#লাবণ্যর_সংসার
#পর্ব_8
#কৃ_ষ্ণ_ক_লি
বাড়ি এসে লাবণ্য বেশ অবাক হয়। সে ফিরে আসলেও নিবিড় আসেনি! তাহলে কি রাগ করে অন্য কোথাও গেলেন তিনি। লাবণ্য একটা তাচ্ছিল্যর হাসি হাসে। বাস্তবটাই তো নিবিড়কে বলেছিলো , আর তাই তো হল। নিবিড় তো পারলেই লাবণ্যকে বলতে পারতো সব ভুলে যাওয়ার কথা। সান্ত্বনা টুকুও তো দিতে পারতো নিবিড় লাবণ্যকে।, যেহেতু নিবিড় বলেছে সম্পর্কটাকে নতুন ভাবে শুরু করবে!
তাহলে কোথায়! নিবিড় কিভাবে পারলো ও কে একা ফেলে চলে যেতে! আসলেই কি ওর কথার কোনও ভুল ছিলো! নিবিড় চাইলেই তো ওর অভিমান করাটা নিজের ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিতে পারতো!
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজের মনেই কথাগুলো ভাবতে থাকে লাবণ্য। চোখের পানি মুছে বিছানার এক কোণে গিয়ে গুটিয়ে বসে থাকে লাবণ্য। বিয়ের পর বাকি মেয়েদের মতো নতুন জীবন তার নয়। কেমন আছ একটা ছাপোষা, ঝাপসা। বাবা-মার সাথে বিচ্ছেদ এটাই কি তার কারণ! কিন্তু না লাবণ্য তো এসব ভাববে না। কি হবে এইসব ভাবনা – চিন্তা করে! কঠিন সময়টাতে তো তার বাবা মা তার পাশে থাকেনি। আজ ভাগ্যের জোরে না হয় স্বামী – শাশুড়ী নামক মানুষগুলো ও কে ভালবাসছে, আপন করে নিচ্ছে। এটাই তো ওর বড়ো পাওয়া। নাই বা বাপ-মার কথা মনে করলো!
না লাবণ্য আর এসব ভাববে না। নিবিড় ওর জন্য অনেক আশা নিয়ে সারপ্রাইজ প্লান করেছিলো। লাবণ্যকে খুশি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ও নিজের মনখারাপ গুলো, কষ্ট গুলো জোর করে বহন করে নিবিড়কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
লাবণ্য চোখের পানি ভালো করে মুছে নেয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের কাজল মুছে ভালো করে লাগিয়ে নেয়। নিবিড়কে ও সরি বলে নেবে। মানুষটা সত্যিই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।
লাবণ্য নিজের মনেই কথাগুলো বলে মুচকি হেসে নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বেশ ক্রোধান্বিত হয়েই নাইট ক্লাবের ভিতর ঢুকছে নিবিড়। চোখে মুখে রাগ সুস্পষ্ট , যে কেউ দেখলেই ধরতে পারবে। তবে রাগের পরিমাণটা কতখানি তা একমাত্র যার ওপর প্রকাশিত হবে সেই বুঝতে পারবে। এদিক ওদিক চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে নিবিড়। কয়েকজন বন্ধুদের সাথে দেখা হয় নিবিড়ের। কিন্তু নিবিড় শুধু হ্যাঁ হু দিয়ে ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে আসে। এখানে গানের বেস বেশ জোরেই চলছে।
O udti patang jaise
Mast malang jaise
Masti si chadh gayi humko turant aise
Lagti current jaise
Nikla warrant jaise
Abhi abhi utra ho net se torrent jaise
Nashe si chadh gayi oye
Kudi nashe si chad gayi
Patang si lad gayi oye
Kudi patang si lad gayi
নিবিড় এগিয়ে যায়।মেঘলাকে নাচতে দেখে কিছুক্ষণের জন্য রাগটা দমন হয়। তবে যে বলেছিলো মেঘলা এখানে ড্রিংক করছে তার ওপর রাগ হচ্ছে নিবিড়ের। ওখান থেকে চলে আসতে গেলেই কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। ওর মনে হয় এসেছে যখন ও মেঘলাকে সাথে নিয়েই চলে যাবে। একটু ওয়েট করাই যাক। আর তাছাড়া ওর ফ্রেন্ডরা তো এখানেই আছে। তাদের সাথে একটু আড্ডা মারাই যায়।
Aise khenche dil ke penche
