌদ্র মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আসছে আরশির যাওয়ার পথে। আনমনেই একটা মুচকি হাসি দিল।
——————————
সারারাত বৃষ্টির পর স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। রোদের ঝলকানিতে চিকচিক করছে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাওয়া গাছের উজ্জ্বল সবুজ রঙের পাতা গুলো। কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। সূর্যের কিরণে পানির ফোটা গুলো হিরার মতো ঝলঝল করে পরছে। আরশি একা একা বসে আছে ভার্সিটির কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। রৌদ্রস্নাত এই সকালের স্নিগ্ধতায় মন ছু্ঁয়ে যাচ্ছে আরশির। কাল সন্ধ্যার ঘটনা গুলোর পর আরশির ঘুম যেন আরশির সাথে লুকোচুরি খেলছে। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে অতিষ্ঠ প্রায়। প্রচন্ড বিরক্ত হয়েই সকাল ভোরেই ভার্সিটি এসে পরেছে একা একা। প্রায় একঘন্টা ধরে বসে আছে এই বেঞ্চিতে। মাথার মধ্যে চলছে তুমুল ঘূর্ণিঝড়। রৌদ্রর বলা কথা আর কর্মকাণ্ড গুলো নিয়েই হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়। আরশি বুঝতে পারছে না কি সে করবে। তবে কাল রাত থেকে একবারও বারান্দায় যায়নি। রৌদ্রর মুখোমুখি হওয়া এখন আরশির জন্য ভয়ংকর লজ্জার ব্যাপার মনে হচ্ছে।
“কিরে তুই না-কি সকাল ভোরেই ভার্সিটিতে চলে এসেছিস!! পাগল নাকি তুই!! একা একা এখানে বসে করছিস!! তোর জন্য আমাদেরও তাড়াতাড়ি আসতে হলো।”
আরশি মাথা তুলে নীলের দিকে তাকালো। মুখে ক্লান্তির ছাপ। হয়তো খুব তাড়াহুড়ো করেই এসেছে। কিছুটা দূরেই নীলা দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে এদিকে।
চলবে…