লাভিং জার্নি পর্ব শেষ

লাভিং জার্নি
শেষ অংশ

বাসায় যেয়ে অামি পুরোদমে সাবিহাকে ইগনোর করতে লাগলাম। সাবিহা বোধহয় ইগনোরের ব্যাপারটা একদম বুঝতে পারলো না। সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই অামার যত্নপাতি করতে লাগলো। এমনকি রাতে
খাবার পরে অামি যে একটা ব্লাক কফি খাই, সেটাও অত্যন্ত যত্ন করে ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে এলো!

ঘরে এসে সাবিহা দরজা বন্ধ করে প্রথম যে কথাটা বলল, তাহলো,
——সামনের মাস থেকে অামি পঁচিশ হাজার টাকা করে পাবো।
অামি যদি কিছু টাকা অাপনাকে পাঠাই, তাহলে কেমন হয়?? নাকি একসাথে জমিয়ে দিবো?

অামি জবাব দিলাম না।
——-জানালা খুলে দিই?? বাইরে ভীষণ বাতাস হচ্ছে…..

বলতে বলতে সাবিহা গিয়ে জানালা খুলে অারাম করে দাঁড়ালো!

অামি বিমর্ষ গলায় বললাম,
—–অামার একার কফি যে; তুমি খাবেনা??
সাবিহা না সূচক মাথা নেড়ে হাসলো।
বাইরে তাঁকিয়েই বলল, —–অামি অনেক টাকা নিয়ে ফেলেছি অাপনার থেকে। কোথায় যে খরচ করলাম এত টাকা??অাসলে সংসার একটা রাক্ষসের নাম! ফ্যামিলির খাওয়া দাওয়ায় সব শেষ!

অামি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।মেয়েটার কাঁধে যেনো রাজ্যের বোঝা….
সাবিহা কেনো এরকম? তাঁর কি অামাকে পছন্দ নয়?? নাকি অামার বাবা সেঁধে বিয়ে করিয়েছেন বলে এত দাম? কি চায় সে??

—–অামার রেজাল্ট তেমন ভালো হবে না। অাসলে জবের পাশাপাশি পড়ছি তো।ল্যাব ঠিকমত করতে পারছিনা এজন্য। অাপনি রাগ করবেন না তো??? স্যার, অবশ্য বলেছেন, বিসিএসটা করতেই হবে……
অামি চেষ্টা করছি।কোচিং জয়েন করেছি।সন্ধ্যা সাতটায় ক্লাস করি…অ্যাসাইনমেন্ট করছি….

অামি হতাশ হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তাঁর পড়াশোনার ফিরিস্তি শুনতে অামি এসেছি??
এই মেয়েকে কাছে পাওয়ার জন্য অামি এমন ছুটে এসেছি। এইজন্য??
অামি হেসে বললাম,
——-তোমার কি অামাকে পছন্দ নয়??? কেন নয়???
সাবিহা পুরো প্রসঙ্গটা বদলে নিয়েই বলল,
——অামি কি অাপনার সাথে এই বিছানায় ঘুমোবো???
অামি অাশ্চর্য হয়ে বললাম, এতে জিজ্ঞেস করার কি অাছে??
——কোন পাশে??? কোন বালিশটা নিবো??? অামার চুল কি বেণী করে নিবো?? নাকি খোলা রাখবো??
অামি হতাশ চোখে সাবিহার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম। গাঢ় হলুদ রঙের পিওর কটনের একটা জামার সঙে লতানো ফুলেল কাজের একটা সবুজ জর্জেট ওড়না গায়ে জড়িয়ে। চুলের কয়েকগাছি সাইড সিঁথি করে ছোট্ট পাঞ্চ ক্লিপে অাটকানো।ডানপাশের ঘাড় গড়িয়ে কয়েকগাছি চুল সামনে! কানে সাদা মুক্তোর লম্বা দুল। নাকের উপর ঘামের বিন্দু চকচক করছে ; এত স্নিগ্ধ কি অাসলেই কারো মুখ হয়!? / সাবিহা একমনে মাথা নিঁচু করে তাঁকিয়ে টেবিলে নখ ঘষছে। অামি হালকা গলা ঝারি দিয়ে বললাম,
——তুমি কি অামাকে ভয় পাও??
সাবিহা জবাব দিলোনা।
——স্বামী স্ত্রী হয় বন্ধুর মত! এতে কোনো ভাগাভাগি নেই, অনুমতির বালাই নেই, এখানে কেউ কারো অথরিটি নয়! জানো তো????
সাবিহা তাও জবাব দিলো না।
——অামি এত ব্যস্ততার মাঝেও যখন ভাবি তোমার মত কেও অামার সারাজীবনের বন্ধু, অামার মন ভালো হয়ে যায়, অথচ তুমি??? হোয়াই অার ইউ সো অানইজি?? অন্য কাউকে ভালোবাসো??? অার ইউ ইন এনি অ্যাফেয়ার??