Gale hi pad gayi oye
Nashe si chadh gayi oye
Kudi nashe si chad gayi
Patang si lad gayi oye
Kudi patang si lad gayi
নিবিড় মুচকি হেসে মেঘলাকে দেখে চলে আসতে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়েই মেঘলা ড্রিংক করা শুরু করলো। কয়েক চুমুক দিতেই নিবিড় সাথে সাথে মেঘলাকে টেনে নেয় নিজের কাছে। মেঘলা বিরক্ত হয়ে ও কে ধাক্কা দিতে গেলেও পারেনা। নিবিড় ও কে শক্ত করে ধরে সাইডে সরিয়ে নিয়ে আসে।
—“ উফফ নিবিড় ভাইয়া ছাড়ো না আমায় ডান্স করছি তো! ”
—“ ডান্স করছিস ভালো কথা কিন্তু তাই বলে তুই ড্রিংক করছিস কেনো? ”
নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে। মেঘলার কাছ থেকে মদের তীব্র গন্ধ পেয়ে নিবিড়ের রাগ চরমে উঠে। তার মানে সত্যিই মেঘলা ড্রিংক করেছে! নিবিড়ের রাগ আর সংবরণ হয় না। একটা থাপ্পড় মেরে বসে মেঘলার গালে। মেঘলা গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে নিবিড়ের দিকে।
—“ তুমি আমাকে মারলে নিবিড় ভাইয়া। ”
—“ তোর ভাগ্য ভালো আমি তোকে শুধু মেরেছি , মেরে ফেলিনি। অনেকদিন ধরে তোর এইসব কাম কাজ শুনে আসছি। আমি কিছু বলিনি , ভেবেছিলাম একটু আধটু ছাড় দেওয়াই যায়। কিন্তু তুই তো দেখছি অধঃপতনে চলে গেছিস। এমন যদি চলতে থাকে তোকে আমি খুন করবো মেঘলা। ”
—“ মেরেই ফেলো তুমি আমায়। আমাকে মেরে ফেলো। আমার জীবনে আর কি আছে বলতে পারো! আমি তো… ”
নিবিড় মেঘলাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর হাত টেনে ধরে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। মেঘলা ছটফট করতে থাকে। নিবিড় মেঘলাকে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। মেঘলা কিছু বলতে গেলেই নিবিড় ও কে চোখ রাঙিয়ে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। মেঘলা চুপচাপ ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বসে থাকে। নিবিড় মেঘলাকে সিট বেল্ট লাগিয়ে দেয়। নিবিড় ফুল স্পিড তুলে ড্রাইভ করে নিজেদের গেস্টহাউসে নিয়ে চলে আসে। রুমের মধ্যে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়। মেঘলা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে নিবিড়ের দিকে।
—“ গেস্টহাউসে কেনো আনলে আমায়? ”
—“ তুই এতোটা অবুঝ কেনো মেঘলা! তুই বুঝতে পারছিস না তুই কি করছিস? ”
—“ বলো গেস্টহাউসে কেনো আনলে আমায়? ”
মেঘলা চিৎকার করে কথাগুলো বলে। নিবিড় মেঘলার গাল দুটো দু আঙুলে চেপে ধরে। মেঘলা ব্যাথা পেলেও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয়।
—“ তুই মদ্যপ অবস্থায় আছিস। এই অবস্থায় তোকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ফুফা, ফুপিম্মার কি অবস্থা হতো? তোকে আমার বাড়িতে নিয়ে গেলেও তোর মামা, মামীর কি অবস্থা হতো? তোর মা বাবা তোকে আস্ত রাখতো! ”
মেঘলা ঝট করে নিবিড়ের গলা জড়িয়ে নেয়।
—“ তুমি আমাকেই ভালোবাসো তাই না নিবিড় ভাইয়া। ”
নিবিড় দ্রুত মেঘলাকে ছেড়ে দেয়। মেঘলার হাত দুটো নিজের গলা থেকে নামিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
কল দিয়ে একজন ফিমেল মেইডকে ডেকে নেয়।
মেঘলা নিবিড়ের হাতটা চেপে ধরে।
—“ চুপচাপ শুয়ে থাক। আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি। সকালে আসছি তোকে পৌঁছে দিব বাড়িতে। ”
