শতরূপা পর্ব ২

গল্পঃ #শতরূপা (২য় পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

শেষের কথা শুনে আমি রেগেমেগে বললাম,
___এই আমাকে আবার তুমি করে বললে কেন? আবার বললে আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা। কোনদিকে যে পালাবো টেরও পাবেনা।

দিবিয়া আমার কথা শুনে আরো জোরে হাসলো। এসবে তার ভয় নেই, কারণ সে বুঝতে পারছে পালানোর রাস্তা নেই, তার উপর আমার পুরো পরিবার তাদের সাথে আছে।

এতদিন ভাবতাম মানুষ চাইলেই সব করতে পারে। যেমন আমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে আজীবন দোষ দিয়েছি, এখনো ভাবি সে সেদিন ইচ্ছে করলে বিয়ে ভেঙে দিতে পারতো। আমার মনে হতো এই জগতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হয়না। সেও হয়তো ইচ্ছে করেই আমাকে ছেড়ে বিয়েটা করেছিলো। কিন্তু আজ আমি ছেলে হয়ে বুঝতে পারছি পরিস্থিতি ভয়ানক হলে মানুষের ঠিকবেঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হয়তো হ্রাস পায়। আমি এতো চেয়েও এখান থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছিনা। আমার মা-বাবা না আসলে আমি কোনো একটা উপায় পেয়েই যেতাম, কিন্তু তাদের দিকে তাকিয়ে অবাধ্য হতে পারছিলাম না।

বিয়ে পড়ানো স্বাভাবিকভাবেই সম্পন্ন হয়ে গেলো। বাবাকে বলেছি যেভাবেই হোক বিয়ে যেহেতু হয়েছে তাহলে বউকে নিজের বাড়িতেই নিয়ে যাবো। এখানে থাকলে সবাই দুইদিনে বলাবলি করবে সম্পদের লোভে ঘরজামাই হয়েছি। কিন্তু কাউকে বুঝাতে পারবো না আমাকে জোর করে ওরা বিয়ে দিয়েছে!

বিয়ে হওয়ার পরে এখানে আজ কোনো বাসর হবেনা বলে প্রথম থেকেই চিল্লাচিল্লি করছিলাম। আর যাই হোক শ্বশুরবাড়িতে এসব বরদাস্ত করা যায়না । পরবর্তীতে আমার কথা রাখা হলো। পরেরদিন সকালে বউ নিয়ে যাবো, এরপরদিন আমাদের এখানে ছোটখাটো অনুষ্ঠান হবে। এভাবে হুট বিয়ে হলেও নিয়মকানুনের কোনো কমতি রাখবেন না বলে বাবা জানিয়ে দিয়েছেন।

রাত তিনটা পর্যন্ত ফটোগ্রাফি চললো। আস্তে আস্তে বাড়ি সবাই নিরব হয়ে গেলো। সজাগ বলতে দিবিয়া,সাবিয়া আর ওদের সাথের এক দুইটা মেয়ে।
আমাদের জন্য যে রুমটা সাজানো হয়েছিল সেখানে দূরত্ব বজায় রেখে কয়েকটা ছবি তোলা হয়েছিল।
এবার যখন সবকিছু নিরব তখন দিবিয়া আশপাশ কতক্ষণ তাকিয়ে আমাকে আর সাবিয়াকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ভেতরে গিয়ে আওয়াজ করে বললো,
___তোরা ঘুমিয়ে যা সবাই। সাবিয়া কয়েকটা ছবি তুলে দিবে।

দিবিয়াকে আমার ভয় লাগছিলো। লজ্জা বলতেও কিছু নেই মেয়েটার। আমাকে জড়িয়ে ধরে,কাঁধে ধরে,শুয়ে-বসে, উল্টে পাল্টে শত শত ছবি তুললো।
আমি বুঝতে পারছিলাম প্রতিটি ছবিতে আমাকে কুমিরের মতো লুকে দেখা যাবে। খুব শীগ্রই নিজের মৃত্যু কামনা ছাড়া আমার কিছুই করার নেই। একেকটা পোজ ২০-৩০ বার করে দিচ্ছিলাম, তাও নাকি হয়না। সব ধাপে ধাপে শেষ করলাম। ভেবেছিলাম এবার একটু শান্তি পাবো বোধহয়।কিন্তু এরপর আবার কপালে চুমু খেয়ে ছবি, কোলে তুলে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি, আঙুল ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে ছবি আরো নানারকম নির্যাতন। সবকিছু সহ্য করছি অন্যের বাড়িতে আছি বলে, নয়তো আবার নতুন জামাই হয়ে কোন কলঙ্কের উপাধী পেয়ে যাই, কে জানে?কাল বাড়িতে গিয়ে নেই তারপর বুঝাবো তীব্রের রাগের তীব্রতা কতোদূর। আমার সাথে এসব ন্যাকামো চলবেনা। মানে কোনোভাবেই চলবেনা…