সাবিহা রোবটের মত হেটে এসে বিছানায় বসলো। জোড় গলায় বলল,
——অাপনাকে ভয় করে অামার। সাধারণ কোনো ছেলে অামার স্বামী হলে ভালো হতো।অাপনার জন্য অামি ঠিক নই!

অামি সাবিহাকে জাপটে ধরলাম। ফিসফিস করে বললাম,
—–অামি কি করলে তুমি বুঝবে, তুমিই অামার জন্য সবথেকে বেশি ঠিক হয়েছো??? কি করলে?? বলেই অামি সাবিহার ঘাড়ে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে লাগলাম।
সাবিহা জবাব দিলোনা।
অামি ডাকলাম,
—– অাবার ; সাবিহা জবাব দিলোনা। পুরো নিথর সে…
একী বেঁহুশ হয়ে গেছে নাকি???
হ্যালো সাবিহা, হ্যালো….
অামি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, সবিহা বেঁহুশ হবার ভান করে অাছে! অামি তাঁর পালস দেখলাম। চিন্তিত হবার ভান করলাম। একজন চিকিৎসক হিসেবে যা যা করার দরকার; অামি করলাম! সাবিহাকে লম্বা করে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।সে পুরো নিস্তেজ শুয়ে রাত কাটিয়ে দিলো। অামার নির্ঘুম সারারাত কাটলো বারান্দায় বসে। জীবনের সবথেকে কঠিন সময় মনে হচ্ছিলো এটা।

অামার নিজের জীবনে নারী ব্যাপারে কখনোই কোনো হীনমন্যতায় অামি ভুগিনি। যেকোন মেয়েকেই ভুলানো বা মুগ্ধ করার শক্তি অামার অাছে এই দৃঢ় বিশ্বাস অামার ছিলো। কিন্তু সাবিহা যে কোনোভাবেই অামাকে পছন্দ করতে চায় না। সেটা অামি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম। অামার জীবনের সমস্ত অর্জন, সমস্ত নাম, সমস্ত অাত্মবিশ্বাস সেদিন খুব ঠুনকো লাগছিলো। অামি সব সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিলাম।এই সংসার, এই বন্ধন অামার জন্য নয় হয়তো। অামিও নিজেও সেদিন ভেবে পাচ্ছিলাম না, অামি কেনো অামার জীবনে হুট করে অাসা সাবিহার জন্য এত কাতর হয়ে পড়েছিলাম? হয়তো অন্যরকম ইগো কাজ করছিলো অামার মধ্যে!মনকে বুঝালাম,
অামার জীবন এইসব নিয়ে পিছনে পড়ে থাকবার জন্য নয়!!

