#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৯
খুব ভালোবাসি তো? তাই তার একটু ও কষ্ট সহ্য হচ্ছে না আমার কাছে।তখন হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসে ইমানের কাছে।ও বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আলতো করে চুমু খেয়ে যায় মিমের ঠোঁটে।রাতে ও ঘুম থেকে উঠে দেখে,
ইমান নেই আশেপাশে।তখন ওর নজর গিয়ে পরে বেড সাইডের টেবিলের ওপরে রাখা চিরকুটের দিকে।সেটা খুলে দেখে ইমান লিখে রেখেছে,” প্রিয়,অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাতদিনের অভ্যন্তরীন মিশনে যেতে হচ্ছে আমাকে।সে যাই হোক নিজের খেয়াল রেখো এবং আমাকে নিয়ে একদম দুশ্চিন্তা করো না ঠিক আছে? আমি যদি এসে দেখি তুমি নিজের যত্ন করোনি।তাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি অনেক বকবো তোমাকে।আর হ্যাঁ, সাতদিন কিন্তু আমাদের কোনো রকম যোগাযোগ হবে না সিক্রেট মিশন তাই।গুলুগুলু প্লিজ করো না আমার সাথে।” মিম মৃদু হেসে বিছানা থেকে উঠে মাগরিবের নামাজ শেষে দু’রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে নেয় ইমানের সুস্থ থাকার উদ্দেশ্য।
এদিকে,রায়হান সাহেব মিমকে দেখতে এসে দেখে ও সবে মাএ নামাজ ছেড়ে উঠেছে।মৃদু হেসে ওর হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলেন,
– মা হয়তো তুই অবাক হচ্ছ ইমানকে বাড়িতে না দেখে? মিম মৃদু হেসে দিয়ে বলে,
– আমি জানি বাবা,আপনার ছেলে সাতদিনের জন্য সিক্রেট মিশনে গেছে।কি ভাবছেন বাবা আপনারা? আমি এই সাতদিন ওকে একা ছেড়ে থাকতে পারবোনা এই বাড়িতে? খুব পারবো,বাবা তোমরা আছো? আমার সন্তান আছে আমার কাছে।হৃদিকা এহসান এসে মিমকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলতে বুলতে বলেন,
– শান্ত হও মা আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।মাহি আলম চৌধুরী এসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে করতে ব্যস্ত রাখছেন মেয়েকে।নিপা ও অধরা এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করছে না ওকে।মিহা কে মিমের আশেপাশে দেখলেই কেন যেন নয়ন তাঁরা এটা-সেটা কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখছে ওকে।রান্নাঘরে এসে মিমের জন্য কলিজা ভুনা করতে করতে ছোটো জা (হৃদিকা) কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– হৃদিকা মেঝো বউ মা (মিহা) কে সুবিধাজনক বলে মনে হয় না আমার কাছে।হৃদিকা হঠাৎ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
– বড় ভাবি আমার যে মস্ত বড় ভুল হয়ে গেছে? ছেলের জন্য সুন্দরী বউ আনতে গিয়ে একটা ডাইনি নিয়ে এসেছি বাড়িতে।তখন হঠাৎ হৃদিকা এহসান থমকে যায় দরজার কাছে মিমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।উনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিম ভেতরে ঢুকে তার হাত চেপে ধরে বলে,
– বাদদেও না মা,যা হওয়ার হয়ে গেছে।তুমি চেয়েছিলে তোমার ছেলের (ইশান) বিয়ে টা সুন্দরী কোনো মেয়ের সাথে দিতে।আর আপু তো অনেক সুন্দরী ওকে একদম পারফেক্ট মানায় তোমার ছেলের পাশে আর রইলো আমার কথা? আমার জুটিটা হয়তো তৈরি হয়ে এসেছিল ওপর থেকে।দেখো না আমার বিয়ে প্রথমে হওয়ার কথা ছিল তোমাদের ছোটো ছেলের (ইমান) সাথে এবং মনে প্রাণে আমি আমার স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়ে ছিলাম তাকে।তারপর জানি না কি হলো? দেখো সেই ঘুরেফিরে আমার বিয়ে টা হয়ে গেলো আমার মনের মানুষের সাথে আর এর জন্যে হয়তো সেদিন ইশানের আমাকে বিয়ের আসরে ফেলে যাওয়া টা তেমন একটা ভাবায় না আমাকে।তবে হ্যাঁ কষ্ট হয়, কারণ সে দিন সবাই অবিশ্বাস করেছে আমাকে।হৃদিকা এহসান চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,
– আমার জন্য তোমার বাবা-মায়ের বত্রিশ বছরের সংসারে ভেঙে গেছে।
– তোমার জন্য কিছু হয়নি মা,কিছু মানুষের স্বার্থের জন্য সবটা শেষ হয়ে গেছে।তারপর হৃদিকা এহসান মিমকে ঘরে নিয়ে এসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– পারলে মা ক্ষমা করে দিস আমাকে।আমি চাইলে পারতাম সে দিন মিহা ও ইশানের বিয়ে টা আটকে দিতে।মিম আর এ বিষয়ে কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ হৃদিকা এহসানের কোলে ঘুমিয়ে গেছে।দেখতে দেখতে সাতদিন কেটে গেছে,
মিম অধরা ও নিপার সাহায্যে ইমানের পছন্দের খাবার বানিয়ে নিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দিতে সাভার সেনানিবাসে চলে এসেছে।ও গাড়ি থেকে নেমে সেনানিবাসের ভিতরে যেতেই সব অফিসারেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ক্যাপ্টেন হৃদয় ক্যাপ্টেন রেহান কে খোঁচা মেরে বলে,
– বোধহয় আমাদের কোনো অফিসারের ছোটো বোন এসেছে? পাশ থেকে সোহান বলে ওঠে,
– মনে তো হচ্ছে আমাদের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বউ এসেছে?
