লেডি_ডন
লেখক_আকাশ_মাহমুদ
পর্ব_১০
–আজ তোকে মেরে এই বাংলার মাটিতে এমন করে তোর সমাধিটা করবো,যাতে করে মানুষ তো দূরের কথা,ইবলিশ শয়তান ও তোর কবরের সামনে আসতে ভয় পাবে!ইবলিশ শয়তান ও চিন্তায় পড়ে যাবে,যে এই মানুষটাকে জমের দোয়ারে কে পাঠিয়েছে এই রকম বিভৎস ভাবে মেরে!
আকাশের কথা শুনে পান্তর গলা থেকে যেনো পানি শুখিয়ে গেছে!
–এই তোরা কয়েকজন মিলে জাফরকে হসপিটালে নিয়ে যা,আর আমার হাতে একটা হকি দে!
একজন এসে আকাশের হাতে হকি দিয়ে যায়!
আকাশ এলোপাথাড়ি সব কয়টাকে মারতে শুরু করে!
মারতে মারতে সব কয়টাকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে আকাশ!আকাশ যেনো আজ সত্যিই হায়েনা হয়ে গেছে!সে যেনো আবার হায়েনার রূপ টা নিজের চেহারায় নিয়ে এসেছে!আকাশের ভয়ংকর চেহারাটা দেখে প্রান্ত থরথর করে কাঁপতে শুরু করে!
–আকাশ প্লিজ আমায় মাফ করে দে!আমি আর কোনোদিন এমনধারা করবো না।
–তোর কোনো মাফ নেই!আমার ক্ষতি করতে চাইলে হয়তো মাফ করে দিতাম,কিন্তু তুই মা-বোনের সমতূল্য দুইটা মানুষের প্রাণ নিতে চেয়েছিস!তোর কৃতকর্মের কারনে হয়তো উপর ওয়ালাও তোকে মাফ করবে না,আর আমি কি মাফ করবো!
–ভাই তোর দুইটা পায়ে পড়ি,আমায় মাফ করে দে!
আর জীবনেও এমন ধরনের কাজ আমি করবো না!
–তোর কোনো মাফ নেই,আর বাকি রইলো কোনোদিন তুই এমন ধারা কাজ করবি না সেই কথা!তুই জীবিত থাকলে তো তেমন ধারা কাজ করার সুযোগ পাবি!
এটা বলেই হকিস্টিক দিয়ে প্রান্তর মাথার মধ্যে সজোড়ে এক বাড়ি মারলাম!প্রান্ত মাগো বলে চিৎকার দিয়ে সেখানেই দম ছেড়ে দিলো!আমার কর্মকান্ড দেখে পুরো কলেজ হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!প্রান্তর খেলা শেষ,এবার মায়ার পালা!মায়া মরার জন্য রেডি হ!হকিস্টিক দিয়ে মায়াকে মারতে যাবো,তখনি মায়ার বাবা আকাশের পায়ে পড়ে যায়!
–আকাশ ভাই,আপনার দুইটা পায়ে পড়ি,আপনি প্লিজ আমার মেয়ে টাকে ছেড়ে দিন!আমার মেয়েটা আপনার সম্পর্কে না যেনে এমনধারা আচরণ করে ফেলেছে আপনার সাথে!
–আলিফ সাহেব,আপনার মেয়েটা যে আমার মন নিয়ে খেলেছে?আমায় মেরে ফেলতো,তাহলে হয়তো কিছু বলার ক্ষমতা থাকতো না আমার!কিন্তু সে তো আমার মনটাকে নিয়ে বিশ্রী ভাবে খেলা করেছে!তাকে কি করে মাফ করবো আমি?
–ভাই আপনার কাছে আমার মেয়ের জীবন ভিক্ষা চাই!
–আচ্ছা যান মাফ করে দিলাম!
মাফটা শুধু এজন্যই করলাম,যে কোনো এক পিতা তার সন্তানের জান বাঁচানোর জন্য কারোর পায়ে পড়েছে!
আর তাছাড়া তাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছি,তাকে মারতেও হয়তো আমার অনেক কষ্ট হতো!তাই মাফ করে দিলাম।
তখনি মায়া এসে আকাশের পায়ে পড়ে যায়!