পরদিন সকালে, অামি শুধু বাবাকে বলে, সাবিহাকে কিছু না বলে চলে এলাম। অামি চলে অাসার পর থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম। চুটিয়ে মিউজিক নিয়ে কাজ করতে লাগলাম। সাথে ক্লিনিক ছিলোই….. সাবিহার কোনো পরিবর্তনই যেনো হলোনা। সে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতে থাকলো।ফোন করলে অামি রিসিভ না করলেও কোনো অভিযোগ ছিলো না, সব ব্যাপারে যেনো খুব স্বাভাবিক অার ভীষণ নির্লিপ্ত।
অামি কিন্তু এর মাঝে বেশ কয়েকটা মিউজিক ভিডিওতে কাজ করে বেশ সাড়া ফেলে দিলাম! পেপারে টিভিতে ইন্টারভিউস গুলোতে অামি খুব তীব্রভাবে বলতাম, বিয়ে নিয়ে অামি অাপাতত ভাবছিনা।
সুযোগ পেলেই
বিয়ে নামক জিনিসটাকে ভালো না লাগার বলে প্রকাশ করতাম।
সব করতাম শুধু সাবিহার প্রতি রাগ থেকে…

বেশ কয়েকজন নামীদামী নায়িকা কাজ করতে থাকলেন অামার মিউজিকে।ফলাও করে নিউজ ও হলো, অামার এর সাথে প্রেম, ওর সাথে প্রেম…
এইসব কোনোবিষয়েই সাবিহা অামায় নক করতো না। তাঁর কথাবার্তায় কোনো উত্তাপই নেই!
একদিন অামার শূটিং সেটে সাবিহা এসে হাজির; তাও হুট করে!
চেহারা ক্লান্ত, চুল এলোমেলো; অামার রাগে তখন….
ধমকে বললাম,
—-কি দরকার?? কেনো এসেছো???
——-এখানে কাছেই, অামাদের ইউনিভার্সিটি থেকে একটা টিম এসেছে।
——তো?? অামার কাছে কেনো এসেছো????
সাবিহা অস্পষ্ট স্বরে বলল,
——পানি খাবো!
——–পানি খেতে এসেছো??? এখানে অামার কাছে পানি খেতে এসেছো??
সাবিহা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো!
টেবিলে রাখা পানির বোতলটা অামি সাবিহার দিকে ছুঁড়ে
দিয়ে চলে এলাম।
এরপর অাবার কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ!

মাঝখানে শুধু বাবা অামায় একবার জিজ্ঞেস করলেন,
—–বৌমার সাথে সব ঠিকঠাক তো মুন্না?? খেয়াল রাখিস তো??
অামি প্রচন্ড বিস্মিত হবার ভঙ্গি করে বলল,
—–সব ঠিকঠাকই তো! কেনো???
—–না, এমনিই; সাবিহা এত অসুস্থ থাকে যে, এইজন্য বললাম। মেয়েটাকে বলবি, একটু কম খাটতে। পরিশ্রম তো করতেই হবে, তাই বলে নিজের খেয়ালটাও তো ঠিকমত রাখতে হবে নাকি?? তোদের তো পুরো জীবনই সামনে পড়ে অাছে। একটু নিজের প্রতি যত্ন নিতে বলিস।

সেদিন অামি অত্যন্ত অাশ্চর্য হলাম।সাবিহা অসুস্থ থাকে অথচ অামি জানি না!অামি তাঁর এত পর?? এত দূরের???

রাগে, অভিমানে অামি টোটালি সাবিহাকে ফোন করা বন্ধ রাখলাম। এটাও যেনো সে বুঝতে পারলো না। তারঁ তরফ থেকে অামার প্রতি অাচরণ অাগের মতই স্বাভাবিক।
অামি মনে মনে ভেবে ফেললাম, এই সম্পর্ক বইবার মত নয়। এর থেকে মুক্তি দরকার।অামারও; হয়তোবা সাবিহারও..
অন্য অাট দশটা মেয়ের মত তাঁর হাই ক্লাস জীবন চাই না, কারো এটেনশান চাই না, স্পেশাল কেয়ার চাই না, সেলিব্রিটি লাইফ চাইনা, অামার মত কাউকে চাইনা। তাঁর হয়তো অন্য কিছু চাই। যেটা হয়তো চাই… সেটা যে অামার নেই, তা অামার ভেতরে খুব নাড়া দিলো। অামি কাউকে না জানিয়ে সেপারেশানের সব ধরনের ব্যবস্থা করে ফেললাম।

