#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৪
ইলা ফোনটা হাতে নিয়ে বসেই আছে।তার মনে অন্য ভয় জেকে বসেছে।মাহির সত্যি তার কোনো ক্ষতি করে দেবে না তো।
-আল্লাহ এমনিতেই নিজের ঝামেলায় বাঁচি না।এর মধ্যে কোথ থেকে যে এই মাহির লোকটা উদয় হলো কে জানে।বিপদ বিপদ শুধু বিপদ।বিপদ আমার বর,ওর সাথে করি ঘর।
ইলা ফোনটা খাটের ওপর ছুড়ে মেরে উঠে পড়লো।
১০
-স্যার আপনি ঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তো?
-নীল তুমি ভুল সিদ্ধান্তের কি দেখছো?
মাহির ল্যাপটপ টা বন্ধ করে নীলের দিকে মনোযোগ দিল।নীল বেশ কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।
-স্যার উনি একজন বার ড্যান্সার।ওনার ফ্যামিলি তো আপনার কাছে কিছুই নয়!
-ফ্যামিলি! হাহ।নীল খুব তো বিয়ে করেছিলাম হাই সট্যাটাস ওয়ালা ধনী পরিবারের মেয়েকে।কি পেলাম বলতে পারো?
মাহিরের কথা শুনে নীলের মাথা নিচু হয়ে গেল।
-সরি স্যার।
-নীল ধন সম্পদ ফ্যামিলি স্ট্যাটাস এগুলো দিয়ে মানুষের বিচার করতে যেও না।মানুষকে তার চরিত্র, তার মানুষত্য দিয়ে বিচার করতে শিখো।ইলা বার ড্যান্সার।কিন্তু কখনো কি এটা ভেবে দেখেছো কেন সে বার ড্যান্সার?কেন সে আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে না?
মাহিরের একটার পর একটা যুক্তি বুলেটের মতো নীলকে বিদ্ধ করে দিচ্ছে ,মেরে ফেলছে প্রতিটি পর্দা কে,পর্দার আড়ালের সত্য যে উতলে উঠছে।
-স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে।
-মানুষ মাত্রই ভুল।তুমি ও তার ব্যতিক্রম নও।
-স্যার বড় স্যার মেনে নেবেন তো?
-অনেক তো বাবার কথা ভেবেছি।বাবার সম্মানের কথা ভেবেছি।আর কতো।আমিতো মানুষ নীল।নিজের টা এবার ভাবতে চাই।যাও।ফাইল গুলো চেক করে আমাকে পাঠাও।
-জি স্যার।
-তোমাকে যেটা খোঁজ নিতে বলেছিলাম নিয়েছো?
-জি স্যার।নেওয়া শুরু করেছি।
-খবরদার।বাবা যেন টের না পায়।আমি কিন্তু বিশ্বাস ঘাতকতা একদম পছন্দ করি না নীল।বিশ্বাস করে যে ঠকতে ঠকতে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
-আমি বুঝি স্যার।আসছি।
নীল ফাইল হাতে নিয়ে কেবিনের দরজা লক করে বেরিয়ে গেল।
মাহির চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে।চোখ বুজে গভীর ভাবে কল্পনা করছে ইলার মুখটা।
-আমার বড্ড তেষ্টা পাচ্ছে পানিজল।তুমি কবে মেটাতে আসবে?বেশি দেরী করো না।দেরী করলে যে আমি আগুন জ্বালিয়ে দেব।তুমি পুড়তে থাকবে তাতে।হবে দগ্ধ জলকনা।
“নিজেকে না চিনলে,নিজেকে না ভালোবাসলে,
তুমি অন্যকে কিভাবে ভালোবাসবে।
তোমার নেই প্রাণের মায়া,
তুমি কার জন্য প্রাণ দেবে?
আদৌ কি তুমি তাকে ভালোবাসো?”