—“ না তুমি আমাকে একা রেখে যেতে পারো না। আমার যদি কোনো অসুবিধা হয়? ”
—“ তার জন্য তো মেইড রেখে যাচ্ছি ইডিয়েট গার্ল।”
—“ তুমি কি একটা রাত আমার সাথে থাকতে পারবে না! একটা রাত আমায়.. ”
—“ মেঘলা থাপ্পড় মারবো এবার। হ্যাংওভার কাটা কাল বাড়ি দিয়ে আসবো। ”
—“ আমায় ভালোবাসলে তোমার কি এমন ক্ষতি হয় নিবিড় ভাইয়া! ”
মেঘলার কথার মাঝে নিবিড়ের ডাকা মেইড চলে আসে। মেইডকে সবকিছু বুঝিয়ে নিবিড় চলে আসে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
রুমের মধ্যে গাঢ় অন্ধকার বিরাজমান। ওই অন্ধকারের মধ্যেই কেউ যে একজন তার অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে ঘুমিয়ে গেছে তা ওর অজানা। লাইটাট জ্বালিয়ে দিয়ে লাবণ্যকে বেডে হালকা মাথা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে নিবিড়। ঘন্টা তিনেক আগের ঘটনা মনে পরতেই নিবিড় লাবণ্যর থেকে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। ভাবলেশহীন, অযৌক্তিক কথাবার্তাহীন মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকলে রাগ ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসবে না। নিবিড় নিজের গায়ে থাকা ব্লেজারটা খুলে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। দরজা টা সশব্দে বন্ধ করে দেয়। যার ফলে লাবণ্যর ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ঘুমন্ত চোখে লাইট পড়ায় বেশ অস্বস্তি হয় লাবণ্যর। চোখ দুটো কচলে নিয়ে চট করে মাথায় চলে আসে নিবিড়ের কথা। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায় লাবণ্য। বুঝে ফেলে নিবিড় এসে গেছে।
নিবিড়কে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে আসতে দেখে। লাবণ্য তৎক্ষণাত আলমারি থেকে নিবিড়ের জন্য পরিহিত টিশার্ট আর ট্রাউজার্স বের করে দেয়। লাবণ্য নিবিড়ের হাতে দিতে গেলে নিবিড় খানিকটা চোখ গরম করে তাকায়। লাবণ্য মাথা নীচু করে ফেলে।
—“ অ্যাম সরি। ”
লাবণ্য মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে নিবিড় অন্য একটা টিশার্ট, ট্রাউজার্স নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। লাবণ্যর ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
বেশ কিছুক্ষণপর নিবিড় বেরিয়ে আসে। ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। লাবণ্য গুটিগুটি পায়ে নিবিড়ের পাশে গিয়ে বসে।
—“ আপনি এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন? ”
নিবিড় কাঠ কাঠ গলায় বলে,,
—“ তোমার তা না জানলেও চলবে। ”
লাবণ্য মুখ নীচু করে নেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর নিরবতা কাটিয়ে লাবণ্য মনে সাহস নিয়ে নিবিড়ের গা ঘেঁষে বসে। নিবিড়ের হাতে হাত রেখে কাঁধে মাথা রাখে।
—“ আমি বুঝতে পারিনি আপনাকে এতোটা হার্ট করে ফেলবো। আমার আপনাকে হার্ট করার কোনও ইনটেন্স ছিলো না বিশ্বাস করুন। আমায় আপনি ক্ষমা করুন। ”
লাবণ্যর কাঁপা গলার কথা শুনে নিবিড়ের রাগে এক বালতি পানি পড়ে যায়। নিবিড় ল্যাপটপ টা সাইডে রেখে লাবণ্যকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে। নিজের বুকে লাবণ্যর মাথাটাকে শক্ত করে চেপে ধরে। কেমন জানি প্রশান্তি লাগছে নিবিড়ের।
চলবে… ..
(লেখায় ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন 🙏)