সকাল ১০ টার দিকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য সবাই রওয়ানা দিলাম। গাড়ীতে উঠে কাঁধে মাথা রাখার সুযোগ তো দেইইনি উল্টো সীটের মাঝে একহাত শূন্যস্থান রেখে বসলাম। ত্যাড়ামো করলে একদম নামিয়ে দিবো শুনে দিবিয়া চুপ করে আছে। কারণ এখন আর তার বাড়ির কেউ নাই। বেচারা নিরব হয়ে আছে।
বাড়ির রাস্তায় আসতেই খেয়াল করলাম অনেক মানুষ ভীড় করেছে। হুট করে এভাবে বিয়ে করলাম, তাছাড়া বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে, সবার দেখার আগ্রহও প্রবল।
গাড়ীটা আরেকটু আগানোর পরে নামতে গিয়েই আমার চোখ থমকে গেলো। এতোগুলো মানুষের ভীড়ে এতো মানুষের আড়ালে এই চোখদুটো আমার
খুব চেনা। সে কি আমার বউকে দেখতে এসেছে?
অথচ এতোবছরে ক্ষতবিক্ষত আমাকে দেখতে ইচ্ছে করেনি? আজকে লোকমুখে শুনে নিশ্চয়ই এটা দেখতে এসেছে আমার বউ তার থেকেও সুন্দরী কিনা!

আমি সারা রাস্তায় দিবিয়ার সাথে রাগ করে দূরে দূরে থাকার কথা ভুলে গেলাম। গাড়ীর ভেতরে একটু উঁকি দিয়ে তার ঘোমটা বড় করে টেনে আমি হাত বাড়িয়ে সামনে আনলাম। আর সবার সামনেই কোলে তুলে নিলাম। গলা উঁচিয়ে বললাম,
___আপনারা আমার বউকে দেখতে এসেছেন তো? সে অনেকদূর পাড়ি দিয়ে এসেছে তাই এখন ক্লান্ত । বিকেলে সবাই বউ দেখতে আসবেন।

কিছু মহিলা মুখচেপে ইতোমধ্যে কানাকানি শুরু করে দিয়েছে। আমি কিছুকেই পরোয়া করলাম না। কিন্তু চোখ লুকিয়ে এটা স্পষ্ট দেখলাম সেই মুখটা পিছু হটতে হটতে দৃষ্টির আশেপাশ ছেড়ে পালিয়েছে।
আমি এবার দিবিয়ার দিকে চোখ ফেলতেই খেয়াল করি সে মুখের উপরের ঘোমটা হালকা সরিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে হাসছে। আমি তাকাতেই এক চোখ বন্ধ করে ভেংচি কাটলো। এবার ইচ্ছে করছিলো ধপাস করে ছেড়ে দেই। সব জায়গায় দুষ্টামি করে মেয়েটা! এদিকে প্রমিতাকে দেখে অজান্তে এমন একটা কাজ করে ফেলেছি, তার জন্য সবার হাসাহাসির খোরাকও কপালে জুটেছে।

প্রমিতা আমার প্রথম ভালোবাসা। যে আমাকে ঠকিয়ে একটা চাকুরীজীবী ধনী ছেলেকে সহজেই বিয়ে করে নিয়েছে। আমাকে একটাবার জানায়নি পর্যন্ত। আজ ৪ বছর হয়েছে একটাবার খোঁজও নেয়নি আমি কেমন আছি, আর এটাও জানায়নি কেন সে সেদিন আমাকে কিচ্ছু জানালোনা? তারপর একদিন দেখা হয়েছিল রাস্তায়, আমাকে দেখে সে ইচ্ছে করে তার স্বামীর কাছাকাছি ঘেঁষে হাত ধরে হাসাহাসি করছিলো। কিন্তু ওর এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম সে আমার টানাটানির করে চলার মতো পরিবার নিয়েও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। আমি তার মতো মেয়ে আশা করতে পারিনা এটাও বলেছে। কিন্তু আমি মনে নেইনি ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছিলাম।
এখন যখন আমার বউকে দেখতে আসলো আমার মাথা কাজ করছিলোনা কিছু। তবে মনে হচ্ছে খারাপ করিনি, তাছাড়া দিবিয়া দুষ্ট কিংবা বেয়াদব সে আমার বউ তো!

চলবে…

জানি ছোট হয়েছে। কারণ আজকেও প্রচুর ব্যস্ততায় ছিলাম। কি লিখেছি পরে আর দেখা হয়নি, ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কাল থেকে বড় করে নিয়মিত পর্ব পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here