১১
আলমারি খুলে সব স্বর্ণের গহনা গুলোতে হাত বুলিয়ে দেখছেন আদীবা বেগম।
-বুঝলি আফরিন,আমার প্রিন্স এর রাজ্যের রানীর জন্য সব রেখে দিয়েছি।এখন এগুলো পালিশ করানোর সময় এসেছে।
-কিন্তু দাদী আপনি মাইশা ম্যাডাম কে তো কখনো এগুলো দেন নি!
-সবার কি সব সাজে?ওকে কখনোই পছন্দ করিনি আমি।এই গহনা গুলো আমি মাহিরের মাকে দিয়েছিলাম।জানিস ও যেদিন চলে গেছিল খুব কেঁদে ছিল।বার বার বলেছিল ,”মা আমি চলে যাচ্ছি।কিন্তু আমার কলিজা এখানেই থাকবে।ওকে আপনি দেখবেন।”
সেদিনের কথা মনে পড়তেই আদীবা বেগমের চোখের কোনে পানি চলে আসলো।
-আলফাজ এতো টাই নিষ্ঠুর শেষ বারের মতো মাহির কে তার মায়ের সাথে সাক্ষাত ও করতে দেয়নি।পুড়িয়ে ফেলেছে ওর সব ছবি।নে এগুলো আজ দোকানে দিয়ে আসবি।পালিশ করাতে হবে।
আদীবা বেগম আফরিনের হাতে একটি লাল কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় গহনা গুলো দিল।
-দাদী শাশুমা,আপনি তো দেখছি শিয়ালের থেকেও চালাক।আমার শাশুড়ি র গহনা আপনি লুকিয়ে রেখেছিলেন এতোদিন !
মাইশা র গলা শুনে দরজার দিকে তাকালেন আদীবা বেগম।মাইশা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবে বাড়িতে এসেছে।
-কিসের শাশুড়ি মা করছো তুমি!আর দু তিন দিন পর তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোমাকে বের করে দেব।
-হেই বুড়ি!ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমাকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার আপনি কে?আর ডিভোর্স!আরে নিজের নাতির কথা ভাবুন।ইশ বেচারা।শুধু ঐ মাকাল ফলের মতো চেহারায় আছে।আর কি আছে ওর!
-দেখো একদিন ও খুব সুখী হবে।
-ও আবার বিয়ে দেবেন বুঝি!
-যার জিনিস তাকে দেব।অবশ্য তার ই হওয়ার কথা ছিল এই বাড়ির নাতবউ।মাঝখান থেকে তুমি আবর্জনা উড়ে এসে জুড়ে বসলে।বের হও এখান থেকে।আফরিন দরজা লাগিয়ে দে।এর মুখ দেখতে চাই না আমি।
আফরিন মাইশার মুখের ওপর গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
১২
-পানিজল আপনার ওষ্ঠা যুগল এতো মাদকতা ভরা কেন?আপনি কি এলকোহল মিশিয়েছেন?নাকি আপনি নিজেই এলকোহলের দোকান।সরি ফ্যাক্টরি।
ইলার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে।নিজের ঠোট দুটো তার ছিড়ে ফেলতে মন চাইছে।এমন কিছু হবে সে কল্পনা ও করতে পারেনি।
সামনের বিছানায় মাহির আধ শোয়া হয়ে ড্রিংকস হাতে নিয়ে চোখ মুখ লাল করে ইলার দিকে তাকিয়ে আছে।আজ ইলাকে মেরেই ফেলবে সে।
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৫
“শূন্যতা অদ্ভুত ভাবে গ্রাস করেছে আমাকে,
এখনো তোমায় পেলাম না,
তবে কি আজ ও অপেক্ষা করে যাব!
অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হবে না!”
