কর্নেল_সাহেব পর্ব ২০

#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২০

ইমান দুষ্টুমি করতে করতে শাড়ির আঁচল টা সরিয়ে দেয় মিমের বুকের ওপর থেকে।বেচারি খুব লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয় ইমানের চোখের ওপর থেকে।ইমান হাসতে হাসতে মিমের গালে চুমু খেয়ে বুকের ওপরে মাথা রেখে বলে,
– কতদিন আমি আদর খাইনি তোমার কাছ থেকে? মিম ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– আদর পরে খাবেন,আগে যে খাবার গুলো বানিয়ে এনেছি সে গুলো খেতে হবে আপনাকে।ইমান ওর হাত চেপে ধরে বলে,
– নিজের যত্ন করোনি তাই না? এর জন্য এতো শুকনো লাগছে তোমাকে?
– আমি ঠিক আছি কর্নেল সাহেব।আপনি একটু ওভার থিংক করা বন্ধ করুণ।
– ঠিক আছে,তবে বিশ্বাস করো আমার কাছে শুকনো শুকনো লাগছে তোমাকে।না মানে এতো গুলো মানুষ বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও তারা ঠিক মতো যত্ন করতে পারেনি তোমাকে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– আরে বললাম তো আমি ঠিক আছি? আপনার হঠাৎ কি হয়েছে? ইমান ওকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো? মিহ বা দাদি মিলে যদি কিছু একটা করে দিতো তোমাকে?
– বাদদেও না,চুপটি করে বসো।আমি নিজের হাতে তোমার প্রিয় চিংড়ি মাছের মালাই কাঁড়ি দিয়ে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।ইমান মিমকে কোলে তুলে নিয়ে বারান্দায় এসে বলে,
– সিনারিও টা খুব সুন্দর না এখান থেকে? মিম হাসতে হাসতে বলে,
– হুমম,নাও “হা” করো নয়তো আমি বকবো তোমাকে।পাশের এ্যাপার্টমেন্ট থেকে মিসেস রানী তার হাসবেন্ড লেফটেন্যান্ট কর্নেল ধীমান কে বলে,
– জানো ইমান ভাই নাকি তার এ্যাপার্টমেন্টে একটা মেয়েছেলে কে নিয়ে এসেছে? সেই মেয়ে টা নাকি আবার ইমান ভাইয়ের বউ বলে দাবি করছে নিজেকে।ধীমান সাহেব কিছু টা রেগে গিয়ে বলে,
– মাথায় কি গোবর তোমার? বুদ্ধিশুদ্ধি কোথায় থাকে? তুমি যে ভদ্রমহিলা কে “মেয়েছেলে” বলে সম্বোধন করছ? তার বিয়ে খেয়ে এসেছ ঠিক একমাস আগে।আর হ্যাঁ,
এই মেয়েটি সত্যি আমাদের কর্নেল সাহেবের বউ ঠিক আছে? কাজেই এই বোকামো করতে যেও না কারো সাথে।কিটি পার্টিতে তোমরা কি করতে যাও? এই ধরনের গুজব ছড়াতে? এসব কর্নেল সাহেবের কানে গেলে তুমি এবং তোমার গ্যাং কে সহকর্মীর বউ বলে ছেড়ে দেবে না সে।তাই অনুরোধ করছি না জেনেশুনে গুজব রটিয়ো না ঠিক আছে?

