রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -২৫

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ২৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat

নীলার ফোন বন্ধ শুনে আরশি কিছুটা চমকে উঠলো। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রৌদ্র আরশির দিকে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো। আরশি খানিকটা রেগে উচ্চস্বরেই কাসফিয়াকে বলল-

“তুই কেন বার বার নিলু ফোন দিচ্ছিস বুঝতে পারছি না। ওকে একটু একা ছেড়ে দে তো কাসফি।”

রৌদ্র চোখ বড় বড় করে বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই আরশি নিজেকে সামলিয়ে নিল। নিম্ন স্বরে আমতা-আমতা করে বলল-

“মানে তুই শুধু শুধুই চিন্তা করছিস। নিলুর সাথে আমার কথা হয়েছে ওর ফোনে চার্জ নেই। তাই বললাম তুই বার বার ওকে ফোন করিস না। আমি এখন রাখছি। তুই ঘুমিয়ে যা এখন।”

আরশি একদমে কথাগুলো বলেই তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিল। কাসফিয়াকে কিছু বলায়ার সুযোগই দেয় নি। কাসফিয়া আরশির এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে বোকা বনে গেল। ফোন হাতে নিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই সব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো। হয়তো রৌদ্রর সাথে আছে তাই এমন অদ্ভুত আচরণ করেছে এটা ভেবেই কাসফিয়া আর চিন্তা করলো না। আরশি ফোন রেখেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নীলাকে বার বার করছে শুনে আরশি নিজের অজান্তেই কাসফিয়ার উপর রেগে গিয়েছিল। রৌদ্র আরশির দিকে তাকিয়ে বলল-

“নীলা ঠিক আছে তো?? আপনার সাথে কথা হয়েছে সত্যি?”

আরশি মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো।

“তাহলে আপনি মিথ্যে বললেন কেন?? এই সিচুয়েশনে কি আপনার চিন্তা হচ্ছে না আপনার ফ্রেন্ডের জন্য!!”

আরশি চমকে উঠে রৌদ্রকে জিগ্যেস করলো-

“আপনি কিভাবে বুঝলেন এইসব?? আমি তো আপনাকে পুরো পুরি কিছুই বলিনি।”

রৌদ্র গম্ভীর গলায় বললো-

“যতটুকু বলেছেন তাতেই বুঝতে পেরেছিলাম কি হয়েছে আর এখন শিউর হয়ে গেলাম কার সাথে কি হয়েছে।”

আরশি ছোট্ট করে বলল-

“ওহহ”

“এখন কি করবেন! নীলার বাসায় যাবেন??”

আরশি নির্লিপ্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো-

“নিলুর বাসায় যাবো কেন??”

রৌদ্র ভ্রু কুচকে চিন্তিত গলায় বললো-

“উনি যদি খারাপ কিছু করে ফেলেন!!”

রৌদ্রর কথা আরশি মাথা নিচু করে কিছুটা সময় চুপ করে রইলো। মনে মনে নানানরকম হিসেবনিকেশ করে মাথা তুলে রৌদ্রর দিকে তাকালো। শান্ত গলায় বললো-

“হুহ্, নিলু এমন কিছু করবে না আমি জানি।”

কথাটা বলেই আরশি আগের জায়গায় গিয়ে বসে পরল। রৌদ্রও আরশির পাশে এসে বসলো। দুজনেই চুপ করে আছে। রৌদ্র আরশির থেকে নরজ সরিয়ে ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। আরশি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদটা কালো মেঘে ঢেকে আছে এখন। বাতাসও বইছে না। কেমন যেনে এক গুমোট থমথমে পরিবেশ হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই।

“যে মানুষটা অন্যের সুখের কথা ভেবে নিজের কষ্ট লুকিয়ে রাখে। অন্য কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ায়। আর যাইহোক সেই মানুষটা কখনো নিজের ক্ষতি করার মতো বোকামি করতে পারবে না আমি জানি। নিলুকে হয়তো এতদিন বোকাসোকা ইমোশনাল মেয়ে মনে হয়েছে সবার। হয়তো এখনো সবাই তা-ই ভাবে কিন্তু আমি দেখেছি ওর ভিতরের অন্য এক রূপের অস্বস্তি। নিজেকে সব সিচুয়েশনে সামলিয়ে নেওয়ার মতো শক্ত মানসিকতা আছে ওর মধ্যে। তাই ওকে নিয়ে আমি চিন্তা হচ্ছে না। এই মুহূর্তে হয়তো একা একা বসে অঝোরে চোখে পানি ফেলছে। প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছে। একদমই ভেঙে পরেছে এই মুহূর্তে। হয়তো সারাদিন অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে পরেছে তাই এখন নিজেকে অন্ধকার রুমে বন্দী করে রেখেছে নিলু। কারও সাথে যেন কথা বলতে না হয় সেই জন্যই ফোন অফ করে রেখেছে।”

রৌদ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরশির সব কথা শুনলো। আরশি মতো বেখেয়ালি মেয়ে তার ফ্রেন্ডদের ব্যাপারে এতো বেশিই খেয়াল রাখে সেটা দেখে রৌদ্র ঠোঁট আপনা আপনি প্রসারিত হয়ে গেল। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে রৌদ্র আরশির গম্ভীরমুখে।

“বাহহ আপনি তো খুব বড় হয়ে গেছেন মিস আরু। জ্ঞানী মানুষের মতো করে কথা বলা শিখে গেছেন।”

আরশি ভ্রু বাঁকিয়ে রৌদ্রর দিকে তাকালো। চটপটিয়ে বললে উঠলো-

“কেন এতো দিন কি আমাকে বাচ্চা মনে হয়েছে না-কি!!”