তখনই অামার জীবনের সবথেকে বিশ্রী ঘটনাটা ঘটলো….
কার এক্সিডেন্টে অামি এক্সট্টিমলি ইনজুরড হলাম।লং টাইম হসপিটালাইজড হয়ে থাকতে হয়েছিলো।
অামার বাবা, অামার বন্ধুরা সবাই বেশ ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু একটা মানুষকে দেখলাম সে একদম ভাঙ্গেনি! সেটা হলো সাবিহা। সব ছেড়ে ছুড়ে, নাওয়া খাওয়া ভুলে সে দিনরাত অামায় নিয়ে হসপিটালে পড়ে ছিলো, কিন্তু এর মধ্যে তাঁকে অামি একবারও কাতর হতে দেখিনি, ঘাবড়ে যেতে দেখিনি; কাঁদতে দেখিনি।বাবা কাঁদলে সে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলতো, বাদ দিন না স্যার! কাঁদার তো কিছু নেই!

ডাক্তারদের হাসিমুখে ফেইস করা, টাইমলি ঔষধ দেওয়া…. সব.. সব…. সে করেছে।

পত্রিকায় তখনি অামার বিয়ের কথাটা ফলাও করে ছাপা হয়!
মিডিয়াকেও সাবিহা খুব নাইসলি হ্যান্ডেল করেছে!

অামি যেদিন হসপিটাল ছেড়ে বাড়ি এলাম; সেদিন রাতেই প্রথম সাবিহা অামার শিয়রের খুব কাছে বসে, যেনো ভীষণ ভয়ে ভয়ে অামার গালে হাত রাখলো। তাঁর হাত থরথর করে কাঁপছে…
কান্নাজড়িত তোতলানো কণ্ঠে বলল,
—-অাপনার শরীর এত ভেঙ্গে গেছে, অনেক শুকিয়ে গেছেন অাপনি! কেনো এমন হলো??? কেনো???
অামি সাবিহার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
—— মরে যাবার হয়তো দরকার ছিলো অামার! দুনিয়ায় কেউ হয়তো অামার বেঁচে থাকাটা সহ্য করতে পারছিলো না।
সাবিহা সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো….

একটু দূরে গিয়ে বসলো, তারপর খুব অাস্তে গলায় বলতে লাগলো,
—–অামি চুলে শ্যাম্পু করতে পারিনা, চোখে চলে যায়। সাবান দিয়ে চুল ধুই…
রেস্টুরেন্টে চামচ দিয়ে কিছু খেতে পারিনা হাত ফসকে যায়…….
হাইহিল পড়তে পারিনা, ব্যালেন্সের জন্য….
শপিংমলে চলন্ত সিড়ি ভাঙতে পারিনা; ভয়ে বুক ধুকপুক করে অামার; বান্ধবীর হাত ঝুলে সিড়ি চড়ি।

ঠিকঠাক গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা, অাঞ্চলিক টান চলে অাসে….
এরকম অামি অাপনার মত কারো বৌ হয়ে গেছি এটা কি খুব বেশি নয়???? অাপনাদের বাড়িতে একবেলার খাবারে পাঁচরকম তরকারি হয়, অার অামাদের বাড়িতে; জন্ম থেকে দেখে অাসছি, তিনবেলার জন্য একপদ….
অামি কি করে ভাবতে পারি, যে অাপনার জন্য অামি??? এটা কি স্বপ্ন বা কল্পনার চেয়েও বেশি অবিশ্বাস্য নয়???