–আকাশ প্লিজ আমায় মাফ করে দাও!আমি তোমার ভালোবাসা সত্যিই বুঝতে পারিনি।তোমার ভালোবাসা নিয়ে আমি পুতুল খেলা খেলেছি!প্লিজ তুমি আমায় মাফ করে দাও,কান্না করতে করতে!
–মায়া পা ছাড়ো,তোমায় আমি মাফ করে দিয়েছি।
কিন্তু আজ একটা কথা বলে দেই,কখনো কারোর মন নিয়ে এভাবে খেলিও না,বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হয়!আমার মতন পাষাণের যদি এতটা কষ্ট হয়,তাহলে অন্যান্ন মানুষের কেমন কষ্ট হবে ভাবো একবার!সো প্লিজ কারোর মন নিয়ে খেলা করিও না!
–আকাশ আমি তোমার পায়ে ধরে মাফ চাই!প্লিজ তুমি আমায় শেষ বারের মতন একটা সুযোগ দাও!আমি তোমায় ভালোবাসা দিয়ে সমস্ত কিছু ভুলিয়ে দিব!
–তা আর দরকার নেই!
ভালোবাসায় জড়িয়ে যে কতবড় ভুল করেছি আমি,তা এখন প্রমাণ পাচ্ছি!আর আজ থেকে তুমি তোমার মতন থাকো,আর আমি আমার মতন থাকবো।
আজকের পর তোমার সাথে আমার আর কোনোকিছুই থাকবে না!
–আকাশ তোমার যা শাস্তি দেওয়ার,তুমি আমাকে দাও!
কিন্তু প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।আমি সত্যিই এখন তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারছি!একটা মানুষ এতটা পাওয়ারফুল হওয়া সত্বেও ক্ষমতা দেখায়নি!আর আমি সামান্য একটা নেতার মেয়ে হয়ে কতো কি না করে ফেলেছি,পাওয়ারের অপব্যবহার করেছি,দেমাগ দেখিয়েছি,গরিমা করেছি,যা আমার কখনোই উচিৎ হয় নি!প্লিজ শেষ একটা সুযোগ দাও!
–সরি,তোমার মতন মেয়ের সাথে আমি আর কোনো সম্পর্ক রাখবো না,এটা বলে মায়ার কাছ থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিলাম।ফি-আমানিল্লাহ,তোমার সাথে আমার সফর শেষ।তারপর সেখান থেকে সোজা চলে আসলাম।মায়া অনেকবার আমায় ডেকেছে পিছন থেকে,কিন্তু আমি কোনো পাত্তা দেইনি!খুব কান্নাও করেছিলো মেয়েটা,কিন্তু কি লাভ এখন কান্না করে,যখন সময় ছিলো,তখন ছলনা করেছে আমার সাথে!আর এখন যখন আমার দিন এসেছে,তখন এসে হামাগুড়ি খাচ্ছে আমায় পায়ে পড়ে!এতটা কষ্ট হচ্ছিল বুকের ভিতরে,যা বলে বুঝাতে পারবো না!যতই হোক ভালো তো বেসেছি তাকে আমি!
সবাইকে বিদায় দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
তবে মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছি আমি,যে আজকের থেকে আমি আবার আগের মতন হয়ে যাবো!দুনিয়ায় যখন পাওয়ারের খেলা চলে,তাহলে পাওয়ার দিয়েই সব কিছু করবো আমি!আজকের পর দেখি কে আমায় আটকায়!আসলেই গুরুজনদের কথা ঠিক,জঙ্গলে রাজত্ব করতে হলে অবশ্যই তোমার গর্জন অতিমাত্রায় ভয়ংকর হতে হবে!না হয়তোবা ছোট ছোট প্রানী গুলাও তোমায় ভেংচি কেটে চলে যাবে!
বাসায় গিয়ে দেখি দু’জন মানুষ আমার অপেক্ষায় বসে আছে!
–ভাইয়া তুমি এসেছো?
–হা তৃধা আমি এসেছি!
এতদিন যাকে প্রান্তর বোন নামে চিনতাম,তার নাম হচ্ছে তৃধা!তোমার আম্মু কই?
–বাসায় তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!