– আরে দেখ দেখ মেয়ে টা তো এদিকেই এগিয়ে এসেছে?
– প্রিকি’র কথা শুনে রেহান মৃদু হেসে এগিয়ে এসে মিমকে জিজ্ঞেস করে,
– ম্যাম আমি কি কোনো ভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে? মিম মৃদু হেসে বলে,
– জি অবশ্যই,আপনি বলতে পারবেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমান খান অফিসারর্স কোয়ার্টারের কোন এ্যাপার্টমেন্টে থাকে? নাম শুনে রেহান সহ বাকি অফিসারদের হাসি মিলিয়ে যায় সাথেসাথে।সোহান বিড়বিড় করে বলে,”এই মিষ্টি মেয়ে টা এতো অফিসার ছেড়ে ওই হিটলারের নাম টা নিচ্ছে কেন মুখে?” হৃদয় হাসতে হাসতে বলে,
– শুনলাম তো গত মাসে বিয়ে করেছে আর ম্যামের নাকি বাচ্চা ও হবে? তার মধ্যে একজন সবাই কে চমকে দিয়ে মিমের উদ্দেশ্যে বলে,
– জান? মিম পিছনে ফিরে দেখে মূর্তিমান দু’বাহু প্রসারিত করে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।মিম সবাইকে চমকে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ওকে।জেনারেল পল্লব এগিয়ে এসে হাসতে হাসতে বাকি সবার উদ্দেশ্য বলেন,
– তোমরা যাকে মিষ্টি মেয়ে বলছ,সে তোমাদের স্যারের স্ত্রী ঠিক আছে? রেহান সাথেসাথে চোখ নামিয়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
– যাক ভালো রকমের একটা ধাক্কা খেলাম হে হে হে।জেনারেল পল্লব মৃদু হেসে বলেন,
– তোমরা কি ভাবছ? সারাদিন উনি (ইমান) রাগারাগি করে বেড়ায় বউয়ের সাথে? প্রকৃত বউ প্রেমিক মানুষ বউকে খুব ভালোবাসে।মিম কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– আপনি জানেন এই সাতদিন কত কষ্ট পেতে হয়েছে আমাকে? ইমান ওর কাঁধে চুমু খেতে খেতে বলে,
– আমি একদিন ও ঘুমাতে পারিনি রাতে।বারবার মনে হয়েছে আমার জাদু টা কখন ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে? তারপর ইমান হঠাৎ করে সবার সমানে কোলে তুলে নেয় ওকে।মিম দু’হাত দিয়ে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– কি অবস্থা আপনার? সবাই দেখছে?
– তো? কি হয়েছে? নিজের বউকে কোলের তুলে নিয়েছি,অন্যের বউকে নয়।
– ঠিক আছে।ইমানের বন্ধু আকাশ ওকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ব্রো ভাবি সাহেব এসেছে আজ কিন্তু পার্টি হবে।সোহান হাসতে হাসতে বলে,
– তাহলে কি আমার বলতে পারি পাথরে ফুল ফুটেছে? ইমান জুনিয়রদের সেভাবে পাত্তা না দিয়ে হাসতে হাসতে মিমকে নিজের এ্যাপার্টমেন্টে এনে বিছানায় শুয়ে দিয়েছে।মিম কিছুটা লজ্জা পেয়ে ইমানকে বলে,
– এ অবস্থা আপনার দরজা না লাগিয়ে এসে দুষ্টুমি করছেন আমার সাথে? ইমান দরজা ভালো করে লক করে এসে ওর কপালে,গালে চুমু খেয়ে বলে,
– আচ্ছা তুমি গুলুগুলু হবে কবে?
– ইউ মিন মোটা? সেই আশায় থাকো কর্নেল সাহেব ঠিক আছে? ইমান দুষ্টুমি করতে করতে শাড়ির আঁচল টা সরিয়ে দেয় মিমের বুকের ওপর থেকে।