কিছুক্ষণ পর,
দপ্তরি গিয়ে ধীমান সাহেবের বাসায় এক প্যাকেট মিষ্টি দিয়ে এসে বলে,
– ইমান স্যার পাঠিয়েছেন,আজকের আমাদের ম্যাম প্রথম সেনানিবাসে এসেছে।তখন মিসেস রানীকে ধীমান সাহেব বকা দিয়ে বলে,
– শুনলে? আর যেন ভুল করতে দেখি না তোমাকে।ক্যাপ্টেন রেহান হৃদয়ের সাথে সিগারেট টানতে টানতে বলে,
– আমার যাকে ভালো লাগে অফিসারের বউ কেন হতে হবে তাকে? প্রিকি হাসতে হাসতে বলে,
– ম্যাম যেভাবে ভেতরে ঢুকে মিষ্টি একটা হাসি দিলেন? তাতে সেনানিবাসের অর্ধেক অফিসার তার প্রেমে পরে গেছে।উনি আসলেন তো আসলেন এমন সময় আসলেন যখন মেক্সিমাম অফিসার শরীর চর্চা করার জন্য বাহিরে থাকে আর তোর কপালে বউ নেই রেহান এর জন্যে হয়তো অন্যের বউকে তোর এতো বেশি ভালোলাগে?
– আরে দেখ না ভাই দপ্তরি এসে আমাদের জন্য মিষ্টি রেখে গেছে? হৃদয় চোখ কপালে তুলে বলে,”বুঝিনা বাপু, ওই মেয়ে টা এমন একটা খচ্চর আর বদরাগী লোকের সাথে কি করে থাকে?
– কেন রে? জেনারেল পল্লব বললেন না? সে (ইমান) আর যাই করুক না কেন? নিজের বউকে খুব ভালোবাসে আর আজকে তো আমরা স্বচক্ষে দেখলাম,
বউকে কি ভাবে জড়িয়ে ছিল নিজের বুকে? রাহাত স্যার বলেছিলেন,মিশনে ইমান স্যার নাকি এক রাত ও ঘুমতে পারেনি ঠিক ভাবে।মাঝরাতে উঠে নাকি বউয়ের জন্য উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পরে কান্নাকাটি করতেন।কারণ ম্যাম প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর প্রায় অসুস্থ থাকে।মুনিমের কথা শুনে রেহান মৃদু হেসে বলে,
– আমাদের ম্যাম যে কেমন মানুষ? সেটা আজ রাতের পার্টিতে বোঝা যাবে।যদিও ইমান স্যার পার্টি করতে পছন্দ করেননা,তবুও তার স্ত্রী এসেছে বলে নিজেই খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে।মুনিম মৃদু হেসে বলে,
– শুনলাম তে ম্যাম,
নাকি স্যার কে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে।আবার স্যারের জন্য নাকি তার পছন্দের সব রান্না ও করে এনেছে।যতই আমরা স্যার কে হিটলার বলি না কেন? দিন শেষে সে শান্তিতে দু’দন্ড মনের কথা বলার জন্য একজন মনের মতো সঙ্গিনী তে পেয়েছে?

রাতে,
ইমান মিমকে নিয়ে সেনানিবাসের অডিটোরিয়ামে এসেছে।সেখান থেকে সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় মিম ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
– শোনো না,আমার খুব ভয় করছে? ইমান ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ডোন্ট ওয়ারি বেবি।আমি তো আছি তোমার সাথে? তখন ইমানের সহকর্মী লিনা এসে মিম কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– রাজপুত্র’র পাশে ঠিক মানাচ্ছে না তোমাকে? মিমের কাঠকাঠ উওর,
– আমাদের দু’জনের জুটি টা না আল্লাহ তাআ’লা নিজের হাতে গড়ে পাঠিয়েছে।ব্যাড লাক আপু,নেক্সট টাইম ট্রাই করে দেখবেন কেমন? এই যে চলো ওদিকে।ইমান সহ বাকি সবাই মজা পেয়ে হাসতে হাসতে শেষ মিমের উওর দেওয়া দেখে।রেহান মৃদু হেসে প্রিকি কে বলে,
– ভাই আমি প্রতি নিয়ত ক্রাশ খাচ্ছি মেয়ে টি কে দেখে।
– কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর ভাই,তাই তার প্রাপ্য মর্যাদা টুকু আমাদের দেওয়া উচিত তাকে।মিম নিজে গিয়ে ইন্ট্রডিউস হচ্ছে সবার সাথে।জেনারেল লাহাব ইমানকে কাছে ডেকে বলে,
– বউ মা তো মাশাআল্লাহ্ বাবা,খুব মিশুকে মনে হচ্ছে ওকে দেখে?
– আরে স্যার কি বলবো? আজ রাত টা ওকে নিয়ে এখানে থাকার জন্যে বাড়ির লোক ফোন করে দফায় দফায় বকা দিচ্ছে আমাকে।তারপর আবার আমার ছোটো বোন রাঙা মা বলতে অজ্ঞান সে।
– ওহ!
তাহলে রিক্ত বউ মা কে রাঙা মা বলে ডাকে? আমি ক’দিন আমার নাতনির সাথে ওর স্কুলে গিয়েছিলাম।তখন অনেক রাঙা মা নিয়ে গল্প শুনেছি ওর কাছে আর একদিন বোধহয় বউ মা কে স্কুলে দেখেছিলাম হয়তো ভালো করে খেয়াল করিনি সেভাবে।এর মধ্যে ইমানের বেস্ট ফ্রেন্ড ইফরাজ এসে বলে,
– কি রে ভাই শুনালাম,ছক্কা হাঁকিয়েছিস এক ব্যাটে? ইমান ওর কথার মানে বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে বলে,
– ভুলে যাস না,তোর মা-বাপ ওসব করেই জন্ম দিয়েছে তোকে।
– আরে ভাই আমি তোর কথা বলছি,আমার বাপ মা আবার চলে এলো কোথা থেকে? একটা শালী ওয়ালি মেয়ে দেখে বিয়ে করতে পারলি না? থাকলে আমি একটু রস করতে পারতাম ভাবির বোনের সাথে।বাবা মা নিজদের পছন্দ এমন মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়েছে যে শালী এটা চাই ওটা চাই বলে সারাদিন বাজনা বাজাতে থাকে কানের কাছে।আমি খুব খুশি আল্লাহ সঠিক বিচার করছেন আমার বাবা মায়ের সাথে।আমার বিয়ে টা আমার পছন্দের মেয়ের সাথে দেয়নি না? একদম ঠিক আছে।বউয়ের ইচ্ছে তে আজ তিনমাস ধরে আমি আলাদা থাকছি তাদের কাছ থেকে।খুব ভেবেছিল জোর করে আমাকে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করিয়ে সারাজীবন পায়ের ওপরে পা তুলে খাবে।ইমান ইফরাজের হাত চেপে ধরে বলে,
– শান্ত “হ” ভাই।খুশি ভাবির দোষ কি তাতে? অন্তত নিজের মেয়ের কথা ভেবে সুখে থাকার চেষ্টা কর তার সাথে।
– আসলে আমরা দু’জনে কেউ খুশি নই কারো সাথে।তুই তো ভালো করেই জানিস খুশি কেও ওর বাবা মা জোর করে বিয়ে করিয়েছে আমার সাথে।মিম ইফরাজ কে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
– আরে ভাইয়া যে ভাবি আর মামণি কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভাবি,আপনি যে এখানে আমার প্রিয় বন্ধু কে সারপ্রাইজ দিতে এসেছেন সেটা শুনে খুব ভালো লাগছে আমার কাছে।অন্তত নিজের না হলে ও কি হয়েছে? প্রিয় বন্ধুুর ভালোবাসা তো পূর্নতা পেয়েছে?