–আচ্ছা,
তারপর বাসার ভিতরে প্রবেশ করলাম।
তৃধার আম্মু আমায় দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো!
–বাবা আমায় ক্ষমা করে দে রে!
বিশ্বাস কর প্রান্ত আমাদের ভয় দেখিয়েছিলো,যে তার কথা না শুনলে সে আমার মেয়ের ক্ষতি করে দেবে!
বাবা বিশ্বাস কর,আমার মেয়েটা বাদে দুনিয়াতে আমার আর কেউ নাই,তাই তার কথায় রাজি হয়েছি আমি!
না হয় সে আমার মেয়েটার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে দিতো!
–হয়েছে সে-সব কথা,কিন্তু তোমরা সেটা আমায় আগে বললেই পারতে,আর আমি আকাশ মাহমুদ থাকতে তোমাদের কেউ ক্ষতি করবে,কলিজাটা সোজা বের করে ফেলবো!
–আমি তোকে অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম বাবা,কারন আমি প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিলাম,যে তুই লক্ষী একটা ছেলে!কিন্তু কি করবো বল,আমার মেয়েটাই যে আমার সব।ও ছাড়া যে আমার আর কেউ নাই দুনিয়াতে!
–কে বলেছে কেউ নাই তোমাদের,আমি তো আছি!
আমার তো মা,বাবা কেউ নেই!বিশ্বাস করো যেদিন আমি এই বাড়িতে আসি,সেদিন থেকেই তোমায় মায়ের মতন দেখি।খুব ইচ্ছে করতো তোমায় মা বলে ডাকতে,কিন্তু প্রান্ত যদি কিছু মনে করে,তাই আর ডাকিনি!কিন্তু এখন থেকে তোমায় আমি মা বলেই ডাকবো,আর তোমরা এখন থেকে আমার পরিবার!
আজ থেকে তোমার দুই সন্তান,একটা ছেলে,আরেকটা মেয়ে!
–সত্যিই তুই আমায় মা বলে ডাকবি?
–হ্যাঁ মা তিন সত্যি,তোমায় আমি মা বলেই ডাকবো!
সেই রাতের মধ্যেই আমার সমস্ত কারোবার এই শহরে নিয়ে আসলাম।আজ থেকে আমি এই শহরে বসেই সমস্ত কারোবার চালাবো।মা তোমরা কাপড় চোপড় গুছিয়ে নাও!
–কেনো রে বাবা?
–কারন কাল আমরা নতুন বাড়িতে উঠবো।
শহরের নাম করা বাড়িটা কিনেছি আমি!এতদিন আমি যেমন তেমন ভাবে রাত কাটিয়ে দিতে পারতাম,কিন্তু এখন আমার একটা পরিবার হয়েছে!তাদের নিয়েও চিন্তা করতে হবে আমার।পরেরদিন সেই বাড়িতে উঠে গেলাম।তৃধাকেও ওর কলেজ থেকে ট্রান্সফার করিয়ে শহরের নাম করা কলেজে এডমিশন করিয়ে দিলাম।এক দিনের মধ্যেই পুরো শহরে আগুনে নামের ঢল শুরু হয়ে গেলো!সবার মুখে মুখে একটাই কথা,যে আগুন এখন এই শহরে থাকে!আম্মুকেও সবটা জানিয়ে দিলাম,যে আমি কে!
–বাবা,আমার না খুব ভয় করে!তোর যদি কোনো ক্ষতি করে দেয় কেউ?
–মা,এতদিন বাঁচার মতন উৎস ছিলো না আমার কাছে,কিন্তু এখন একটা পরিবার আছে আমার।সো আমার ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।আর বিশেষ করে তৃধাও আমার বোন,ওর সমস্ত সেফটি আমি দিয়ে দিব।
বাড়িতে অনেক কয়টা পাহারাদার নিযুক্ত করলাম।
তৃধার সাথেও কয়েকটা বডিগার্ড নিযুক্ত করে দিলাম।
আজ তিনদিন পর কলেজ যাবো।গত তিনদিন সমস্ত কিছু গোছাতে গোছাতে লেগে গেছে!কলেজে যেতেই প্রিন্সিপাল আমায় তার রুমে ডাক দিলো..