ইলার দিকে তাকিয়ে এক নাগাড়ে লাইন গুলো বিড়বিড় করে গেল মাহির।মাহিরের রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে মাতাল করা কথাগুলো ইলাকে আরো কাঁপিয়ে তুলছে।
কি এমন করেছিল সে।যার জন্য মাহির এরকম শাস্তি দিল মাহির তাকে।
সে তো শুধু নাচ করছিল অন্যদিনের মতো।কিন্তু সে কি এটা জানতো যে কোথ থেকে একটা লোক এসে তার হাত ধরে টান মারবে আর তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ঢলাঢলি শুরু করবে।সে তো এটা না কল্পনা করতে পেরেছিল না সহ্য।কিন্তু মাহির তাকে একটুও সুযোগ দিল না।টেনে হিচড়ে বারের ওপর তলার রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দিল।আর করবি তো কর একদম ঠোঁটের ওপর হামলা করার কি দরকার ছিল।
-আপনার সাহস কি করে হয় মাহির আশহাব!আপনি আমার সাথে এতো বড় নোংরা কাজ করলেন!
-সাহস!তোমার সাহস কি করে হয় একটা মাতালের সাথে ঢলাঢলি করে নাচার।বাহ!তাহলে বুঝি নাচের সাথে এই কাজ ও করো?ভাগ্যিস আমি ঠিক সেই সময় টাতে বারে ঢুকেছিলাম নাহলে তো বুঝতেই পারতাম না ,”ইলা রাণী,তারা রঙ্গ লীলা নিয়ে মেতে আছে!”
ইলার চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।এতো বড় অপবাদ তাও তার চরিত্র নিয়ে।
-আপনি কি জানেন মাহির আশহাব, চোখের দেখা সব সময় সত্যি নয়।
-মানে!
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
এমন একটা সময়ে রিংটনের শব্দ পেয়ে আরো বিরক্ত হলো মাহির।ফোনটা হাতে নিয়ে কল কাটতে যাবে তার আগে সে আটকে গেল।”নীল” এই নামটাই ভেসে উঠেছে।ফোনটা রিসিভ করল মাহির।
-হ্যালো।
-স্যার আপনার একটা বড় ভুল হয়ে গেছে।
-মানে?
-স্যার ঐ মাতাল লোকটা এর আগেও ইলা ম্যাডামের ওপর কু নজর দিত।আজ বারে লোক কম দেখে সে হুট করে গিয়েই ইলা ম্যামের থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে।ইলা ম্যামের কোন দোষ নেই।দুর্ভাগ্য এটা যে আপনি শুধু ঐ টুকু দেখেছেন তার আগের দৃশ্য আপনার অজানা ।
-তুমি কিভাবে জানলে?
-স্যার সিসি টিভি ফুটেজ।
-আচ্ছা রাখো।পরে কথা হবে।
-ওকে স্যার।
ফোনটা কেটে হাতে থাকা ড্রিংকসের গ্লাস টা রেগে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো মাহির।মূহুর্তে ই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল গ্লাসটা।মাহির উঠে বসে হাঁটুর উপর ভর করে মাথার দুপাশে হাত দিয়ে বসে আছে।
-আমাকে ক্ষমা করবেন পানিজল।আপনি ঠিক বলেছিলেন চোখের দেখা সব সময় সত্যি হয় না।আমি মারাত্মক অপরাধ করে ফেলেছি আপনাকে ভুল বুঝে।
মাহিরের কথা শুনে ইলা ক্রোধে ফেটে পড়লো।
-জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছেন?
-মানে?
-আপনার বাড়িতে মা বোন নেই?লজ্জা করলো না একটা মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করতে যাচ্ছিলেন আপনি।এখন মাফ চাইছেন।
মা বোনের কথা শুনে চোখ ছলছল করে উঠলো মাহিরের।মাহির উঠে গিয়ে ইলার মুখোমুখি দাঁড়ালো।মাহির কে দেখে ইলা মুখ ঘুরিয়ে নিল।
-আমার অনেক কিছুই নেই পানিজল।তাই তো ছুটে এসেছি আপনার কাছে।একটু তৃষ্ণা মেটাতে।
-পানি জল?কি শুরু করেছেন আপনি?