অামি অনেক দিনের জমাট বাঁধা অভিমান ভেঙ্গে সাবিহার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকালাম, রূপালি বর্ডারের সবুজ একটা শাড়ি পড়েছে সে। চুল ঠিক অাঁচড়ানোও নয়, ঘরের মত করে হাতখোঁপা করা,কপালে অার গালে এলোমেলো কয়েক গাছি অবাধ্য চুল!
কানে ছোট্ট দুল, কপাল কুঁচকে অাছে, নাকের ছোট্ট হীরের পাথরটা বিন্দু বিন্দু ঘামের মাঝে অারো ঝকঝক করছে। গাল গড়িয়ে অাধশুকানো হয়ে অাছে, একটু অাগের চোখের জল!
নিচের ঠোটটা ভাঁজ করে কামড়ে ধরা।
রাজ্যের দ্বিধাজড়িত চোখের একটাতে কাজল, অন্যটার লেপ্টে মিশে গেছে…
এত সাধারণ একটা শুধু শাড়ি পড়েই যেনো, মেয়ে থেকে সাবিহা যেনো মানবী হয়ে গেছে…
অামি মৃদু গলায় ডাকলাম,
—–সাবিহা, অামি নিজেও অাগে জানতাম অামার জন্য শুধু ঐ একটা ক্যাটাগরির মেয়েই অাছে! যাদের অামি বিয়ে করতে পারি, যাদের সাথে অামি সারাজীবন কাটাতে পারি। কিন্তু তুমি অামার জীবনে অাসবার পরে অামি বুঝেছি, জীবনসঙ্গীর জন্য অাসলে কোনো গন্ডি ভেবে নেওয়াও ঠিক নয়! জীবনের সকল দুয়ার মুক্ত করে দেওয়া উচিত! কারণ কোথায় তোমার সোলমেট লুকিয়ে অাছে তা হয়তো তুমি নিজেই জানো না। তুমি এলে বলেই অামি হয়তো জানলাম, ভালোবাসা অভিযোগ অার ঝগরা করার নাম নয়, ভালোবাসা মানে মানুষটার খারাপ সময়টাতে মন থেকে দায়িত্ব পালন করা, যত্ন করা! এটাই ভালোবাসা। সারা পৃথিবী মানুষটাকে ব্যর্থ বললেও একমাত্র সেই মানুষটা বলবেনা। এটাই ভালোবাসা। ভালোবাসায় শুধু থাকে মানুষটার প্রতি ভালোবাসা, তাঁর নামের প্রতি নয়! এই যেমন, অামার অসুস্থতাকে তুমি ভালোবেসেছো।
সাবিহা ছলছল চোখে অামার দিকে তাঁকালো। কি বাচ্চা, অার ছেলেমানুষি ভরা চাহনি!

—- এই অসুস্থ অামার হাত ছুঁয়ে শতবার চুমু খেয়েছো! হাসপাতালে রাতে যখন অামি ঘুমিয়ে পড়তাম, সারা গায়ে এলোপাথাড়ি ব্যান্ডেজের এই অামার দিকে তুমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে; তাই না?? অথচ অামার ডেইলিজ এ করা একটা ভালো ফটোশ্যূটও তুমি দেখোনি….এম অাই রাইট?? সাবিহা গাঢ় স্বরে বলল,
—–ওই নামীদামী মানুষটাকে অামি ভয় পাই ভীষণ! অামার খুব ভয় করে অাপনাকে।