–আকাশ,আমার একটা উপযুক্ত মেয়ে আছে,আমি চাই তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করে নাও!
–স্যার এখন আমি বিয়ে টিয়ের ব্যাপারে ভাবছি না।আর তাছাড়া এখন আমার মা বোন রয়েছে,তাদের ও একটা মতামত আছে।আপনি তাদের সাথে গিয়ে কথা বলুন,যদি তারা রাজি হয়,তাহলে নিজের মনকে শক্ত করে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করে নিব!
–ওকেহ আমি তোমার মায়ের সাথেই কথা বলবো!
–প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে ক্লাসে চলে আসলাম।
পুরো কলেজ একদম ঝুকে গেছে আমার দিকে!সবার কাছে এক নামে পরিচিত হয়ে গেছি আগুন!সিনিয়র নাই জুনিয়র নাই সবাই প্রেমের প্রপোজাল দিচ্ছে!কিন্তু আমি কাউকেই সারা দিলাম না।কারন একজনকে সারা দিয়ে জীবনটাকে নড়কে ঠেলে দিতে ধরেছিলাম।
স্যার ক্লাস করাচ্ছে,
ক্লাসে মন দিলাম।মায়া আজ অন্য টেবিলে বসেছে!
আজ আমার পাশে বসেছে ক্লাসের সব চাইতে সুন্দরী মেয়ে আনিকা!মায়া বারবার আমার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে!আমায় কষ্ট দেওয়ার ফল মায়া তুমি পেয়ে যাবে!ক্লাস শেষ করে বের হতে ধরলাম,তখনি মায়া পিছন থেকে এসে আমায় জড়িয়েও ধরে কান্না করে দিলো!
–আকাশ আমায় একটা বারের জন্য ক্ষমা করে দাও না প্লিজ!
–মায়া প্লিজ আমায় ছাড়ো!তোমার সাথে আমার আর কোনোকিছু নেই,সো নিজের রাস্তা মাপো!
–না আমি তোমায় ছাড়বো না।আমি সত্যিই ভুল ছিলাম আকাশ!এখন আমার সামনে সব কিছুই ক্লিয়ার!আমার আর কাউকে চাইনা,আমার তোমাকেই চাই!
–কিন্তু আমার তোমাকে চাই না!
প্রিন্সিপাল স্যার তার মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা পাকা করতে আমার মায়ের কাছে যাবে,আমার মা যদি রাজি হয়,তাহলে আমি তাকেই বিয়ে করে নিব!
–প্লিজ আকাশ তুমি এমনটা করো না!আমার খুব কষ্ট হবে আকাশ!তোমায় অন্যের সাথে দেখতে পারবো না আমি!বিশ্বাস করো আজ যখন আনিকা তোমার পাশে বসে তোমার সাথে হাসাহাসি করছিলো,তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছে!
–যেমন কর্ম করেছো,তেমনটাই ফল পাচ্ছো তুমি!
আর তোমার কষ্ট হলে আমি কি করবো,একবার তো বললাম এই,যে তোমার সাথে আমার সমস্ত সম্পর্ক শেষ।সো এবার নিজের মতন থাকো,বলে ঝাটকা দিয়ে মায়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।তারপর মায়াকে রেখে সেখান থেকে চলে এলাম।
হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।আজ জাফরকে দেখতে যাবো।হসপিটালে গিয়ে জাফরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে বাসায় চলে এলাম।বাসায় পোঁছে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম ছেলেপেলের জন্য!আমার সব কয়টা পুরোনো গাড়ি এখানে নিয়ে আসতে বলেছি ছেলেদের ফোন করে!
আম্মু এসে শরবত দিয়ে গেলো।সোফায় বসে বসে শরবত খাচ্ছিলাম,তখনি দরজার কলিংবেল বেজে উঠলো।হয়তো ছেলেপেলেরা গাড়ি নিয়ে এসেছে আমার।উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।দরজা খুলে যা দেখলাম,তাতে তো আমার চোখ সোজা কপালে উঠে গেলো!
চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।
গল্পটি পড়ে অনেক ভাল লাগল। এমন রোমাঞ্চকর গল্প কার না ভাল লাগে। অসংখ্য ধন্যবাদ।