“আপনার মতো পিচ্চি মেয়েকে আর কি-ই বা মনে হতে পারে!!”

আরশি ক্ষিপ্ত হয়ে কর্কশ গলায় বললো-

“আপনি কিন্তু বড্ড বেশিই বাড়াবাড়ি করছেন ডক্টর।”

রৌদ্র উঠে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে শরীরর ঝেড়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো-

“বাচ্চাদের মতো ঝগড়াঝাটি না করে এখন বাসায় চলুন। বাচ্চাদের বেশি রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকা ঠিক না।”

আরশি প্রচন্ড রেগে বসা থেকে উঠেই রৌদ্রর দিকে তেড়ে গেল। কিন্তু হলো তার বিপরীতে। এলোমেলোভাবে পা ফেলতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে পেছনের দিকে ঝুঁকে পরলো। আরশি পড়ে যেতে নিলেই রৌদ্র আরশির ডান হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। আরশি ভয়ে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। রৌদ্র একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল-

“এবার নিজেই প্রমাণ পেয়ে গেলেন আপনি যে একটা বাচ্চা। শুধু বাচ্চা না বেখেয়ালি বাচ্চা।”

রৌদ্র কথাটা বলেই আরশির হাত টান দিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। আরশি সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই চোখ খুলে ফেললো। নিজেকে রৌদ্রর এতটা কাছে দেখে হকচকিয়ে পেছনে ফেরতেই হাতে টান পরলো। রৌদ্র আরশির হাত এখনো ধরে রেখেছে। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে তার রুদ্রাণীর দিকে। রৌদ্র হাত ছেড়ে দিতেই আরশি লজ্জায় মাথা নিচু করে গটগট করে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেল। রৌদ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে আরশির পেছন পেছন যেতে লাগলো।

————————

ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে নীলা। দু হাটুতে মুখ গুজে দিয়ে হিচকি তুলে কান্না করে যাচ্ছে অনবরত। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মেঝেতে পড়ে আছে ভাঙাচোরা মোবাইলের এক একটা টুকরো। বিছানার পাশের টেবিলেই রাখা আছে খাবার৷ ঠিক যেমনটা দিয়ে গিয়েছিল তেমনই আছে। কান্নাকাটি করার বেশ কিছুক্ষন পর মাথা তুলে তাকালো নীলা। চোখ গুলো রক্ত লাল বর্ন ধারণ করেছে। চোখ মুখ ফুলে চেহারা যেন একদমই অন্য রূপে পরিনত হয়ে গেছে। তবুও খুব স্নিগ্ধ লাগছে। মায়াবী লাগছে। দুধে-আলতা গায়ের চামড়ায় কান্নার ফলে লালচে আভা ফুটে উঠেছে। এই মুহূর্তে নীলা দেখলেই হয়তো যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। কান্নার পর মেয়েদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে যায় এটা নীলা দেখলেই প্রমানিত হবে। নীলাকে দেখে সবাই মুগ্ধ হলেও হয়তো তার ভালোবাসার মানুষটাই মুগ্ধ হবে না। তার ভালোবাসা মানুষ তো এখন অন্য কারও ভালোবাসায় মুগ্ধ। নীলা দু হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে চূল গুলো ঠিক করে নিল। নিজেকে সামলিয়ে মেঝে থেকে উঠে বারান্দায় চলে আসলো। দু হাত রেলিঙের উপর রেখে আকাশের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে। বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সুর তুলে গান গাইতে লাগলো।

জন্ম মৃত্যুর আর্বতনে পুনরজন্ম হবে
তোমার আবার দেখা পাব
কখন কে জানে
জন্ম মৃত্যুর আর্বতনে পুনরজন্ম হবে
তোমার আবার দেখা পাব
কখন কে জানে
দূরে যাও সরে যাও
রেখে যাও কিছু সৃতি তোমার আমার
জানি আবার একটি জন্ম আমার কবু হবে না।

জানি আবার এমন করে তোমার দেখা পাবো না
জানি আবার একটি জন্ম আমার কবু হবে না।

জানি আবার এমন করে তোমার দেখা পাবো না
সোজা সাত্তা একথা সত্য কথা বলি
তোমায় বিষন রকম ভালোবাসি
হাজার যুদ্ধ ভয়ে গেছে মনে
তোমায় এই কথা বলব বলে
বলা হয়নি কথা কি ছিলো এই মনে…..
বলা হয়নি কথা কি ছিলো এই মনে
জানি আবার একটি জন্ম আমার কবু হবে না।

জানি আবার এমন করে তোমার দেখা পাবো না
জানি আবার একটি জন্ম আমার কবু হবে না।

চলবে….
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here