অামি উঠে গিয়ে সাবিহার হাত চেঁপে ধরলাম। সাবিহা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো;
অামি সাবিহাকে কোলে করে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলাম।সাবিহা দু -হাতে মুখ ঢেকে বলল,
—–অালোটা নিভিয়ে দিন না প্লিজ!
অামি অালোটা নিভিয়ে দিয়ে এসে বিছানার ধারের জানালাটা খোলে দিলাম। চাঁদের অালোয় পুরো বিছানা মাখামাখি, সাবিহা দু-হাতে মুখ ঢেকে বিছানায় কাঁচুমাঁচু হয়ে বসলো! অামি মনে মনে বললাম,
—–অাজ সারারাত তুমি লজ্জা পাবে। এ তোমার শাস্তি… অনেক ভুগিয়েছো অামায়, অাজ কিছুতেই তোমার রক্ষা নেই!
অামি সাবিহার পাশে বসে গভীর অাকুলতায় তাঁর কোমড় জড়িয়ে ধরলাম…
সাবিহা শক্ত হয়ে গেলো!
অামি সাথে সাথেই বললাম,
—–প্লিজ একটু বেঁহুশ হও তো, সাবিহা। এই অভিনয়টা তো তুমি খুব ভালো পারো; তাই না??
সাবিহা ফিসফিস করে বলল,
—–বেড়াতে যাবেন?? অামাদের গ্রামের বাড়িতে? ওখানে অামাদের পুকুরের ধারের বিশাল জারুল বাগানটাতে রাতে একঝাঁক জোনাকি হয়।। মুঠো ভর্তি করে ধরা যায় ওদের! যাবেন????
অামি শক্ত গলায় বললাম,
—–অামি অার কোথাও যাবো না।এই ঘরে তোমায় নিয়ে বন্দী থাকবো সারাজীবন… অনন্তকাল।
সাবিহা কেঁদে ফেললো….
একটু পর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
——-একটু ছাড়ুন তো.. নাক মুছে অাসি!

পরিশিষ্ট : তার অনেকদিন পরের কথা! এক টিভি ইন্টারভিউতে অামায় জিজ্ঞেস করা হলো, ভালোবাসা মানে কি???
অামি জবাব দিলাম,
—–ভালোবাসা হলো একটা ম্যাজিকের নাম। এটা এমন একটা ম্যাজিক যে, যখনি অাপনি অাপনার ভালোবাসার মানুষের উপর এই ম্যাজিকটা চালাবেন, সে অানন্দিত হয়ে কেঁদে ফেলবে।নাক কচলাতে কচলাতে কেঁদে কেঁদে বলবে,
দেখি, টিস্যু কই দেও, অামি নাক মুছবো!
ইন্টারভিউটা দেখে বাসায় অাসতেই সাবিহা অভিযোগের স্বরে বলল,
—–অামি যে নাক কচলিয়ে কাঁদি, তা কি সারা দুনিয়াকে জানাতে হবে?? ছিঃ, ঘরেরকথা এত বলে বলে বেড়ানো। এর মানে হয়!?
অামি সাবিহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম,
——ভালোবাসিতো তাই… তুমি না থাকলে যাস্ট থেমে যাবো অামি.. যাস্ট….অারো সব বলবো তো অামি।সারা দেশকে বলবো,
বিয়ের রাতে ঘামের গন্ধের ভয়ে তুমি অাদর করোনি অামায়….

সাবিহা ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকলো, দুদিন পরে যখন অামি ডিসি হবো, অামি তোমায় কঠিন শাস্তি, কঠিন শাস্তি।সব ইন্টারভিউতে অামায় ছোট করা! ফাজলামি খতম করবো অামি….
রাগে গড়গড় করতে করতে সাবিহা পড়তে বসে!
অামি অামার তিনমাসের ছোট্ট ছেলেকে কোলে নিয়ে সাবিহাকে অারো রাগিয়ে দেওয়ার জন্য হেসে হেসে বলি…
-“বাবা, জানো তোমার মা না, অামায় একবার চুমু খেতে গিয়ে গালে সর্দি মাখিয়ে দিয়েছিলো।
সাবিহা পড়ার টেবিল থেকে রাগ অার অসহায় ভরা দৃষ্টিতে অামাদের বাবা ছেলের দিকে তাঁকায়! অামি মনে মনে তখন বলি, উফ্! দাদুমা টু, রাগলে তোমায় যে কি লাগেনা……

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here