-হ্যাঁ পানি জল।একই শব্দের সমার্থক।ঠিক আপনার মতো।আপনি এক দিক দিয়ে তৃষ্ণা নিবারন করবেন,অন্যদিক দিয়ে ওষুধ লাগাবেন।আমি যে বড্ড ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছি।
মাহির নিজের চোখের কোনের পানিটা মুছে নিল।ইলা অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করছে মাহির কে।সে তো বিশ্বাস করতে পারছে না এই লোকটাই কি একটু আগে তার সাথে এমন কাজ করেছিল।মাহিরের মায়াবী মুখটা দেখে কেন যেন ইলা চুপ হয়ে গেল।মুখের কথা মনে থেকে গেল,মুখ আর ফুটলো না।
-আমাকে ক্ষমা করবেন পানিজল।খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছি আপনার সাথে।চিন্তা করবেন না আপনাকে নিয়ে শুধু আমার শুকানো পুকুরটাতে ঢেলে দেব।আপনি আর কাউকে পরিপূর্ণ করতে পারবেন না।
মাহির কথা গুলো শেষ করে বেরিয়ে গেল।ইলা এখনো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
-বড্ড রহস্যময় আপনি মাহির আশহাব।এই আগুনের মতো জ্বলে উঠেন,এই মোমের মতো,গলে যান।কেন?
ইলার নিজের প্রশ্নের মাঝে ডুবে আছে।
১৩
-আম্মাজান,আপনি এখনো ঘুমান নি?
-তুমি চলে এসেছো নিবিড়?
ইসমাত বেগম জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো।
-এসেছি অনেকক্ষণ।
-ওহ।খেয়েছো?
-জি।আপনি খেয়েছেন?
-খেয়েছি।
-অনেক রাত হয়েছে।
-দু টো বাজে।
-ঘুমাবেন না?
-ঘুম আসে না।
-আপনি কেন এতো অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন আম্মাজান?
-নিবিড়।
-জি।
-কখনো মা হয়েছো?
-অসম্ভব।আমি পুরুষ তো।
-তাহলে ঘুমোতে যাও।
-একথা কেন জিজ্ঞাসা করলেন?
-আমি কেন ঘুমায়নি সেটা বুঝবে না।
ইসমাত বেগমের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো নিবিড়ের মুখ থেকে।
-আসছি।আর রাত জাগবেন না।
-শুয়ে পড়ো যাও।
নিবিড় দরজা টা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে চলে গেল।
-একটা ছোট্ট দোলনা।আর দোলনায় ছিল আমার রাজপুত্র।আমি কিভাবে ভুলতে পারি।আমার চোখে যে ঘুম আসে না।
হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন ইসমাত বেগম।
-হে আল্লাহ!কেন এ তো অবলা করলে তুমি আমাকে?আমার কলিজা টাকে ফেলে এসেছি ঐ বাঘের মুখে।আমি পারলাম না নয় মাস দশ দিন গর্ভে ধারন করেও তার অধিকার ফলাতে।পিতৃব্যের পুরুষত্ব হারিয়ে দিল আমাকে।
১৪
সকাল বেলা।
বসার ঘরে বসে আছে কামরুল হোসেন।আজ বহু দিন পর নিজের শ্বশুর বাড়িতে পা রেখেছেন তিনি।কিন্তু মিলা আর আলিশাকে দেখতে নয়।
-আমি ইলাকে বিয়ে করতে চাই আম্মা।তাছাড়া আমাদের ভেতর ভালোবাসা টা তো অনেক দিনের।শুধু মিলাই যেন,,,,,,।
-পথের কাটা হলো এই তো!
শায়লা বেগমের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিল কামরুল।
চলবে———-
উপন্যাস টা যথেষ্ট রহস্যময়ী।আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।আর নয়নতারা লিখতে বসেছি।
চলবে————