সকালে,
মিম ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– ইফরাজ ভাইয়ার কথা ভেবে আমার খুব খারাপ লেগেছে।ইমান মিমের কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– কত বোঝানোর চেষ্টা করে ছিলাম কিন্তু আঙ্কেল বললেন,আমাদের জন্য তার ছেলে নষ্ট হয়েছে।সে কোনো দিন ও ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবেনা একটা পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন অনাথ মেয়েকে।যাগগে এখন কর্মের ফল তারা ভোগ করছে তাদের জায়গা থেকে।খুব তো নিজের বোনের মেয়েকে বাড়ির বউ করে এনেছিল? দিল না আমাদের সাদ ভাইয়ের বউয়ের মতো মুখে ঝামাপাথর ঘসে? এর জন্য আত্নীয়-সজনের মধ্যে বিয়ে বিষয় টা ভালো লাগে না আমার কাছে।মিম ইমানের বুকের ওপরে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আচ্ছা বাসায় কখন যাবে?
– এখনি সোনা সব পাগল হয়ে গেছে।ইমান মিমকে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করে নিচে এসে দেখে,ইফরাজ একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইমান সেগুলো ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলে,
– তোর ভাবি জন্য আনতে বলেছি,আর তুই গন্ধ শুঁকছিস বসেবসে? খুশি এসে যত্ন করে মিমের হাত ধরে বলে,
– কিছু মনে করবেননা ভাবি,আপনার কোনো বোন নেই না? তাই আমার জামাই কষ্টে আছে।মিম হাসতে শেষ তখন জেনারেল পল্লব এসে জিজ্ঞেস করেন,
– তোমরা আজকেই চলে যাবে? ইমান মৃদু হেসে বলে,
– হ্যাঁ স্যার,বাসায় সবাই ফোন করে বকছে আমাকে।আসলে জানেন তো স্যার আপনার বউ মা কে ছাড়া সবকিছু অচল বাড়িতে।মিম মিটিমিটি হেসে বলে,
– কর্নেল সাহেব আহ্লাদে গদগদ হয়ে প্রশংসা কম করুন ঠিক আছে? ইমান ডান হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলে,
– আশ্চর্য!
ময়না যেটা সত্যি।সেটাই তো বলে বেড়াবো সবার কাছে? মিম দুষ্টমি করে বলে,
– আগেই জানতাম,আমাদের ওই ময়নার সাথে তোমার লটরপটর আছে? ইমান ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আস্তাগফিরুল্লাহ্ নাউজুবিল্লাহ্,এমন মিথ্যে অপবাদ দিলে কিন্তু খবর হয়ে যাবে।না মানে বেশি কিছু না? একটা হওয়া ইয়া আরেক টা রেখে যাবো তোমার পেটে।মিম মনেমনে বলে,”হায় রে খোদা? এমন ঠোঁটকাটা লোকের পাল্লায় ফেলেছ কেন আমাকে?” তারপর খেয়াল করে দেখে আশেপাশে সবাই মিটিমিটি হাসছে দু’জন কে দেখে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here